leadT1ad

গোলাগুলির সময় খোঁজ মেলে না, পুলিশ আসে লাশ উদ্ধারে

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম

স্ট্রিম গ্রাফিক

চট্টগ্রামে গত এক বছরে অন্তত সাতজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রায় প্রতিটিই ঘটেছে জনবহুল এলাকায়, দিনের আলোয়। তবে কোনো ঘটনার সময়ই পুলিশকে পাওয়া যায়নি। এমনকি একটি ঘটনায় পুলিশের গাড়ি কাছে থাকলেও গোলাগুলি শুরু হলে সরে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশকে পাওয়া যায় মূলত লাশ উদ্ধারের সময়। এরপর তাদের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। এমনকি সম্প্রতি আলোচিত কোনো হত্যার ঘটনাতেই ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন ভূমিকায় পুরো নগরীর বাসিন্দারা আছে আতঙ্কে।

এর মধ্যে গত বুধবার নগরীর বায়েজিদ থানার চালিতাতলীতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে সরোয়ার হোসেন বাবলা নামে ১৫ মামলার এক আসামি নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও।

পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই হামলায় মূল লক্ষ্য ছিলেন সরোয়ার। তিনি চট্টগ্রামের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের সহযোগী ছিলেন। বড় সাজ্জাদ বিদেশে বসে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ। চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে এক সময় তাঁর প্রধান দুই সহযোগী ছিলেন ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলা ও আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবর। তবে বছর দশেক আগে দুজনই সাজ্জাদের দল থেকে বেরিয়ে পৃথক দল গড়ে তোলেন। আধিপত্য ধরে রাখতেই সরোয়ারকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।

তবে এই ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার বিষয়টি। কারণ, বড় সাজ্জাদ এবং তাঁর বর্তমান প্রধান সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ছোট সাজ্জাদ স্ত্রীসহ কারাগারে থাকলেও তাঁর বাহিনীর ‘প্রতাপ’ কমেনি একটুও। গত এক বছরে নগরীর প্রতিটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডে নাম এসেছে এই বাহিনীর। সবশেষ সরোয়ার হত্যায়ও এসেছে ছোট সাজ্জাদের অনুসারী রায়হান গ্রুপের নাম।

সাজ্জাদ বাহিনীর সামনে পুলিশ যেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’

নগরীতে সাজ্জাদ বাহিনীর ফের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের শুরু মূলত গত বছরের আগস্টে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই মাসে সাজ্জাদ বাহিনীর প্রতিপক্ষ মো. আনিস ও কায়সারকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক এলাকায় গুলি করে খুন করা হয়।

এর এক মাস পর ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁদা না পেয়ে অক্সিজেন কালারপুল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেন ছোট সাজ্জাদ। প্রকাশ্য গুলির ওই ঘটনার পর তাঁকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। পরে ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। তবে ওই সময় পুলিশ সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে করে পাশের ভবনের ছাদে উঠে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। গ্রেপ্তার দূরে থাক, সাজ্জাদের গুলিতে ওই সময় আহত হন দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন।

এরপর চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাত দুটার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেটকারে এলোপাতাড়ি গুলি করে আব্দুল্লাহ আল রিফাত ও বখতিয়ার হোসেন ওরফে মানিক নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের।

ওই রাতে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে চার-পাঁচজন যুবক এসে প্রাইভেটকারটি লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করেন। ওই সময় একটু দূরে ছিল পুলিশের একটি টহল গাড়ি। গুলির শব্দ পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা পুলিশের গাড়িটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়।

চলতি বছরের ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায়ও আসে সাজ্জাদের বাহিনীর নাম। এরপর ২৮ অক্টোবর নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেনকে (২৩)। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও অন্তত ১০ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ওই সময় দুই ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চললেও পুলিশ আসেনি। ঘটনা থামার পর পুলিশ আসে। ওই এলাকায় দোকানি আবুল কাশেম জানান, রাত তখন দুটা। হঠাৎ দেখেন কয়েকটা মোটরসাইকেল। এরপর শুরু হয় গোলাগুলি। এতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন। এক ঘণ্টার ওপরে গোলাগুলি চলার পর আসে পুলিশ।

বাকলিয়ার এক্সেস রোডের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা দিনের বেলাতেও ভয় পাই। কখন কোথায় গুলি হবে কেউ জানে না। পুলিশের গাড়ি আসে, লাশ তুলে নিয়ে যায়, তারপর সব চুপ।’

বায়েজিদের স্থানীয় বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, রাত আটটার পর দরজা বন্ধ করে দেই। ছেলে বাইরে গেলে ফোনে বারবার খোঁজ নিই।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অস্ত্রধারীরা এখন ভয় পায় না। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তারা কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসে।

এদিকে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহকে দেখতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অ্যালার্মিং (উদ্বেগজনক)। আমি বলব, সামনে বিএনপি–জামায়াতসহ যেকোনো রাজনৈতিক দল জনসভা বা গণসংযোগের আগে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাবেন। পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত