স্ট্রিম ডেস্ক

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) হোয়াইট হাউস যে অভ্যর্থনা দিয়েছে, তা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। এর মধ্য দিয় পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্প কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেন তাও প্রকাশ পায়। প্রিন্সের সফরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কার্যভ্রমণ’ বলা হলেও, এটি অতীতের রাষ্ট্রীয় সফরগুলোর চেয়েও বেশি আড়ম্বরপূর্ণ ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ লনে এসে সৌদি প্রিন্সকে স্বাগত জানান। দক্ষিণ লন হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বড় গ্রহণমঞ্চ। পতাকাবাহী অশ্বারোহী দল ছিল। আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ে সম্মান প্রদর্শন করে। পরে নতুন করে সাজানো ওভাল অফিসে ঢুকে ট্রাম্প আরও নাটকীয়তা দেখান। তিনি প্রিন্সের হাত আঁকড়ে ধরলেন। কয়েকবার বললেন, রাজপরিবারের এই বন্ধুত্ব পাওয়া তার জন্য অনেক বড় সম্মাননের বিষয়।
এক সাংবাদিক ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার প্রসঙ্গ তোলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সাত বছর এই হত্যাকাণ্ডের কারণেই সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি। প্রশ্ন শুনে ট্রাম্প ওই সাংবাদিক ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি-কে আক্রমণ করেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, খাশোগি ছিলেন ‘অত্যন্ত বিতর্কিত’ ব্যক্তি এবং সবাই তাকে পছন্দ করত না। ট্রাম্প এমনভাবে কথাটা বলেন, যেন তাকে হত্যা করা ঠিক ছিল। তিনি আরও দাবী করেন যে প্রিন্স হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। অথচ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল সৌদি যুবরাজ ওই হত্যার আদেশদাতা।
ট্রাম্পের মানবাধিকার অবহেলা, গোয়েন্দা সংস্থার মতামত নাকচ করা এবং স্বৈরশাসকদের প্রতি তার পক্ষপাত নতুন কিছু নয়। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এই দিকেই ঝুঁকে গেছে। তবে যুবরাজ মোহাম্মদের এই সফরে প্রকৃত পরিবর্তনটি দেখা গেল আকাশে।
উড়োজাহাজ প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের কাছে বিক্রি হতে পারে বলে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন। বিক্রি শর্তহীন হবে। সৌদি আরব যে এফ-৩৫ পাবে, তার সক্ষমতা ইসরায়েলের কাছে থাকা বিমানের সমানই থাকবে।
এই সম্ভাব্য চুক্তি দীর্ঘদিনের মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের অন্যতম নীতি—ইসরায়েলকে সবসময় অঞ্চলের সেরা সামরিক প্রযুক্তি দিয়ে গুণগতভাবে এগিয়ে রাখা—তার বিরুদ্ধে যায়। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েল, দুই দেশই সমানভাবে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাই উভয়েই শীর্ষমানের সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার যোগ্য।
ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরব এক মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, দুটো দেশরই সর্বোচ্চ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’ এই ভাষা ইসরায়েলের পছন্দসই নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন-ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এটি আরও একটি ধাক্কা।
আরেকটি সমান গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো—সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর থেকে উন্নতমানের এআই চিপ বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এ সিদ্ধান্ত রিয়াদের লক্ষ্যকে শক্তিশালী করবে। রিয়াদ বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ও জ্বালানি-নির্ভর ডেটা অবকাঠামোর কেন্দ্র হতে চায়। ভবিষ্যতের বৈশ্বিক এআই অর্থনীতিতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গাউস বলেন, এআই অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি অংশীদারত্ব ১৯৩০-এর দশকে মার্কিন কর্পোরেট নেতৃত্বে সৌদির তেলক্ষেত্র উন্নয়নের মতোই একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। তার মতে, এই অংশীদারত্ব উভয় দেশের সম্পর্কে এমন একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করবে, যা যেকোনো লিখিত নিরাপত্তা চুক্তির চেয়েও স্থায়ী হতে পারে।
সম্প্রতি আরও কিছু ঘটনা ইঙ্গিত দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে হলেও মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে ইসরায়েলকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া থেকে কিছুটা সরে যাচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র-প্রণীত প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিনের সম্ভাব্য পথরেখা উল্লেখ করা হয়। এতে ইসরায়েলের তীব্র আপত্তি ছিল। তার আগেই জুনের শেষে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন, যা ইসরায়েল চায়নি। আর মে মাসে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাত যান, কিন্তু ইসরায়েলে যাননি।
এসব পরিবর্তন এমন এক সময় ঘটছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। জুন মাসে ট্রাম্প ও ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এতে উপসাগরীয় অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়ায়।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন, ‘সৌদি নেতৃত্ব আতঙ্কিত হয়েছিল যে সংঘাত খুব দ্রুত আঞ্চলিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এক ধরনের নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। কিন্তু রিয়াদ এখনো শঙ্কিত যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।’
ইরানে হামলার পর নেতানিয়াহু মনে হয় ওয়াশিংটনের সমর্থনকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন। তিনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখান। হামাস কর্মকর্তাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় একটি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালান। ট্রাম্প নাকি ইসরায়েলের ওই পরিকল্পনার বিষয়ে হামলার খুব অল্প সময় আগে জানতে পারেন। কাতার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক মিত্র হওয়ায় এটি তাঁর কাছে অপমানজনক মনে হয়।
প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের শেষে হোয়াইট হাউস সফরে নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে অপদস্থ করেন। তিনি নেতানিয়াহুকে ওভাল অফিস থেকেই কাতারের আমিরকে ফোন করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
ট্রাম্পের লেনদেন-ভিত্তিক নীতিনির্ধারণে ইসরায়েলের পক্ষে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাতার ট্রাম্পকে নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহারের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বিমান দিয়েছে।
এই বিপুল অর্থপ্রবাহ প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য, দুই ক্ষেত্রেই ঘটে। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে জ্যারেড কুশনারের তহবিলে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
ট্রাম্প বারবার দেখিয়েছেন যে নির্বাচিত নেতাদের তুলনায় স্বৈরশাসকদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যতা বেশি। নেতানিয়াহুর মতো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো বাধা নেই। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হলে তিনি চীনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নেবেন।
সৌদি আরবের চীনের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার আশঙ্কা আগের প্রশাসনের সময় থেকেই ছিল। এ কারণে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থান নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিন সালমানকে ‘অবরোধযোগ্য’ বলে বর্ণনা করা থেকে তিনি অপমানজনকভাবে পিছু হটেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিনি জেদ্দায় গিয়ে কুখ্যাত ‘ফিস্ট বাম্প’ বিনিময় করেন।
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, সাম্প্রতিক কয়েক মাসের পরিবর্তনগুলো আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো মৌলিক পুনর্গঠন নির্দেশ করে না। তারা বলেন, সৌদি সফরের চাকচিক্যের আড়ালে অনেক বিষয় আসলে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, ততটা নয়।
যুবরাজ যখন ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দেন, তখন কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্র কতসংখ্যক এফ-৩৫ সৌদি আরবকে দেবে, তাও পরিষ্কার নয়। দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি চুক্তির মতো কিছু আলোচিত বিষয় শিগগিরই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ কংগ্রেস এগুলো আটকে দিতে পারে।
সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়েও আলোচনা হয়, কিন্তু যুবরাজ তা নম্রভাবে সরিয়ে রাখেন। তিনি জানান, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে হলে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। আর এই প্রতিশ্রুতি সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের অস্পষ্ট ভাষার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে।
গাজা এবং সাগ্রিকভাবে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য প্রকল্পের সভাপতি এবং বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লেভি খুব কম পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখেন। তাঁর মতে, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নে কোনো আশাবাদ নেই। ইসরায়েলের হাতে এখনো পুরো স্বাধীনতা রয়েছে। তারা জিম্মিদের বের করে এনেছে, আবার গাজায় হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বৃহত্তর দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে যত পরিবর্তনই দেখা যাক, মূল কাঠামো একই থাকে। তাঁর ভাষায়, ‘বাইডেন প্রশাসনের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বাদ দিলে, ট্রাম্প প্রশাসনের পারিবারিক স্বার্থ যোগ করলে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও ইসরায়েলের অতিরিক্ত আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেব করলে—এখানে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
লেভি আরও বলেন যে, বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি মূলত একই রকম আছে। তাঁর মতে, ‘এ নীতি পরিচালিত হয় এমন লোকদের মাধ্যমে, যাদের এই অঞ্চলের বিষয়ে বোঝাপড়া খুব সামান্য এবং যারা ইসরায়েল ও কয়েকজন আঞ্চলিক শাসকের ইঙ্গিতে নীতি নির্ধারণ করেন।’
(দ্য গার্ডিয়ানের সিনিয়র আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা জুলিয়ান বোর্গারের প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাহবুবুল আলম তারেক)

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) হোয়াইট হাউস যে অভ্যর্থনা দিয়েছে, তা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। এর মধ্য দিয় পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্প কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেন তাও প্রকাশ পায়। প্রিন্সের সফরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কার্যভ্রমণ’ বলা হলেও, এটি অতীতের রাষ্ট্রীয় সফরগুলোর চেয়েও বেশি আড়ম্বরপূর্ণ ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ লনে এসে সৌদি প্রিন্সকে স্বাগত জানান। দক্ষিণ লন হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বড় গ্রহণমঞ্চ। পতাকাবাহী অশ্বারোহী দল ছিল। আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ে সম্মান প্রদর্শন করে। পরে নতুন করে সাজানো ওভাল অফিসে ঢুকে ট্রাম্প আরও নাটকীয়তা দেখান। তিনি প্রিন্সের হাত আঁকড়ে ধরলেন। কয়েকবার বললেন, রাজপরিবারের এই বন্ধুত্ব পাওয়া তার জন্য অনেক বড় সম্মাননের বিষয়।
এক সাংবাদিক ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার প্রসঙ্গ তোলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সাত বছর এই হত্যাকাণ্ডের কারণেই সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি। প্রশ্ন শুনে ট্রাম্প ওই সাংবাদিক ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি-কে আক্রমণ করেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, খাশোগি ছিলেন ‘অত্যন্ত বিতর্কিত’ ব্যক্তি এবং সবাই তাকে পছন্দ করত না। ট্রাম্প এমনভাবে কথাটা বলেন, যেন তাকে হত্যা করা ঠিক ছিল। তিনি আরও দাবী করেন যে প্রিন্স হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। অথচ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল সৌদি যুবরাজ ওই হত্যার আদেশদাতা।
ট্রাম্পের মানবাধিকার অবহেলা, গোয়েন্দা সংস্থার মতামত নাকচ করা এবং স্বৈরশাসকদের প্রতি তার পক্ষপাত নতুন কিছু নয়। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এই দিকেই ঝুঁকে গেছে। তবে যুবরাজ মোহাম্মদের এই সফরে প্রকৃত পরিবর্তনটি দেখা গেল আকাশে।
উড়োজাহাজ প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের কাছে বিক্রি হতে পারে বলে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন। বিক্রি শর্তহীন হবে। সৌদি আরব যে এফ-৩৫ পাবে, তার সক্ষমতা ইসরায়েলের কাছে থাকা বিমানের সমানই থাকবে।
এই সম্ভাব্য চুক্তি দীর্ঘদিনের মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের অন্যতম নীতি—ইসরায়েলকে সবসময় অঞ্চলের সেরা সামরিক প্রযুক্তি দিয়ে গুণগতভাবে এগিয়ে রাখা—তার বিরুদ্ধে যায়। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েল, দুই দেশই সমানভাবে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাই উভয়েই শীর্ষমানের সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার যোগ্য।
ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরব এক মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, দুটো দেশরই সর্বোচ্চ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’ এই ভাষা ইসরায়েলের পছন্দসই নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন-ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এটি আরও একটি ধাক্কা।
আরেকটি সমান গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো—সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর থেকে উন্নতমানের এআই চিপ বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এ সিদ্ধান্ত রিয়াদের লক্ষ্যকে শক্তিশালী করবে। রিয়াদ বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ও জ্বালানি-নির্ভর ডেটা অবকাঠামোর কেন্দ্র হতে চায়। ভবিষ্যতের বৈশ্বিক এআই অর্থনীতিতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গাউস বলেন, এআই অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি অংশীদারত্ব ১৯৩০-এর দশকে মার্কিন কর্পোরেট নেতৃত্বে সৌদির তেলক্ষেত্র উন্নয়নের মতোই একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। তার মতে, এই অংশীদারত্ব উভয় দেশের সম্পর্কে এমন একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করবে, যা যেকোনো লিখিত নিরাপত্তা চুক্তির চেয়েও স্থায়ী হতে পারে।
সম্প্রতি আরও কিছু ঘটনা ইঙ্গিত দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে হলেও মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে ইসরায়েলকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া থেকে কিছুটা সরে যাচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র-প্রণীত প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিনের সম্ভাব্য পথরেখা উল্লেখ করা হয়। এতে ইসরায়েলের তীব্র আপত্তি ছিল। তার আগেই জুনের শেষে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন, যা ইসরায়েল চায়নি। আর মে মাসে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাত যান, কিন্তু ইসরায়েলে যাননি।
এসব পরিবর্তন এমন এক সময় ঘটছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। জুন মাসে ট্রাম্প ও ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এতে উপসাগরীয় অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়ায়।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন, ‘সৌদি নেতৃত্ব আতঙ্কিত হয়েছিল যে সংঘাত খুব দ্রুত আঞ্চলিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এক ধরনের নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। কিন্তু রিয়াদ এখনো শঙ্কিত যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।’
ইরানে হামলার পর নেতানিয়াহু মনে হয় ওয়াশিংটনের সমর্থনকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন। তিনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখান। হামাস কর্মকর্তাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় একটি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালান। ট্রাম্প নাকি ইসরায়েলের ওই পরিকল্পনার বিষয়ে হামলার খুব অল্প সময় আগে জানতে পারেন। কাতার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক মিত্র হওয়ায় এটি তাঁর কাছে অপমানজনক মনে হয়।
প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের শেষে হোয়াইট হাউস সফরে নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে অপদস্থ করেন। তিনি নেতানিয়াহুকে ওভাল অফিস থেকেই কাতারের আমিরকে ফোন করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
ট্রাম্পের লেনদেন-ভিত্তিক নীতিনির্ধারণে ইসরায়েলের পক্ষে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাতার ট্রাম্পকে নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহারের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বিমান দিয়েছে।
এই বিপুল অর্থপ্রবাহ প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য, দুই ক্ষেত্রেই ঘটে। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে জ্যারেড কুশনারের তহবিলে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
ট্রাম্প বারবার দেখিয়েছেন যে নির্বাচিত নেতাদের তুলনায় স্বৈরশাসকদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যতা বেশি। নেতানিয়াহুর মতো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো বাধা নেই। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হলে তিনি চীনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নেবেন।
সৌদি আরবের চীনের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার আশঙ্কা আগের প্রশাসনের সময় থেকেই ছিল। এ কারণে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থান নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিন সালমানকে ‘অবরোধযোগ্য’ বলে বর্ণনা করা থেকে তিনি অপমানজনকভাবে পিছু হটেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিনি জেদ্দায় গিয়ে কুখ্যাত ‘ফিস্ট বাম্প’ বিনিময় করেন।
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, সাম্প্রতিক কয়েক মাসের পরিবর্তনগুলো আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো মৌলিক পুনর্গঠন নির্দেশ করে না। তারা বলেন, সৌদি সফরের চাকচিক্যের আড়ালে অনেক বিষয় আসলে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, ততটা নয়।
যুবরাজ যখন ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দেন, তখন কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্র কতসংখ্যক এফ-৩৫ সৌদি আরবকে দেবে, তাও পরিষ্কার নয়। দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি চুক্তির মতো কিছু আলোচিত বিষয় শিগগিরই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ কংগ্রেস এগুলো আটকে দিতে পারে।
সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়েও আলোচনা হয়, কিন্তু যুবরাজ তা নম্রভাবে সরিয়ে রাখেন। তিনি জানান, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে হলে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। আর এই প্রতিশ্রুতি সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের অস্পষ্ট ভাষার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে।
গাজা এবং সাগ্রিকভাবে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য প্রকল্পের সভাপতি এবং বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লেভি খুব কম পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখেন। তাঁর মতে, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নে কোনো আশাবাদ নেই। ইসরায়েলের হাতে এখনো পুরো স্বাধীনতা রয়েছে। তারা জিম্মিদের বের করে এনেছে, আবার গাজায় হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বৃহত্তর দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে যত পরিবর্তনই দেখা যাক, মূল কাঠামো একই থাকে। তাঁর ভাষায়, ‘বাইডেন প্রশাসনের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বাদ দিলে, ট্রাম্প প্রশাসনের পারিবারিক স্বার্থ যোগ করলে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও ইসরায়েলের অতিরিক্ত আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেব করলে—এখানে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
লেভি আরও বলেন যে, বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি মূলত একই রকম আছে। তাঁর মতে, ‘এ নীতি পরিচালিত হয় এমন লোকদের মাধ্যমে, যাদের এই অঞ্চলের বিষয়ে বোঝাপড়া খুব সামান্য এবং যারা ইসরায়েল ও কয়েকজন আঞ্চলিক শাসকের ইঙ্গিতে নীতি নির্ধারণ করেন।’
(দ্য গার্ডিয়ানের সিনিয়র আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা জুলিয়ান বোর্গারের প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাহবুবুল আলম তারেক)

আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের খোস্ত প্রদেশে পাকিস্তানের এক বিমান হামলায় ৯ শিশু ও এক নারী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাতের পর গুরবুজ জেলায় এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে আফগান তালেবান প্রশাসন।
৭ ঘণ্টা আগে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যৌথভাবে একটি সংশোধিত শান্তি কাঠামো ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করা। এই ঘোষণা জেনেভায় হওয়া নিবিড় কূটনৈতিক আলোচনার পর আসে।
১ দিন আগে
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শান্তিচুক্তিতে রাজি হতে চাপ দেওয়া হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র তার ন্যাটো মিত্রদের জানিয়েছে। কিয়েভ এখনই শান্তিচুক্তিতে সই না করলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
১ দিন আগে
মানুষ ভাষা কোথা থেকে পেল– বছরের পর বছর এই প্রশ্ন ঘুরছে। দার্শনিকরা উত্তর লিখেছেন, নৃবিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করছেন প্রমাণ। ভাষাবিজ্ঞানীরা অসংখ্য ধারণা ভেঙেচুরে গড়লেও, উৎস রহস্যের ঘেরাটোপেই থেকে গেছে।
২ দিন আগে