leadT1ad

ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদের বন্ধু আকিব

আত্মসমর্পণের মতো দুই হাত তুলে দাঁড়িয়েছিলেন সাঈদ, তবু গুলি করে পুলিশ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ০২
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আবু সাঈদের বন্ধু ও বেরোবির শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান।

আকিব বলেন, আবু সাঈদ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়ালেও পুলিশ গুলি করে।

আজ ১২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৎকালীন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান।

আকিব জানান, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাঁরা পরদিন সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেন।

আকিব বলেন, ‘গেটে পৌঁছালে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। অন্য পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল ছোড়ে। তখন এএসপি আরিফুজ্জামান ও কয়েকজন পুলিশ আবু সাঈদকে মারধর করে।‘

আকিব আরও জানান, ‘পুলিশ পিছু হটে গেটের ভেতরে গেলে ছাত্রলীগ ও কয়েকজন শিক্ষক আমাদের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। গেট খুলে ভেতরে ঢোকার পর পুলিশ শটগান দিয়ে গুলি চালায়। তখন আবু সাঈদ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়ান, যেন পুলিশ গুলি না করে। কিন্তু পুলিশ কাছ থেকে তাক করে গুলি চালায়। প্রথমবার এএসআই মো. আমির হোসেন ও দ্বিতীয়বার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় গুলি করে।‘

আকিব আরও বলেন, ‘গুলি লাগার পর সাঈদ ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায়। আমরা কয়েকজন মিলে তাকে ধরে রিকশায় করে হাসপাতালে পাঠাই। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, সে মারা গেছে। প্রশাসনের গাফিলতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এই মামলার বিচার আগামী জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম ও সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলায় ৬২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩০–৩৫ জনের জবানবন্দি নিয়েই আমরা সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করার আশা করছি।’

বিচার শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে না পরে—কখন রায় হবে সেটা বলা আমাদের এখতিয়ার নয়। তবে আমরা আশা করছি জানুয়ারির মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে পারব।’

এ মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন— এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামি এখনও পলাতক।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত