আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা যে প্রক্রিয়ায় এসেছি, সেটা পুরোপুরি স্বচ্ছ। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই শেখ হাসিনার মামলার বিচার হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মামলার রায় আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ের দিন ধার্যের পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম রায় ঘোষণাকে ঘিরে নৈরাজ্যের শঙ্কার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, যদি কেউ বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করার জন্য হুমকি দেয় বা কার্যক্রম চালায়, সেটা আদালতের প্রতি অসম্মান ও প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। যারা উসকানি দেবে বা সন্ত্রাসের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে।
আন্তর্জাতিক মহলে এ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রশ্ন তোলার চেষ্টার প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, তারা (আওয়ামী লীগ) চাইলে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু আমরা যে প্রক্রিয়ায় এসেছি, সেটা পুরোপুরি স্বচ্ছ। এখানে অকাট্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই বিচার হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে, ন্যায়বিচারও তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
তিনি আরও বলেন, যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তার ভাগ্য নিয়ে কেউ নৈরাজ্য করতে পারে না। আমরা জনগণের প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখি।
এর আগে বুধবার (১২ নভেম্বর) প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জাতিসংঘে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, “আমি যতটুকু জানি, উনি (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন সাহেব) শেখ হাসিনার আমলের কোনো একটা কোর্টের স্পেশাল পিপির দায়িত্বে ছিলেন। অর্থাৎ উনি তারই লোক ছিলেন। কাজেই এইখানে ভিন্ন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার কোনো কারণ নাই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এই আইন ও ট্রাইব্যুনাল তৈরি এবং সংশোধন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাদের তৈরি করা আইন এবং অনুপস্থিতিতে কীভাবে বিচার চলবে, সেই প্রক্রিয়াটা তারাই তৈরি করেছেন। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন এক্ষেত্রে অনিয়মটা কী হচ্ছে?”
এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় প্রসিকিউশন তার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ মামুনের খালাস (অ্যাকুইটাল) চেয়েছেন।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি করেন। এরপর রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য আজকের দিনটি ধার্য ছিল।
মামলাটিতে ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিন আসামির বিরুদ্ধে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।