ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার এক মামলার রায় আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রায়ের এই তারিখ ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।
তারিখ ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনাল চত্বরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আজ মামলাটির নির্ধারিত তারিখ ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ১৭ নভেম্বর সোমবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ রায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা, সাক্ষীরা, ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা—সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এই মামলাটিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিতে যারা নেপথ্যে কাজ করেছেন, এবং যারা ন্যায়বিচারের বিশ্বাসে আমাদের পাশে থেকেছেন, সেই সমগ্র জাতির প্রতি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।
এর আগে রায়ের তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় আজ সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের প্রধান ফটক ও সংলগ্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। এলাকাজুড়ে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভারী যানবাহন।
সকালের দিকে মামলার অন্যতম রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আদালতে আনা হয়।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন ছাড়া অন্য দুই আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। আন্দোলন ঘিরে হত্যাকাণ্ডসহ পাঁচটি অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
রায়ের তারিখ ঘোষণাকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আজ ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো নাশকতা বা সহিংসতা মোকাবিলায় তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ শান্ত ছিল। সাধারণত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বেলা ১১টার দিকে শুরু হয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আগে শুরু হওয়ার নজির রয়েছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি, তবে রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য আদালতের কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে বলে জানা গেছে।