leadT1ad

আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন

হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি যেভাবে উদ্ধার হয়েছিল

আজ ১৩ নভেম্বর বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তিনি ছবিও আঁকতেন। কী আঁকতেন তিনি? কেনই-বা আঁকতেন? কীভাবে হারিয়েছিল তাঁর আঁকা ছবি? উদ্ধার-ই বা হলো কীভাবে?

তৌহিন হাসান
তৌহিন হাসান

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২২
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

হুমায়ূন আহমেদ ছবিও আঁকতেন। কী আঁকতেন তিনি? কেনই-বা আঁকতেন? যাকে আমরা বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জল নক্ষত্র হিসেবে চিনি, যার কলমে সৃষ্টি হয়েছে হিমু, রূপা, মিসির আলীর মতো চরিত্র—তেমন কোনো কাল্পনিক চরিত্র কী তিনি রঙ-তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে বা কাগজে এঁকেছিলেন? উত্তর, না।

বাংলা সাহিত্যে গ্রাম ও প্রকৃতির বর্ণনা একটি সহজাত দৃশ্য। গল্প, কবিতা, উপন্যাসে আমরা হরহামেশাই গ্রামের বর্ণনা পড়ে মুগ্ধ হই। হুমায়ূন আহমেদ বেশিরভাগ সময়েই সেই গ্রাম ও প্রকৃতির দৃশ্য আঁকতেন, কাগজে কিংবা ক্যানভাসে। অথবা যেসব বর্ণনা তিনি গল্প বা উপন্যাসে লেখেননি, সেসব আঁকতেন তাঁর একান্ত অবসরে।

আবার এটাও হতে পারে যে অবচেতন মনে যেরকম প্রকৃতিকে তিনি লালন করে রাখতেন, সেসব আঁকা হয়তো তার প্রকাশভঙ্গি। এর উত্তর আর কেউ না হোক, মিসির আলি ভালো দিতে পারবেন।

হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্রকর্ম। সংগৃহীত ছবি
হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্রকর্ম। সংগৃহীত ছবি

হুমায়ূন ছবি আঁকতেন কখনও কাগজে জলরঙে কখন-বা ক্যানভাসে তৈলচিত্র। একবার হুমায়ূন আহমেদের আঁকা একটি পেইন্টিং নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল। ঘটনাটি ২০২১ সালের।

হঠাৎ জানা গেল, কুমিল্লায় একটি চিত্র প্রদর্শনীতে হুমায়ূন আহমেদের একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে। একটি তৈলচিত্র। বিষয়টি জেনে হুমায়ূনের পরিবার ও তাঁর ভক্তদের মধ্যে শোরগোল পড়ে গেল। সবাই কৌতুহলী হয়ে উঠলেন প্রদর্শনীটি নিয়ে। এর কিছুদিনের মধ্যেই হুমায়ূনের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পুরোনো গল্প সামনে উঠে এল।

মৃত্যুর আগে ২০১২ সালে হুমায়ূন যখন ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে ছিলেন, তখন চিকিৎসা গ্রহণের অবসরে বেশ কিছু ছবি তিনি এঁকেছিলেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ততদিনে নিউইয়র্ক প্রবাসী রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহা দম্পতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়েছিল। তাঁদের অনুরোধে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আঁকা চিত্রকর্মগুলো থেকে ২৪টি সেই দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেটি ছিল নিউইয়র্ক বইমেলায় প্রদর্শনের জন্য। কথা ছিল, প্রদর্শনী শেষে তাঁরা সেই ছবিগুলো ফিরিয়ে দেবেন।

হুমায়ূন আহমেদ বেশিরভাগ সময়েই সেই গ্রাম ও প্রকৃতির দৃশ্য আঁকতেন, কাগজে কিংবা ক্যানভাসে। অথবা যেসব বর্ণনা তিনি গল্প বা উপন্যাসে লেখেননি, সেসব আঁকতেন তাঁর একান্ত অবসরে।

কিন্তু সেই দম্পতি প্রস্তাব করেছিলেন ছবিগুলো বিক্রি করে তাঁরা কমিশন রেখে বাকি টাকা হুমায়ূনের হাতে তুলে দিতে চান। কারণ, তাঁরা অনুমান করেছিলেন, হুমায়ূনের চিত্রকর্ম নিউইয়র্কে বেশ চড়া দামে বিক্রি করা সম্ভব। তাঁরা হুমায়ূন আহমেদকে বারবার প্রস্তাব করলেও হুমায়ূন তাতে রাজি হননি। কারণ, বিক্রি করে অর্থ লাভের জন্য নয়, বরং নিজের ও পুত্রের আনন্দের জন্য তিনি ছবিগুলো এঁকেছিলেন।

সেই বছরই হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু হয় এবং মৃত্যুর পর মেহের আফরোজ শাওন তাঁদের সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু প্রদর্শনীর জন্য দেয়া হুমায়ূনের চিত্রকর্মগুলো রয়ে গিয়েছিল রুমা ও বিশ্বজিৎ দম্পতির কাছে।

পরবর্তী সময়ে শাওন ছবিগুলো বারবার ফেরত চাইলে তাঁরা নানাভাবে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। উপায়ান্তর না পেয়ে শাওন বিষয়টি তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের জানিয়ে সহযোগিতা চান। পরে অবশ্য ২০১৩ সালের ফেব্রয়ারি মাসে রুমা চৌধুরী বিশ্বজিৎকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের কাছে চিত্রকর্মগুলো ফেরত পাঠাতে বাধ্য হন। কিন্তু সেখানেও একটি গলদ থেকে যায়। ফেরত দেয়া চিত্রকর্মের সংখ্যা ছিল ২০টি। ৪টি চিত্রকর্ম কম ছিল সেখানে। অনেক বছর পর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ ৩টি ছবি উপহার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশনের কর্তাদের দিয়েছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্রকর্ম। সংগৃহীত ছবি
হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্রকর্ম। সংগৃহীত ছবি

এরপর কুমিল্লায় হুমায়ূন আহমেদের একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে এমন খবরে নড়েচড়ে বসেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। নিখোঁজ হওয়া চিত্রকর্মটি উদ্ধারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি। বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন। মামলা আমলে নিয়ে আদালত পিবিইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর মামলা চলার চলার পর ২০২৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্মটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এবং আদালতের মধ্যস্থতায় মেহের আফরোজ শাওন তা বুঝে পান।

হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবিগুলোর মূল্য শৈল্পিক বা আর্থিক নিক্তিতে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। যা হুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষ দিনগুলোতে তার সঙ্গে পুত্র নিষাদের কাটানো সময়ের স্মৃতি বিজড়িত। ছবিগুলো উদ্ধার করা না গেলে শুধু হুমায়ূন আহমেদের পরিবারই নয়, সর্বোপরি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত পারত।

Ad 300x250

সম্পর্কিত