গাজায় শিশুখাদ্যের মজুত দিন দিন ফুরিয়ে আসছে, কারণ ইসরায়েল ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে সাহায্য পৌঁছাতে কঠোরভাবে বাধা দিচ্ছে। সামান্য যেটুকু ত্রাণ ঢুকতে পারছে, সেটিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আসছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই ত্রাণে কোনো শিশুখাদ্য থাকে না।
সৈকত আমীন
গাজায় ইসরায়েল মানবিক সহায়তা ঢোকার পথ কঠোরভাবে অবরুদ্ধ করায় শত শত শিশু মারাত্মক বিপদের মুখে পড়েছে, সেখানে চলছে মায়ের দুধসহ শিশুখাদ্যের তীব্র সংকট।
গাজার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী হানাআ আল-তাওয়ীল পাঁচ সন্তানের মা। তিনি জানান, নিজেই ঠিকমতো খেতে না পারায় সন্তানকে বুকের দুধও দিতে পারছেন না। তাই ১৩ মাস বয়সী ছেলের জন্য শিশুখাদ্য জোগাড় করাটা তার জন্য হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় লড়াই।
হানাআ বলেন, ছেলের জন্মের পর থেকেই আমার দুধের সমস্যা শুরু হয়। অপুষ্টি আর দুর্বলতার কারণে আমি ছেলেকে স্তন্যপান করাতে পারিনি।
চিকিৎসকেরা হানাআ আল-তাওয়ীলকে জানিয়েছেন, অপুষ্টির কারণে তার ছেলের শারীরিক বৃদ্ধি থমকে গেছে। তিনি নিজেও লক্ষ্য করছেন, তার ছেলে অন্যদের মতো বয়স অনুযায়ী হাঁটতে বা কথা বলতে পারছে না। তার বড় সন্তানেরা এই বয়সেই হাঁটা বা কথা বলা শিখতে শুরু করেছিল।
হানাআ বলেন, ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর সময় পাশে একটু রুটি রেখে দিই, কারণ সে বারবার উঠে খাওয়ার জন্য কান্না করে। সন্তানদের জন্য আমার খুব ভয় হয়। ভয় হয়, না খেতে পেয়ে, পিপাসায় বা কোনো রোগে তারা মরে যাবে।
গাজায় খান ইউনুস নাসের হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া তিন সন্তানের মা নূরহান বারাকাত। ২৫ বছর বয়সী এই নারী বলেন, আমি এক মাস মেয়েকে প্রাকৃতিকভাবে স্তন্যপান করাতে পেরেছিলাম। কিন্তু খাবারের অভাবে সেটা আর চালিয়ে যেতে পারিনি। মায়ের দুধের মাধ্যমেই মা-সন্তানের বন্ধন দৃঢ় হয়। কিন্তু আমি আর কীইবা করতে পারি?

খান ইউনুস নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমাদ আল-ফাররা জানিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডে মাত্র এক সপ্তাহের মতো শিশুখাদ্য (ইনফ্যান্ট ফর্মুলা) মজুত আছে। যেসব শিশু প্রিম্যাচিউর বা অপরিণত অবস্থায় জন্মেছে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ দুধ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন সাধারণ শিশুখাদ্য সীমিত পরিমাণে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে ওয়ার্ডের শিশুদের মধ্যে।
ডা. আল-ফাররা বলেন, ‘অবস্থার ভয়াবহতা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। হাসপাতালের শিশুদের জন্য মজুত খাদ্য হয়ত আর এক সপ্তাহ চালানো যাবে, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়নি এমন অনেক শিশুর জন্যে তো একটু দুধও নেই।’
গাজায় শিশুখাদ্যের মজুত দিন দিন ফুরিয়ে আসছে, কারণ ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে সাহায্য পৌঁছাতে ইসরায়েল কঠোরভাবে বাধা দিচ্ছে। সামান্য যেটুকু ত্রাণ ঢুকতে পারছে, সেটিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আসছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘ওই ত্রাণে কোনো শিশুখাদ্য থাকে না।’
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর অনাহারকে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে। তাদের ভাষায়, এটি ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কোগাত বলেছে, ‘তারা গাজায় শিশুখাদ্য বা ফর্মুলা মিল্ক ঢুকতে কোনোভাবে বাধা দিচ্ছে না। সংস্থাটির দাবি, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহেই গাজায় ১,৪০০ টনের বেশি শিশুখাদ্য পাঠানো হয়েছে।’
কিন্তু গাজার চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্য ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না বলেই তাঁরা বাধ্য হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাগে একেকটি দুধের কৌটা নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এক মার্কিন চিকিৎসক যখন চিকিৎসা মিশনে গাজায় ঢুকছিলেন, তখন তাঁর লাগেজ থেকে ১০টি শিশুখাদ্যের কৌটা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জব্দ করে নিয়েছিল।

ফিলিস্তিনি-জার্মান চক্ষু চিকিৎসক ডা. ডায়ানা নাজ্জাল ওই মার্কিন চিকিৎসককে ইসরায়েলি সীমান্ত কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে ব্যাগ গোছাতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন, শেষপর্যন্ত তারা (ইসরায়েল) সব শিশুখাদ্যের কৌটা জব্দ করে নিল। ওগুলো তো বিশেষভাবে অপরিণত শিশুদের জন্য তৈরি করা ফর্মুলা। শিশুখাদ্য ইসরায়েলি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কী ক্ষতি করতে পারে?
নাজ্জাল আরও বলেন, এখনও অনেক চিকিৎসক গাজায় ঢোকার সময় ওষুধের চেয়ে বেশি ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন প্রোটিন বার আর বাদাম ব্যাগভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। যাতে সেখানে না খেতে পেয়ে মারা যাওয়া মানুষদের কিছুটা হলেও সাহায্য করা যায়।
গাজায় ক্ষুধা পরিস্থিতি যতই খারাপ হচ্ছে, শিশুখাদ্যের গুরুত্ব ততই বাড়ছে। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এখন চরম অনাহারে রয়েছেন। এছাড়া বাকি জনগোষ্ঠীও মারাত্মক খাদ্যসংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মায়েরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন বা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, তারা সন্তানদের স্তন্যপান করাতে পারছেন না। ফলে শিশুখাদ্যের প্রয়োজন আরও বেড়েছে। অথচ বাজারে যেটুকু দুধ মেলে, সেটি কালোবাজারে খুবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কৌটা ফর্মুলার দাম এখন প্রায় ৫০ ডলার, যা স্বাভাবিক দামের দশ গুণ!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস গত জুনের শেষের দিকে বলেছেন, গাজায় প্রতিদিন প্রায় ১১২টি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তিন বছর বয়সের আগে অপুষ্টি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
ডা. আল-ফাররা বলেছেন, একটা পুরো প্রজন্মকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এই শিশুরা ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তির সমস্যা নিয়ে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়বে। পরে খাবার পেলেও এখনকার আর ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের মৃত্যু গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকেত। কারণ অপুষ্টির ক্ষতি প্রথমেই সবচেয়ে বেশি শিশুদের ওপর পড়ে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন আভাজ-এর হয়ে ত্রাণ নিয়ে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করছেন ডা. থায়ের আহমাদ। তিনি বলেন, ‘যখন দেখবেন শিশুদের মৃত্যু শুরু হয়েছে, তখনই বোঝা উচিত ভয়াবহ বিপদের ঘণ্টা বেজে গেছে। অনাহারের সংকটে প্রথম মারা যায় শিশুরাই।’
চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলের ত্রাণ অবরোধই দায়ী। ইসরায়েল সামান্য কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ছাড়া আর কিছু ঢুকতে দিচ্ছে না। যা গাজার মানুষের চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫০০টি ট্রাক ঢোকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে অনেক সময় ৫০টিরও কম ট্রাক ঢোকার অনুমতি পায়।
জাতিসংঘের যেসব সামান্য ত্রাণ গাজায় ঢুকছে, সেগুলোও অনেক সময় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় আর সশস্ত্র গোষ্ঠীর লুটপাটের শিকার হচ্ছে।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন থেকে যারা সাহায্য নিতে চান, তাদেরকে জটিল নিয়মকানুন মেনে চারটি নির্দিষ্ট বিতরণ কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়াতে হয়। এদিকে শুধু গত এক মাসেই ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫০০ মানুষ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-কে কঠোরভাবে সমালোচনা করছে। তাদের অভিযোগ, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন যুদ্ধাপরাধে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে এবং এটি মানবিক সহায়তার মৌলিক নীতিগুলোরও লঙ্ঘন করছে।
আগে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ত্রাণ ব্যবস্থায় গাজাজুড়ে চার শতাধিক বিতরণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষ ত্রাণ পেত। অন্যদিকে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন দাবি করছে, তারা পাঁচ সপ্তাহে ৫ কোটি ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে, আর অন্য সংস্থাগুলো চুপচাপ বসে দেখছে কীভাবে তাদের ত্রাণ লুট হয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েল বলছে, জাতিসংঘের এই ত্রাণ ব্যবস্থা হামাসের হাতে চলে যাচ্ছে। তবে মানবিক কর্মীরা বলছেন, এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ডা. আল-ফাররা বললেন, “আপনি যদি দেখতেন কী অবস্থায় শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে! ওরা কেবল হাড়-চামড়া হয়ে গেছে। ভয়ংকর দৃশ্য। আসল সমাধান হলো যুদ্ধ বন্ধ করা, সীমান্ত খুলে দেওয়া আর শিশুখাদ্য ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া।
গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন সৈকত আমীন
গাজায় ইসরায়েল মানবিক সহায়তা ঢোকার পথ কঠোরভাবে অবরুদ্ধ করায় শত শত শিশু মারাত্মক বিপদের মুখে পড়েছে, সেখানে চলছে মায়ের দুধসহ শিশুখাদ্যের তীব্র সংকট।
গাজার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী হানাআ আল-তাওয়ীল পাঁচ সন্তানের মা। তিনি জানান, নিজেই ঠিকমতো খেতে না পারায় সন্তানকে বুকের দুধও দিতে পারছেন না। তাই ১৩ মাস বয়সী ছেলের জন্য শিশুখাদ্য জোগাড় করাটা তার জন্য হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় লড়াই।
হানাআ বলেন, ছেলের জন্মের পর থেকেই আমার দুধের সমস্যা শুরু হয়। অপুষ্টি আর দুর্বলতার কারণে আমি ছেলেকে স্তন্যপান করাতে পারিনি।
চিকিৎসকেরা হানাআ আল-তাওয়ীলকে জানিয়েছেন, অপুষ্টির কারণে তার ছেলের শারীরিক বৃদ্ধি থমকে গেছে। তিনি নিজেও লক্ষ্য করছেন, তার ছেলে অন্যদের মতো বয়স অনুযায়ী হাঁটতে বা কথা বলতে পারছে না। তার বড় সন্তানেরা এই বয়সেই হাঁটা বা কথা বলা শিখতে শুরু করেছিল।
হানাআ বলেন, ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর সময় পাশে একটু রুটি রেখে দিই, কারণ সে বারবার উঠে খাওয়ার জন্য কান্না করে। সন্তানদের জন্য আমার খুব ভয় হয়। ভয় হয়, না খেতে পেয়ে, পিপাসায় বা কোনো রোগে তারা মরে যাবে।
গাজায় খান ইউনুস নাসের হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া তিন সন্তানের মা নূরহান বারাকাত। ২৫ বছর বয়সী এই নারী বলেন, আমি এক মাস মেয়েকে প্রাকৃতিকভাবে স্তন্যপান করাতে পেরেছিলাম। কিন্তু খাবারের অভাবে সেটা আর চালিয়ে যেতে পারিনি। মায়ের দুধের মাধ্যমেই মা-সন্তানের বন্ধন দৃঢ় হয়। কিন্তু আমি আর কীইবা করতে পারি?

খান ইউনুস নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমাদ আল-ফাররা জানিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডে মাত্র এক সপ্তাহের মতো শিশুখাদ্য (ইনফ্যান্ট ফর্মুলা) মজুত আছে। যেসব শিশু প্রিম্যাচিউর বা অপরিণত অবস্থায় জন্মেছে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ দুধ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন সাধারণ শিশুখাদ্য সীমিত পরিমাণে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে ওয়ার্ডের শিশুদের মধ্যে।
ডা. আল-ফাররা বলেন, ‘অবস্থার ভয়াবহতা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। হাসপাতালের শিশুদের জন্য মজুত খাদ্য হয়ত আর এক সপ্তাহ চালানো যাবে, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়নি এমন অনেক শিশুর জন্যে তো একটু দুধও নেই।’
গাজায় শিশুখাদ্যের মজুত দিন দিন ফুরিয়ে আসছে, কারণ ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে সাহায্য পৌঁছাতে ইসরায়েল কঠোরভাবে বাধা দিচ্ছে। সামান্য যেটুকু ত্রাণ ঢুকতে পারছে, সেটিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আসছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘ওই ত্রাণে কোনো শিশুখাদ্য থাকে না।’
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর অনাহারকে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে। তাদের ভাষায়, এটি ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কোগাত বলেছে, ‘তারা গাজায় শিশুখাদ্য বা ফর্মুলা মিল্ক ঢুকতে কোনোভাবে বাধা দিচ্ছে না। সংস্থাটির দাবি, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহেই গাজায় ১,৪০০ টনের বেশি শিশুখাদ্য পাঠানো হয়েছে।’
কিন্তু গাজার চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্য ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না বলেই তাঁরা বাধ্য হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাগে একেকটি দুধের কৌটা নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এক মার্কিন চিকিৎসক যখন চিকিৎসা মিশনে গাজায় ঢুকছিলেন, তখন তাঁর লাগেজ থেকে ১০টি শিশুখাদ্যের কৌটা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জব্দ করে নিয়েছিল।

ফিলিস্তিনি-জার্মান চক্ষু চিকিৎসক ডা. ডায়ানা নাজ্জাল ওই মার্কিন চিকিৎসককে ইসরায়েলি সীমান্ত কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে ব্যাগ গোছাতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন, শেষপর্যন্ত তারা (ইসরায়েল) সব শিশুখাদ্যের কৌটা জব্দ করে নিল। ওগুলো তো বিশেষভাবে অপরিণত শিশুদের জন্য তৈরি করা ফর্মুলা। শিশুখাদ্য ইসরায়েলি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কী ক্ষতি করতে পারে?
নাজ্জাল আরও বলেন, এখনও অনেক চিকিৎসক গাজায় ঢোকার সময় ওষুধের চেয়ে বেশি ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন প্রোটিন বার আর বাদাম ব্যাগভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। যাতে সেখানে না খেতে পেয়ে মারা যাওয়া মানুষদের কিছুটা হলেও সাহায্য করা যায়।
গাজায় ক্ষুধা পরিস্থিতি যতই খারাপ হচ্ছে, শিশুখাদ্যের গুরুত্ব ততই বাড়ছে। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এখন চরম অনাহারে রয়েছেন। এছাড়া বাকি জনগোষ্ঠীও মারাত্মক খাদ্যসংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মায়েরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন বা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, তারা সন্তানদের স্তন্যপান করাতে পারছেন না। ফলে শিশুখাদ্যের প্রয়োজন আরও বেড়েছে। অথচ বাজারে যেটুকু দুধ মেলে, সেটি কালোবাজারে খুবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কৌটা ফর্মুলার দাম এখন প্রায় ৫০ ডলার, যা স্বাভাবিক দামের দশ গুণ!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস গত জুনের শেষের দিকে বলেছেন, গাজায় প্রতিদিন প্রায় ১১২টি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তিন বছর বয়সের আগে অপুষ্টি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
ডা. আল-ফাররা বলেছেন, একটা পুরো প্রজন্মকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এই শিশুরা ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তির সমস্যা নিয়ে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়বে। পরে খাবার পেলেও এখনকার আর ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের মৃত্যু গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকেত। কারণ অপুষ্টির ক্ষতি প্রথমেই সবচেয়ে বেশি শিশুদের ওপর পড়ে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন আভাজ-এর হয়ে ত্রাণ নিয়ে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করছেন ডা. থায়ের আহমাদ। তিনি বলেন, ‘যখন দেখবেন শিশুদের মৃত্যু শুরু হয়েছে, তখনই বোঝা উচিত ভয়াবহ বিপদের ঘণ্টা বেজে গেছে। অনাহারের সংকটে প্রথম মারা যায় শিশুরাই।’
চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলের ত্রাণ অবরোধই দায়ী। ইসরায়েল সামান্য কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ছাড়া আর কিছু ঢুকতে দিচ্ছে না। যা গাজার মানুষের চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫০০টি ট্রাক ঢোকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে অনেক সময় ৫০টিরও কম ট্রাক ঢোকার অনুমতি পায়।
জাতিসংঘের যেসব সামান্য ত্রাণ গাজায় ঢুকছে, সেগুলোও অনেক সময় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় আর সশস্ত্র গোষ্ঠীর লুটপাটের শিকার হচ্ছে।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন থেকে যারা সাহায্য নিতে চান, তাদেরকে জটিল নিয়মকানুন মেনে চারটি নির্দিষ্ট বিতরণ কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়াতে হয়। এদিকে শুধু গত এক মাসেই ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫০০ মানুষ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-কে কঠোরভাবে সমালোচনা করছে। তাদের অভিযোগ, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন যুদ্ধাপরাধে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে এবং এটি মানবিক সহায়তার মৌলিক নীতিগুলোরও লঙ্ঘন করছে।
আগে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ত্রাণ ব্যবস্থায় গাজাজুড়ে চার শতাধিক বিতরণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষ ত্রাণ পেত। অন্যদিকে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন দাবি করছে, তারা পাঁচ সপ্তাহে ৫ কোটি ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে, আর অন্য সংস্থাগুলো চুপচাপ বসে দেখছে কীভাবে তাদের ত্রাণ লুট হয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েল বলছে, জাতিসংঘের এই ত্রাণ ব্যবস্থা হামাসের হাতে চলে যাচ্ছে। তবে মানবিক কর্মীরা বলছেন, এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ডা. আল-ফাররা বললেন, “আপনি যদি দেখতেন কী অবস্থায় শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে! ওরা কেবল হাড়-চামড়া হয়ে গেছে। ভয়ংকর দৃশ্য। আসল সমাধান হলো যুদ্ধ বন্ধ করা, সীমান্ত খুলে দেওয়া আর শিশুখাদ্য ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া।
গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন সৈকত আমীন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতে দুই দিনের সফর শুরু করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি পুতিনের প্রথম ভারক সফর। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সফরে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
লেবানন ও ইসরায়েল প্রায় ৪০ বছর পর প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় বসেছে। বুধবার দক্ষিণ লেবাননের নাকউরা শহরে যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতিত্বে পরিচালিত যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির বৈঠকে দুই দেশের বেসামরিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে দীর্ঘ চার দশকের অচলাবস্থা ভেঙে নতুন যোগাযোগের পথ খুলে যায়।
১১ ঘণ্টা আগে
কিছু দিন আগে বাইডেনকে তিনি একই কারণে ‘স্লিপি জো’ বলে বিদ্রূপ করেছিলেন। এখন সেই বিদ্রূপ উলটো ট্রাম্পের দিকেই ফিরে আসছে।
১ দিন আগে
রাশিয়ার গ্যাস আমদানি বন্ধে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ২০২৭ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি বন্ধ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
১ দিন আগে