মো. ওবায়দুল্লাহ
বাংলাদেশে নিঃশব্দে পুনর্নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য। তুরস্কের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই চুক্তির আওতায় ঢাকা পেতে যাচ্ছে তুরস্কের তৈরি দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এসআইপিইআর)। পাশাপাশি সম্ভাবনা রয়েছে যৌথভাবে তুর্কি যুদ্ধ ড্রোন তৈরিরও।
আপাতদৃষ্টিতে এটি কেবল অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি হলেও বাস্তবে এটি এই অঞ্চলের বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে দক্ষতার সঙ্গে নিজের পথ তৈরি করে নেওয়ার একটি ঘোষণা। তুরস্কের জন্য এটি ক্ষমতা প্রদর্শনের নতুন উদ্যোগ। আর অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য এক নতুন ও অস্বস্তিকর কৌশলগত মাথাব্যথা।
উন্নত তুর্কি অস্ত্রের জন্য ঢাকার এই আগ্রহ কোনো কল্পনাপ্রসূত বিষয় নয়, বরং উপেক্ষা করা যায় না এমন বাস্তব হুমকির প্রত্যক্ষ জবাব। কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে চলা নৃশংস গৃহযুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই সীমান্তের এপারে এসে পড়ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলা একাধিকবার বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে কেনা মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
এমন ঘটনার পর প্রত্যেকবার বাংলাদেশ সরকারকে প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে—ঢাকা কি নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম? বাস্তবতা হলো, এসব হুমকি মোকাবিলা করতে পারে এমন কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের হাতে নেই। বর্তমানে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, পুরোনো ও স্বল্প-পাল্লার। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর বা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কার্যত ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
এই দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি। ঢাকার কোনো সামরিক পরিকল্পনাকারীই ভারতের বিপুল সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে উপেক্ষা করতে পারে না। ফলে বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য স্পষ্ট: মিয়ানমার থেকে আসা তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করা এবং দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে কিছুটা হলেও কৌশলগত ভারসাম্য স্থাপন করা।
তুরস্কের প্যাকেজ এই দুই চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। মধ্য-পাল্লার হিসার-ও⁺ এবং দূরপাল্লার 'এসআইপিইআর' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একত্রে কেবল বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার ফাঁক পূরণ করবে না, বরং একেবারে গোড়া থেকে একটি আধুনিক ও সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এর ফলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কার্যকরভাবে নিজের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। পাশাপাশি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে যেকোনো আগ্রাসনের (আক্রমণের) সম্ভাব্য খরচ এতটা বেড়ে যাবে যে আগ্রাসনকারী কেউ সহজে ঝুঁকি নেবে না।
ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাটি হয়তো আরও গভীর কৌশলগত তাৎপর্য বহন করে। দীর্ঘমেয়াদে শুধু অন্য দেশের অস্ত্রের ক্রেতা হওয়ার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা। যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের মানবসম্পদ ও শিল্পভিত্তিতে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি নিজস্ব নজরদারি, গোয়েন্দা ও আঘাত হানার সক্ষমতা গড়ে তুলছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের আত্মনির্ভরতার পথে এক সাহসী উদ্যোগ, যা ঢাকাকে নজরদারি, নিরীক্ষণ এবং আক্রমণ করার ক্ষমতার জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে।
এই পুরো কৌশলটি কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার এক বিচক্ষণ খেলা। একচেটিয়াভাবে চীন, রাশিয়া বা পাশ্চাত্যের শক্তি ব্লকের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত না থেকে বাংলাদেশ তার সম্পর্কগুলোকে বৈচিত্র্যময় করছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আনার মাধ্যমে, ঢাকা অন্য সব অংশীদারদের সাথে দর-কষাকষির সুযোগ বাড়িয়ে তুলছে। এই পদক্ষেপের বার্তাও স্পষ্ট, বাংলাদেশ আর কারও অধীনস্থ রাষ্ট্র হতে চায় না।
তুরস্কের জন্যও এই চুক্তি নিছক বাণিজ্যিক সাফল্য নয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের তুরস্ককে প্রভাবশালী বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের অংশ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার রূপরেখা রয়েছে দেশটির ‘এশিয়া অ্যানিউ’ নীতিতে। যার লক্ষ্য হলো বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও সামরিক শিল্পের মাধ্যমে এশিয়াজুড়ে তুরস্কের প্রভাব বিস্তার করা।
লিবিয়া থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের ড্রোনের সাফল্য প্রমাণ করার পর, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন তার কূটনৈতিক নীতির অগ্রভাগে। তুরস্কের বিক্রয় কৌশলও অনন্য: প্রায় ন্যাটো মানের প্রযুক্তি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মতো রাজনৈতিক শর্ত ও সীমাবদ্ধতা ছাড়াই। এছাড়া তুরস্ক প্রকৃত অর্থেই প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও যৌথ উৎপাদনে রাজি থাকে।
এই মডেল তুরস্ককে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে এমন সম্পর্ক গড়ার সুযোগ দেয়। যখন কোনো দেশ তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে তাদের ড্রোন বহর বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে, তখন দুই দেশের মধ্যেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। এই নির্ভরতা প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
এসআইপিইআর তুরস্কের প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি দূর-পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই বাংলাদেশের মতো বিদেশি ক্রেতা পাওয়াটা তুরস্কের জন্য এক বিশাল সাফল্য। ফলে এই কেনাবেচা শুধু অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে রাজনৈতিক স্বীকৃতিও বয়ে আনে। এই বিক্রি প্রমাণ করে তুরস্ক নিজেদের আমেরিকা, রাশিয়া বা চীনের বিকল্প সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আর বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে তুরস্ক কার্যত কৃষ্ণ সাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করছে—অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের উপকূলেও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত হচ্ছে।
নয়াদিল্লির জন্য এই খবর একপ্রকার ধাক্কা। বড় ধরনের বিপদসংকেত না হলেও, ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাবিদদের জন্য এটি একটি স্থায়ী মাথাব্যথার কারণ। ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীরা জানেন, বাংলাদেশের নতুন সক্ষমতা তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে না, কিন্তু তাদের আরামদায়ক কৌশলগত হিসাব এখন নতুন করে সাজাতে হবে।
একটি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি হাতে পেলে বাংলাদেশের সামরিক অবস্থান পুরোপুরি পাল্টে যাবে। কোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতির পরিকল্পনা এখন নতুন করে লিখতে হবে। হস্তক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগের খরচ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
সরবরাহকারী চীনের বদলে তুরস্ক হওয়ায় ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লি তার আশেপাশে চীনের প্রভাব ব্যবস্থাপনা ও মোকাবিলার জন্য অভ্যস্ত কৌশল অনুসরণ করে। কিন্তু ন্যাটো সদস্য তুরস্কের বাংলাদেশকে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি করা সম্পূর্ণ নতুন এক বাস্তবতা। এতে চীনের প্রভাব হয়তো কিছুটা কমবে, কিন্তু তার জায়গায় আসছে আরেক শক্তিশালী ও স্বাধীন দেশ। ফলে ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব তার নিকট প্রতিবেশীদের মধ্যেও সীমিত হয়ে পড়ছে। এটাই নতুন বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতা। আর তা খোদ ভারতের দোরগোড়াতেই ঘটছে।
মধ্যম শক্তির দেশগুলো এখন আর তাদের ভাগ্য অন্যদের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই তৈরি করছে, এবং নতুন অংশীদার খুঁজে নিচ্ছে যারা তাদের সে পথ দেখাতে পারে। এই চুক্তি বিশ্ব রাজনীতিতে এমন সংকেতই দিচ্ছে।
লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং স্কলার ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট
(এশিয়ান টাইমসে প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
বাংলাদেশে নিঃশব্দে পুনর্নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য। তুরস্কের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই চুক্তির আওতায় ঢাকা পেতে যাচ্ছে তুরস্কের তৈরি দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এসআইপিইআর)। পাশাপাশি সম্ভাবনা রয়েছে যৌথভাবে তুর্কি যুদ্ধ ড্রোন তৈরিরও।
আপাতদৃষ্টিতে এটি কেবল অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি হলেও বাস্তবে এটি এই অঞ্চলের বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে দক্ষতার সঙ্গে নিজের পথ তৈরি করে নেওয়ার একটি ঘোষণা। তুরস্কের জন্য এটি ক্ষমতা প্রদর্শনের নতুন উদ্যোগ। আর অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য এক নতুন ও অস্বস্তিকর কৌশলগত মাথাব্যথা।
উন্নত তুর্কি অস্ত্রের জন্য ঢাকার এই আগ্রহ কোনো কল্পনাপ্রসূত বিষয় নয়, বরং উপেক্ষা করা যায় না এমন বাস্তব হুমকির প্রত্যক্ষ জবাব। কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে চলা নৃশংস গৃহযুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই সীমান্তের এপারে এসে পড়ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলা একাধিকবার বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে কেনা মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
এমন ঘটনার পর প্রত্যেকবার বাংলাদেশ সরকারকে প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে—ঢাকা কি নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম? বাস্তবতা হলো, এসব হুমকি মোকাবিলা করতে পারে এমন কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের হাতে নেই। বর্তমানে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, পুরোনো ও স্বল্প-পাল্লার। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর বা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কার্যত ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
এই দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি। ঢাকার কোনো সামরিক পরিকল্পনাকারীই ভারতের বিপুল সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে উপেক্ষা করতে পারে না। ফলে বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য স্পষ্ট: মিয়ানমার থেকে আসা তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করা এবং দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে কিছুটা হলেও কৌশলগত ভারসাম্য স্থাপন করা।
তুরস্কের প্যাকেজ এই দুই চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। মধ্য-পাল্লার হিসার-ও⁺ এবং দূরপাল্লার 'এসআইপিইআর' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একত্রে কেবল বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার ফাঁক পূরণ করবে না, বরং একেবারে গোড়া থেকে একটি আধুনিক ও সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এর ফলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কার্যকরভাবে নিজের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। পাশাপাশি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে যেকোনো আগ্রাসনের (আক্রমণের) সম্ভাব্য খরচ এতটা বেড়ে যাবে যে আগ্রাসনকারী কেউ সহজে ঝুঁকি নেবে না।
ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাটি হয়তো আরও গভীর কৌশলগত তাৎপর্য বহন করে। দীর্ঘমেয়াদে শুধু অন্য দেশের অস্ত্রের ক্রেতা হওয়ার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা। যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের মানবসম্পদ ও শিল্পভিত্তিতে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি নিজস্ব নজরদারি, গোয়েন্দা ও আঘাত হানার সক্ষমতা গড়ে তুলছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের আত্মনির্ভরতার পথে এক সাহসী উদ্যোগ, যা ঢাকাকে নজরদারি, নিরীক্ষণ এবং আক্রমণ করার ক্ষমতার জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে।
এই পুরো কৌশলটি কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার এক বিচক্ষণ খেলা। একচেটিয়াভাবে চীন, রাশিয়া বা পাশ্চাত্যের শক্তি ব্লকের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত না থেকে বাংলাদেশ তার সম্পর্কগুলোকে বৈচিত্র্যময় করছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আনার মাধ্যমে, ঢাকা অন্য সব অংশীদারদের সাথে দর-কষাকষির সুযোগ বাড়িয়ে তুলছে। এই পদক্ষেপের বার্তাও স্পষ্ট, বাংলাদেশ আর কারও অধীনস্থ রাষ্ট্র হতে চায় না।
তুরস্কের জন্যও এই চুক্তি নিছক বাণিজ্যিক সাফল্য নয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের তুরস্ককে প্রভাবশালী বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের অংশ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার রূপরেখা রয়েছে দেশটির ‘এশিয়া অ্যানিউ’ নীতিতে। যার লক্ষ্য হলো বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও সামরিক শিল্পের মাধ্যমে এশিয়াজুড়ে তুরস্কের প্রভাব বিস্তার করা।
লিবিয়া থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের ড্রোনের সাফল্য প্রমাণ করার পর, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন তার কূটনৈতিক নীতির অগ্রভাগে। তুরস্কের বিক্রয় কৌশলও অনন্য: প্রায় ন্যাটো মানের প্রযুক্তি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মতো রাজনৈতিক শর্ত ও সীমাবদ্ধতা ছাড়াই। এছাড়া তুরস্ক প্রকৃত অর্থেই প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও যৌথ উৎপাদনে রাজি থাকে।
এই মডেল তুরস্ককে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে এমন সম্পর্ক গড়ার সুযোগ দেয়। যখন কোনো দেশ তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে তাদের ড্রোন বহর বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে, তখন দুই দেশের মধ্যেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। এই নির্ভরতা প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
এসআইপিইআর তুরস্কের প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি দূর-পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই বাংলাদেশের মতো বিদেশি ক্রেতা পাওয়াটা তুরস্কের জন্য এক বিশাল সাফল্য। ফলে এই কেনাবেচা শুধু অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে রাজনৈতিক স্বীকৃতিও বয়ে আনে। এই বিক্রি প্রমাণ করে তুরস্ক নিজেদের আমেরিকা, রাশিয়া বা চীনের বিকল্প সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আর বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে তুরস্ক কার্যত কৃষ্ণ সাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করছে—অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের উপকূলেও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত হচ্ছে।
নয়াদিল্লির জন্য এই খবর একপ্রকার ধাক্কা। বড় ধরনের বিপদসংকেত না হলেও, ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাবিদদের জন্য এটি একটি স্থায়ী মাথাব্যথার কারণ। ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীরা জানেন, বাংলাদেশের নতুন সক্ষমতা তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে না, কিন্তু তাদের আরামদায়ক কৌশলগত হিসাব এখন নতুন করে সাজাতে হবে।
একটি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি হাতে পেলে বাংলাদেশের সামরিক অবস্থান পুরোপুরি পাল্টে যাবে। কোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতির পরিকল্পনা এখন নতুন করে লিখতে হবে। হস্তক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগের খরচ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
সরবরাহকারী চীনের বদলে তুরস্ক হওয়ায় ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লি তার আশেপাশে চীনের প্রভাব ব্যবস্থাপনা ও মোকাবিলার জন্য অভ্যস্ত কৌশল অনুসরণ করে। কিন্তু ন্যাটো সদস্য তুরস্কের বাংলাদেশকে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি করা সম্পূর্ণ নতুন এক বাস্তবতা। এতে চীনের প্রভাব হয়তো কিছুটা কমবে, কিন্তু তার জায়গায় আসছে আরেক শক্তিশালী ও স্বাধীন দেশ। ফলে ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব তার নিকট প্রতিবেশীদের মধ্যেও সীমিত হয়ে পড়ছে। এটাই নতুন বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতা। আর তা খোদ ভারতের দোরগোড়াতেই ঘটছে।
মধ্যম শক্তির দেশগুলো এখন আর তাদের ভাগ্য অন্যদের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই তৈরি করছে, এবং নতুন অংশীদার খুঁজে নিচ্ছে যারা তাদের সে পথ দেখাতে পারে। এই চুক্তি বিশ্ব রাজনীতিতে এমন সংকেতই দিচ্ছে।
লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং স্কলার ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট
(এশিয়ান টাইমসে প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একাধিক শহরে লাখ লাখ মানুষ ‘নো কিংস’ আন্দোলনে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দেশটি ক্রমে স্বৈরতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘কোনো রাজা নেই, থাকবে না’ — এটাই তাদের মূল বার্তা।
১৩ ঘণ্টা আগেআফগানিস্তান ও পাকিস্তান কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই আলোচনায় দুই দেশ তাদের বিতর্কিত সীমান্তে সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসানে একমত হয়।
১৫ ঘণ্টা আগেপাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত সমাধান করা নিজের জন্য ‘একটি সহজ কাজ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১ দিন আগেযুদ্ধবিরতি ভেঙে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলায় তিনজন ক্রিকেটারসহ অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) গভীর রাতে পাকিস্তান এই হামলা চালিয়েছে
১ দিন আগে