leadT1ad

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি: গাজা যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫৫
যুদ্ধবিরতির চুক্তির খবরে ফিলিস্তিনিদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।

প্রায় দুই বছরের ভয়াবহ সংঘাতের পর বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর, ২০২৫) ইসরায়েল ও হামাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। একে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘতম সংঘাতগুলোর একটির গুরুত্বপূর্ণ মোড়বদল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ৯ অক্টোবর মধ্যরাতের পর চুক্তিটির অনুমোদন দেয়। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। হামাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতার থেকে তারা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির নিশ্চয়তাও পেয়েছে। এতে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির এবং পুনর্গঠনের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ

এই সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। হামাস ২৫০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে বন্দি করেও নিয়ে যায়।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল হামাসের শাসন ও সামরিক কাঠামো ধ্বংস করা। কিন্তু পরে তা রুপ নেয় গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং এক নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞে। গাজা ২০০৭ সাল থেকেই ইসরায়েলের হাতে অবরুদ্ধ একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ বাস করেন।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক এবং নারী ও শিশু। গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ও অবকাঠামোর ভয়াবহ ধ্বংসে চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

এর আগে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একাধিক যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বন্দি বিনিময়, সেনা প্রত্যাহার ও দীর্ঘমেয়াদি শাসনব্যবস্থা নিয়ে মতপার্থক্যই এসব ব্যর্থতার মূল কারণ ছিল। ২০২৪ সালে ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে শান্তি প্রচেষ্টায় গতি আনে। ট্রাম্প প্রশাসন ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতি গ্রহণ করে এবং মিসরে সরাসরি আলোচনার পথ উন্মুক্ত করে।

ইসরায়েলিদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলিদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।

চুক্তির মূল শর্তসমূহ

এই যুদ্ধবিরতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষ্য থাকবে সহিংসতা বন্ধ করা, স্থায়ী সমাধান নয়। এটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে হামাসের এক প্রস্তাবের হালনাগাদ সংস্করণ, যা ইসরায়েল তখন প্রত্যাখ্যান করেছিল।

প্রথম ধাপ (তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন, ১১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে)

যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব লড়াই বন্ধ হবে। হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৪৮ জন অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলও হাজারের ওপর ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে নারী, শিশু ও দীর্ঘমেয়াদি আটক ব্যক্তি যেমন ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগুতিও রয়েছেন।

সেনা প্রত্যাহার ও সহায়তা: ইসরায়েল গাজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার করবে। সীমান্তপথগুলো মানবিক সহায়তার জন্য পুনরায় খোলা হবে। বহুজাতিক তত্ত্বাবধানে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো হবে, যাতে উত্তর গাজার দুর্ভিক্ষ রোধ করা যায়।

সময়কাল: প্রথম ধাপ ছয় সপ্তাহ চলবে, পরে মূল্যায়নের ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

পরবর্তী ধাপ (পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষ)

এই ধাপে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং নতুন প্রশাসন গঠন হবে। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা অরাজনৈতিক প্রযুক্তিনির্ভর সংস্থার ভূমিকা থাকতে পারে, তবে সশস্ত্র হামাস সদস্যরা এর বাইরে থাকবে।

পুনর্গঠনের জন্য ৩০–৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পরিকল্পনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০০ সৈন্য (সেন্টকমের অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারের নেতৃত্বে) মোতায়েন করবে, যারা ইসরায়েল বা মিসরে অবস্থান করবে। তারা বন্দি বিনিময় ও তদারকি কার্যক্রমে অংশ নেবে, তবে গাজায় প্রবেশ করবে না।

মিসর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও তদারকিতে অংশ নেবে।

চুক্তিটি মিশরের কায়রোতে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতরা ট্রাম্পের শান্তি কাঠামোর অধীনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর চোখে আশার আলো নিয়ে ঘর থেকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ফিলিস্তিনিরা। ছবি: সংগৃহীত।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর চোখে আশার আলো নিয়ে ঘর থেকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ফিলিস্তিনিরা। ছবি: সংগৃহীত।

নিশ্চয়তা: হামাসের মূল আশ্বাসসমূহ

হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে লিখিত নিশ্চয়তা পাওয়ার পর তারা এই চুক্তি গ্রহণ করেছে। এসব নিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে— যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান, ইসরায়েলের পুনরায় গাজায় প্রবেশ রোধ এবং হামাস বিলুপ্ত না করেই পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু। মধ্যস্থতাকারীরাও এসব নিশ্চয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মূল নিশ্চয়তাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের যেকোনো চুক্তিভঙ্গের ক্ষেত্রে ভেটো প্রয়োগ করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব জাতিসংঘ ও আরব দেশগুলো নিতে পারে।

প্রথম ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের কোনো শর্ত নেই, যদিও দ্বিতীয় ধাপে এটি ইসরায়েলের দিক থেকে ‘অপরিবর্তনীয় শর্ত’ হিসেবে থাকবে। ইসরায়েল এতে কোনও ছাড় দিবে না বলে জানায়।

হামাস এই চুক্তিকে তাদের ‘প্রতিরোধের বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তাদের মতে, যুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু তারা অস্ত্র ত্যাগ করেনি।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বন্দি প্রত্যাবর্তন ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে তিনি হামাসের দীর্ঘমেয়াদি হুমকি সম্পর্কে ‘কোনো ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করছেন না’ বলে মন্তব্য করেন।

ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রতিক্রিয়া: আশা, সংশয় ও উদযাপন

গাজা ও ইসরায়েলে: হামাস-ইসরায়েলের চুক্তির খবরে গাজায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়; মসজিদগুলোতে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি ওঠে। ইসরায়েলের তেল আবিবে ইহুদী পরিবারগুলো স্বস্তির সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। তবে অনেক ফিলিস্তিনি এটিকে সাময়িক বিরতি হিসেবে দেখছেন। কারণ, চুক্তির দিনও (৯ অক্টোবরেও) ইসরায়েলি হামলায় নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে: জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ একে ‘মানবিক জীবনরেখা’বলে প্রশংসা করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে তার নোবেল-যোগ্য সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন, যদিও তাঁর উপদেষ্টারা পুরস্কারের আলোচনা এড়িয়ে যান।

সমালোচকরা, বিশেষ করে মার্কিন ডেমোক্র্যাট দলের কিছু সদস্য (যেমন রাশিদা তালিব ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ), নীরব থাকেন বা ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, প্রতিনিধি রিচি টরেসের মতো কেউ কেউ সতর্ক প্রশংসা জানান।

হামাসের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কারণে কিছু মহলে চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া: ‘এক্স’-এ সাধারণ মানুষদের মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। কেউ একে ‘নতুন ভোরের সূচনা’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আবার কেউ বলছেন, ‘হামাস নিরস্ত্র না হলে আবার বোমা পড়বে।’ অন্যরা ইসরায়েলের হামলার মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—‘ইসরায়েল গাজায় ছয়টি হিরোশিমা বোমা ফেলছে’বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

ফিলিস্তিনি তরুণদের উদযাপন। ছবি: সংগৃহীত।
ফিলিস্তিনি তরুণদের উদযাপন। ছবি: সংগৃহীত।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য বাধা

চুক্তি যুগান্তকারী হলেও সামনে কিছু গুরুতর বাধা রয়েছে—

নিরস্ত্রীকরণ সংকট: প্রথম ধাপে এটি আলোচনায় নেই। হামাস অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ এটি তাদের মূল চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার। ইসরায়েল নিরস্ত্রীকরণকে স্থায়ী শান্তির শর্ত হিসেবে দেখছে, যা দ্বিতীয় ধাপকে জটিল করে তুলতে পারে।

বাস্তবায়ন ঝুঁকি: যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা মূলত কূটনৈতিক চাপের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতি প্রয়োগে লঙ্ঘন হলে দ্রুত পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গাজায় স্থল পর্যবেক্ষণ (জাতিসংঘ শান্তিবাহিনী) না থাকায় বহুজাতিক তদারকি কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হতে পারে।

শাসন সংকট: যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কে পরিচালনা করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও ইরানের মতো বাইরের প্রভাব পরিস্থিতিকে জটিল করছে।

মানবিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: দুর্ভিক্ষ, অন্তত ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো—এসব মোকাবিলায় দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

যদি প্রথম ধাপ সফল হয়, তবে এটি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ উন্মুক্ত করতে পারে। কিন্তু ব্যর্থ হলে সংঘাত আবার জ্বলে উঠতে পারে।

ইসরায়েলে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।

এক ঝলক আশার আলো

তবে ২০২৩ সালের পর এটিই প্রথম বড় ধরনের যুদ্ধবিরতি, যা ক্লান্তির মাঝেও কূটনীতির ভূমিকা তুলে ধরেছে। ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা বিতর্কিত হলেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অবস্থান পুনরুজ্জীবিত হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিশেষ করে লোহিত সাগরপথে, ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গাজার মানুষের জন্য এটি জীবন বাঁচানোর সুযোগ, আর ইসরায়েলের জন্য বন্দি ফেরত পাওয়ার স্বস্তি। তবুও, অনেকের মতে, ‘আমরা যুদ্ধ থামাই, আর ইসরায়েল আবার গুলি চালায়’—এই অবিশ্বাস না কাটলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।

অক্টোবর ২০২৫ হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অধ্যায়ের সূচনা, অথবা চুক্তির ভঙ্গুরতা প্রকাশের সময়। প্রথম বাস্তব পরীক্ষা হবে ১২ অক্টোবরের মধ্যে বন্দি মুক্তির অগ্রগতিতে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত