leadT1ad

‘কয়জন স্ত্রী তোমার’, সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের গায়ে পারফিউম ছিটিয়ে প্রশ্ন ট্রাম্পের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার পর এটাই সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর। ছবি: সংগৃহীত।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গত সোমবার (১০ নভেম্বর) এক বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয় এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে (পূর্বে আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি নামে পরিচিত) নিজের ব্র্যান্ডের পারফিউম উপহার দেন এবং তা সরাসরি আল-শারার গায়ে স্প্রে করেন।

এসময় ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘এটাই সেরা ঘ্রান। আরেকটা তোমার স্ত্রীর জন্য।’ এরপর হঠাৎ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেন, ‘কয়জন স্ত্রী তোমার?’ আল-শারা জবাব দেন, ‘অবশ্যই একজনই।’ তার জবাবে সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে উঠে। ট্রাম্প আবার ঠাট্টা করে বলেন, ‘তুমি জানো না, ভবিষ্যতে কী হবে!’

এই মুহূর্তটি ভিডিওতে ধারণ করা হয় এবং দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ এটিকে ‘বেদনামিশ্রিত কৌতুক’, আবার কেউ ‘অস্বস্তিকর কিন্তু মজাদার’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এতে ট্রাম্পের অপ্রচলিত কূটনৈতিক ধরণ আবারও আলোচনায় আসে। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আসাদ পরবর্তী সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও আইএসবিরোধী কার্যক্রম; তবে পারফিউম ঘটনার রেশ সেগুলোর গুরুত্বকে অনেকটাই ছাপিয়ে যায়।

১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ভিডিওটি এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। এটি নিয়ে অসংখ্য মিম, সাংস্কৃতিক মন্তব্য ও কূটনৈতিক আচরণবিধি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিরিয়ার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে ঘটনাটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ঢঙে কূটনীতি পরিচালনার প্রবণতাকে স্পষ্ট করে।

এই সাক্ষাৎ ঘটে এমন সময়ে, যখন ২০২৪ সালের শেষ দিকে বাশার আল-আসাদের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র-সিরিয়া সম্পর্ক নতুনভাবে গঠিত হচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, আসাদের পতনে তাঁর প্রশাসনের কৌশলগত চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে।

আহমেদ আল-শারা, যিনি আগে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জোটের নেতৃত্ব দিতেন, এখন সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট। তিনি অতীতের জিহাদি পরিচয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করছেন। তাঁর এই সফর ছিল সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। আলোচনায় পুনর্গঠন সহায়তা, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন ও পূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রচলিত কূটনৈতিক আচরণের জন্য পরিচিত। তিনি প্রায়ই ব্যবসায়িক ধাঁচে ব্যক্তিগত মন্তব্য বা উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আলোচনা পরিচালনা করেন। তাঁর উপহার দেওয়া পারফিউমটি ছিল ‘ট্রাম্প ফ্র্যাগ্রেন্স’ ব্র্যান্ডের, ১৯৮০-র দশক থেকে তিনি এর ব্যবসা করে আসছেন। ইসলামিক সংস্কৃতিতে অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি বিতর্কিত হলেও আল-শারা তা বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

ট্রাম্পের রসিকতাটি আরব ও মুসলিম সমাজে বহুবিবাহের প্রচলিত ধারণাকে ইঙ্গিত করে। তিনি অতীতেও সৌদি আরব প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছেন। একজন সুন্নি মুসলিম আল-শারা প্রকাশ্যে একজন স্ত্রীর কথা জানিয়েছেন এবং নিজেকে পারিবারিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান।

ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, পারফিউম স্প্রে করার মুহূর্তে আল-শারা সামান্য গলা কাত করেন, যা তাঁর অস্বস্তি নির্দেশ করে, যদিও তিনি সংযত আচরণ বজায় রাখেন। আল-শারা সংক্ষিপ্ত ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে ‘ওয়ান’ বলে জবাব দেন, যা সম্ভাব্য অস্বস্তি দূর করে। তাঁর দল একে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ রসিকতা’ হিসেবে দেখিয়েছে এবং ফলপ্রসূ আলোচনার দিকেই গুরুত্ব দিয়েছে।

ঘটনাটি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে—কেউ মজা পেয়েছেন, কেউ সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা আল-শারার অস্বস্তি লক্ষ্য করেছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, এটি বহুবিবাহ সংক্রান্ত সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণাকে আঘাত করেছে।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা এক্সে ঘটনাটিকে ‘ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ আকর্ষণ কৌশল’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। ট্রাম্প নিজেও হাসেন এবং পরে সহযোগীদের জানান, ঘটনাটি ‘পরিস্থিতি সহজ করে দিয়েছে।’

ভিডিওটি এখনও প্রচারিত হচ্ছে। ইউটিউব শর্টসে এর ভিউ ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। বৈঠকের পর আল-শারা দামেস্কে ফিরে গিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন, তবে ঘটনাটির উল্লেখ করেননি।

আল-শারার হোয়াইট হাউস সফরকে এক নজিরবিহীন কূটনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। একসময় যা অকল্পনীয় বলে মনে হতো, তা এখন বাস্তবতা। ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার পর এটাই সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর।

৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল-শারা হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা। সংগঠনটির শিকড় আল-কায়েদায়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন এবং মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ ঘোষণা এবং তাঁর মাথার দাম ১ কোটি ডলার ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে আল-শারা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং এইচটিএস-কে আরও বাস্তববাদী সংগঠন হিসেবে পুনর্গঠন করেন।

২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর এইচটিএস দ্রুত অভিযান চালিয়ে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তুরস্ক আসাদকে হঠাতে এইচটিএস-কে সহয়তা করে।

এরপর আল-শারা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেন এবং ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব থেকে দূরে থেকে তুরস্ক, উপসাগরীয় দেশ ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ঘোষণা দেন।

যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি কঠোরতা কমিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে ঘোষিত পুরস্কার প্রত্যাহার করা হয়। গত ৬ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাঁর ও নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর আরোপিত সন্ত্রাসবিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

সোমবারের বৈঠকের কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে বাদ দেয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত