leadT1ad

তরুণদের সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ২৭
পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি

সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য দেশের ১২ জন যুব-উদ্যোক্তাকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ তুলে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তরুণদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের যুবসমাজের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তোমাদের নতুন নীতি, যুগান্তকারী ধারণা এবং সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখতে চাই। তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ একটি উন্নত, মানবিক এবং উদ্ভাবনী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না।’

আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই বলেও উল্লেখ করেন প্রদান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তরুণরা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আর কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এগুলোকে আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।’

এর আগে গতকাল রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম জানান, দেশের যুবকদের উদ্যম, নেতৃত্বগুণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত ও সম্মানীত করার উদ্দেশ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত যুবকল্যাণ তহবিল ব্যবস্থাপনা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে স্থায়ীভাবে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তন করা হয়। এই অ্যাওয়ার্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, যুবকদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। এটি শুধু সম্মান নয়-একটি আহ্বান, যা তরুণদের নেতৃত্বে এক নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দেয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে কতজনকে পুরস্কার দেওয়া হলো

এ বছর যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনজন; শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, কারিগরি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য দুজন; দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য দুজন এই পুরস্কার পেয়েছেন।

এ ছাড়াও জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনজন এবং ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ২ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে নগদ এক লাখ টাকার প্রাইজবন্ড, একটি সম্মাননা ক্রেস্ট এবং একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কারের যোগ্যতা উল্লেখ করে সচিব বলেন, প্রার্থীকে অবশ্যই ১৮-৪৫ বছর হতে হবে। অলাভজনক, অরাজনৈতিক এবং অবৈতনিকভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এবং উন্নয়নমূলক কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে। দাখিলকৃত প্রোফাইলের বিষয়ে ক্যাটাগরিতে উল্লিখিত বিষয় সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার (৯ম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব) প্রত্যায়ন থাকতে হবে। জেলা কমিটির সুপারিশ থাকতে হবে।

পুরস্কারের অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে, আগে ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা বিবেচিত হবেন না। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি যোগ্য হবেন না। সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত কোনো ব্যক্তি যোগ্য হবেন না। ঋণ খেলাপি ব্যক্তি যোগ্য হবেন না এবং বিজ্ঞপ্তির আলোকে চাহিত তথ্যাদি দাখিল না করায়।

পুরস্কার পেলেন কারা

যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অসাধারণ অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজন হলেন, শেরপুরের মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, মাগুরার মো. আক্কচ খান ও লক্ষীপুরের মো. জাকির হোসেন।

শিক্ষা বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, কারিগরি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দুজন হলেন, ঝালকাঠির মো. খালেদ সাইফুল্লাহ ও গাইবান্ধার মো. শাহদাৎ হোসেন।

দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দুজন হলেন রাজশাহীর হাসান শেখ ও পাবনার মো. দ্বীপ মাহবুব।

জেষ্ঠ্যদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজন হলেন, লালমনিরহাটের মো. জামাল হোসেন, কক্সবাজারের নুরুল আবছার ও রাজশাহীর মো. মুহিন (মোহনা)।

এবং ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দুজন হলেন, সাতক্ষীরার আফঈদা খন্দকার এবং বান্দরবানের উছাই মং মার্মা। এরমধ্যে আফঈদা খন্দকার জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত