leadT1ad

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় খাদ্য সংকট এখনো ভয়াবহ: ডব্লিউএইচও

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৮
২১শে অক্টোবর গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি দাতব্য কিচেন থেকে খাবার নেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি শিশুরা জড়ো হয়েছে। ছবি: এএফপি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও সেখানে খাদ্য সংকট ‘বিপর্যয়কর’ অবস্থায় রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও )। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ইসরায়লকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংস্থা জানায়, গাজায় যে পরিমাণ খাদ্য ও পুষ্টি সরঞ্জাম প্রবেশ করছে তা মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ০০০ টন ত্রাণ প্রবেশের লক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭৫০ টন খাদ্য গাজায় যাচ্ছে। কারণ, ইসরায়লের নিয়ন্ত্রণে থাকা কেবল দুটি প্রবেশপথ—কেরেম আবু সালেম ও আল-কারারা—এখন খোলা রয়েছে।

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তোড্রোস আধানোম ঘেব্রেইসাস বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। কারণ, যে পরিমাণ খাদ্য ঢুকছে, তা একেবারেই যথেষ্ট নয়।’

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ, যার মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ গর্ভবতী নারী, অনাহারে ভুগছেন। পুষ্টিহীনতার এই প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে একাধিক প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপপরিচালক অ্যান্ড্রু সাবার্টন বলেন, গাজায় নবজাতকের ৭০ শতাংশই এখন অকালপ্রসূ বা কম ওজনের, যেখানে যুদ্ধের আগে এই হার ছিল ২০ শতাংশ। তিনি সতর্ক করেন, ‘পুষ্টিহীনতার প্রভাব কেবল মায়েদের নয়, নবজাতকের পুরো জীবনজুড়েই সমস্যা সৃষ্টি করবে।’

২০২৫ সালের আগস্টে গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। সে সময় জানানো হয়, ৫ লাখেরও বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটে’ রয়েছে।

অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিদিন ত্রাণ প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। ফিলিস্তিনি এনজিও পার্ক (পিএআরসি)-র কর্মকর্তা বাহা জাকুত বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিছু অপ্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন বিস্কুট, চকোলেট বা সফটড্রিংক ঢুকছে, কিন্তু বীজ বা জলপাইয়ের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর জিনিস আটকানো হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, এখন টমেটোর দাম প্রতি কেজি ১ শেকেল থেকে বেড়ে ১৫ শেকেল হয়েছে। ফলে ফল ও সবজি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

বৃহস্পতিবার অক্সফাম ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়ল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়, ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে এনজিওগুলোর ৯৯টি ত্রাণ অনুরোধ এবং জাতিসংঘের ৬টি অনুরোধ ইসরায়ল প্রত্যাখ্যান করেছে।

বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দেয় যে, ইসরায়লের দায়িত্ব হলো গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা। আদালত মনে করিয়েছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ইসরায়ল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল।

সহায়তা সংস্থাগুলোর দাবি, ‘আমাদের প্যাকেজ প্রস্তুত, কর্মীরা প্রস্তুত, কিন্তু প্রবেশের অনুমতি নেই।’ তারা ইসরায়লকে আহ্বান জানিয়েছে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করা হয়।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়লে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ অপহৃত হন।

এই ভয়াবহ মানবিক সংকট এখনো গাজার মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতা হয়ে আছে। গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ক্ষুধা ও অভাব এখনো কমেনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত