leadT1ad

ট্রাম্পের স্বীকারোক্তি: ভেনেজুয়েলায় সিআইএ অভিযান অনুমোদন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে তিনি সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এই ঘোষণায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নেতা নিকোলাস মাদুরোর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত পাঁচটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ২৭ জন নিহত হয়। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এসব অভিযানকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

হোয়াইট হাউসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘স্থলপথেও নজর রাখছে’, অর্থাৎ তারা অঞ্চলের মাদকচক্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযানের চিন্তা করছে।

এদিকে, বিতর্কিত নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিকভাবে যার প্রেসিডেন্ট পদ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, সেই নিকোলাস মাদুরো টেলিভিশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’

ক্যারাকাসে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। তারা জাহাজে বা পুয়ের্তো রিকোতে অবস্থান করছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের অনুমোদনের ফলে সিআইএ চাইলে ভেনেজুয়েলায় এককভাবে বা বৃহত্তর সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালাতে পারবে। তবে সংস্থাটি আদৌ কোনো পরিকল্পনা করেছে কি না, নাকি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে— তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্পকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দুটি কারণে অনুমোদন দিয়েছি,’— ট্রাম্পের এই স্বীকারোক্তি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রমে বিরল।

তিনি বলেন, ‘প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে অপরাধীদের আমেরিকায় পাঠাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, মাদক। প্রচুর মাদক আসে ভেনেজুয়েলা থেকে। বেশিরভাগই সমুদ্রপথে। তবে এবার আমরা স্থলপথেও তা বন্ধ করব।’

যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনেজুয়েলা লাতিন আমেরিকার মাদক ব্যবসায় খুব বড় ভূমিকা রাখে না। ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, সিআইএ–এর উদ্দেশ্য কি মাদুরো সরকারকে উৎখাত করা? তিনি হেসে বলেন, ‘এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটাই তো হাস্যকর হবে, তাই না?’

গত মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ হামলায় ছয়জন নিহত হয়। ট্রাম্প পরে ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নৌকাটি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে পরিচিত রুটে চলছিল।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো জানায়নি, কোন মাদকচক্র জড়িত ছিল বা নিহতদের পরিচয় কী।

বুধবার রাতে মাদুরো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘শাসন পরিবর্তনের নামে নতুন যুদ্ধ নয়— আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার মতো ব্যর্থ যুদ্ধগুলোর কথা আমাদের মনে আছে। সিআইএ–নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান হতে দেওয়া যাবে না। আমার কথা শুনুন— যুদ্ধ নয়, শান্তি।’

এর আগেই তিনি রাজধানী কারাকাসের উপকণ্ঠ পেতারে ও পাশের মিরান্ডা প্রদেশে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন।

টেলিগ্রামে তিনি লেখেন, ‘আমি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক মিলিশিয়াকে প্রস্তুত করছি— আমাদের তেলসমৃদ্ধ দেশ রক্ষার জন্য।’

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভান হিলও টেলিগ্রামে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধোন্মাদ বক্তব্য ও অদ্ভুত হুমকির নিন্দা জানাচ্ছি। সিআইএ–এর ক্যারিবীয় অঞ্চলে সেনা মোতায়েন আসলে আগ্রাসন, ভয় দেখানো ও হয়রানির নীতি।’

ট্রাম্প ইতিমধ্যে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন ক্যারিবীয় অঞ্চলে। হোয়াইট হাউস বলছে, এসব আয়োজন মাদক চোরাচালান দমনের জন্য।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক মেমোতে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসকে জানিয়েছে, তারা ‘অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাত’ অবস্থায় রয়েছে মাদকচক্রগুলোর সঙ্গে। মার্কিন কর্মকর্তারা বহুবার অভিযোগ করেছেন যে মাদুরো নিজেই ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ নামে একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যেখানে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত।

মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিক মুলরয় বিবিসিকে বলেন, ‘গোপন অভিযান চালাতে হলে প্রেসিডেন্টের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন, যেখানে স্পষ্ট করে বলা থাকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, এই অনুমোদন মানে হলো ‘মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে বড়সড় নতুন ধাপের সূচনা’।

বিবিসির সাংবাদিক বার্ন্ড ডেবুসম্যান জুনিয়রের ইংরেজি প্রতিবেদন থেকে অনুবাদ

Ad 300x250

সম্পর্কিত