leadT1ad

শহিদুল আলমদের ‘কনশায়েন্স’সহ আরও ৯টি জাহাজ গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে

স্ট্রিম ডেস্ক
লাইভ ফ্লোটিলা ট্র্যাকারে ৯টি জাহাজের অবস্থান।

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে রওনা করা নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মূল বহরের একটি বাদে সব নৌযান বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এখনো ভেসে চলা নৌযানটির নাম ম্যারিনেট। পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এ নৌযানটিতে ছয়জন আরোহী রয়েছেন।

তবে এর পেছনে আরও ৯টি নৌযান গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শিল্পী শহিদুল আলমদের বহনকারী জাহাজ ‘কনশায়েন্স’ও রয়েছে। বাকী নৌযানগুলো সম্ভবত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছে।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় ফ্লোটিলা ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী জাহাজগুলো গাজা থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল (৯২৫ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে। অন্যদিকে, ম্যারিনেট গাজার জলসীমা থেকে মাত্র ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে।

শহিদুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাতে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন। সাগর উত্তাল থাকায় সেখানে তাঁকে জাহাজের ডেকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। লাইভে তিনি উত্তাল সাগরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

পরে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘অনেকেই আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন। দুঃখিত, সবার বার্তার উত্তর আলাদাভাবে দিতে পারছি না। আজ আমি বমি করেছি এবং পরে পড়ে গিয়েছিলাম। তবে গুরুতর কিছু হয়নি। জাহাজে প্রায় ২০ জন ডাক্তার ও নার্স আছেন। চিকিৎসার দিক থেকে আমরা যাত্রী হিসেবে সবচেয়ে ভালো যত্ন পাচ্ছি। আমি যে মনোযোগ পেয়েছি তা বেশ উপভোগ করেছি। আমার ভাতিজি মৌলি থাকলে বলত, আমি নাটক করছি। আমরা গাজার আরও এক দিন কাছে পৌঁছেছি।’

এর আগে বাংলাদেশ সময় গতকাল দুপুরে এক ফেসবুক ভিডিও পোস্টে তিনি বলেন, ‘কনশায়েন্স ফ্লোটিলার ডেক থেকে শহিদুল আলম বলছি। এটি ফ্লোটিলার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শেষ ফ্লোটিলা। গ্রিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঝড়ের সতর্কতা আসছে। গত রাতে আমরা ঝড়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম।

‘ক্যাপ্টেন গতি বাড়িয়েছিলেন, যাতে আমরা ঝড়ের আগে থাকতে পারি। এখন ঝড় ও বিদ্যুৎ চমকানো বন্ধ হয়ে গেছে।

‘বৃষ্টিও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বাকি ফ্লোটিলা থেকে পিছিয়ে পড়েছি। সামনের দিকে যারা ছিল তাদের ওপর ইতোমধ্যেই আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা এই হুমকিতে ভীত না হয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা অবরোধ ভেঙে ফেলব। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।’

শহীদুল আলম তার ফেসবুকে এই ট্র্যাকার শেয়ার করেন।
শহীদুল আলম তার ফেসবুকে এই ট্র্যাকার শেয়ার করেন।

বুধবার থেকে ইসরায়েলের নৌবাহিনী গাজায় মানবিক সহায়তাবাহী অন্তত ৪৩ নৌযান আটক করেছে। এ সময় তারা প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ অ্যাকটিভিস্টকে আটক করেছে।

আটকদের মধ্যে আছেন জলবায়ু অ্যাকটিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ, বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কোলাও, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান এবং ন্যালসন ম্যান্ডেলা নাতনিস মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ আরও আনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

গাজার উদ্দেশ্যে পাঠানো এটিই সবচেয়ে বড় নৌ-সহায়তা মিশন। বিশ্বজুড়ে এ উদ্যোগ ব্যাপক মনোযোগ কাড়ে। নৌযান আটকের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

আন্তর্জাতিক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (আইটিএফ) মহাসচিব স্টিফেন কটন বলেন, আন্তর্জাতিক পানিসীমায় শান্তিপূর্ণ মানবিক জাহাজে আক্রমণ বা দখল অবৈধ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রগুলো ইচ্ছামতো আন্তর্জাতিক আইন মানতে বা ভঙ্গ করতে পারে না। সমুদ্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা উচিত নয়।

কয়েকজন বিশ্বনেতাও এ পদক্ষেপের নিন্দা জানান। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ঘোষণা দেন, ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করবে তার দেশ।

জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন, গ্রিস ও আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলকে আটক নাবিকদের অধিকার সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ফিলিস্তিনের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ এই ঘটনাকে ‘অবৈধ অপহরণ’ বলেছেন।

তিনি এক্সে লেখেন, ‘গাজার মানুষের সঙ্গে আমার সহমর্মিতা আছে। তারা ইসরায়েলের হত্যাক্ষেত্রে বন্দি হয়ে আছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত