leadT1ad

নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাসের শেষ বার্তা

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৫৪
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১০
নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস। সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারানো আল জাজিরার গাজা সংবাদদাতা আনাস আল-শরীফ মৃত্যুর আগেই নিজের হত্যার আশঙ্কা লিখে গিয়েছিলেন। শেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি রেখে গিয়েছিলেন এক আবেগভরা বিদায়বার্তা। সেই বার্তা এখন গাজার রক্তমাখা বাস্তবতার সাক্ষী। তাঁর সঙ্গে নিহত হয়েছেন আরও চার সাংবাদিক। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি স্বীকার করেছে যে তারা তাঁকেই লক্ষ্য করেছিল। তাদের দাবি আনাস হামাসের সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর লেখা ‘শেষ ইচ্ছা ও বার্তা’ শুধু শোকই নয়, সাংবাদিকতার অটল নৈতিকতার এক অনন্ত প্রতীক হয়ে রয়ে গেছে।

মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মৃত্যু সম্পর্কে একটি শেষ পোস্ট দিয়েছিলেন আনাস। দীর্ঘ ওই বার্তাটি আগে থেকেই লিখে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তা প্রকাশ করেন। তাঁর লিখে যাওয়া এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত শেষ বার্তাটি স্ট্রিম পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ অনুবাদ দেওয়া হলো।

দুই সন্তানসহ নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস। সংগৃহীত ছবি
দুই সন্তানসহ নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস। সংগৃহীত ছবি

এটাই আমার শেষ ইচ্ছা ও বার্তা

যদি আমার এই কথাগুলো তোমাদের কাছে পৌঁছায়, তবে বুঝে নাও, ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে এবং আমার কণ্ঠস্বর নীরব করতে সফল হয়েছে।

শান্তি, করুণা ও আল্লাহর বরকত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক। আল্লাহ জানেন, আমি আমার সমস্ত শক্তি ও সাধ্য দিয়ে আমার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি, তাদের কণ্ঠস্বর হতে চেয়েছি। আমার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের গলি-মহল্লায় যখন আমি প্রথম জীবনকে চিনতে শেখা শুরু করি।

আমার আশা ছিল আল্লাহ আমাকে পরিবার ও প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাবার মতো দীর্ঘ জীবন দান করবেন। আমার দখল হওয়া শহর আল-মাজদালে, যা ইসরায়েলের অধীনে রয়ে গেছে আজও। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই সর্বোচ্চ। তাঁর বিচারই চূড়ান্ত।

দুই সন্তানসহ নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস। সংগৃহীত ছবি
দুই সন্তানসহ নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস। সংগৃহীত ছবি

আমি যে কতরকম যন্ত্রণা ও বেদনা অনুভব করেছি। হারানোর কষ্ট পেয়েছি বারবার। তবু কখনো সত্যকে বিকৃত বা মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপন করিনি। আল্লাহ যেন সাক্ষী থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে, যারা নীরব থেকেছে, যারা আমাদের ওপর ঘটানো হত্যাকে স্বীকার করেছে, যারা আমাদের নিশ্বাস আটকে দিয়েছে এবং যাদের হৃদয় আমাদের শিশু ও নারীদের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখেও কাঁপেনি, যারা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ওপর চলা গণহত্যা থামাতে পারেনি।

আমি তোমাদের সবাইকে আহ্বান জানাই, সীমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞার কাছে মাথা নত কোরো না। তোমরা হও দেশের মুক্তির সেতুবন্ধন, যেন মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আবার আমাদের ছিনিয়ে নেওয়া মাতৃভূমিকে আলোকিত করে।

আমি আমার পরিবারকে তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি—আমার প্রিয় মেয়ে শাম, যাকে বড় হতে দেখা হলো না; আমার সন্তান সালাহ, আমি যার সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম। তোমরা দেখে রেখো আমার মাকে। মায়ের দোয়ায় আমি যতটুকু সম্ভব সফল হয়েছি। আমার মা আমার শক্তি ও আশ্রয়। আমি রেখে গেলাম আমার স্ত্রী—আমার জীবনের সঙ্গী, যিনি দীর্ঘসময় দূরে থেকেও স্থির, দৃঢ় ও ধৈর্যশীল থেকেছেন। তাদের প্রতি ভালোবাসা। তোমরা তাদের যত্ন নিয়ো।

যদি আমি মারা যাই, আমি মরব আমার নীতিতে অটল থেকে। আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিয়ে বলি—আমি তাঁর ফয়সালা নিয়ে সন্তুষ্ট। আমি ছিলাম তাঁর সাক্ষাতের অপেক্ষায়। আমি নিশ্চিত যে আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও চিরস্থায়ী।

হে আল্লাহ! আমাকে শহীদদের সঙ্গে মিলাও। আমার আগের ও পরের ভুল ক্ষমা কোরো। আমার রক্ত হয়ে উঠুক আমার জাতির স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা।

যদি আমি কোনো অসাবধানতা করে থাকি, ক্ষমা করে দাও। আমাকে তোমাদের দোয়ায় স্মরণ রেখো। গাজাকে ভুলে যেয়ো না।

— আনাস আল-শরীফ

০৬ এপ্রিল ২০২৫

Ad 300x250

সম্পর্কিত