leadT1ad

বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে শ্রীলঙ্কা-ইন্দোনেশিয়া-থাইল্যান্ডে এক সপ্তাহে ১১০০ প্রাণহানি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৪
শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত বন্যায় ৩৬৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: আল-জাজিরা

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও চরম বৈরী আবহাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে। আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও অন্তত ৮০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুর্যোগে শ্রীলঙ্কায় ৩৬৬ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৬০৪ জন ও থাইল্যান্ডে ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে এখনো পুরোদমে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে।

শ্রীলঙ্কায় মানবিক বিপর্যয়

ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে প্রবল বর্ষণ, বন্যা ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে, ৩৬৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এখনো ৩৬৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও অন্তত ২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে এই ঘূর্ণিঝড়কে ‘শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ধ্বংসস্তূপ ও হাহাকার

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুটি ভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ও ৪৬৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বন্যায় প্রায় ২৮ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ১৪ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো দুর্গত তিন প্রদেশ পরিদর্শন করে একে ‘মহা বিপর্যয়’ উল্লেখ করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় এখন পর্যন্ত বন্যায় ৬০৪ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: বিবিসি
ইন্দোনেশিয়ায় এখন পর্যন্ত বন্যায় ৬০৪ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: বিবিসি

পশ্চিম সুমাত্রার পাদাং শহরের বাসিন্দা আফ্রিয়ান্তি বলেন, ‘পানি যখন ঘরে ঢুকতে শুরু করে, আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই। শুক্রবার ফিরে এসে দেখি আমার বাড়ি, দোকান—সব শেষ। কিছুই অবশিষ্ট নেই, শুধু দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমরা সেই দেয়ালের পাশে তাবু টানিয়ে থাকছি।’

থাইল্যান্ডে ৩০০ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৮টি প্রদেশে বন্যায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বাণিজ্য কেন্দ্র হাট ইয়াই শহরে গত ২১ নভেম্বর ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত ৩০০ বছরের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

থাইল্যান্ডের সরকার জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। হাসপাতালে আটকে পড়া গুরুতর রোগীদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে। সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত ও মালয়েশিয়ায় প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহর প্রভাবে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যেও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি চেন্নাই উপকূল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় বন্যায় অন্তত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ও প্রায় ১১ হাজার ৬০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সেখানে বন্যার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে।

কী কারণে দেখা দিল এই বিপর্যয়?

শ্রীলঙ্কায় সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এ বছর সেই স্বাভাবিক বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ঘূর্ণিঝড়—‘ডিটওয়াহ’।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ থেকে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’ গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কা উপকূলে আঘাত হানে। এর প্রভাবেই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি আবার বঙ্গোপসাগরে ফিরে এসে উত্তর দিকে ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দুর্বল হয়ে পড়লেও ভারতের দক্ষিণ উপকূলে প্রবল বর্ষণ ঘটাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরকে সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’। এই ঘূর্ণিঝড় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ ও থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তত আটটি প্রদেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। সেনিয়ারের প্রভাবে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত, তীব্র ঝোড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

এই জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসের মতো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, টাইমস ও দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত