মাহবুবুল আলম তারেক
দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে একের পর এক গণআন্দোলন সরকার পতন ঘটাচ্ছে। যা এই অঞ্চলের জেনারেশন-জেড তথা জেন-জিদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও অভিজাত শাসক শ্রেণির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে গভীর হতাশা ও ক্ষোভেরই প্রকাশ। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শক্তি ভারতও এই ঢেউ থেকে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো ভারতের তরুণ প্রজন্মও ফুঁসে উঠতে পারে। ভারতের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি ৩৫ বছরের নিচে। এই তরুণ প্রজন্মও কর্মসংস্থান সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং দুর্নীতির মতো একই সমস্যার মুখোমুখি। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর জেন-জি বিদ্রোহ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া এখন জেন-জি বিপ্লবের উর্বর ক্ষেত্র। কারণ এখানে কর্মসংস্থানের অভাব, দুর্নীতি ও অসম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মিলে জটিল সংকট তৈরি করেছে। দ্রুত উন্নয়ন হলেও সুবিধা গেছে মূলত অভিজাত শ্রেণির হাতে। অন্যদিকে, তরুণরা বঞ্চিত থেকে গেছে। একেকটি ক্ষুদ্র ঘটনার সূত্র ধরে আন্দোলন শুরু হলেও তা বড় আকারে সিস্টেমের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিটি আন্দোলনের তাৎক্ষণিক কারণ আলাদা হলেও মূল সূত্র একই— আর্থ-সামাজিক বৈষম্য থেকে জন্ম নেওয়া হতাশা এবং শাসকদের সঙ্গে প্রজন্মগত ব্যবধান। তরুণ প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে শাসকরা উদাসীন। এই দেশগুলোতে যেই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের পটভূমিতে জেন-জিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ভারতেও একই বৈষম্য বিদ্যমান।
ভারতের ৬০ কোটিরও বেশি তরুণ জনসংখ্যাকে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাগত সুবিধা হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু সেই তরুণ জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় এখন সেই আশীর্বাদ অভিশাপে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই ভারতেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য স্পষ্ট হচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের আশপাশে। কিন্তু বাস্তবে স্নাতক তরুণদের মধ্যে এই হার ১৫ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত। দক্ষতার ঘাটতি, চাকরির সাথে দক্ষতার অসামঞ্জস্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির দুরবস্থা সমস্যাকে আরও জটিল করছে। আয়-বৈষম্যের সূচক (জিনি কোইফিসিয়েন্ট) শূন্য দশমিক ৩৫-এর বেশি, যা ধনী-গরিবের ব্যবধানকে স্পষ্ট করে। উপরন্তু, মুদ্রাস্ফীতি ও জলবায়ু বিপর্যয়—যেমন বন্যা ও খরা তরুণদের হতাশা আরও বাড়াচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক সৈয়দ আজহার উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের ‘মারাঠা কোটা আন্দোলন’ এই অস্থিরতার প্রাথমিক লক্ষণ। লাখ লাখ তরুণ চাকরির দাবিতে রাস্তায় নামে। আন্দোলন অর্থনৈতিক বঞ্চনার সঙ্গে জাতিগত উত্তেজনাকেও উসকে দেয়। দ্রুত সংস্কার না হলে তরুণরা হয় উগ্রপন্থায় ঝুঁকবে, নয়তো বিদেশে পাড়ি জমাবে। এর ফলে পুরো প্রজন্ম ‘হতাশা বনাম হতাশা’-র ফাঁদে আটকে পড়তে পারে।
কাউন্টার কারেন্টস-এ প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা: ভারত যে শিক্ষাগুলো উপেক্ষা করতে পারে না’ শিরোনামের নিবন্ধে আজহার একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতকে সরাসরি তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ভারতের গণতন্ত্র তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। এর প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহৎ এবং নাগরিক সমাজও দৃঢ়। তবুও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। অন্যায্য নীতি, অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত, তরুণ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা মানুষের মনে অবিশ্বাস তৈরি করছে। এতে রাষ্ট্রের বৈধতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় নীতি যখন মানুষের ন্যায়বোধকে আঘাত করে, তখন প্রতিক্রিয়া শান্ত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, কোনো তরুণ স্নাতক যদি মনে করে কোটার আইন বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, অথবা অনলাইনে মতপ্রকাশ অস্বচ্ছভাবে দমন করা হচ্ছে, তবে অসন্তোষ বেড়ে যায়। আজকের অতিসংযুক্ত বিশ্বে এ ধরনের ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের জনসংখ্যাগত সুবিধা তাই এক টিক টিক করা ‘টাইম বোমার‘ মতো। কোটি কোটি তরুণের প্রত্যাশা যদি কর্মসংস্থান, সুযোগ ও অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তবে তা নিছক ফিসফিসানি হয়ে থাকবে না। ধীরে ধীরে তা কণ্ঠে রূপ নেবে, পরে গণআন্দোলনে বিস্তার লাভ করবে।
ইন্ডাস ভ্যালি টাইমসের বিশ্লেষক চিত্তরঞ্জন পানি বলেন, ‘মারাঠা অশান্তি দেখিয়েছে যে, অর্থনৈতিক অসন্তোষ তরুণদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়, এবং ভারতের মতো দেশে এটি জাতিগত-আঞ্চলিক বিভাজনকে উস্কে দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত সংকট (যেমন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা) এই হতাশাকে আরও বাড়াচ্ছে, যা যুবকদের মধ্যে আত্মহত্যা এবং ডিজিটাল আসক্তির হার বাড়িয়েছে। তাই নেপালের মতো সোশ্যাল মিডিয়া-চালিত আন্দোলন ভারতেও ছড়াতে পারে।’
‘২০২৫ সালে ভারতের শাসনব্যবস্থা: অগ্রগতি এবং বিপদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা’ শিরোনামের এক নিবন্ধে চিত্তরঞ্জন একথা বলেন। তার মতে, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের তরুণ বেকারত্ব যেভাবে রাজনৈতিক বিদ্রোহ ডেকে এনেছিল, তেমনটি ভারতেও ঘটতে পারে। আর সম্প্রতি ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত নীতি (যেমন ৫০ শতাংশ শুল্ক) আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাপে ফেলে ভারতের তরুণদের বেকারত্ব আরও বাড়াচ্ছে।
ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব এবং চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। তবে এটি এখন ক্রমেই ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য যেমন, তেমনি ভারতের নিজের জন্যও আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এর সাম্প্রতিক প্রকাশ ঘটেছে নেপালের সহিংস অস্থিরতায়। পূর্বদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে সরকার পতনের যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তাও এখনো সমাধান হয়নি।
দক্ষিণ-পূর্বে থাইল্যান্ড আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী অপসারণ ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারেও ২০২১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। পশ্চিমে অস্থির পাকিস্তান এখনো তার অতীতের ভূতদের সঙ্গে লড়ছে—ইসলামপন্থী উগ্রবাদ, দুর্বল অর্থনীতি এবং ব্যর্থ শাসনব্যবস্থা। দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট পতনের পর তিন বছর আগে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও তার অর্থনীতি এখনো টেকসই পুনরুদ্ধারের কোনো লক্ষণ দেখাতে পারেনি। আর উত্তরে চীনের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রচেষ্টা নতুন অস্থিতিশীলতার উৎস হয়ে উঠেছে।
নিরুপমার মতে, ভারতের জন্য এসব সংকট দূরের সমস্যা নয়। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর ঢল পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে। পাকিস্তান থেকে ক্রমাগত সীমান্তপারের ‘সন্ত্রাসে’র হুমকি এ গ্রীষ্মে কাশ্মীরে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এখন আবার নেপালের অস্থির রাজনীতি চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে ভঙ্গুরতার এই বলয় এত বড় যে ভারত এটিকে উপেক্ষা করতে পারে না। ভারতের নেতৃত্বের সামনে এখন প্রশ্ন—কীভাবে এই ধাক্কাগুলো সামলাবে এবং কীভাবে অঞ্চলকে স্থিতিশীল করবে।
নিরুপমা বলেন, ‘নেপালের সঙ্গে দীর্ঘ ও উন্মুক্ত সীমান্ত আমাদের শরণার্থী স্রোত এবং সীমান্ত অপরাধের ঝুঁকিতে ফেলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। ফলে দেশটি ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।’
প্রথম দেখায় থাইল্যান্ডের অস্থিরতা এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায় আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ চলছে। এই দেশগুলোর জনসংখ্যা ৬০ কোটির বেশি। ফলে ব্লকটির ভেতরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা ভারতের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। তাছাড়া থাইল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছে। যদি এর প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, বা কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়—মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতার চেষ্টা সত্ত্বেও— তাহলে ভারতের সংযুক্ত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরের স্বপ্ন ব্যাহত হবে।
নিরুপমা বলেন, ‘পাকিস্তানকে চিরস্থায়ী সমস্যাগ্রস্ত রাষ্ট্র বলা কিছুটা অবজ্ঞাসূচক শোনাতে পারে, কিন্তু এটিই দুঃখজনক বাস্তবতা। দেশটির বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে বারবার দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। যেমন ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতে ইমরান খানের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। রাজনীতি রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।’
তার মতে, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের সংকট কেবল অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। এগুলো নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে কাশ্মীরে প্রবেশ করে। এতে সন্ত্রাসবাদ বাড়ে, আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট হয় এবং এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিও তৈরি হয়। এই অব্যাহত অস্থিরতা ভারতকে উপমহাদেশের দাবার বোর্ডে বেঁধে রাখে, এমনকি যখন ভারত বৈশ্বিক পরিসরে দৃষ্টি দিতে চায় তখনও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান-চীন জোট, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আর নিকট ভবিষ্যতে এর পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই।
এনডিটিভিতে এক নিবন্ধে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতে অনেকে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়রা, “সেম টুলকিট” তত্ত্বের কথা তুলেছেন। তাদের মতে, তরুণদের নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলন আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত হলেও এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ঘটে যাওয়া শাসন পরিবর্তনের সঙ্গে এক ধরনের অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এ কারণে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে, হয়তো এর পেছনে বৃহত্তর কোনও সমন্বিত প্রচেষ্টা কাজ করছে। অনেকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোই এর নেপথ্যে থাকতে পারে, যারা ভারতসহ পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি সংশয়ও প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাস্তবে দুনিয়া অনেক সময়ই এলোমেলো ঘটনাপ্রবাহের কাছে বেশি সংবেদনশীল, যতটা ষড়যন্ত্রবাদীরা মনে করে তার চেয়েও বেশি। ভারতের অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে এসব ঘটনার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ভারতের তরুণ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করতে পারে। নেপালের আন্দোলন ভারতের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ দুর্নীতি ও বেকারত্বের মতো অভিন্ন সমস্যা দুই দেশেই রয়েছে। তাই সংস্কার না এলে আজকের নেপাল কালকের ভারত হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষক আজহার উদ্দিনের মতে, ভারতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি সীমান্তের বাইরের নয়, বরং নিজেদের ভেতরে। তরুণ প্রজন্মের অপূরণীয় প্রতিশ্রুতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ভবিষ্যত ভয়াবহ বিদ্রোহ ডেকে আনতে পারে। তরুণদের দক্ষতার উন্নয়নে বিনিয়োগ না করা, দুর্নীতি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় তরুণরা ফুঁসছে।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার তরুণরা সরকারকে সতর্ক করছে— আমাদের জায়গা করে দাও, না হলে আমরাই সিস্টেমকে নতুন করে সাজাব। যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তবে ভারতের বৈশ্বিক অগ্রযাত্রা জেনারেশন-জেড-এর বিদ্রোহে ভেঙে পড়তে পারে। সমাধান? আরও সক্রিয় আঞ্চলিক কৌশল— প্রতিবেশীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, দেশের তরুণদের জন্য চাকরি-শিক্ষা কর্মসূচি এবং চীন-মার্কিন চাপের মধ্যে ভারসাম্য। যদি এগুলো না করা হয়, নেপালের মতো ‘জেন-জি’ বিদ্রোহ ভারতেরও মহাধ্বংস ডেকে আনতে পারে।’
সূত্র: কাউন্টার কারেন্টস, নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে একের পর এক গণআন্দোলন সরকার পতন ঘটাচ্ছে। যা এই অঞ্চলের জেনারেশন-জেড তথা জেন-জিদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও অভিজাত শাসক শ্রেণির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে গভীর হতাশা ও ক্ষোভেরই প্রকাশ। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শক্তি ভারতও এই ঢেউ থেকে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো ভারতের তরুণ প্রজন্মও ফুঁসে উঠতে পারে। ভারতের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি ৩৫ বছরের নিচে। এই তরুণ প্রজন্মও কর্মসংস্থান সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং দুর্নীতির মতো একই সমস্যার মুখোমুখি। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর জেন-জি বিদ্রোহ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া এখন জেন-জি বিপ্লবের উর্বর ক্ষেত্র। কারণ এখানে কর্মসংস্থানের অভাব, দুর্নীতি ও অসম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মিলে জটিল সংকট তৈরি করেছে। দ্রুত উন্নয়ন হলেও সুবিধা গেছে মূলত অভিজাত শ্রেণির হাতে। অন্যদিকে, তরুণরা বঞ্চিত থেকে গেছে। একেকটি ক্ষুদ্র ঘটনার সূত্র ধরে আন্দোলন শুরু হলেও তা বড় আকারে সিস্টেমের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিটি আন্দোলনের তাৎক্ষণিক কারণ আলাদা হলেও মূল সূত্র একই— আর্থ-সামাজিক বৈষম্য থেকে জন্ম নেওয়া হতাশা এবং শাসকদের সঙ্গে প্রজন্মগত ব্যবধান। তরুণ প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে শাসকরা উদাসীন। এই দেশগুলোতে যেই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের পটভূমিতে জেন-জিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ভারতেও একই বৈষম্য বিদ্যমান।
ভারতের ৬০ কোটিরও বেশি তরুণ জনসংখ্যাকে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাগত সুবিধা হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু সেই তরুণ জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় এখন সেই আশীর্বাদ অভিশাপে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই ভারতেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য স্পষ্ট হচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের আশপাশে। কিন্তু বাস্তবে স্নাতক তরুণদের মধ্যে এই হার ১৫ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত। দক্ষতার ঘাটতি, চাকরির সাথে দক্ষতার অসামঞ্জস্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির দুরবস্থা সমস্যাকে আরও জটিল করছে। আয়-বৈষম্যের সূচক (জিনি কোইফিসিয়েন্ট) শূন্য দশমিক ৩৫-এর বেশি, যা ধনী-গরিবের ব্যবধানকে স্পষ্ট করে। উপরন্তু, মুদ্রাস্ফীতি ও জলবায়ু বিপর্যয়—যেমন বন্যা ও খরা তরুণদের হতাশা আরও বাড়াচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক সৈয়দ আজহার উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের ‘মারাঠা কোটা আন্দোলন’ এই অস্থিরতার প্রাথমিক লক্ষণ। লাখ লাখ তরুণ চাকরির দাবিতে রাস্তায় নামে। আন্দোলন অর্থনৈতিক বঞ্চনার সঙ্গে জাতিগত উত্তেজনাকেও উসকে দেয়। দ্রুত সংস্কার না হলে তরুণরা হয় উগ্রপন্থায় ঝুঁকবে, নয়তো বিদেশে পাড়ি জমাবে। এর ফলে পুরো প্রজন্ম ‘হতাশা বনাম হতাশা’-র ফাঁদে আটকে পড়তে পারে।
কাউন্টার কারেন্টস-এ প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা: ভারত যে শিক্ষাগুলো উপেক্ষা করতে পারে না’ শিরোনামের নিবন্ধে আজহার একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতকে সরাসরি তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ভারতের গণতন্ত্র তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। এর প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহৎ এবং নাগরিক সমাজও দৃঢ়। তবুও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। অন্যায্য নীতি, অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত, তরুণ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা মানুষের মনে অবিশ্বাস তৈরি করছে। এতে রাষ্ট্রের বৈধতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় নীতি যখন মানুষের ন্যায়বোধকে আঘাত করে, তখন প্রতিক্রিয়া শান্ত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, কোনো তরুণ স্নাতক যদি মনে করে কোটার আইন বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, অথবা অনলাইনে মতপ্রকাশ অস্বচ্ছভাবে দমন করা হচ্ছে, তবে অসন্তোষ বেড়ে যায়। আজকের অতিসংযুক্ত বিশ্বে এ ধরনের ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের জনসংখ্যাগত সুবিধা তাই এক টিক টিক করা ‘টাইম বোমার‘ মতো। কোটি কোটি তরুণের প্রত্যাশা যদি কর্মসংস্থান, সুযোগ ও অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তবে তা নিছক ফিসফিসানি হয়ে থাকবে না। ধীরে ধীরে তা কণ্ঠে রূপ নেবে, পরে গণআন্দোলনে বিস্তার লাভ করবে।
ইন্ডাস ভ্যালি টাইমসের বিশ্লেষক চিত্তরঞ্জন পানি বলেন, ‘মারাঠা অশান্তি দেখিয়েছে যে, অর্থনৈতিক অসন্তোষ তরুণদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়, এবং ভারতের মতো দেশে এটি জাতিগত-আঞ্চলিক বিভাজনকে উস্কে দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত সংকট (যেমন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা) এই হতাশাকে আরও বাড়াচ্ছে, যা যুবকদের মধ্যে আত্মহত্যা এবং ডিজিটাল আসক্তির হার বাড়িয়েছে। তাই নেপালের মতো সোশ্যাল মিডিয়া-চালিত আন্দোলন ভারতেও ছড়াতে পারে।’
‘২০২৫ সালে ভারতের শাসনব্যবস্থা: অগ্রগতি এবং বিপদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা’ শিরোনামের এক নিবন্ধে চিত্তরঞ্জন একথা বলেন। তার মতে, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের তরুণ বেকারত্ব যেভাবে রাজনৈতিক বিদ্রোহ ডেকে এনেছিল, তেমনটি ভারতেও ঘটতে পারে। আর সম্প্রতি ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত নীতি (যেমন ৫০ শতাংশ শুল্ক) আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাপে ফেলে ভারতের তরুণদের বেকারত্ব আরও বাড়াচ্ছে।
ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব এবং চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। তবে এটি এখন ক্রমেই ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য যেমন, তেমনি ভারতের নিজের জন্যও আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এর সাম্প্রতিক প্রকাশ ঘটেছে নেপালের সহিংস অস্থিরতায়। পূর্বদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে সরকার পতনের যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তাও এখনো সমাধান হয়নি।
দক্ষিণ-পূর্বে থাইল্যান্ড আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী অপসারণ ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারেও ২০২১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। পশ্চিমে অস্থির পাকিস্তান এখনো তার অতীতের ভূতদের সঙ্গে লড়ছে—ইসলামপন্থী উগ্রবাদ, দুর্বল অর্থনীতি এবং ব্যর্থ শাসনব্যবস্থা। দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট পতনের পর তিন বছর আগে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও তার অর্থনীতি এখনো টেকসই পুনরুদ্ধারের কোনো লক্ষণ দেখাতে পারেনি। আর উত্তরে চীনের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রচেষ্টা নতুন অস্থিতিশীলতার উৎস হয়ে উঠেছে।
নিরুপমার মতে, ভারতের জন্য এসব সংকট দূরের সমস্যা নয়। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর ঢল পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে। পাকিস্তান থেকে ক্রমাগত সীমান্তপারের ‘সন্ত্রাসে’র হুমকি এ গ্রীষ্মে কাশ্মীরে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এখন আবার নেপালের অস্থির রাজনীতি চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে ভঙ্গুরতার এই বলয় এত বড় যে ভারত এটিকে উপেক্ষা করতে পারে না। ভারতের নেতৃত্বের সামনে এখন প্রশ্ন—কীভাবে এই ধাক্কাগুলো সামলাবে এবং কীভাবে অঞ্চলকে স্থিতিশীল করবে।
নিরুপমা বলেন, ‘নেপালের সঙ্গে দীর্ঘ ও উন্মুক্ত সীমান্ত আমাদের শরণার্থী স্রোত এবং সীমান্ত অপরাধের ঝুঁকিতে ফেলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। ফলে দেশটি ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।’
প্রথম দেখায় থাইল্যান্ডের অস্থিরতা এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায় আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ চলছে। এই দেশগুলোর জনসংখ্যা ৬০ কোটির বেশি। ফলে ব্লকটির ভেতরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা ভারতের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। তাছাড়া থাইল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছে। যদি এর প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, বা কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়—মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতার চেষ্টা সত্ত্বেও— তাহলে ভারতের সংযুক্ত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরের স্বপ্ন ব্যাহত হবে।
নিরুপমা বলেন, ‘পাকিস্তানকে চিরস্থায়ী সমস্যাগ্রস্ত রাষ্ট্র বলা কিছুটা অবজ্ঞাসূচক শোনাতে পারে, কিন্তু এটিই দুঃখজনক বাস্তবতা। দেশটির বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে বারবার দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। যেমন ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতে ইমরান খানের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। রাজনীতি রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।’
তার মতে, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের সংকট কেবল অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। এগুলো নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে কাশ্মীরে প্রবেশ করে। এতে সন্ত্রাসবাদ বাড়ে, আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট হয় এবং এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিও তৈরি হয়। এই অব্যাহত অস্থিরতা ভারতকে উপমহাদেশের দাবার বোর্ডে বেঁধে রাখে, এমনকি যখন ভারত বৈশ্বিক পরিসরে দৃষ্টি দিতে চায় তখনও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান-চীন জোট, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আর নিকট ভবিষ্যতে এর পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই।
এনডিটিভিতে এক নিবন্ধে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতে অনেকে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়রা, “সেম টুলকিট” তত্ত্বের কথা তুলেছেন। তাদের মতে, তরুণদের নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলন আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত হলেও এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ঘটে যাওয়া শাসন পরিবর্তনের সঙ্গে এক ধরনের অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এ কারণে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে, হয়তো এর পেছনে বৃহত্তর কোনও সমন্বিত প্রচেষ্টা কাজ করছে। অনেকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোই এর নেপথ্যে থাকতে পারে, যারা ভারতসহ পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি সংশয়ও প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাস্তবে দুনিয়া অনেক সময়ই এলোমেলো ঘটনাপ্রবাহের কাছে বেশি সংবেদনশীল, যতটা ষড়যন্ত্রবাদীরা মনে করে তার চেয়েও বেশি। ভারতের অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে এসব ঘটনার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ভারতের তরুণ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করতে পারে। নেপালের আন্দোলন ভারতের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ দুর্নীতি ও বেকারত্বের মতো অভিন্ন সমস্যা দুই দেশেই রয়েছে। তাই সংস্কার না এলে আজকের নেপাল কালকের ভারত হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষক আজহার উদ্দিনের মতে, ভারতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি সীমান্তের বাইরের নয়, বরং নিজেদের ভেতরে। তরুণ প্রজন্মের অপূরণীয় প্রতিশ্রুতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ভবিষ্যত ভয়াবহ বিদ্রোহ ডেকে আনতে পারে। তরুণদের দক্ষতার উন্নয়নে বিনিয়োগ না করা, দুর্নীতি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় তরুণরা ফুঁসছে।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার তরুণরা সরকারকে সতর্ক করছে— আমাদের জায়গা করে দাও, না হলে আমরাই সিস্টেমকে নতুন করে সাজাব। যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তবে ভারতের বৈশ্বিক অগ্রযাত্রা জেনারেশন-জেড-এর বিদ্রোহে ভেঙে পড়তে পারে। সমাধান? আরও সক্রিয় আঞ্চলিক কৌশল— প্রতিবেশীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, দেশের তরুণদের জন্য চাকরি-শিক্ষা কর্মসূচি এবং চীন-মার্কিন চাপের মধ্যে ভারসাম্য। যদি এগুলো না করা হয়, নেপালের মতো ‘জেন-জি’ বিদ্রোহ ভারতেরও মহাধ্বংস ডেকে আনতে পারে।’
সূত্র: কাউন্টার কারেন্টস, নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
অনলাইনে জুয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণা করলে অপরাধী ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নতুন জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে এই শাস্তির বিধান রয়েছে।
২৮ মিনিট আগেসফরকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাস দমন, পুলিশ প্রশিক্ষণ, রোহিঙ্গা সংকটসহ পারস্পরিক সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ‘মাদক, সাইকোট্রপিক পদার্থ ও তাদের পূর্বসূরিদের অবৈধ পাচার ও অপব্যবহারের মোকাবিলা’ শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগের্যাব ৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফিন জানান, র্যাব মূলত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে পারে। তারপর আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হই, তিনি বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মুখোশ প্রসঙ্গে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অনেকসময় নিজের পরিচয়
১১ ঘণ্টা আগেআজীবন সংগ্রামী নেতা বদরুদ্দীন উমর কখনও আপস করেননি। চারপাশের লেখক, বুদ্ধিজীবীরা যখন নানা সুবিধা নিয়ে বেঁচেবর্তে ছিলেন, তখনও কারও কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেননি তিনি। তাই আগামী দিনে অনিবার্য হয়ে থাকবেন বদরুদ্দীন উমর।
১৩ ঘণ্টা আগে