leadT1ad

খাগড়াছড়িতে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত নেই

স্ট্রিম সংবাদদাতা
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের কার্যালয়। ফাইল ছবি

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পর প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

জেলা সদর হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার পর প্রতিবেদনে সই করেন ডা. জয়া চাকমা, ডা. মীর মোশাররফ হোসেন ও ডা. নাহিদ আক্তার। স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরীক্ষার পর কোনো ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ‘প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়া হবে। বিস্তারিত সেখান থেকেই জানা যাবে।’

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাকে চেতনানাশক প্রয়োগ করে নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।

ঘটনার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি। অবরোধের মধ্যেই গত রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা তিনজনই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। এ ছাড়া সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। রামেসু বাজার এলাকায় আগুন দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকানে।

ডাক্তারি প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন

এদিকে ডাক্তারি এই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আন্দোলনে থাকা জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন ত্রিপুরা গণমাধ্যমে ‘এটি সরকারের একটি পরিকল্পিত মনগড়া প্রতিবেদন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের পরীক্ষার প্রতিবেদন এত দ্রুত কখনো দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই।’

এদিকে চাকমা রানি ইয়ান ইয়ান এ নিয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছেন। এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই ‘মেডিকেল রিপোর্টে নেগেটিভ আসবে’ বলে প্রচার করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সমাবেশের ডাক দেওয়া ‘সার্বভৌমত্ব সচেতন শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানারে আয়োজনকারীরা বলেছিলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জানতে পারলাম সেই মেয়ে ধর্ষণ হয়নি’। তাদের বক্তব্যে ‘ভুয়া ধর্ষণ’ কথাটি তারাই প্রথম ব্যবহার করেছিল, যেটি পরে হান্নান মাসউদ (এনসিপি নেতা) ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যবহার করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

ইয়ান ইয়ান বলেন, ‘মেডিকেল রিপোর্টে নেগেটিভ আসবে সেটি সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হবার তিনদিন আগে এনারা জানলেন কীভাবে? কারা তাদের সেই আশ্বাস দিয়েছিল?

তিনি আরও বলেন, ‘মেডিকেল রিপোর্ট মঙ্গলবারই সাংবাদিকদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেছে? তাদের সেই এখতিয়ার আছে? নাকি পুলিশ করেছে? করে থাকলে থানার রিসিভ করার কোনো সিল নেই কেন? আর পুলিশ করুক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ভুক্তভোগীর ছবি নামসহ ব্যক্তিগত পরিচয় সম্বলিত রিপোর্ট প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় নয় কি?’

ডাক্তারি প্রতিবেদনে আঘাতের চিহ্ন না থাকার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইয়ান ইয়ান। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর বাবার করা এজাহারে উল্লেখ আছে, মেয়েটিকে জোর করে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে অচেতন অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখা হয়। তাঁর প্রশ্ন, নাক-মুখ চেপে ধরার কোনো চিহ্ন নেই কেন? মাটিতে ফেলে রাখলে বা অচেতন হলে শরীরের অন্তত অনাবৃত অংশে আঁচড় লাগার কথা, সেটিরও কোনো আলামত নেই।

Ad 300x250

সম্পর্কিত