স্ট্রিম ডেস্ক
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি। তারা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ (এমওএফ’স) নামে এক নতুন ধরনের উপাদান তৈরির পথিকৃৎ হিসেবে এই পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
এই আবিষ্কার বস্তুবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায় খুলে দেয়, যা কার্বন শোষণ থেকে শুরু করে শুষ্ক এলাকায় পানি আহরণ পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে নতুন ওষুধ ও নানা ধরনের উপাদান তৈরির পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
এ ছাড়া এই তিন বিজ্ঞানীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে নতুন প্রোটিন শনাক্ত ও ডিজাইন করার শক্তিশালী পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য। প্রোটিন হলো জীবনের মূল গঠন উপাদান, আর তাদের আবিষ্কার জীববিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
এই তিন বিজ্ঞানীর কাজ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ। তারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা নিয়ে যৌথভাবে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন।
সুসুমু কিতাগাওয়া ১৯৫১ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৯৭৯ সালে সেখান থেকেই পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি সমন্বয় রসায়নে বিশেষজ্ঞ, যেখানে ধাতব আয়ন ও জৈব যৌগের মিথষ্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন।
রিচার্ড রবসন ১৯৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসবার্নে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। অজৈব রসায়ন ও স্ফটিক প্রকৌশলে তার অবদান সুপরিচিত।
ওমর এম. ইয়াগি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের অধ্যাপক। ১৯৯০ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা-শ্যাম্পেইন থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ বা অণু-ভিত্তিক স্ফটিক কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে শুরু হওয়া তাদের যৌথ গবেষণা এক সময়ের সীমিত ধারণাকে রসায়নবিদদের জন্য এক বৈপ্লবিক কর্মক্ষেত্রে রূপ দেয়।
মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক (এমওএফ) বা ধাতব জৈব কাঠামো কী
সহজভাবে বলতে গেলে, এমওএফ হলো অণু-নির্মিত এক ধরনের জালের মতো কাঠামো। এখানে ধনাত্মক চার্জযুক্ত ধাতব আয়ন কাজ করে সংযোগকারী বা ‘কর্নারস্টোন’ হিসেবে। এগুলোকে যুক্ত করে রাখে দীর্ঘ ও নমনীয় জৈব অণু। এই সংযোগে গঠিত হয় অত্যন্ত সুশৃঙ্খল স্ফটিক কাঠামো, যার ভেতরে তৈরি হয় বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র গহ্বর বা ছিদ্র।
এই গহ্বরগুলোর অভ্যন্তরীণ আয়তন এতটাই বড় যে, এক চা চামচ পরিমাণ এমওএফ-এর পৃষ্ঠতল একটি ফুটবল মাঠের সমান হতে পারে। ফলে এই উপাদানটি অত্যন্ত ছিদ্রযুক্ত ও হালকা।
এমওএফ-কে প্রচলিত পদার্থ যেমন জিওলাইটের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে পার্থক্য হলো, এমওএফ পরিবর্তনযোগ্য। ধাতব সংযোগ বা জৈব লিঙ্কার সামান্য বদল করলেই ছিদ্রের আকার, গঠন বা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে নির্দিষ্ট অণু ‘ধরা’ সম্ভব হয়, যেমন চাল বাছাইয়ের জন্য আলাদা চালুনি ব্যবহার করা হয়।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এমওএফ এমন এক উদ্ভাবন যা ‘ইচ্ছেমতো নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উপাদান তৈরির অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে।’ এখন পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি ভিন্নধর্মী এমওএফ তৈরি হয়েছে এবং আরও হাজারো এমওএফ নিয়ে গবেষণা চলছে।
এই আণবিক কাঠামো এত বড় যে এর মধ্য দিয়ে গ্যাস ও তরল রাসায়নিক প্রবাহিত হতে পারে। মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে এসব কাঠামো ব্যবহার করা যায়।
তাদের প্রধান অবদান: ভিত্তি নির্মাণ
এমওএফ-এর বিকাশ ছিল ধাপে ধাপে এক যৌথ বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা। তিনজন নোবেলজয়ীর প্রত্যেকে এই যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
রিচার্ড রবসনের সূচনা (১৯৮৯): তিনি প্রথম কপার (তামা) আয়ন ও চার বাহুযুক্ত জৈব অণুকে যুক্ত করে হীরার মতো গঠনবিশিষ্ট স্ফটিক তৈরি করেন। এর ভেতরে ফাঁপা গহ্বর ছিল, যা প্রথম স্থিতিশীল এমওএফ-এর ধারণা দেয়। কাঠামোটি দুর্বল হলেও এটি প্রমাণ করে যে ধাতু ও জৈব যৌগ একত্রে বৃহৎ ছিদ্রযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে।
সুসুমু কিতাগাওয়ার গতিশীল উদ্ভাবন (১৯৯০–২০০০ দশক): তিনি দেখান, এমওএফ স্থির নয়—এগুলো ‘শ্বাস নিতে’ পারে। অর্থাৎ, গ্যাস প্রবেশ ও নির্গমন করতে পারে কাঠামো ভেঙে না পড়েই। তিনি এমন নমনীয় এমওএফ তৈরি করেন যা স্পঞ্জের মতো প্রসারিত বা সংকুচিত হয়। এর ফলে দূষণ শনাক্তকারী সেন্সরসহ নানা বাস্তব-প্রয়োগের পথ খুলে যায়।
ওমর এম. ইয়াগির স্থায়িত্ব ও সম্প্রসারণ (১৯৯০–২০০৩): তিনি কাঠামোগুলোকে আরও টেকসই ও ব্যবহারযোগ্য করেন। তার ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ পদ্ধতি কাঠামো গঠনের নকশাকে পূর্বনির্ধারিত করে তোলে—যেমনভাবে আসবাবপত্রের অংশগুলো জোড়া লাগানো হয়। ইয়াগির তৈরি এমওএফ কঠোর পরিবেশেও টিকে থাকে এবং নির্দিষ্ট অণু যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড আলাদা করে ধরতে সক্ষম হয়।
১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তাদের এই আলাদা কিন্তু পরিপূরক অবদান এমওএফ-কে অনুমাননির্ভর ধারণা থেকে কার্যকর বিজ্ঞানে পরিণত করেছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ: বাস্তব জীবনে এমওএফ-এর প্রভাব
এমওএফ কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নয়, এটি মানবজাতির বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার হাতিয়ার। এই প্রযুক্তি রসায়ন, টেকসই উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তিকে একত্র করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ: এমওএফ শিল্পোৎপন্ন বা বাতাসে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড দক্ষভাবে শোষণ করতে পারে। এতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা মেলে। এটি পানির ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ (পিএফএএস) অপসারণ বা বর্জ্যজলে থাকা ওষুধজাত অবশিষ্টাংশ ভাঙতেও সক্ষম।
জ্বালানি ও সঞ্চয়: এমওএফ হাইড্রোজেন বা মিথেনের মতো গ্যাস নিরাপদে ও কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করতে পারে, যা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক উৎপাদনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে, ফলে বর্জ্য কম হয়।
পানি ও স্বাস্থ্য: মরুভূমি বা শুষ্ক এলাকায় এমওএফ বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে গরমে তা থেকে পানি তৈরি করতে পারে। এতে পানি-স্বল্প অঞ্চলে জীবনধারায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে—ওষুধের ক্ষুদ্র কণাকে নিয়ন্ত্রিতভাবে মুক্ত করতে এমওএফ সহায়ক।
পরীক্ষাগারের বাইরে এমওএফ এখন ব্যাটারির মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রে এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এর হালকা ও গ্যাসধারণক্ষম বৈশিষ্ট্য রকেট প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত খুলছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হেইনার লিংকে বলেন, এই আবিষ্কার ‘মানবজাতির বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল কেবল আবিষ্কার নয়, এক নতুন ডিজাইনের চিন্তাধারাকে সম্মান জানিয়েছে। এখন রসায়নবিদেরা পরমাণু-পরমাণু মিলিয়ে কাঠামো তৈরি করতে পারেন। ওমর ইয়াগির ভাষায়, এমওএফ হলো ‘নতুন ধরনের পদার্থ’, যা শিল্পক্ষেত্রের সংজ্ঞাই বদলে দিতে পারে।
প্রতিবছর নতুন হাজার হাজার এমওএফ তৈরি হচ্ছে এবং এর প্রয়োগ দ্রুত বাড়ছে। ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব এয়ার কন্ডিশনার থেকে শুরু করে কার্বন-নিরপেক্ষ কারখানা— সবখানেই এমওএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, নোবেল প্রাইজ ডট ওআরজি
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি। তারা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ (এমওএফ’স) নামে এক নতুন ধরনের উপাদান তৈরির পথিকৃৎ হিসেবে এই পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
এই আবিষ্কার বস্তুবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায় খুলে দেয়, যা কার্বন শোষণ থেকে শুরু করে শুষ্ক এলাকায় পানি আহরণ পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে নতুন ওষুধ ও নানা ধরনের উপাদান তৈরির পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
এ ছাড়া এই তিন বিজ্ঞানীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে নতুন প্রোটিন শনাক্ত ও ডিজাইন করার শক্তিশালী পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য। প্রোটিন হলো জীবনের মূল গঠন উপাদান, আর তাদের আবিষ্কার জীববিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
এই তিন বিজ্ঞানীর কাজ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ। তারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা নিয়ে যৌথভাবে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন।
সুসুমু কিতাগাওয়া ১৯৫১ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৯৭৯ সালে সেখান থেকেই পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি সমন্বয় রসায়নে বিশেষজ্ঞ, যেখানে ধাতব আয়ন ও জৈব যৌগের মিথষ্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন।
রিচার্ড রবসন ১৯৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসবার্নে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। অজৈব রসায়ন ও স্ফটিক প্রকৌশলে তার অবদান সুপরিচিত।
ওমর এম. ইয়াগি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের অধ্যাপক। ১৯৯০ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা-শ্যাম্পেইন থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ বা অণু-ভিত্তিক স্ফটিক কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে শুরু হওয়া তাদের যৌথ গবেষণা এক সময়ের সীমিত ধারণাকে রসায়নবিদদের জন্য এক বৈপ্লবিক কর্মক্ষেত্রে রূপ দেয়।
মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক (এমওএফ) বা ধাতব জৈব কাঠামো কী
সহজভাবে বলতে গেলে, এমওএফ হলো অণু-নির্মিত এক ধরনের জালের মতো কাঠামো। এখানে ধনাত্মক চার্জযুক্ত ধাতব আয়ন কাজ করে সংযোগকারী বা ‘কর্নারস্টোন’ হিসেবে। এগুলোকে যুক্ত করে রাখে দীর্ঘ ও নমনীয় জৈব অণু। এই সংযোগে গঠিত হয় অত্যন্ত সুশৃঙ্খল স্ফটিক কাঠামো, যার ভেতরে তৈরি হয় বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র গহ্বর বা ছিদ্র।
এই গহ্বরগুলোর অভ্যন্তরীণ আয়তন এতটাই বড় যে, এক চা চামচ পরিমাণ এমওএফ-এর পৃষ্ঠতল একটি ফুটবল মাঠের সমান হতে পারে। ফলে এই উপাদানটি অত্যন্ত ছিদ্রযুক্ত ও হালকা।
এমওএফ-কে প্রচলিত পদার্থ যেমন জিওলাইটের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে পার্থক্য হলো, এমওএফ পরিবর্তনযোগ্য। ধাতব সংযোগ বা জৈব লিঙ্কার সামান্য বদল করলেই ছিদ্রের আকার, গঠন বা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে নির্দিষ্ট অণু ‘ধরা’ সম্ভব হয়, যেমন চাল বাছাইয়ের জন্য আলাদা চালুনি ব্যবহার করা হয়।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এমওএফ এমন এক উদ্ভাবন যা ‘ইচ্ছেমতো নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উপাদান তৈরির অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে।’ এখন পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি ভিন্নধর্মী এমওএফ তৈরি হয়েছে এবং আরও হাজারো এমওএফ নিয়ে গবেষণা চলছে।
এই আণবিক কাঠামো এত বড় যে এর মধ্য দিয়ে গ্যাস ও তরল রাসায়নিক প্রবাহিত হতে পারে। মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে এসব কাঠামো ব্যবহার করা যায়।
তাদের প্রধান অবদান: ভিত্তি নির্মাণ
এমওএফ-এর বিকাশ ছিল ধাপে ধাপে এক যৌথ বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা। তিনজন নোবেলজয়ীর প্রত্যেকে এই যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
রিচার্ড রবসনের সূচনা (১৯৮৯): তিনি প্রথম কপার (তামা) আয়ন ও চার বাহুযুক্ত জৈব অণুকে যুক্ত করে হীরার মতো গঠনবিশিষ্ট স্ফটিক তৈরি করেন। এর ভেতরে ফাঁপা গহ্বর ছিল, যা প্রথম স্থিতিশীল এমওএফ-এর ধারণা দেয়। কাঠামোটি দুর্বল হলেও এটি প্রমাণ করে যে ধাতু ও জৈব যৌগ একত্রে বৃহৎ ছিদ্রযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে।
সুসুমু কিতাগাওয়ার গতিশীল উদ্ভাবন (১৯৯০–২০০০ দশক): তিনি দেখান, এমওএফ স্থির নয়—এগুলো ‘শ্বাস নিতে’ পারে। অর্থাৎ, গ্যাস প্রবেশ ও নির্গমন করতে পারে কাঠামো ভেঙে না পড়েই। তিনি এমন নমনীয় এমওএফ তৈরি করেন যা স্পঞ্জের মতো প্রসারিত বা সংকুচিত হয়। এর ফলে দূষণ শনাক্তকারী সেন্সরসহ নানা বাস্তব-প্রয়োগের পথ খুলে যায়।
ওমর এম. ইয়াগির স্থায়িত্ব ও সম্প্রসারণ (১৯৯০–২০০৩): তিনি কাঠামোগুলোকে আরও টেকসই ও ব্যবহারযোগ্য করেন। তার ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ পদ্ধতি কাঠামো গঠনের নকশাকে পূর্বনির্ধারিত করে তোলে—যেমনভাবে আসবাবপত্রের অংশগুলো জোড়া লাগানো হয়। ইয়াগির তৈরি এমওএফ কঠোর পরিবেশেও টিকে থাকে এবং নির্দিষ্ট অণু যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড আলাদা করে ধরতে সক্ষম হয়।
১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তাদের এই আলাদা কিন্তু পরিপূরক অবদান এমওএফ-কে অনুমাননির্ভর ধারণা থেকে কার্যকর বিজ্ঞানে পরিণত করেছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ: বাস্তব জীবনে এমওএফ-এর প্রভাব
এমওএফ কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নয়, এটি মানবজাতির বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার হাতিয়ার। এই প্রযুক্তি রসায়ন, টেকসই উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তিকে একত্র করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ: এমওএফ শিল্পোৎপন্ন বা বাতাসে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড দক্ষভাবে শোষণ করতে পারে। এতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা মেলে। এটি পানির ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ (পিএফএএস) অপসারণ বা বর্জ্যজলে থাকা ওষুধজাত অবশিষ্টাংশ ভাঙতেও সক্ষম।
জ্বালানি ও সঞ্চয়: এমওএফ হাইড্রোজেন বা মিথেনের মতো গ্যাস নিরাপদে ও কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করতে পারে, যা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক উৎপাদনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে, ফলে বর্জ্য কম হয়।
পানি ও স্বাস্থ্য: মরুভূমি বা শুষ্ক এলাকায় এমওএফ বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে গরমে তা থেকে পানি তৈরি করতে পারে। এতে পানি-স্বল্প অঞ্চলে জীবনধারায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে—ওষুধের ক্ষুদ্র কণাকে নিয়ন্ত্রিতভাবে মুক্ত করতে এমওএফ সহায়ক।
পরীক্ষাগারের বাইরে এমওএফ এখন ব্যাটারির মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রে এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এর হালকা ও গ্যাসধারণক্ষম বৈশিষ্ট্য রকেট প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত খুলছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হেইনার লিংকে বলেন, এই আবিষ্কার ‘মানবজাতির বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল কেবল আবিষ্কার নয়, এক নতুন ডিজাইনের চিন্তাধারাকে সম্মান জানিয়েছে। এখন রসায়নবিদেরা পরমাণু-পরমাণু মিলিয়ে কাঠামো তৈরি করতে পারেন। ওমর ইয়াগির ভাষায়, এমওএফ হলো ‘নতুন ধরনের পদার্থ’, যা শিল্পক্ষেত্রের সংজ্ঞাই বদলে দিতে পারে।
প্রতিবছর নতুন হাজার হাজার এমওএফ তৈরি হচ্ছে এবং এর প্রয়োগ দ্রুত বাড়ছে। ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব এয়ার কন্ডিশনার থেকে শুরু করে কার্বন-নিরপেক্ষ কারখানা— সবখানেই এমওএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, নোবেল প্রাইজ ডট ওআরজি
বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের রায়ের অপেক্ষায় আছি।
৪ ঘণ্টা আগেব্যাপকমাত্রায় প্রেসক্রাইবের প্রধান কারণ হলো ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছোট শহরগুলোতে। ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের ফলে ক্রমাগত কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই নিয়মিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
৪ ঘণ্টা আগেকিন্তু এবারের এই মূর্তি প্রদর্শনী শুধু রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নয়, ছিল এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনেরও প্রতিফলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফল এই টানাপোড়েন।
৪ ঘণ্টা আগেএখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানকালে পবিত্র ওমরা পালন করতে পারবেন মুসলিমরা। দেশটির হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে