leadT1ad

ভাঙনে নিঃস্ব হাতিয়ার মানুষ

মেঘনার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি হাহাকারের চিহ্ন

হাতিয়ার সন্তান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো হাতিয়ায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর হাজারো পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

স্ট্রিম সংবাদদাতা
নোয়াখালী
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
হাতিয়ার চানন্দীতে নদীভাঙনের সাক্ষী হয়ে আছে লাল পোল। স্ট্রিম ছবি

চারপাশে থই থই পানি। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাকা সেতু। দেখলে মনে হয়, অপরিকল্পিত নির্মাণের করুন পরিণতি ভোগ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সংযোগ সড়ক থাকাকালে স্থানীয় যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেতুটি। এখন মেঘনার গর্ভে চলে গেছে সড়ক। ভাঙন কবলিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস হয়ে নদীর বুকে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নে অবস্থিত সেতুটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘লাল পোল’ নামে পরিচিত। প্রায় এক বছর আগে সেতুটি ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায় বলে জানিয়েছে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

নীয় বাসিন্দারা জানান, চানন্দী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের লাল পোল দিয়ে কালাদূর এলাকা থেকে ‘ভূমিহীন বাজারে’ যাওয়া যেত। সড়কটি এক সময় স্থানীয় যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। প্রতিদিন শত শত মানুষ এ পথে যাতায়াত করত। কিন্তু মেঘনার ভাঙন ধীরে ধীরে পুরো সড়ক, বাড়িঘর বিলিন গেছে। তবে আজও নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। অনেকে সেতুটি দেখে আগের জনপদের দিক কল্পনা করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের স্মৃতি চিহ্ন

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা বহুবার এই ব্রিজ পার হয়ে কালাদূর বাজারে গেছি। মোটরসাইকেল দিয়ে কত মাইল আমরা গিয়েছি তার হিসাব নাই। আজ নদী সব গিলে খেয়েছে, কিন্তু সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।’

মো. ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘নদী ভাঙনের ফলে সবাই নিঃস্ব। স্থানীয়দের যাতায়াত, কৃষি ও বাজার কেন্দ্র করে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বহু পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। ব্রিজটি দেখলে মানুষের বুকের ভেতর হাহাকার বেড়ে যায়।’

চানন্দী ইউনিয়নের একজন ব্যবসায়ী মো. ফাহিম বলেন, ‘নদীভাঙনে শুধু ঘরবাড়ি নয়, আমাদের রুটি-রুজিও ভেসে গেছে। আমরা মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ অনেক কিছু করেছি, কিন্তু কোথাও সাড়া পাইনি। প্রতিদিন আমরা গৃহহীন হচ্ছি। সরকার দ্রুত টেকসই বাঁধ না দিলে হয়তো আগামীতে পুরো ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে।’

যা বলছে নেতা ও কর্তৃপক্ষ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের বাড়ি হাতিয়া উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো হাতিয়ায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর হাজারো পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

পাউবো নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে লাল পোল ব্রিজটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর আশপাশে বসতঘর-সড়ক কিছুই নেই। সব কিছু নদীগর্ভে চলে গেলেও ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে। তার আশপাশে এখনও নদী ভাঙন হচ্ছে। আমাদের প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রতিরক্ষা প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙন কমবে বলে আশাবাদী। তবে ব্রিজটি নিয়ে আসলে কিছুই করার নেই।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত