আরেক ধরনের সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। তাঁরা বলছেন, আফগান সরকারের নীতি ও ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে ৬৭৯টি বইয়ের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওই দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ বইয়ের লেখকই নারী নন।
সালেহ ফুয়াদ
সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবান সরকার উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় ও বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী হিসেবে ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তারা। এরমধ্যে ১৪০টি বই নারীদের লেখা।
সংবাদমাধ্যমে আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খবরটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে। তালেবানের নীতির সমালোচনা ছাড়াও অনেকে সংবাদটি উপস্থাপনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সংবাদটি সামনে আনে জং
তালেবানের বই নিষিদ্ধের এই খবরটি চলতি মাসের ১০ তারিখ প্রকাশ করে পাকিস্তানের প্রায় ৮৫ বছরের পুরোনো উর্দু দৈনিক জং। তাদের কাবুল প্রতিনিধির পাঠানো খবরটির শিরোনাম অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮টি বিষয় বাদ, ৬৭৯টি বই পড়ানো নিষিদ্ধ তালেবানের’। খবরে বলা হয়, তালেবান সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করার জন্য নীতিগত ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ইতিমধ্যে দেশটির উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়ে ১৮টি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছে ও ৬৭৯টি বই পড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া আরও ২০১টি বিষয়ে নতুন করে পর্যালোচনার আওতায় রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমকে ইসলামি শরিয়ত ও আমিরাত ইসলামিয়ার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য। তবে কবে থেকে তালেবান এই আদেশ জারি করেছে, সেই সময় প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ নেই।
বিবিসির খবর
জংয়ে খবর প্রকাশের ৯ দিন পর আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিবিসি বাংলা তাদের ওয়েবসাইটে ‘নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরানোর নির্দেশ তালেবানের, যৌন হয়রানি নিয়েও পড়ানো নিষেধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিবিসি বাংলা খবরটি প্রকাশ করে বিবিসি আফগানের সূত্রে। এটিকে তারা ওয়েবসাইটে প্রধান শিরোনাম করে রাখে দীর্ঘক্ষণ। এরপর অল্পসময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদমাধ্যমের অনলাইনেই খবরটি প্রকাশ করা হয়। সেখানেও শিরোনামে তালেবান সরকার নারীদের বই নিষিদ্ধ করেছে বলা হয়। যদিও বিবিসির সূত্রে প্রকাশিত খবরের ভেতরে উল্লেখ করা হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ৬৭৯টি বইয়ের ১৪০টির লেখক নারী। বাকি ৫৩৯টি বইয়ের লেখক নারী নন। বিবিসি আফগানের সূত্রে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসও এই খবরটি প্রকাশ করে। তাদের শিরোনামেও তালেবান কর্তৃক নারীর লেখা বই নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, তাদের হাতে আসা নতুন এই নির্দেশিকা আগস্টের শেষ দিকে জারি হয়। বইগুলো পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছেন যে, নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানো যাবে না।"
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের শিরোনাম
বিবিসির সূত্রে প্রথম আলো অনলাইনে এই খবরটির শিরোনাম করে, ‘নারী ও ইরানি লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’। খবরে উল্লেখ করা হয়, ‘আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি-সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত। নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ শিরোনাম করে ‘আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরডটকম-এর শিরোনাম ‘আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, যুগান্তরের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, ইত্তেফাক শিরোনাম করে ‘আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করলো তালেবান’, কালের কণ্ঠ ও ইনকিলাবের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, বাংলাট্রিবিউন ও জনকণ্ঠ শিরোনাম করে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করলো তালেবান’, চ্যানেল আই অনলাইন শিরোনাম করে,‘পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান সরকার’, যমুনা টেলিভিশনের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান’, দৈনিক সংগ্রামের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’। প্রায় একই শিরোনাম করেছে আমাদের সময়, সারাবাংলাডটনেট, সময়ের কণ্ঠস্বর, দীপ্তনিউজ, ঢাকাপোস্টসহ বাংলাদেশের আরও কিছু সংবাদমাধ্যম। এমনকি বাংলা স্ট্রিমও বিবিসির সূত্রে খবরটি একইভাবে প্রকাশ করেছে।
এসব সংবাদমাধ্যমের অনেকগুলোর ফেসবুকে শেয়ার করা ফটোকার্ড ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা
এই খবরের সূত্র ধরে ফেসবুকে তালেবানের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা গেছে অনেককে। অধিকাংশই তালেবানের নারীনীতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা লিখেছেন।
প্রথম আলোর খবরটি শেয়ার দিয়ে রকিবুল ইসলাম রনক নামের একজন লিখেছেন, ‘এই হল শরিয়া আইনের শাসনের নমুনা। বই কি দোষ করছে? নাকি মহিলাদের লিখিত বই এর হিজাব-নেকাব পরতে হবে? নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক বই হলে স্পেসিফিক বই নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু সব না।’
প্রথম আলোর সংবাদ শিরোনামটি উল্লেখ করে সাগর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘আমাদের কয়েকজন হুজুর আফগানিস্তান সফর করছেন। কী জোস নিয়ে যে ফেরেন- আল্লাহই জানেন!’
বিপরীতে পক্ষপাতের অভিযোগ
তবে এর বিপরীতে আরেক ধরনের সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। তাঁরা বলছেন, আফগান সরকারের নীতি ও ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে ৬৭৯টি বইয়ের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওই দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ বইয়ের লেখকই নারী নন। তারপরও শিরোনামে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলা মূলত আফগান সরকারের প্রতি বিদ্ধেষের প্রকাশ। তাঁদের মতে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালেবান।
তরুণ লেখক ফারুক ফেরদৌস নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, আফগানিস্তানের সরকার তাদের গঠিত একটি কমিটির পর্যালোচনার পর ইসলামের শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক বক্তব্য থাকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬৭৯টি বই ব্যান করেছে এবং ওই বইগুলোর জায়গায় বিকল্প বই গ্রহণ করতে বলেছে যেগুলোতে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য থাকবে না।
স্ট্যাটাসে ফারুক ফেরদৌস উল্লেখ করেন, ‘ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আফগানিস্তান সরকারের উপ-শিক্ষামন্ত্রী জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি আগস্টের শেষ দিকে আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়, যা ইন্ডিপেনডেন্ট পার্সিয়ান হাতে পেয়েছে। উক্ত নথিতে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত বইগুলোকে "আদর্শগত, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক" বিষয়বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এসব বইয়ের বিষয়বস্তু শরিয়ার নীতিমালার পরিপন্থী।’
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘তাদের (তালেবান সরকারের) পর্যালোচনা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, সে বিষয়ে কথা নাই। কিন্তু গতকাল থেকে দেখছি যমুনা টিভিসহ আমাদের দেশের কিছু সংবাদমাধ্যম এই সংবাদটা প্রচার করছে "বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ" শিরোনামে। শিরোনামটা সম্ভবত বিবিসি থেকে নেওয়া। বিবিসিও কাছাকাছি শিরোনাম করেছে। কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখলাম তারা বলছে, আফগানিস্তান সরকার ৬৮০টা বই নিষিদ্ধ করেছে, এর মধ্যে নারীদের লিখিত বই ১৪০টা। অর্থাৎ পুরুষদের লিখিত বই ৫৪০টা। তো এই সংবাদের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ’ হওয়ার যৌক্তিকতা আসলে কী?’
লেখক ও শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘শরিয়াবিরোধী গ্রাউন্ডে ৬৮০টা বই নিষিদ্ধ করছে। ইউনিভার্সিটি লেভেলের বই, যা সব সময়ই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এখন সেগুলার মধ্যে নারী পুরুষ দুই রকম লেখকই আছে। তার ওপর নারীদের অংশ মাত্র টুয়েন্টি পার্সেন্ট। এখন এইটারে কি কোনভাবে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হইছে বলা যায়? তারপরও তারা বলবে, কারণ তারা সাদা চামরা, ওয়েস্টার্ন, তারা যা বলবে তাই সত্য। বরং যদি এইভাবে বলত ইরানি লেখকদের লেখা বই নিষিদ্ধ করছে, তাও একটা গ্রাউন্ড থাকত, কারণ নিষিদ্ধ বইয়ের অর্ধেকই ইরানি লেখকদের লেখা।’
সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবান সরকার উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় ও বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী হিসেবে ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তারা। এরমধ্যে ১৪০টি বই নারীদের লেখা।
সংবাদমাধ্যমে আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খবরটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে। তালেবানের নীতির সমালোচনা ছাড়াও অনেকে সংবাদটি উপস্থাপনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সংবাদটি সামনে আনে জং
তালেবানের বই নিষিদ্ধের এই খবরটি চলতি মাসের ১০ তারিখ প্রকাশ করে পাকিস্তানের প্রায় ৮৫ বছরের পুরোনো উর্দু দৈনিক জং। তাদের কাবুল প্রতিনিধির পাঠানো খবরটির শিরোনাম অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮টি বিষয় বাদ, ৬৭৯টি বই পড়ানো নিষিদ্ধ তালেবানের’। খবরে বলা হয়, তালেবান সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করার জন্য নীতিগত ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ইতিমধ্যে দেশটির উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়ে ১৮টি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছে ও ৬৭৯টি বই পড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া আরও ২০১টি বিষয়ে নতুন করে পর্যালোচনার আওতায় রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমকে ইসলামি শরিয়ত ও আমিরাত ইসলামিয়ার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য। তবে কবে থেকে তালেবান এই আদেশ জারি করেছে, সেই সময় প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ নেই।
বিবিসির খবর
জংয়ে খবর প্রকাশের ৯ দিন পর আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিবিসি বাংলা তাদের ওয়েবসাইটে ‘নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরানোর নির্দেশ তালেবানের, যৌন হয়রানি নিয়েও পড়ানো নিষেধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিবিসি বাংলা খবরটি প্রকাশ করে বিবিসি আফগানের সূত্রে। এটিকে তারা ওয়েবসাইটে প্রধান শিরোনাম করে রাখে দীর্ঘক্ষণ। এরপর অল্পসময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদমাধ্যমের অনলাইনেই খবরটি প্রকাশ করা হয়। সেখানেও শিরোনামে তালেবান সরকার নারীদের বই নিষিদ্ধ করেছে বলা হয়। যদিও বিবিসির সূত্রে প্রকাশিত খবরের ভেতরে উল্লেখ করা হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ৬৭৯টি বইয়ের ১৪০টির লেখক নারী। বাকি ৫৩৯টি বইয়ের লেখক নারী নন। বিবিসি আফগানের সূত্রে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসও এই খবরটি প্রকাশ করে। তাদের শিরোনামেও তালেবান কর্তৃক নারীর লেখা বই নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, তাদের হাতে আসা নতুন এই নির্দেশিকা আগস্টের শেষ দিকে জারি হয়। বইগুলো পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছেন যে, নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানো যাবে না।"
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের শিরোনাম
বিবিসির সূত্রে প্রথম আলো অনলাইনে এই খবরটির শিরোনাম করে, ‘নারী ও ইরানি লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’। খবরে উল্লেখ করা হয়, ‘আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি-সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত। নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ শিরোনাম করে ‘আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরডটকম-এর শিরোনাম ‘আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, যুগান্তরের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, ইত্তেফাক শিরোনাম করে ‘আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করলো তালেবান’, কালের কণ্ঠ ও ইনকিলাবের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’, বাংলাট্রিবিউন ও জনকণ্ঠ শিরোনাম করে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করলো তালেবান’, চ্যানেল আই অনলাইন শিরোনাম করে,‘পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান সরকার’, যমুনা টেলিভিশনের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান’, দৈনিক সংগ্রামের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান’। প্রায় একই শিরোনাম করেছে আমাদের সময়, সারাবাংলাডটনেট, সময়ের কণ্ঠস্বর, দীপ্তনিউজ, ঢাকাপোস্টসহ বাংলাদেশের আরও কিছু সংবাদমাধ্যম। এমনকি বাংলা স্ট্রিমও বিবিসির সূত্রে খবরটি একইভাবে প্রকাশ করেছে।
এসব সংবাদমাধ্যমের অনেকগুলোর ফেসবুকে শেয়ার করা ফটোকার্ড ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা
এই খবরের সূত্র ধরে ফেসবুকে তালেবানের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা গেছে অনেককে। অধিকাংশই তালেবানের নারীনীতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা লিখেছেন।
প্রথম আলোর খবরটি শেয়ার দিয়ে রকিবুল ইসলাম রনক নামের একজন লিখেছেন, ‘এই হল শরিয়া আইনের শাসনের নমুনা। বই কি দোষ করছে? নাকি মহিলাদের লিখিত বই এর হিজাব-নেকাব পরতে হবে? নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক বই হলে স্পেসিফিক বই নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু সব না।’
প্রথম আলোর সংবাদ শিরোনামটি উল্লেখ করে সাগর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘আমাদের কয়েকজন হুজুর আফগানিস্তান সফর করছেন। কী জোস নিয়ে যে ফেরেন- আল্লাহই জানেন!’
বিপরীতে পক্ষপাতের অভিযোগ
তবে এর বিপরীতে আরেক ধরনের সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। তাঁরা বলছেন, আফগান সরকারের নীতি ও ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে ৬৭৯টি বইয়ের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওই দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ বইয়ের লেখকই নারী নন। তারপরও শিরোনামে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলা মূলত আফগান সরকারের প্রতি বিদ্ধেষের প্রকাশ। তাঁদের মতে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালেবান।
তরুণ লেখক ফারুক ফেরদৌস নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, আফগানিস্তানের সরকার তাদের গঠিত একটি কমিটির পর্যালোচনার পর ইসলামের শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক বক্তব্য থাকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬৭৯টি বই ব্যান করেছে এবং ওই বইগুলোর জায়গায় বিকল্প বই গ্রহণ করতে বলেছে যেগুলোতে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য থাকবে না।
স্ট্যাটাসে ফারুক ফেরদৌস উল্লেখ করেন, ‘ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আফগানিস্তান সরকারের উপ-শিক্ষামন্ত্রী জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি আগস্টের শেষ দিকে আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়, যা ইন্ডিপেনডেন্ট পার্সিয়ান হাতে পেয়েছে। উক্ত নথিতে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত বইগুলোকে "আদর্শগত, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক" বিষয়বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এসব বইয়ের বিষয়বস্তু শরিয়ার নীতিমালার পরিপন্থী।’
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘তাদের (তালেবান সরকারের) পর্যালোচনা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, সে বিষয়ে কথা নাই। কিন্তু গতকাল থেকে দেখছি যমুনা টিভিসহ আমাদের দেশের কিছু সংবাদমাধ্যম এই সংবাদটা প্রচার করছে "বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ" শিরোনামে। শিরোনামটা সম্ভবত বিবিসি থেকে নেওয়া। বিবিসিও কাছাকাছি শিরোনাম করেছে। কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখলাম তারা বলছে, আফগানিস্তান সরকার ৬৮০টা বই নিষিদ্ধ করেছে, এর মধ্যে নারীদের লিখিত বই ১৪০টা। অর্থাৎ পুরুষদের লিখিত বই ৫৪০টা। তো এই সংবাদের শিরোনাম ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ’ হওয়ার যৌক্তিকতা আসলে কী?’
লেখক ও শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘শরিয়াবিরোধী গ্রাউন্ডে ৬৮০টা বই নিষিদ্ধ করছে। ইউনিভার্সিটি লেভেলের বই, যা সব সময়ই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এখন সেগুলার মধ্যে নারী পুরুষ দুই রকম লেখকই আছে। তার ওপর নারীদের অংশ মাত্র টুয়েন্টি পার্সেন্ট। এখন এইটারে কি কোনভাবে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হইছে বলা যায়? তারপরও তারা বলবে, কারণ তারা সাদা চামরা, ওয়েস্টার্ন, তারা যা বলবে তাই সত্য। বরং যদি এইভাবে বলত ইরানি লেখকদের লেখা বই নিষিদ্ধ করছে, তাও একটা গ্রাউন্ড থাকত, কারণ নিষিদ্ধ বইয়ের অর্ধেকই ইরানি লেখকদের লেখা।’
আজীবন সংগ্রামী নেতা বদরুদ্দীন উমর কখনও আপস করেননি। চারপাশের লেখক, বুদ্ধিজীবীরা যখন নানা সুবিধা নিয়ে বেঁচেবর্তে ছিলেন, তখনও কারও কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেননি তিনি। তাই আগামী দিনে অনিবার্য হয়ে থাকবেন বদরুদ্দীন উমর।
১ ঘণ্টা আগেআয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জুলাই গণহত্যা’ একটি নির্মম ও বেদনাদায়ক অধ্যায়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দ্রুত বিচার এবং অজ্ঞাতনামা শহীদদের মরদেহ শনাক্ত ও স্বীকৃতির দাবি জানান তাঁরা।
২ ঘণ্টা আগেপীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, এখন আবার কেউ কেউ নব্য ফ্যাসিবাদী আচরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। দিল্লিতে বৃষ্টি পড়লে এদেশে ছাতা ধরার চেষ্টা করছে। দিল্লি বা বিদেশি প্রেসক্রিপশনে দেশ চালানোর অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। দেশের মানুষ এসব ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না
৫ ঘণ্টা আগেনতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী পেনশন ভোগরত অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করলে, মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী অথবা স্বামীও নিয়ম অনুযায়ী পেনশন পাবেন।
৫ ঘণ্টা আগে