ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ বলেছেন, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধান সংস্কার করবেন। সেই সংবিধান সংস্কার শেষে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা জানান।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও অন্যান্য ইস্যুতে গণভোট নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও উত্তেজনার মধ্যে আজ উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘হ্যাঁ’ ভোট বিজয়ী হলে ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।
তবে গণভোটে ‘না’ বিজয়ী হলে সংবিধান সংস্কার এবং সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন কোনোটাই সম্ভব না।
ভাষণে সরকারের নির্ধারণ করা প্রশ্নটি পড়ে শোনান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি প্রশ্নটি এখন আপনাদের সামনে পাঠ করে শোনাচ্ছি। প্রশ্নটি হবে এরকম— আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
এই প্রশ্নে চারটি প্রস্তাবনা দেবে সরকার। সেগুলো হলো—
ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।