leadT1ad

কেন থামছে না রাজনৈতিক সহিংসতা

‘প্রতিটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। তবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তোলে। এতে এক অপরাধ থেকে আরেক অপরাধের চক্র তৈরি হয়।’ সাবের আহমেদ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৪৫
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দলের কর্মীরা রাজনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত করতে প্রায়ই অপ্রীতিকর ও সহিংস পন্থা অবলম্বন করেন। দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা একধরনের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দলীয় কোন্দল, অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব থেকেই এ ধরনের সহিংসতা তৈরি হয়।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৪৪৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ১২১ জন নিহত ও আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৮৯২ জন।

এ সব রাজনৈতিক সহিংস ঘটনার কারণ হিসেবে ওঠে এসেছে চাঁদাবাজিকেন্দ্রিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, দলীয় পদ-পদবি ও জমি দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরের কথা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে সরে এসে যোগ্যতার বদলে আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয়, তখন দলের ভেতরেই সহিংস প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও দেখা গেছে রাজনৈতিক সহিংসতা। আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই ভোট নয় বরং পেশি শক্তিই ফলাফল নির্ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি পুলিশ ও র‌্যাবকে দায়ী করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এআই) ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

পুলিশ ও র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের কর্মী-সমর্থকদের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

আইনের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক সহিংসতা

বাংলাদেশের আইনে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়। তবে বিভিন্ন প্রচলিত আইন এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত আইনের আওতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ প্রচলিত থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে শাসক দল এই আইনকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনেই ব্যবহার করে আসছে।

আলাদা করে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ নামক অপরাধ চিহ্নিত করার কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই। ফলে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এ আইনি শূন্যতাই রাজনৈতিক সহিংসতাকে বজায় রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে।

যা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, সম্প্রতি মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডসহ রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত সব ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

খন্দকার মোশাররফ দাবি করেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য দলের ভেতরে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালু আছে।

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা গণতন্ত্রবিরোধী এবং বিএনপির ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’র লক্ষ্যকে ব্যাহত করে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকলে দেশের মানুষ নিরাপদ বোধ করবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি গড়তে হলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া জরুরি।

গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং এতে হয়তো আখেরে আওয়ামী লীগই লাভবান হবে।

রাশেদ খান আরও বলেন, ‘বড় দলগুলো নিজেদের সদস্যদের পর্যবেক্ষণে তেমন মনোযোগ দেয় না। শুধু বহিষ্কার করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। যেসব সদস্য সহিংসতায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাও করা উচিত।’

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে রাশেদ খান বলেন, সরকারের ব্যর্থতাই দেশে ‘মব কালচারের’ বিস্তার ঘটিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে দেশে আইন-শৃঙ্খলার চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে।

র‍্যাশনাল চয়েস থিওরির কথা উল্লেখ করে সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, অপরাধ করার আগে অপরাধীরা চিন্তা করে কীভাবে শাস্তি এড়ানো যায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে তাঁরা কতটা সমর্থন পেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে রাজনৈতিক নেতারা হস্তক্ষেপ করে তাকে ছাড়িয়ে নেন। এটি একটি ভয়ানক প্রবণতা এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

রুটিন অ্যাক্টিভিটি থিওরির প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করে সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। তবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তোলে। এতে এক অপরাধ থেকে আরেক অপরাধের চক্র তৈরি হয়।

‘লেজিসলেটিভ পাওয়ার অ্যাক্ট’-এর কথা উল্লেখ করে সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণে তৃণমূল পর্যায়ে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

Ad 300x250

মৃত্যুর মুখেও গাড়ি থেকে কেউ কাউকে ছেড়ে বের হননি

ঢাবিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন: মুখোমুখি শিবির ও বামপন্থীরা

‘এই বছরেই তারেক রহমান দেশে আসবেন’

জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ বিশিষ্ট নাগরিকের

‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি’, সংশোধন চায় জামায়াত

সম্পর্কিত