leadT1ad

যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সংশোধিত শান্তি কাঠামো ঘোষণা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পরিকল্পনা নিয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন। ছবি: এএফপি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যৌথভাবে একটি সংশোধিত শান্তি কাঠামো ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করা। এই ঘোষণা জেনেভায় হওয়া নিবিড় কূটনৈতিক আলোচনার পর আসে।

এর আগে ওয়াশিংটনের প্রস্তাব মস্কোর পক্ষে অতিরিক্ত অনুকূল হওয়ায় সমালোচিত হয়েছিল। এর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন আলোচনার পর রবিবার নতুন এই প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এদিকে রাশিয়ার বাহিনী সামরিক অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে এবং ইউক্রেনের অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে।

রবিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করতে যে কোনো চুক্তি অবশ্যই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ‘সম্পূর্ণভাবে রক্ষা’ করতে হবে। তারা একটি ‘হালনাগাদ ও পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ প্রকাশ করেন। তবে কাঠামোর বিস্তারিত জানানো হয়নি।

জেনেভায় বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, আলোচনা ছিল ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’। উভয় পক্ষ নিজেদের মতামত ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে ‘তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি’ অর্জন করেছে। তারা ‘টেকসই ও ন্যায্য শান্তি’র প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওয়াশিংটন ও কিয়েভ ইউক্রেনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং পুনর্গঠনের নিশ্চয়তা দিতে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

পটভূমি

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করার পর ইউক্রেন বিপুল ভূখণ্ড হারিয়েছে। রুশ বিমান হামলায় ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলমান থাকলেও সফল হয়নি। তবে এবছরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কূটনীতি দ্রুত গতি পেয়েছে।

গত অক্টোবরে মায়ামিতে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার এবং রুশ প্রতিনিধি কিরিল দিমিত্রিয়েভ এক বৈঠকে একটি ২৮ দফার খসড়া শান্তি প্রস্তাব তৈরি করেন। এতে দনবাসে ভূখণ্ড ছাড়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ছোট করা, ন্যাটোর সদস্য না হওয়া এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বন্ধের মতো দাবি ছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি রাশিয়ার প্রতি বেশি অনুকূল বলে সমালোচিত হয়।

গত সপ্তাহে খসড়াটি ফাঁস হওয়ার পর ইউক্রেন, ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাদের অভিযোগ—এই পরিকল্পনায় কিয়েভের মতামত নেই এবং এটি মস্কোর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের বিকল্প প্রস্তাব দেয়।

গত সপ্তাহে এক গম্ভীর ভাষণে জেলেনস্কিও বলেন, এই পরিকল্পনা ইউক্রেনকে এমন অবস্থায় ফেলেছে যখন তাকে ‘মর্যাদা হারানো’ বা ‘মূল মিত্র হারানো’—এই দুইয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়।

ইউরোপীয় খসড়ায় শুধু রাশিয়ার স্বার্থের প্রতি অনুকূল উপাদানগুলো বাদ দেওয়া হয়। সেখানে রাশিয়ার ক্ষতিপূরণ ও ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা গুরুত্ব পায়। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনও কৃতজ্ঞতা না দেখানোর অভিযোগও করেন। তিনি ২৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব গ্রহণের একটি প্রাথমিক সময়সীমাও দেন, যদিও পরবর্তীতে সেটাকে তাকে নমনীয় সময়সীমা বলা হয়েছে।

রবিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) জেনেভায় পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও, উইটকফ ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের প্রধান সহকারী আন্দ্রি ইয়ারমাক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানে মূল খসড়াটি ধাপে ধাপে সংশোধন করা হয়।

এই সমঝোতা শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে হবে। রাশিয়ারও এখানে মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেন যে কিয়েভ আলোচনা না করলে রাশিয়া ইউক্রেনের আরও ভেতরে অগ্রসর হবে।

হালনাগাদ কাঠামোর মূল দিকগুলো

হোয়াইট হাউসের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন কাঠামোতে ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা’ এবং একটি ‘টেকসই ও ন্যায্য শান্তির’ ভিত্তি গড়ে তোলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে প্রধান পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ—

নিরাপত্তা নিশ্চয়তা:

প্রস্তাবটি ন্যাটোর আর্টিকেল ৫-এর আদলে তৈরি করা হয়েছে। এতে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন প্রতিরোধে আন্তঃমহাদেশীয় নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি থাকবে। মেয়াদ প্রাথমিকভাবে ১০ বছর, পরে পারস্পরিক সম্মতিতে বাড়ানো যাবে।

ভূখণ্ড ও সামরিক বিষয়ে সমন্বয়:

তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার দাবি কমানো হয়েছে। আলোচনার সূচনা হতে পারে বর্তমান অবস্থান থেকে। ইউক্রেনের শান্তিকালীন বাহিনী কমানোর শর্তও শিথিল করা হয়েছে। ইউরোপের বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সীমা ৮ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

অর্থনীতি ও পুনর্গঠন:

মার্কিন-রাশিয়া বিনিয়োগ কাঠামোর ওপর জোর না দিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে—জমে থাকা রুশ সম্পদ ইউক্রেনের পুনর্গঠন ও ক্ষতিপূরণে ব্যবহার করা হবে। এতে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কোনো বিশেষ সুবিধা থাকবে না।

অন্যান্য বিষয়:

জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে, তবে তা শান্তিচুক্তি মেনে চলার ওপর নির্ভর করবে। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের পথে বাধা দেওয়ার কোনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই, যদিও মতৈক্য এখনও স্পষ্ট নয়।

যে বিষয়গুলো অনির্দিষ্ট ছিল, তা নিয়ে দুই পক্ষ আগামী দিনে বিস্তারিত কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা হতে পারে।

হালনাগাদ কাঠামো আলোচনাভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে একটি পদক্ষেপ। তবে জটিলতাও রয়ে গেছে। ইউক্রেনের জন্য এটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও পুনর্গঠন সহায়তা এনে দিতে পারে। কিন্তু কিছু ছাড়ও দিতে হতে পারে, যা দেশের ভেতরে বিতর্ক তৈরি করতে পারে।

রাশিয়া এই সংশোধনকে অপর্যাপ্ত মনে করতে পারে, কারণ তারা ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ের দাবিতে অনড় রয়ে গেছে। ন্যাটোর ঐক্য, বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার এবং সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবসহ আরও বিস্তৃত ভূরাজনৈতিক বিষয় এতে জড়িত। আলোচনা ব্যর্থ হলে উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত