leadT1ad

এক বছরে গবেষণা নেই ২৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৫৭
স্ট্রিম গ্রাফিক

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিটি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। সাভারের বিরুলিয়ায় ৪০ বিঘা জমিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৫ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী ও ২০৮ শিক্ষকের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে কোনো গবেষণাই হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া গেছে যেখানে এক বছরে কোনো গবেষণা হয়নি।

ইউজিসির তথ্যমতে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে শতাধিক। এর মধ্যে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন দেশি কিংবা বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো গবেষণা প্রকল্পই নেওয়া হয়নি।

২০২৩ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরের শেষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইউজিসি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ গবেষণা করা। শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা পরিচালনা করবে ইউজিসি অনুমোদিত বিভাগ বা ইনস্টিটিউট। আর তদারকির দায়িত্বে থাকবে অনুষদ ও একাডেমিক কাউন্সিল।

এ বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মীর আখতার হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, শুধু সিটি ইউনিভার্সিটি নয়, আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে গবেষণা হয়নি। আমরা এখন গবেষণায় নজর দিচ্ছি। এ বছর গবেষণা খাতে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রিসার্চ কমিটিও করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাঠদান ছাড়াও শিক্ষকদের গবেষণা করতে হয়। শিক্ষার্থীদেরও গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজটি করেন শিক্ষকেরা। গবেষণা না হওয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকভাবে চলছে না।

আইনে থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন আমরা গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে অন্তত ২ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন স্ট্রিমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো সেখানে গবেষণাকাজ থাকবে। শুধু পড়ানোর জন্য হলে সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায় না, সেটিকে কলেজ বলতে হবে। এমন কলেজ ভারতে আছে, যুক্তরাষ্ট্রেও আছে। বিশ্ববিদ্যালয় নাম দিতে হলে গবেষণা করতে হবে, জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আইনে থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন আমরা গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে অন্তত ২ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘গবেষণা খাতের বরাদ্দে টাকা রিসার্চ প্রজেক্টের মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে। প্রতি বছর যথাযথভাবে অভিজ্ঞ গবেষকের তত্ত্বাবধানে এ প্রজেক্ট চলবে। মূল্যায়নের পরই প্রজেক্টের টাকা ছাড় করতে হবে। এ ছাড়া জার্নালে আর্টিকেল পাবলিশ করা, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনের মতো বিষয়েও নজর দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আমরা গবেষণা খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা নেই

সিটি ইউনিভার্সিটি ছাড়াও অন্তত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে কোনো গবেষণা হয়নি। সেগুলো হলো—দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আশা ইউনিভার্সিটি থেকেও ২০২৩ সালে কোনো গবেষণা প্রকাশ হয়নি।

গবেষণা হয়নি এমন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বরিশাল, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগাং, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এ ছাড়া রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ২০২৩ সালে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত