সিএনএন
সিংহের পিঠে বসে, দশ হাতে দেবী দুর্গা ধারণ করেছেন স্বর্গীয় অস্ত্র। কিন্তু এবার তার লক্ষ্য প্রচলিত অসুর মহিষাসুর নয়। তিনি নিশানা করছেন এক ভিন্ন শত্রুকে—সোনালি চুল, পেশিবহুল দেহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মুখাবয়বযুক্ত এক চরিত্রকে।
সম্প্রতি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা পূজা উৎসবে এই মূর্তি উন্মোচন করা হয়। বাংলার হিন্দুদের কাছে ‘দুর্গা পূজা’ নামে পরিচিত এ উৎসবটি অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয়ের প্রতীক।
কিন্তু এবারের এই মূর্তি প্রদর্শনী শুধু রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নয়, ছিল এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনেরও প্রতিফলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফল এই টানাপোড়েন।
মুর্শিদাবাদের আয়োজক কমিটির সদস্য সঞ্জয় বসাক সিএনএনকে বলেন, ‘ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আগে ভালো ছিল, কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি আমাদের দমন করার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা তাকে পরাজিত অসুর দানব রূপে দেখিয়েছি, যাকে শক্তিশালী দেবী দুর্গা বধ করছেন।’
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গা পূজার সময় শহরজুড়ে গড়ে ওঠে বিশাল শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। দেবী দুর্গা ও অসুরের পৌরাণিক যুদ্ধকে আধুনিক উদ্বেগ ও বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করা হয়। বিগত বছরগুলোতে এই মণ্ডপগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে নানা সমসাময়িক বিষয়—যেমন শরণার্থী সংকট, প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ ইত্যাদি।
সংস্কৃতি বিশ্লেষক সুশোভন সরকার বলেন, ‘৯/১১ হামলার পর ওসামা বিন লাদেনকে অসুর হিসেবে দেখানো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।’ সুশোভন সরকার একজন পরামর্শদাতা, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে রিল তৈরি করেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী নয়াদিল্লি ও কলকাতায় সময় কাটান।
২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর আরেক মণ্ডপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও খলনায়ক রূপে প্রদর্শন করা হয়। ধর্মীয় শিল্পের মাধ্যমে এই ধরনের কূটনৈতিক ইঙ্গিত বরাবরই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সরকার আরও বলেন, ‘এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই এক মণ্ডপে ট্রাম্পকে “অসুর” হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি মূলত সাধারণ মানুষের অনুভূতির এক প্রতীকী প্রকাশ।’
ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল
সম্পর্কের এই অবনতি একদিনে ঘটেনি। ছয় বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উল্লাসে দুই দক্ষিণপন্থী নেতা সেই সময় কূটনৈতিক সম্পর্ককে পরিণত করেছিলেন এক চমকপ্রদ প্রদর্শনীতে।
২০১৯ সালের সেই ‘হাউডি মোদি!’ অনুষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় পরের বছরের ‘নমস্তে ট্রাম্প’ সমাবেশে, যা গুজরাটের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ‘অটুট বন্ধুত্ব’ হিসেবে প্রচার করা হয়।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সেই সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বছর শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেন এবং দেশের ওপর আরোপ করেন সর্বোচ্চ শুল্কের অর্ধেক।
এই ৫০ শতাংশ করের একটি অংশ রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরোপ করা হয়। বাকি অংশ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়।
ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এই শুল্ককে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দেয়। তারা যুক্তি দেয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপও তো এখনো সার ও রাসায়নিক পণ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে শুধু ভারতের দোষ হবে কেন?
তবু ট্রাম্প প্রশাসন নমনীয় হয় নি। আগস্টে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রাশিয়ার যুদ্ধকে ‘মোদির যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করে দিল্লির ওপর চাপ বাড়ান, যাতে তারা মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারত সেই মন্তব্যকে ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের হঠাৎ নির্দেশে এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১ লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এটি ভারতীয় পেশাজীবীদের প্রতি এক ধরনের ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে দেখা হয়, কারণ এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী ভারতীয়রাই।
কলকাতার বাসিন্দা তুনীর মুখার্জি বলেন, ‘মহিষাসুর রূপে ট্রাম্পকে দেখানো আসলে এক রাজনৈতিক বার্তা—যা দর্শক ও গণমাধ্যম উভয়ের জন্যই।’ তাঁর মতে, এটি বাঙালি সংস্কৃতির শিল্প ও রাজনীতির মেলবন্ধনেরই অংশ। বার্তাটি স্পষ্ট—ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ‘পশ্চাদগামী নীতি’ আজকের যুগের নতুন অসুর, যাকে দেবী দুর্গা পরাস্ত করছেন।
মুর্শিদাবাদের আয়োজক সঞ্জয় বসাক জানান, তিন মাস ধরে তাঁরা প্রায় গোপনীয়ভাবে এই মূর্তি তৈরির কাজ চালিয়েছেন। এতে রহস্য ও আগ্রহ ধরে রাখার কৌশল ছিল।
তিনি বলেন, ‘অসুরের পরিচয় কঠোর গোপনীয়তায় রাখা হয়েছিল।’ এমনকি ট্রাম্পের মুখাবয়বের চূড়ান্ত রূপটি তৈরি হয় শেষ সাত দিনে, যা উন্মোচনের আগে কাউকে দেখানো হয়নি।
মূর্তির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। বসাক বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ মণ্ডপে ভিড় জমায়, সারি লেগে যায় আশপাশের রাস্তায়।’
তাঁর মতে, এই প্রতিক্রিয়াই প্রমাণ করে কাজটি মানুষের মনে দাগ কেটেছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন কিছু যা অনেকের সঙ্গে মিশে গেছে—অথবা অন্তত এমন কিছু, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিল।’
বাংলার ভিন্নমতের ইতিহাস
পশ্চিমবঙ্গে শিল্প কেবল সৌন্দর্যের বিষয় নয়; এটি এক ধরনের ভাষা—আলোচনার, প্রতিবাদের ও সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্যের। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন অস্ত্রে, তেমনি ভাবনায়ও লড়া হয়েছিল।
কবি ও ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বন্দে মাতরম’ গান দিয়ে আন্দোলনকে তাঁর আহ্বানবাণী দিয়েছিলেন। আর নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও দর্শন আন্দোলনে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়।
স্বাধীনতার পরেও এই রাজনৈতিক চেতনা ম্লান হয়নি। স্থানীয় কমিউনিস্ট শাসনের তিন দশকের সময় এটি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। আজও সেই ঐতিহ্য পথের শিল্পে ও জনআন্দোলনে প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের বিশাল মূর্তি এই ধারারই অংশ। এর পাশাপাশি আরও অনেক ইনস্টলেশনে মার্কিন নেতাকে বা তার অর্থনৈতিক নীতির প্রতীকগুলোকে অসুররূপে দেখানো হয়েছে।
দেবী দুর্গা, যিনি হিন্দু ধর্মে বিশ্বজননী হিসেবে পূজিত, শক্তি ও মমতার প্রতীক। তাঁর হাতে বর্শা ও গদা এই দ্বৈত শক্তির প্রকাশ ঘটায়।
বাংলার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা আজ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক মত প্রকাশের এক জনমঞ্চে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প ইনস্টলেশনের আয়োজক কমিটির সদস্য বাসাক বলেন, ‘এই ধরনের সমালোচনা ও সামাজিক মন্তব্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ট্রাম্প এখন একের পর এক শুল্ক আরোপ করছেন, এটি আজকের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তাই আমাদের শিল্পেও সেটিই প্রতিফলিত হওয়া স্বাভাবিক।’
সিংহের পিঠে বসে, দশ হাতে দেবী দুর্গা ধারণ করেছেন স্বর্গীয় অস্ত্র। কিন্তু এবার তার লক্ষ্য প্রচলিত অসুর মহিষাসুর নয়। তিনি নিশানা করছেন এক ভিন্ন শত্রুকে—সোনালি চুল, পেশিবহুল দেহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মুখাবয়বযুক্ত এক চরিত্রকে।
সম্প্রতি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা পূজা উৎসবে এই মূর্তি উন্মোচন করা হয়। বাংলার হিন্দুদের কাছে ‘দুর্গা পূজা’ নামে পরিচিত এ উৎসবটি অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয়ের প্রতীক।
কিন্তু এবারের এই মূর্তি প্রদর্শনী শুধু রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নয়, ছিল এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনেরও প্রতিফলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফল এই টানাপোড়েন।
মুর্শিদাবাদের আয়োজক কমিটির সদস্য সঞ্জয় বসাক সিএনএনকে বলেন, ‘ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আগে ভালো ছিল, কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি আমাদের দমন করার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা তাকে পরাজিত অসুর দানব রূপে দেখিয়েছি, যাকে শক্তিশালী দেবী দুর্গা বধ করছেন।’
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গা পূজার সময় শহরজুড়ে গড়ে ওঠে বিশাল শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। দেবী দুর্গা ও অসুরের পৌরাণিক যুদ্ধকে আধুনিক উদ্বেগ ও বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করা হয়। বিগত বছরগুলোতে এই মণ্ডপগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে নানা সমসাময়িক বিষয়—যেমন শরণার্থী সংকট, প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ ইত্যাদি।
সংস্কৃতি বিশ্লেষক সুশোভন সরকার বলেন, ‘৯/১১ হামলার পর ওসামা বিন লাদেনকে অসুর হিসেবে দেখানো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।’ সুশোভন সরকার একজন পরামর্শদাতা, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে রিল তৈরি করেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী নয়াদিল্লি ও কলকাতায় সময় কাটান।
২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর আরেক মণ্ডপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও খলনায়ক রূপে প্রদর্শন করা হয়। ধর্মীয় শিল্পের মাধ্যমে এই ধরনের কূটনৈতিক ইঙ্গিত বরাবরই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সরকার আরও বলেন, ‘এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই এক মণ্ডপে ট্রাম্পকে “অসুর” হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি মূলত সাধারণ মানুষের অনুভূতির এক প্রতীকী প্রকাশ।’
ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল
সম্পর্কের এই অবনতি একদিনে ঘটেনি। ছয় বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উল্লাসে দুই দক্ষিণপন্থী নেতা সেই সময় কূটনৈতিক সম্পর্ককে পরিণত করেছিলেন এক চমকপ্রদ প্রদর্শনীতে।
২০১৯ সালের সেই ‘হাউডি মোদি!’ অনুষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় পরের বছরের ‘নমস্তে ট্রাম্প’ সমাবেশে, যা গুজরাটের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ‘অটুট বন্ধুত্ব’ হিসেবে প্রচার করা হয়।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সেই সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বছর শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেন এবং দেশের ওপর আরোপ করেন সর্বোচ্চ শুল্কের অর্ধেক।
এই ৫০ শতাংশ করের একটি অংশ রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরোপ করা হয়। বাকি অংশ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়।
ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এই শুল্ককে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দেয়। তারা যুক্তি দেয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপও তো এখনো সার ও রাসায়নিক পণ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে শুধু ভারতের দোষ হবে কেন?
তবু ট্রাম্প প্রশাসন নমনীয় হয় নি। আগস্টে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রাশিয়ার যুদ্ধকে ‘মোদির যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করে দিল্লির ওপর চাপ বাড়ান, যাতে তারা মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারত সেই মন্তব্যকে ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের হঠাৎ নির্দেশে এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১ লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এটি ভারতীয় পেশাজীবীদের প্রতি এক ধরনের ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে দেখা হয়, কারণ এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী ভারতীয়রাই।
কলকাতার বাসিন্দা তুনীর মুখার্জি বলেন, ‘মহিষাসুর রূপে ট্রাম্পকে দেখানো আসলে এক রাজনৈতিক বার্তা—যা দর্শক ও গণমাধ্যম উভয়ের জন্যই।’ তাঁর মতে, এটি বাঙালি সংস্কৃতির শিল্প ও রাজনীতির মেলবন্ধনেরই অংশ। বার্তাটি স্পষ্ট—ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ‘পশ্চাদগামী নীতি’ আজকের যুগের নতুন অসুর, যাকে দেবী দুর্গা পরাস্ত করছেন।
মুর্শিদাবাদের আয়োজক সঞ্জয় বসাক জানান, তিন মাস ধরে তাঁরা প্রায় গোপনীয়ভাবে এই মূর্তি তৈরির কাজ চালিয়েছেন। এতে রহস্য ও আগ্রহ ধরে রাখার কৌশল ছিল।
তিনি বলেন, ‘অসুরের পরিচয় কঠোর গোপনীয়তায় রাখা হয়েছিল।’ এমনকি ট্রাম্পের মুখাবয়বের চূড়ান্ত রূপটি তৈরি হয় শেষ সাত দিনে, যা উন্মোচনের আগে কাউকে দেখানো হয়নি।
মূর্তির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। বসাক বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ মণ্ডপে ভিড় জমায়, সারি লেগে যায় আশপাশের রাস্তায়।’
তাঁর মতে, এই প্রতিক্রিয়াই প্রমাণ করে কাজটি মানুষের মনে দাগ কেটেছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন কিছু যা অনেকের সঙ্গে মিশে গেছে—অথবা অন্তত এমন কিছু, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিল।’
বাংলার ভিন্নমতের ইতিহাস
পশ্চিমবঙ্গে শিল্প কেবল সৌন্দর্যের বিষয় নয়; এটি এক ধরনের ভাষা—আলোচনার, প্রতিবাদের ও সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্যের। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন অস্ত্রে, তেমনি ভাবনায়ও লড়া হয়েছিল।
কবি ও ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বন্দে মাতরম’ গান দিয়ে আন্দোলনকে তাঁর আহ্বানবাণী দিয়েছিলেন। আর নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও দর্শন আন্দোলনে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়।
স্বাধীনতার পরেও এই রাজনৈতিক চেতনা ম্লান হয়নি। স্থানীয় কমিউনিস্ট শাসনের তিন দশকের সময় এটি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। আজও সেই ঐতিহ্য পথের শিল্পে ও জনআন্দোলনে প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের বিশাল মূর্তি এই ধারারই অংশ। এর পাশাপাশি আরও অনেক ইনস্টলেশনে মার্কিন নেতাকে বা তার অর্থনৈতিক নীতির প্রতীকগুলোকে অসুররূপে দেখানো হয়েছে।
দেবী দুর্গা, যিনি হিন্দু ধর্মে বিশ্বজননী হিসেবে পূজিত, শক্তি ও মমতার প্রতীক। তাঁর হাতে বর্শা ও গদা এই দ্বৈত শক্তির প্রকাশ ঘটায়।
বাংলার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা আজ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক মত প্রকাশের এক জনমঞ্চে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প ইনস্টলেশনের আয়োজক কমিটির সদস্য বাসাক বলেন, ‘এই ধরনের সমালোচনা ও সামাজিক মন্তব্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ট্রাম্প এখন একের পর এক শুল্ক আরোপ করছেন, এটি আজকের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তাই আমাদের শিল্পেও সেটিই প্রতিফলিত হওয়া স্বাভাবিক।’
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি। তারা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ (এমওএফ’স) নামে এক নতুন ধরনের উপাদান তৈরির পথিকৃৎ হিসেবে এই পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের রায়ের অপেক্ষায় আছি।
৪ ঘণ্টা আগেব্যাপকমাত্রায় প্রেসক্রাইবের প্রধান কারণ হলো ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছোট শহরগুলোতে। ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের ফলে ক্রমাগত কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই নিয়মিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
৪ ঘণ্টা আগেএখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানকালে পবিত্র ওমরা পালন করতে পারবেন মুসলিমরা। দেশটির হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে