leadT1ad

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ভেস্তে গেল কেন, ইউক্রেনের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়। ছবি: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বৈঠকের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। মঙ্গলবার ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘বর্তমান সীমান্তে স্থগিত’ রাখার আহ্বান জানানোর পর তা ভেস্তে যায়।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, ‘আমি অর্থহীন কোনো বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না। দেখা যাক কী হয়।’তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, নিকট ভবিষ্যতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ইউক্রেনে ৪২ মাস ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে এটাই ছিল সর্বশেষ উদ্যোগ, যা আগের মতোই ব্যর্থ হলো। এর আগে, চলতি বছরের আগস্টে আলাস্কায় দুই নেতার হঠাৎ আয়োজিত শীর্ষ বৈঠকও কোনো ফল দেয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ, যাতে দুই পক্ষেরই বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব কী?

গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই’ তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার ১০ মাস পরও তিনি শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না হওয়ায় ক্রমেই হতাশ হচ্ছেন।

পুতিনের দাবি, যুদ্ধবিরতির জন্য ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে এবং রাশিয়া দখল করা অঞ্চলগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। অন্যদিকে, ইউক্রেন কোনো ভূমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। এই অবস্থায় ট্রাম্প মধ্যপন্থা খুঁজে পাননি।

রবিবার রাতে তিনি নতুন প্রস্তাব দেন—যুদ্ধকে ‘বর্তমান ফ্রন্টলাইনে স্থগিত’ রাখা হোক। তিনি বলেন, ‘তারা এখনই যুদ্ধ থামাক, ঘরে ফিরুক, মানুষ হত্যা বন্ধ করুক—এই মুহূর্তেই।’

বর্তমান যুদ্ধরেখা দনবাস অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে, যা শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এলাকাটি এখন যেভাবে ভাগ হয়েছে, সেভাবেই থাকুক। প্রায় ৭৮ শতাংশ অঞ্চল রাশিয়া নিয়েছে। বাকি বিষয়গুলো ভবিষ্যতে আলোচনায় সমাধান করা যেতে পারে।’

ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা কি এই প্রস্তাব সমর্থন করেছে?

হ্যাঁ। মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ‘দৃঢ়ভাবে সমর্থন’করেন। তারা আরও বলেন, ‘বর্তমান যুদ্ধরেখা আলোচনার সূচনা বিন্দু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।’

বিবৃতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শান্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রাশিয়ার সময়ক্ষেপণ প্রমাণ করেছে, ইউক্রেনই একমাত্র পক্ষ যে সত্যিকারের শান্তি চায়। পুতিন বারবার ধ্বংস আর সহিংসতাই বেছে নিচ্ছেন।’

নেতারা আরও প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর চাপ আরও বাড়াবেন, যতক্ষণ না পুতিন শান্তির জন্য প্রস্তুত হন।

রাশিয়ার অবস্থান কী?

সোমবার, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক বাতিলের আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়া যুদ্ধ ‘স্থগিত’ করার সর্বশেষ প্রস্তাব মানবে না। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত’, যা ইঙ্গিত করে—মস্কো পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ কঠোর শর্তেই যুদ্ধের অবসান চায়।

মঙ্গলবার রয়টার্স জানায়, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে এক গোপন বার্তায় পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে—শুধু বর্তমানে দখল করা অংশ নয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সেদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে মস্কোতে সাংবাদিকদের তিনি জানান, আলাস্কা সম্মেলনে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, সেসব বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ল্যাভরভ পুনরায় স্পষ্ট করেন, যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়া কেবল তখনই রাজি হবে, যখন সংঘাতের ‘মূল কারণ’ দূর হবে—অর্থাৎ ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা হবে এবং রাশিয়া যে ভূখণ্ড দখল করেছে, তা ইউক্রেন ছাড়বে। এই শর্ত কিয়েভের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

ট্রাম্পের অবস্থান কি পরিবর্তিত হয়েছে?

হ্যাঁ। যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতায় ট্রাম্প একাধিকবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানায়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তুলনামূলক কঠোর মনোভাব নেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ভর্ৎসনা করেন। তারা অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন না।

মার্চে ট্রাম্প মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন, যা তিনি আগস্টেও পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু একই মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বরং জেলেনস্কির ওপর চাপ দেন একটি সমঝোতায় আসতে। তখন ক্রেমলিন দাবি করেছিল, ইউক্রেন যেন দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেয় এবং ন্যাটো থেকে দূরে থাকে।

ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু ভূমি বিনিময় ঘটবে। উভয় পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে।’

পরের মাসেই তিনি আবার অবস্থান বদলান। বলেন, ইউক্রেন শুধু নিজের ভূমি ফেরতই পেতে পারে না, ‘এর চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে।’

যুদ্ধের জন্য এর অর্থ কী?

মূলত, আরও অনিশ্চয়তা। নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠক বাতিল হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি এখনো অনিশ্চিত।

গত সপ্তাহে জেলেনস্কি আবার হোয়াইট হাউসে যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছিলেন, যাতে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে। তবে তিনি সে অনুমোদন পাননি।

ট্রাম্প আগেই এ প্রস্তাবে আগ্রহ দেখালেও শুক্রবারের বৈঠকে তিনি তা থেকে সরে আসেন। জেলেনস্কি সামগ্রিক সামরিক সহায়তা বাড়ানোর অনুরোধও জানান, কিন্তু ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন—ইউক্রেনের প্রতি বাড়তি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব মূলত ন্যাটোর ইউরোপীয় দেশগুলোরই নেওয়া উচিত।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত