বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত এক অধ্যায়ের নাম ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’। নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার তীব্র অবিশ্বাস ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই ব্যবস্থার জন্ম। তবে যে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ঐকমত্যের অভাবেই একসময় ব্যবস্থাটি বিলুপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার যাত্রাপথ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার মতোই বন্ধুর ও ঘটনাবহুল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কী?
বাংলাদেশের সংবিধানের বিলুপ্ত অনুচ্ছেদ ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) এবং ৫৮(ঙ) অনুসারে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর বা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করার দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করা। এই সরকার হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও এর সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারতেন না বা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতেন না।
অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো এমন এক ধরনের অস্থায়ী ও নিরপেক্ষ সরকার, যা দুটি নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়ে দেশের শাসনভার সাময়িকভাবে গ্রহণ করে। এই সরকার দৈনন্দিন রুটিন প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করলেও কোনো ধরনের নীতি নির্ধারণী বা দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ব্যবস্থার উপযোগিতা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলগুলো পরস্পরের ওপর আস্থা রাখতে পারে না। ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রীয়যন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ শক্তির অধীনে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো সেই আস্থার সংকট সমাধানের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এই অবিশ্বাস আরও ঘনীভূত হয় ১৯৯৪ সালের মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত করে।
উত্থানের প্রেক্ষাপট: আস্থাহীনতার রাজনীতি
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বীজ নিহিত আছে নব্বইয়ের দশকের গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্যে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত একটানা স্বৈরশাসনের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানের মুখে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তখন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হয়। এই সাফল্যই মূলত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এই অবিশ্বাস আরও ঘনীভূত হয় ১৯৯৪ সালের মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত করে। এই দাবিতে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে এবং একটানা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন শুরু করে।
তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন আয়োজন করে। তৎকালীন প্রায় সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। ষষ্ঠ সংসদে নির্বাচিত বিএনপি সরকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বেশিদিন টিকতে পারেনি। অবশেষে, ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৫৮(খ) থেকে ৫৮(ঙ) পর্যন্ত নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।
এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মোট তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত একটি নতুন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যা 'ওয়ান-ইলেভেন' সরকার নামে পরিচিত। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল ও তাদের অনেক কার্যক্রম কেবল বিতর্কের জন্ম দেয়নি, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক ভিত্তিকে চিরতরে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
বাতিলের পটভূমি: আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক সংকট
যে ব্যবস্থা একসময় রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হিসেবে এসেছিল, সেটিই একসময় নতুন সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর দুরভিসন্ধি ব্যবস্থাটিকে ধীরে ধীরে বিতর্কিত করে তোলে। বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা নিয়ে দেখা দেয় তীব্র মতবিরোধ। সংবিধান অনুযায়ী, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হবেন—এই বিধানটিই সংকটের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০০৩ সালের জুন মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কে এম হাসান। তখন অভিযোগ উঠে, বিএনপি সরকারের পছন্দের কারণেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিলো।
২০০৪ সালের ১৬ মে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানোর বিল উত্থাপন করেন। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে, বিএনপি তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করার জন্য নানা আয়োজন করেছে।
২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে তৎকালীন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে. এম. হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। তাদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি হাসান অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, ফলে তার অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়।
এই চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত একটি নতুন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যা 'ওয়ান-ইলেভেন' সরকার নামে পরিচিত। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল ও তাদের অনেক কার্যক্রম কেবল বিতর্কের জন্ম দেয়নি, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক ভিত্তিকে চিরতরে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিযোগ করে, এই সরকারের উত্থানের পেছনে ছিল গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’। এই তত্ত্বের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক নেত্রী—আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ অনেক বিরোধী দল। ফলে, ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ।
পঞ্চদশ সংশোধনী ও রাজনৈতিক বিভাজন
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিজয় লাভ করে। ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকার তাদের পূর্ববর্তী তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে 'ওয়ান-ইলেভেন' সরকারের প্রায় দুই বছরের শাসনকালকে, গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে।
তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের বীজ রোপিত হয়েছিল মূলত আদালতের কক্ষে, রাজনীতির মাঠে নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত রায়ে ২০১১ সালের ১০ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে (যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল) অসাংবিধানিক ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করে।
আদালতের রায়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা সংবিধান সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করলেও, মূল সিদ্ধান্ত ছিল আদালতের রায়কে ভিত্তি করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল যে, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনে আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ও সংসদীয় কমিটি সেই পর্যবেক্ষণকে অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের যুক্তি ছিল, সর্বোচ্চ আদালত যখন কোনো ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, তখন সেই ব্যবস্থা বহাল রাখার কোনো সুযোগ নেই, এমনকি সাময়িকভাবেও নয়।
অবশেষে, ২০১১ সালের ৩০ জুন, সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মহাজোট সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানগুলো (অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ) পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হয়। এর পরিবর্তে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুরোনো ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার শরিক দলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তারা এই পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ ও ‘আজীবন ক্ষমতায় থাকার একটি নীলনকশা’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ অনেক বিরোধী দল। ফলে, ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ।
শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আপিল বিভাগ এই ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০ নভেম্বরের তারিখ নির্ধারণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরবে কি না এবং যদি ফেরে, তাহলে তা কোন কাঠামোতে ও কীভাবে বাস্তবায়িত হবে।
২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট ও আইনি অবস্থান
২০১১ সালে বাতিলের পর দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠের অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবি নতুন করে গতি পায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সরকারের বিদায়ের পর ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও একই ধরনের আবেদন করা হয়। এই আবেদনগুলোর ওপর ভিত্তি করে, ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০১১ সালের সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করার অনুমতি (লিভ টু আপিল) দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৫ সালের ২১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই বিষয়ে চূড়ান্ত আপিল শুনানি শুরু হয়। টানা দশ দিন ধরে চলা এই শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটটর্নি জেনারেল নিজ নিজ যুক্তি তুলে ধরেন।
শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আপিল বিভাগ এই ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০ নভেম্বরের তারিখ নির্ধারণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরবে কি না এবং যদি ফেরে, তাহলে তা কোন কাঠামোতে ও কীভাবে বাস্তবায়িত হবে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের সংবিধান, বিবিসি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি (ড. বদিউল আলম মজুমদার), তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন (এস. এম. আনোয়ারা বেগম)