leadT1ad

ভেনেজুয়েলায় সিআইএ অভিযান অনুমোদন ট্রাম্পের, স্থল হামলার কথাও ভাবছেন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১১
ট্রাম্পের অভিযোগ ভেনিজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) অনুমতি দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, তাঁর প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থলভিত্তিক সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে। সম্প্রত ক্যারিবীয় সাগরে ভেনিজুয়েলার নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রাণঘাতী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

বুধবার ট্রাম্প আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে নিউইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লিখিত সিআইএ অনুমোদন বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন। এক সাংবাদিক সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় পাঠানোর অনুমতি দিলেন?’

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি কারণে আমি অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা তাদের কারাগার খালি করে বন্দিদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারে যুক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। এসব মাদক প্রধানত সমুদ্রপথে আসে। তবে আমরা স্থলপথেও তা রোধ করব।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্য ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানকে আরও তীব্র করেছে। দেশটির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তু। দুই দেশ ইতোমধ্যে ক্যারিবীয় সাগরে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে, যা শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভেনেজুয়েলা সরকার ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিআইএ অভিযানকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে অভিযুক্ত করেছে। এক বিবৃতিতে মাদুরো সরকার বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের বৈধতা তৈরি করা এবং দেশের সব সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘সিআইএ কি মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি পেয়েছে?’

ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে অনুচিত। প্রশ্নটি অযৌক্তিক নয়, তবে উত্তর দেওয়া নিশ্চয়ই বোকামি হবে।’

শেষে তিনি যোগ করেন, ‘তবে আমি মনে করি, ভেনেজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে।’

যুদ্ধকালীন ক্ষমতা দাবি: ভেনিজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ

ট্রাম্পের বক্তব্যে বহুবার ভেনেজুয়েলাকে নিয়ে তাঁর পুরনো দাবিগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিজেকে যুদ্ধকালীন ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। এজন্য তিনি ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট’ আইনের মতো পুরোনো আইনগুলোর প্রয়োগের যুক্তি তুলে ধরছেন। তাঁর দাবি—ভেনেজুয়েলা অভিবাসী ও অপরাধী চক্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আক্রমণ’ চালিয়েছে।

তবে এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। বরং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিজস্ব বিশ্লেষণেই তাঁর বক্তব্য খণ্ডিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মে মাসে প্রকাশিত এক গোপন নথিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে ‘ট্রেন ডে আরাগুয়া’ নামের অপরাধী সংগঠনের সরাসরি কোনো সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবুও ট্রাম্প বুধবার আবারও দাবি করেন যে মাদুরো প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যে বন্দি ও মানসিক রোগীদের পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ এমন করেছে, কিন্তু ভেনেজুয়েলা করেছে সবচেয়ে নোংরা উপায়ে।’

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: সংগৃহীত।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: সংগৃহীত।

ভেনেজুয়েলায় সিআইএ অভিযান অনুমোদনকে বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের গোপন সামরিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন। তাঁর প্রশাসন নাকি একাধিক গোপন আদেশে বিদেশে প্রাণঘাতী অভিযান চালানোর ভিত্তি তৈরি করছে, যদিও প্রকাশ্যে তিনি বিশ্বশান্তির পক্ষে কথা বলেন।

অগাস্টে মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প মাদক চক্র ও লাতিন আমেরিকার অপরাধী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছেন। পরে অক্টোবর মাসে তিনি কংগ্রেসে এক স্মারকলিপি পাঠান, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে এসব চক্রের সঙ্গে ‘অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে’জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি এসব সংগঠনকে ‘অবৈধ যোদ্ধা’হিসেবেও আখ্যা দেন।

এদিকে ‘ট্রেন ডে আরাগুয়া’-সহ বেশ কিছু সংগঠনকে যুক্তরাষ্ট্র ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ তালিকায় যুক্ত করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র এ লেবেল দেওয়া কোনো সামরিক অভিযানের আইনগত ভিত্তি তৈরি করে না।

ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন হামলা: আইনভঙ্গের অভিযোগ বাড়ছে

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলে একের পর এক সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছোট নৌযানে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অন্তত পাঁচটি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ২৭ জন নিহত হয়েছে।

সর্বশেষ হামলাটি মঙ্গলবার ট্রাম্পের শেয়ার করা এক ভিডিওতে প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, পানিতে ভাসমান একটি নৌযানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর সেটিতে আগুন ধরে যায়। ওই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। কারণ মাদক পাচারকারীদের যুদ্ধের ‘সশস্ত্র যোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে, হামলার লক্ষ্যবস্তু নৌকাগুলো সত্যিই মাদকবাহী ছিল।

তবে ট্রাম্প এই হামলার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এগুলো আমেরিকানদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয়। তাঁর দাবি, ওই নৌকাগুলোর আরোহীরা ছিল ‘মাদক-সন্ত্রাসী’, যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিল।

বুধবার এক সাংবাদিক তাঁর কাছে প্রমাণের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্প তা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘যখন নৌকাগুলো মাদকভর্তি থাকে, তখন সেগুলো বৈধ লক্ষ্যবস্তু। হামলার পর পুরো নৌকাজুড়ে ফেন্টানিলের গুঁড়া পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রতিটি নৌকা সম্পর্কে আমাদের কাছে শক্ত ও গভীর তথ্য রয়েছে।’

ট্রাম্প ক্যারিবীয় সাগরে এই বোমা হামলাকে নিজের প্রশাসনের ‘সাফল্য’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমুদ্রপথ প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন স্থলপথে মনোযোগ দেব।’

তিনি রসিকতা করে আরও বলেন, ‘এমনকি জেলেরা পর্যন্ত এখন সমুদ্রে যেতে ভয় পাচ্ছে।’

শেষে যোগ করেন, ‘আমরা এখন স্থলভিত্তিক পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছি, কারণ সমুদ্র আমরা বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’

প্রসঙ্গত, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটির মাদুরো সরকারের সঙ্গে পশ্চিমাদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। মাদুরোর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় নরওয়েতে থাকা নিজেদের দূতাবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত