leadT1ad

গাজায় কি যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪৫
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরও ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যে নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ২৩০ জনকে আহত করেছে। এই সময়টিতে দুই পক্ষের মধ্যে চলেছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ।

ইসরায়েলি সেনারা একাধিকবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে এবং গাজায় বিমান হামলা করেছে। সর্বশেষ ঘটনা ঘটে রবিবার, যখন ইসরায়েল দাবি করে যে রাফাহ এলাকায় হামাস যোদ্ধারা তাদের সেনাদের ওপর আক্রমণ করেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েলের গাজা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তাহলে, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে কে? যুদ্ধবিরতি কি এখনো টিকে আছে? ফিলিস্তিনিরা কি অবশেষে শান্তি ও সাহায্য পাচ্ছে?

কী ঘটেছে এবং কেন বলা হচ্ছে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হয়েছে

রবিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করে, হামাস চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং রাফাহ এলাকায় তাদের দুই সৈন্যকে হত্যা করেছে। এর পরপরই ইসরায়েল গাজা উপত্যকা জুড়ে ব্যাপক ও তীব্র বিমান হামলা চালায়।

অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড জানায়, তারা কোনো সংঘর্ষের খবর জানে না। তাদের মতে, রাফাহ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানে হামাস যোদ্ধাদের কোনো উপস্থিতি নেই।

এটাই প্রথমবার নয় যে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে নিহত ২৮ জন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফিরিয়ে দিচ্ছে না। ওই বন্দিরা গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার সময়ই মারা যায়।

হামাস বলেছে, তারা শুরু থেকেই জানিয়েছে যে, মরদেহগুলো উদ্ধারে ভারী খননযন্ত্র প্রয়োজন। কারণ ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। এর সঙ্গে সেই বন্দিরাও চাপা পড়ে মারা যায়।

যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো কী ছিল

এই যুদ্ধবিরতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা, যা সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্রকাশ করা হয়। এতে মধ্যস্থতা করে কাতার, মিশর ও তুরস্ক।

প্রধান শর্তগুলো ছিল:

গাজায় ইসরায়েল ও হামাস—উভয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সংঘাত বন্ধ করা।

গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের অবরোধ প্রত্যাহার এবং সাহায্য বিতরণে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

হামাসের হাতে আটক সব বন্দিকে—জীবিত বা মৃত—মুক্তি দেওয়া।

ইসরায়েলের হাতে আটক প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও নিখোঁজ ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া।

হামাস প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে গাজার শাসনভার একটি টেকনোক্রেটিক অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দেবে।

ধাপে ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

হামাস নিরস্ত্র হবে; কিছু সদস্যের জন্য সাধারণ ক্ষমা এবং অন্যদের জন্য নিরাপদ বিদেশযাত্রার সুযোগ থাকবে।

হামাস বন্দিদের মুক্তি ও গাজার প্রশাসন একটি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রশাসনের’ হাতে দেওয়ার শর্ত মেনে নেয়। তবে অন্যান্য দাবি নিয়ে হামাস জানায়, এসব বিষয় একটি ‘সমন্বিত ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর’ মধ্যেই আলোচনা করতে হবে—যার অংশ হিসেবে তারা কাজ করতে প্রস্তুত।

ইসরায়েল কি চুক্তির শর্ত মেনে চলছে

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এই চুক্তি ৮০ বার লঙ্ঘন করেছে এবং অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় একটি বেসামরিক গাড়িতে গুলি চালায়, যাতে আবু শাবান পরিবারের ১১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিল সাত শিশু ও তিন নারী। তারা বাড়ি ফিরছিলেন।

রবিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় আরও বহু মানুষ নিহত হয়। সোমবার, চুক্তি মানার নতুন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও, ইসরায়েল উত্তর গাজার শুজাইয়া এলাকায় কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। তাদের অভিযোগ—এই ব্যক্তিরা ইসরায়েলি সেনাদের ‘হুমকি’ দিচ্ছিল এবং তারা সেনাদের পিছু হটার পর নির্ধারিত ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করেছিল।

এছাড়া, ইসরায়েল সাহায্যপ্রবাহেও বাধা দেয়। রাফাহ সীমান্ত দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখে এবং জাতিসংঘকে জানায়, চুক্তিতে নির্ধারিত ৬০০ ট্রাকের বদলে কেবল ৩০০ ট্রাক ঢুকতে দেবে।

হামাস কি চুক্তি মানছে

হামাস ২০ জন জীবিত বন্দির সকলকে মুক্তি দিয়েছে। তারা বারবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করলেও, ২৮ মৃত বন্দির মধ্যে ১২ জনের দেহ উদ্ধার করে ফেরত দিয়েছে।

শুক্রবার হামাস পুনরায় জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মানতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে ইসরায়েলের বিরামহীন বোমাবর্ষণের ফলে সৃষ্ট বিপুল ধ্বংসস্তূপের কারণে উদ্ধার অভিযান খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

তাদের মতে, নতুন যন্ত্রপাতি ও বাইরের সহায়তা ছাড়া এই অভিযান ধীরগতিতে চলবে এবং সফলতার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এখনো প্রায় ১০ হাজার নিহত ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন।

মানুষ কি ঘরে ফিরতে পেরেছে ও সাহায্য পেয়েছে

প্রায় নয়। ইসরায়েলি বোমায় পুরো পাড়া-মহল্লা ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকে বুঝতেই পারছেন না, তাদের ঘর কোথায় ছিল।

তার ওপর ‘অদৃশ্য হলুদ সীমারেখা’—যেটির ওপারে গেলে গুলি খাওয়ার আশঙ্কা থাকে—মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

অনেকে জানেন না, তাদের বাড়ি এই সীমার কোন পাশে, ইসরায়েলি না ফিলিস্তিনি।

একটি প্রাথমিক মানচিত্র অনুযায়ী, এই হলুদ সীমারেখার ফলে গাজার প্রায় ৫৮ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে।

খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ এখনো মারাত্মকভাবে ঘাটতিতে রয়েছে, কারণ ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে না। ‘সন্ত্রাসের পুনরুত্থান রোধে’ একটি বাফার জোন বজায় রাখা হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই শর্ত ইসরায়েলকে অনির্দিষ্টকাল গাজায় থাকার সুযোগ দেবে।

তাহলে যুদ্ধবিরতি কি এখনো বহাল আছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি ‘খুব শান্তিপূর্ণ’ রাখবে।

রবিবার ইসরায়েলি হামলায় ডজনখানেক মানুষ নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করে, গাজায় যুদ্ধবিরতি আবার কার্যকর হয়েছে এবং ত্রাণ প্রবেশও শুরু হয়েছে।

হামাস বলেছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত