ভয় পেতে কারও কি ভালো লাগে? কিন্তু হরর সিনেমার ক্ষেত্রে যেন সব হিসাব পাল্টে যায়। ভয় পাই, চমকে উঠি, তবু দেখতেই থাকি। আর সিনেমা শেষ না করে উঠতে পারি না। প্রশ্ন জাগে, ভয় পেলেও কেন আমরা হরর সিনেমা দেখি? কেন হরর সিনেমা আমাদের এত টানে?
তুফায়েল আহমদ
আমার বয়স তখন ১৬ কিংবা ১৭। এক বৃষ্টির রাতে রুমের লাইট, দরজা-জানালা বন্ধ করে ল্যাপটপে দেখতে বসেছি হরর সিনেমা ‘দ্য রিং’ (২০০২)। সিনেমার একটি দৃশ্যে মা তাঁর মেয়ের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘আই স হার ফেস’ (আমি ওর মুখটা দেখেছি)। আর ঠিক তখনই স্ক্রিনে ভেসে উঠল আলমারির ভেতরে থাকা মেয়েটির বিকৃত ও বীভৎস মুখ। এক ঝলক দেখিয়েই দৃশ্যটা শেষ হয়ে যায়।
হঠাৎ সেই দৃশ্য দেখে আমার হৃৎপিণ্ড যেন লাফিয়ে গলায় চলে এসেছিল! বুকের ভেতরে হাতুড়ির আঘাতের মতো ঢিপঢিপ করছিল। আর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। জীবনে এতটা ভয় খুব কমই পেয়েছি। মনে পড়ে, ভয় পেয়ে প্রায় রেকর্ড গতিতে ছুটে গিয়ে ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। মিনিট চার-পাঁচ পর কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবারও সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম। একটি ব্যাপার খেয়াল করেছেন? এত ভয় পাওয়া সত্ত্বেও আমি কিন্তু আবার সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম!
ব্যাপারটা শুধু আমার বেলায় না, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে। গা ছমছমে দৃশ্য, ভয় ধরানো আবহসংগীত আর বুকের ভেতর হাতুড়িপেটার মতো হরর সিনেমার অনুভূতিগুলোর পাওয়ার জন্য মানুষ টাকা খরচ করে টিকিট কাটে, সময়ও বের করে। অদ্ভুত লাগছে, তাই না? মানব মনের এই এক চিরন্তন কৌতূহল; যা কিছু নিষিদ্ধ, তার প্রতি আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু হরর সিনেমার বেলায় কেন আমরা স্বেচ্ছায় শরীর ও মনকে সাময়িকভাবে ভীতসন্তস্ত্র করে তুলে এমন অভিজ্ঞতা পেতে চাই? আসলে এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের মনস্তত্ত্বের জটিল ও রহস্যময় দরজা।
ব্যাপারটা এমন না যে আমরা কেবল ভয় পেতেই ভালোবাসি। বরং ভয়ের সঙ্গে উত্তেজনার মিশ্রণই আমাদের টেনে নিয়ে যায় হরর সিনেমার দিকে। এই স্বেচ্ছায় ডেকে আনা ভয় আসলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত খেলা। সিনেমার হরর দৃশ্যগুলো ‘অভিনয়’ জেনেও আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীর খানিকটা আসল বিপদের মতোই প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ভয় পাবো জেনেও হরর সিনেমা দেখার মূল ব্যাপার হলো নিজেকে ‘অনিরাপদ’ না ভাবা। সমাজবিজ্ঞানী ড. মারজি কেরের মতে, ‘মানুষ তখনই ভয় উপভোগ করতে পারে যখন জানে, সে সম্পূর্ণ নিরাপদ।’ সেটি সিনেমাহলের আরামদায়ক চেয়ারে বসে বড় পর্দায় সিনেমা দেখা হোক বা নিজের রুমের টিভি-ল্যাপটপের ছোট পর্দায় হোক। আমরা যখন পর্দায় কোনো ভৌতিক বা নৃশংস দৃশ্য দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন বার্তা পায়। যেমন ধরুন, ‘প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি’ (২০০৭) সিনেমাটা দেখতে গিয়ে এক সাধারণ শোবার ঘরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে দেখতে আমরা যখন হঠাৎ অশরীরী অস্তিত্বের উপস্থিতি টের পাই, আমাদের হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে।
একদিকে যেমন হরর সিনেমা দেখার সময় দৃশ্য ও শব্দের প্রভাবে আমাদের মস্তিষ্ক বিপদ সংকেত পেয়ে ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ (লড়ো নয়তো ভাগো) প্রতিক্রিয়া চালু করে দেয়। এর ফলে অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিনের মতো হরমোন নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের হৃৎস্পন্দন আর রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার অন্যদিকে মস্তিষ্কের সচেতন অংশ জানে, এই বিপদটা আসলে নকল। পর্দায় যা ঘটছে, তা আমাদের কোনো শারীরিক ক্ষতি করবে না। শারীরিক উত্তেজনা ও মানসিক নিরাপত্তার পরস্পর বিপরীত এই দুই অনুভূতি মিলে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ড. কের-এর মতে, এই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভয়কে জয় করার পর দর্শকেরা এক ধরনের আনন্দ পান।
ভয়ের সঙ্গে আনন্দের অদ্ভুত সম্পর্কের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ডলফ জাকম্যানের প্রস্তাবিত ‘এক্সাইটেশন ট্রান্সফার প্রসেস’ তত্ত্বে, যা পারডিউ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্লেন স্পার্কস হরর সিনেমার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, হরর সিনেমা দেখার সময় আমাদের শরীরে যে শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা তৈরি হয়, তা সিনেমা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিলিয়ে যায় না। এই উত্তেজনার রেশ কিছুক্ষণ থেকে যায়।
ভাবুন ‘দ্য কনজিউরিং’ সিনেমার সেই ক্লাইম্যাক্সের কথা, ভয় আর উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠা সিনেমার শেষে যখন পেরন পরিবার বেঁচে যায়, আমরা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তখন জমে থাকা অ্যাড্রেনালিন ইতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। এটা অনেকটা রোলারকোস্টারে চড়ার মতো। রোলারকোস্টারে চড়া অবস্থায় ভয় লাগলেও, রাইড শেষে আনন্দ হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কিছু মানুষের ব্যক্তিত্ব। গবেষকরা দেখেছেন, যারা সাধারণত বেশি রোমাঞ্চপ্রিয় বা ‘সেনসেশন-সিকিং’, তাঁরা হরর সিনেমার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ডেভিড জাল্ডের মতে, কিছু মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণের ক্ষেত্রে ‘ব্রেক’ বা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা অন্যদের চেয়ে দুর্বল থাকে। ফলে তাঁরা উত্তেজনাপূর্ণ বা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অন্যদের চেয়ে বেশি আনন্দ পান।
ডেনমার্কের আরহাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাথিয়াস ক্লাসেনের ‘থ্রেট সিমুলেশন’ নামে একটি থিওরি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, হরর সিনেমা এক ধরনের মানসিক প্রশিক্ষণ। আদিম যুগে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার প্রবৃত্তির এক আধুনিক সংস্করণ।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, হরর সিনেমা দেখে আমরা কাল্পনিক বিপদসংকুল পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হই। আর তা মোকাবিলার মানসিক মহড়া দিই। যেমন ধরুন, ‘আ কোয়ায়েট প্লেস’ (২০১৮) দেখার সময় আমরা অবচেতন মনে ভাবতে থাকি, শব্দ করলেই যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত, সেখানে কীভাবে টিকে থাকা সম্ভব বা কীভাবে প্রিয়জনকে রক্ষা করা যায়। বিপদে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। হরর সিনেমা দেখে এই বিষয়গুলো আমরা নিরাপদ পরিবেশে অনুশীলন করার সুযোগ পাই। শিশুরা যেমন খেলার মাধ্যমে দৌড়ানো বা লুকানোর মতো আত্মরক্ষার কৌশল শেখে, প্রাপ্তবয়স্করাও তেমনি হরর সিনেমার মাধ্যমে মানসিক সহনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
অনেক সময় হরর সিনেমা সমসাময়িক সমাজের ভয় ও উদ্বেগের শক্তিশালী আয়না হয়ে উঠে। দশক অনুযায়ী জনপ্রিয় হরর সিনেমার ধরন দেখলে এটা খানিকটা বোঝা যায় সেই সমাজের মানুষ কোন বিষয়গুলো নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। কালজয়ী কিছু হরর সিনেমার দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। অ্যালফ্রেড হিচকক ‘সাইকো’ (১৯৬০) সিনেমায় দেখিয়েছিলেন, বিপদ সবসময় ভয়ংকর দানবের রূপে আসে না, বরং পাশের বাড়ির আপাত নিরীহ মানুষটিও হতে পারে তার উৎস। সত্তরের দশকে ‘দ্য এক্সরসিস্ট’ ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধুনিকতার সংঘাত থেকে তৈরি হওয়া ভয়কে পর্দায় এনেছিল। আবার স্ট্যানলি কুবরিকের ‘দ্য শাইনিং’ পারিবারিক ও মানসিক বিচ্ছিন্নতার ভয়কে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল।
পঞ্চাশের দশকে হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আতঙ্ক আর যুদ্ধের ভয়ের প্রেক্ষিতে জন্ম নিয়েছিল ‘গডজিলা’-র মতো দানবের সিনেমা। আবার, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে ভিনগ্রহের প্রাণী বা ‘বডি স্ন্যাচার’ সংক্রান্ত সিনেমাগুলো ছিল কমিউনিজমের ভয়ের প্রতীক। আজকের দিনে জোম্বি বা মহামারি-সংক্রান্ত সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী সংক্রামক ব্যাধির ভয়কেই তুলে ধরে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের হিন্দি হরর সিরিজ ‘ঘুল’ পিশাচের উপমায় দেখিয়েছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্ববাদের সমন্বয়ের এক ভয়াবহ ভারতের ছবি, যা হয়ত বর্তমান সময়ে একদমই বাস্তবের দৃশ্যে পরিণত হয়েছে।
আমার বয়স তখন ১৬ কিংবা ১৭। এক বৃষ্টির রাতে রুমের লাইট, দরজা-জানালা বন্ধ করে ল্যাপটপে দেখতে বসেছি হরর সিনেমা ‘দ্য রিং’ (২০০২)। সিনেমার একটি দৃশ্যে মা তাঁর মেয়ের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘আই স হার ফেস’ (আমি ওর মুখটা দেখেছি)। আর ঠিক তখনই স্ক্রিনে ভেসে উঠল আলমারির ভেতরে থাকা মেয়েটির বিকৃত ও বীভৎস মুখ। এক ঝলক দেখিয়েই দৃশ্যটা শেষ হয়ে যায়।
হঠাৎ সেই দৃশ্য দেখে আমার হৃৎপিণ্ড যেন লাফিয়ে গলায় চলে এসেছিল! বুকের ভেতরে হাতুড়ির আঘাতের মতো ঢিপঢিপ করছিল। আর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। জীবনে এতটা ভয় খুব কমই পেয়েছি। মনে পড়ে, ভয় পেয়ে প্রায় রেকর্ড গতিতে ছুটে গিয়ে ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। মিনিট চার-পাঁচ পর কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবারও সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম। একটি ব্যাপার খেয়াল করেছেন? এত ভয় পাওয়া সত্ত্বেও আমি কিন্তু আবার সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম!
ব্যাপারটা শুধু আমার বেলায় না, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে। গা ছমছমে দৃশ্য, ভয় ধরানো আবহসংগীত আর বুকের ভেতর হাতুড়িপেটার মতো হরর সিনেমার অনুভূতিগুলোর পাওয়ার জন্য মানুষ টাকা খরচ করে টিকিট কাটে, সময়ও বের করে। অদ্ভুত লাগছে, তাই না? মানব মনের এই এক চিরন্তন কৌতূহল; যা কিছু নিষিদ্ধ, তার প্রতি আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু হরর সিনেমার বেলায় কেন আমরা স্বেচ্ছায় শরীর ও মনকে সাময়িকভাবে ভীতসন্তস্ত্র করে তুলে এমন অভিজ্ঞতা পেতে চাই? আসলে এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের মনস্তত্ত্বের জটিল ও রহস্যময় দরজা।
ব্যাপারটা এমন না যে আমরা কেবল ভয় পেতেই ভালোবাসি। বরং ভয়ের সঙ্গে উত্তেজনার মিশ্রণই আমাদের টেনে নিয়ে যায় হরর সিনেমার দিকে। এই স্বেচ্ছায় ডেকে আনা ভয় আসলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত খেলা। সিনেমার হরর দৃশ্যগুলো ‘অভিনয়’ জেনেও আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীর খানিকটা আসল বিপদের মতোই প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ভয় পাবো জেনেও হরর সিনেমা দেখার মূল ব্যাপার হলো নিজেকে ‘অনিরাপদ’ না ভাবা। সমাজবিজ্ঞানী ড. মারজি কেরের মতে, ‘মানুষ তখনই ভয় উপভোগ করতে পারে যখন জানে, সে সম্পূর্ণ নিরাপদ।’ সেটি সিনেমাহলের আরামদায়ক চেয়ারে বসে বড় পর্দায় সিনেমা দেখা হোক বা নিজের রুমের টিভি-ল্যাপটপের ছোট পর্দায় হোক। আমরা যখন পর্দায় কোনো ভৌতিক বা নৃশংস দৃশ্য দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন বার্তা পায়। যেমন ধরুন, ‘প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি’ (২০০৭) সিনেমাটা দেখতে গিয়ে এক সাধারণ শোবার ঘরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে দেখতে আমরা যখন হঠাৎ অশরীরী অস্তিত্বের উপস্থিতি টের পাই, আমাদের হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে।
একদিকে যেমন হরর সিনেমা দেখার সময় দৃশ্য ও শব্দের প্রভাবে আমাদের মস্তিষ্ক বিপদ সংকেত পেয়ে ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ (লড়ো নয়তো ভাগো) প্রতিক্রিয়া চালু করে দেয়। এর ফলে অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিনের মতো হরমোন নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের হৃৎস্পন্দন আর রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার অন্যদিকে মস্তিষ্কের সচেতন অংশ জানে, এই বিপদটা আসলে নকল। পর্দায় যা ঘটছে, তা আমাদের কোনো শারীরিক ক্ষতি করবে না। শারীরিক উত্তেজনা ও মানসিক নিরাপত্তার পরস্পর বিপরীত এই দুই অনুভূতি মিলে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ড. কের-এর মতে, এই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভয়কে জয় করার পর দর্শকেরা এক ধরনের আনন্দ পান।
ভয়ের সঙ্গে আনন্দের অদ্ভুত সম্পর্কের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ডলফ জাকম্যানের প্রস্তাবিত ‘এক্সাইটেশন ট্রান্সফার প্রসেস’ তত্ত্বে, যা পারডিউ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্লেন স্পার্কস হরর সিনেমার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, হরর সিনেমা দেখার সময় আমাদের শরীরে যে শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা তৈরি হয়, তা সিনেমা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিলিয়ে যায় না। এই উত্তেজনার রেশ কিছুক্ষণ থেকে যায়।
ভাবুন ‘দ্য কনজিউরিং’ সিনেমার সেই ক্লাইম্যাক্সের কথা, ভয় আর উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠা সিনেমার শেষে যখন পেরন পরিবার বেঁচে যায়, আমরা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তখন জমে থাকা অ্যাড্রেনালিন ইতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। এটা অনেকটা রোলারকোস্টারে চড়ার মতো। রোলারকোস্টারে চড়া অবস্থায় ভয় লাগলেও, রাইড শেষে আনন্দ হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কিছু মানুষের ব্যক্তিত্ব। গবেষকরা দেখেছেন, যারা সাধারণত বেশি রোমাঞ্চপ্রিয় বা ‘সেনসেশন-সিকিং’, তাঁরা হরর সিনেমার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ডেভিড জাল্ডের মতে, কিছু মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণের ক্ষেত্রে ‘ব্রেক’ বা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা অন্যদের চেয়ে দুর্বল থাকে। ফলে তাঁরা উত্তেজনাপূর্ণ বা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অন্যদের চেয়ে বেশি আনন্দ পান।
ডেনমার্কের আরহাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাথিয়াস ক্লাসেনের ‘থ্রেট সিমুলেশন’ নামে একটি থিওরি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, হরর সিনেমা এক ধরনের মানসিক প্রশিক্ষণ। আদিম যুগে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার প্রবৃত্তির এক আধুনিক সংস্করণ।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, হরর সিনেমা দেখে আমরা কাল্পনিক বিপদসংকুল পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হই। আর তা মোকাবিলার মানসিক মহড়া দিই। যেমন ধরুন, ‘আ কোয়ায়েট প্লেস’ (২০১৮) দেখার সময় আমরা অবচেতন মনে ভাবতে থাকি, শব্দ করলেই যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত, সেখানে কীভাবে টিকে থাকা সম্ভব বা কীভাবে প্রিয়জনকে রক্ষা করা যায়। বিপদে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। হরর সিনেমা দেখে এই বিষয়গুলো আমরা নিরাপদ পরিবেশে অনুশীলন করার সুযোগ পাই। শিশুরা যেমন খেলার মাধ্যমে দৌড়ানো বা লুকানোর মতো আত্মরক্ষার কৌশল শেখে, প্রাপ্তবয়স্করাও তেমনি হরর সিনেমার মাধ্যমে মানসিক সহনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
অনেক সময় হরর সিনেমা সমসাময়িক সমাজের ভয় ও উদ্বেগের শক্তিশালী আয়না হয়ে উঠে। দশক অনুযায়ী জনপ্রিয় হরর সিনেমার ধরন দেখলে এটা খানিকটা বোঝা যায় সেই সমাজের মানুষ কোন বিষয়গুলো নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। কালজয়ী কিছু হরর সিনেমার দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। অ্যালফ্রেড হিচকক ‘সাইকো’ (১৯৬০) সিনেমায় দেখিয়েছিলেন, বিপদ সবসময় ভয়ংকর দানবের রূপে আসে না, বরং পাশের বাড়ির আপাত নিরীহ মানুষটিও হতে পারে তার উৎস। সত্তরের দশকে ‘দ্য এক্সরসিস্ট’ ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধুনিকতার সংঘাত থেকে তৈরি হওয়া ভয়কে পর্দায় এনেছিল। আবার স্ট্যানলি কুবরিকের ‘দ্য শাইনিং’ পারিবারিক ও মানসিক বিচ্ছিন্নতার ভয়কে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল।
পঞ্চাশের দশকে হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আতঙ্ক আর যুদ্ধের ভয়ের প্রেক্ষিতে জন্ম নিয়েছিল ‘গডজিলা’-র মতো দানবের সিনেমা। আবার, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে ভিনগ্রহের প্রাণী বা ‘বডি স্ন্যাচার’ সংক্রান্ত সিনেমাগুলো ছিল কমিউনিজমের ভয়ের প্রতীক। আজকের দিনে জোম্বি বা মহামারি-সংক্রান্ত সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী সংক্রামক ব্যাধির ভয়কেই তুলে ধরে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের হিন্দি হরর সিরিজ ‘ঘুল’ পিশাচের উপমায় দেখিয়েছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্ববাদের সমন্বয়ের এক ভয়াবহ ভারতের ছবি, যা হয়ত বর্তমান সময়ে একদমই বাস্তবের দৃশ্যে পরিণত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস নামে নতুন ব্রাউজার উন্মুক্ত করেছে এআই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই।
১ দিন আগেসমুদ্রের নিচে লুকিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য, অসংখ্য বিস্ময়। আর সেই বিস্ময়ের ভেতরেও এমন প্রাণী আছে, যারা প্রকৃতির নিয়মকানুনই উল্টে দিয়েছে।
১ দিন আগেআজ কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুদিন। তাঁর অগণিত কবিতায় অজস্রবার ব্যবহৃত আকাশ নক্ষত্র নিহারীকা উল্কা ইত্যদি শব্দকল্প পড়তে পড়তে আপনার মনে কী গোপনে এই ভাবনার উদয় হয়না যে, তিনি খানিকটা সৌরজগৎপ্রেমীও ছিলেন?
১ দিন আগেচলতি বছরের ৪১তম পুরুষ ও ১৮তম মহিলা জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছেন টঙ্গীর এরশাদনগরের সুমাইয়া আক্তার। তাঁর গল্প উঠে এসেছে এই লেখায়।
২ দিন আগে