স্ট্রিম ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে উন্নত টমাহক ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করতে পারে। এর মাধ্যমে মস্কোকে ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। এর জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট দফতর ক্রেমলিন তাৎক্ষণিকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সম্ভাব্য হস্তান্তরকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা এটিকে বিপজ্জনক উত্তেজনা বাড়ানো কার্যক্রম বলে আখ্যা দিয়েছেন, সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলাফল ‘খারাপ’ হতে পারে।
মস্কো বলছে, যদি এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয় তাহলে সেগুলো প্রতিরোধ করা হবে এবং সেগুলোর উৎক্ষেপণ সাইটেও হামলা চালানো হবে। রাশিয়ার আশঙ্কা এসব অস্ত্র যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে এবং ইউক্রেনকে বহুগুণে বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
কিন্তু কেন রাশিয়া এত কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো? টমাহক মিসাইল আসলে কী ও কীভাবে কাজ করে? কেন এটিকে রুশ বাহিনী এতো বেশি বিপজ্জনক হিসেবে দেখছে?
টমাহক মিসাইল কী?
টমাহক একটি বহুমুখী ও দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত ভূমিতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হানার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর আনুষ্ঠানিক নাম বিজিএম-১০৯ টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল (টিএলএএম)।
এটি ১৯৮০-র দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও আকাশ পথে সামরিক সক্ষমতার একটি প্রধান উপাদান। ১৯৭০-এর দশকে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সোভিয়েত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোকাবিলায় প্রথম এর ধারণা আসে।
প্রথমে একে পারমাণবিক সক্ষমতার সঙ্গে কৌশলগত নিবারণ হিসেবে ভাবা হয়েছিল। পরে এটিকে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এর গ্রাউন্ড-লঞ্চ ভ্যারিয়েন্ট বিজিএম-১০৯ গ্রাইফোন ১৯৮৭ সালের মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি (আইএনএফ) চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ ছিল। পরে সমুদ্র ও সাবমেরিন লঞ্চ সংস্করণে পুনরায় ব্যবহার করা শুরু হয়।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
দৈর্ঘ্য: বুস্টার ছাড়া প্রায় ১৮ ফুট ৩ ইঞ্চি; বুস্টারসহ সর্বোচ্চ প্রায় ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি।
ওজন: বুস্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৯০০ পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি); সম্পূর্ণ লোডে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি)।
পাল্লা: স্ট্যান্ডার্ড ভ্যারিয়েন্টে প্রায় ১ হাজার মাইল (প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার)।
গতি: সাবসনিক, যা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫৫০ মাইল (প্রায় ৮৮৫ কিমি/ঘণ্টা)।
কর্মক্ষমতা: সাধারণত প্রায় ১ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪৫০ কেজি) কনভেনশনাল যুদ্ধাস্ত্র বহন করে।
লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম: মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ, সাবমেরিন, (টর্পেডো টিউব), অথবা গ্রাউন্ড লঞ্চারের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা যায়।
উপসাগরীয় যুদ্ধ, লিবিয়া (২০১১), সিরিয়া (২০১৭-২০১৮) এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে টমাহক। এ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০-র বেশি টমাহক চালানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফলতার হার ৯০ শতাংশের বেশি।
টমাহক মিসাইল কীভাবে কাজ করে
টমাহক মূলত একটি ‘ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট’ অস্ত্র। একবার উৎক্ষেপণের পরে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টার্গেটের দিকে এগিয়ে যায়। মানুষের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই লক্ষ্য ঠিক করে এটি আঘাত হানতে পারে। এ ছাড়া টমাহক এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি রাডার এড়িয়ে গোপনে উড়ে গিয়ে নির্ভুলভাবে টার্গেটে আঘাত হানতে পারে।
মিসাইলটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি সলিড-ফুয়েল বুস্টার রকেটের মাধ্যমে ধাক্কা পেয়ে বের হয়। তারপর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০-১৫০ ফুট উচ্চতায় ওঠে। বুস্টারটি কয়েক সেকেন্ড জ্বলে ভস্ম হয়। এর ইঞ্জিন সাশ্রয়ী। তাই কম তাপ উৎপন্ন করে। ইঞ্জিনটি ধীরে ধীরে জ্বালানি গ্রহণ করে, তাই মিসাইল বহুদূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। এটি খুব নিচু দিয়ে—ভূমি ও সমুদ্রের উপরে ৫০-১০০ ফুট (১৫-৩০ মিটার) উচ্চতায় উড়ে চলে।
টমাহক নির্ভুল লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বহুস্তরীয় সিস্টেম ব্যবহার করে। মিসাইলের ওপরের রাডার নিচের ভূ-প্রকৃতি স্ক্যান করে এবং আগে থেকে লোড করা ডিজিটাল মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পথ ঠিক করে। শেষ পর্যায়ে অপটিক্যাল সেন্সর লাইভ ছবি নিয়ে সংরক্ষিত টার্গেটের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখে; এর ফলে চূড়ান্তভাবে নির্ভুলতা বাড়ে। রাডারে ধরা না পড়া, স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনা ও মডুলার ডিজাইন—টমাহককে দিন-রাত এবং সব ধরনের আবহাওয়ায় নির্ভরযোগ্য অস্ত্র করে তোলে।
রাশিয়ার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে টমাহক মিসাইল সরবরাহ রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে। এতে ইউক্রেন রাশিয়ার আরও ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে হামলার সক্ষমতা পাবে, যা যুদ্ধের ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে। প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার এই মিসাইল ইউক্রেনের ভেতর থেকেই রাশিয়ার যেকোনো স্থানে—কমান্ড সেন্টার, সরবরাহ ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি এমনকি মস্কো পর্যন্ত—আঘাত হানতে সক্ষম।
ঝুঁকির কারণ
নির্ভুলতা ও গোপন উড্ডয়ন: টমাহক মিসাইল খুব নিচু উচ্চতায় ওড়ে এবং ভূপ্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে পথ নির্ধারণ করে। এ কারণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে সময়মতো শনাক্ত করতে পারে না। এর অপেক্ষাকৃত ধীর গতি একসঙ্গে বহু মিসাইল নিক্ষেপের সুযোগ দেয়, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে।
কৌশলগত প্রভাব: ইউক্রেন এই মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার সৈন্যঘাঁটি, গোলাবারুদ মজুদ এবং কৃষ্ণসাগর নৌবহরের আঘাত হানতে পারবে। এতে পাইলটদের ঝুঁকি নিতে হবে না। টমাহক রাশিয়ার সরবরাহ লাইনকে বিঘ্নিত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মিসাইল শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করা হবে। তবে রাশিয়া এটিকে সরাসরি ন্যাটোর উসকানি হিসেবে দেখছে।
উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: ক্রেমলিনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, এই অস্ত্র সরবরাহ বৃহত্তর যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে। দিমিত্রি মেদভেদেভ পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কার কথাও বলেছেন, যদিও ট্রাম্পের হুমকিকে তিনি ‘ফাঁকা’ বলেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই জানিয়েছেন, দীর্ঘ-পাল্লার মিসাইল সরবরাহকে তিনি ‘রেড লাইন’ অতিক্রম হিসেবে দেখবেন, যা ন্যাটো রুট বা সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর পাল্টা আঘাত ডেকে আনতে পারে।
রাশিয়ার কার্যকর প্রতিরোধে সমস্যা: ক্রুজ মিসাইল আটকানোর হার শতভাগ নয়। রাশিয়া কিছু পশ্চিমা মিসাইল ধ্বংস করলেও একযোগে নিক্ষেপের ক্ষেত্রে তা ব্যর্থ হয়। বড় আকারের টমাহক হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে, যা মনোবল দুর্বল করবে এবং রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধনীতি জটিল করে তুলবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি টমাহক সরবরাহে দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ এতে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত শান্তি আলোচনায় চাপ সৃষ্টির কৌশল। রাশিয়ার জন্য টমাহক শুধু একটি অস্ত্র নয়—এটি যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের প্রভাব হারানোর প্রতীক। তাই মস্কো কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিচ্ছে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সবাই এখন নজর রাখছে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো ইঙ্গিত দেখা দেয় কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে উন্নত টমাহক ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করতে পারে। এর মাধ্যমে মস্কোকে ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। এর জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট দফতর ক্রেমলিন তাৎক্ষণিকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সম্ভাব্য হস্তান্তরকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা এটিকে বিপজ্জনক উত্তেজনা বাড়ানো কার্যক্রম বলে আখ্যা দিয়েছেন, সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলাফল ‘খারাপ’ হতে পারে।
মস্কো বলছে, যদি এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয় তাহলে সেগুলো প্রতিরোধ করা হবে এবং সেগুলোর উৎক্ষেপণ সাইটেও হামলা চালানো হবে। রাশিয়ার আশঙ্কা এসব অস্ত্র যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে এবং ইউক্রেনকে বহুগুণে বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
কিন্তু কেন রাশিয়া এত কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো? টমাহক মিসাইল আসলে কী ও কীভাবে কাজ করে? কেন এটিকে রুশ বাহিনী এতো বেশি বিপজ্জনক হিসেবে দেখছে?
টমাহক মিসাইল কী?
টমাহক একটি বহুমুখী ও দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত ভূমিতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হানার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর আনুষ্ঠানিক নাম বিজিএম-১০৯ টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল (টিএলএএম)।
এটি ১৯৮০-র দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও আকাশ পথে সামরিক সক্ষমতার একটি প্রধান উপাদান। ১৯৭০-এর দশকে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সোভিয়েত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোকাবিলায় প্রথম এর ধারণা আসে।
প্রথমে একে পারমাণবিক সক্ষমতার সঙ্গে কৌশলগত নিবারণ হিসেবে ভাবা হয়েছিল। পরে এটিকে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এর গ্রাউন্ড-লঞ্চ ভ্যারিয়েন্ট বিজিএম-১০৯ গ্রাইফোন ১৯৮৭ সালের মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি (আইএনএফ) চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ ছিল। পরে সমুদ্র ও সাবমেরিন লঞ্চ সংস্করণে পুনরায় ব্যবহার করা শুরু হয়।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
দৈর্ঘ্য: বুস্টার ছাড়া প্রায় ১৮ ফুট ৩ ইঞ্চি; বুস্টারসহ সর্বোচ্চ প্রায় ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি।
ওজন: বুস্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৯০০ পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি); সম্পূর্ণ লোডে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি)।
পাল্লা: স্ট্যান্ডার্ড ভ্যারিয়েন্টে প্রায় ১ হাজার মাইল (প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার)।
গতি: সাবসনিক, যা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫৫০ মাইল (প্রায় ৮৮৫ কিমি/ঘণ্টা)।
কর্মক্ষমতা: সাধারণত প্রায় ১ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪৫০ কেজি) কনভেনশনাল যুদ্ধাস্ত্র বহন করে।
লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম: মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ, সাবমেরিন, (টর্পেডো টিউব), অথবা গ্রাউন্ড লঞ্চারের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা যায়।
উপসাগরীয় যুদ্ধ, লিবিয়া (২০১১), সিরিয়া (২০১৭-২০১৮) এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে টমাহক। এ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০-র বেশি টমাহক চালানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফলতার হার ৯০ শতাংশের বেশি।
টমাহক মিসাইল কীভাবে কাজ করে
টমাহক মূলত একটি ‘ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট’ অস্ত্র। একবার উৎক্ষেপণের পরে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টার্গেটের দিকে এগিয়ে যায়। মানুষের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই লক্ষ্য ঠিক করে এটি আঘাত হানতে পারে। এ ছাড়া টমাহক এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি রাডার এড়িয়ে গোপনে উড়ে গিয়ে নির্ভুলভাবে টার্গেটে আঘাত হানতে পারে।
মিসাইলটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি সলিড-ফুয়েল বুস্টার রকেটের মাধ্যমে ধাক্কা পেয়ে বের হয়। তারপর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০-১৫০ ফুট উচ্চতায় ওঠে। বুস্টারটি কয়েক সেকেন্ড জ্বলে ভস্ম হয়। এর ইঞ্জিন সাশ্রয়ী। তাই কম তাপ উৎপন্ন করে। ইঞ্জিনটি ধীরে ধীরে জ্বালানি গ্রহণ করে, তাই মিসাইল বহুদূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। এটি খুব নিচু দিয়ে—ভূমি ও সমুদ্রের উপরে ৫০-১০০ ফুট (১৫-৩০ মিটার) উচ্চতায় উড়ে চলে।
টমাহক নির্ভুল লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বহুস্তরীয় সিস্টেম ব্যবহার করে। মিসাইলের ওপরের রাডার নিচের ভূ-প্রকৃতি স্ক্যান করে এবং আগে থেকে লোড করা ডিজিটাল মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পথ ঠিক করে। শেষ পর্যায়ে অপটিক্যাল সেন্সর লাইভ ছবি নিয়ে সংরক্ষিত টার্গেটের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখে; এর ফলে চূড়ান্তভাবে নির্ভুলতা বাড়ে। রাডারে ধরা না পড়া, স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনা ও মডুলার ডিজাইন—টমাহককে দিন-রাত এবং সব ধরনের আবহাওয়ায় নির্ভরযোগ্য অস্ত্র করে তোলে।
রাশিয়ার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে টমাহক মিসাইল সরবরাহ রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে। এতে ইউক্রেন রাশিয়ার আরও ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে হামলার সক্ষমতা পাবে, যা যুদ্ধের ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে। প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার এই মিসাইল ইউক্রেনের ভেতর থেকেই রাশিয়ার যেকোনো স্থানে—কমান্ড সেন্টার, সরবরাহ ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি এমনকি মস্কো পর্যন্ত—আঘাত হানতে সক্ষম।
ঝুঁকির কারণ
নির্ভুলতা ও গোপন উড্ডয়ন: টমাহক মিসাইল খুব নিচু উচ্চতায় ওড়ে এবং ভূপ্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে পথ নির্ধারণ করে। এ কারণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে সময়মতো শনাক্ত করতে পারে না। এর অপেক্ষাকৃত ধীর গতি একসঙ্গে বহু মিসাইল নিক্ষেপের সুযোগ দেয়, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে।
কৌশলগত প্রভাব: ইউক্রেন এই মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার সৈন্যঘাঁটি, গোলাবারুদ মজুদ এবং কৃষ্ণসাগর নৌবহরের আঘাত হানতে পারবে। এতে পাইলটদের ঝুঁকি নিতে হবে না। টমাহক রাশিয়ার সরবরাহ লাইনকে বিঘ্নিত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মিসাইল শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করা হবে। তবে রাশিয়া এটিকে সরাসরি ন্যাটোর উসকানি হিসেবে দেখছে।
উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: ক্রেমলিনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, এই অস্ত্র সরবরাহ বৃহত্তর যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে। দিমিত্রি মেদভেদেভ পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কার কথাও বলেছেন, যদিও ট্রাম্পের হুমকিকে তিনি ‘ফাঁকা’ বলেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই জানিয়েছেন, দীর্ঘ-পাল্লার মিসাইল সরবরাহকে তিনি ‘রেড লাইন’ অতিক্রম হিসেবে দেখবেন, যা ন্যাটো রুট বা সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর পাল্টা আঘাত ডেকে আনতে পারে।
রাশিয়ার কার্যকর প্রতিরোধে সমস্যা: ক্রুজ মিসাইল আটকানোর হার শতভাগ নয়। রাশিয়া কিছু পশ্চিমা মিসাইল ধ্বংস করলেও একযোগে নিক্ষেপের ক্ষেত্রে তা ব্যর্থ হয়। বড় আকারের টমাহক হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে, যা মনোবল দুর্বল করবে এবং রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধনীতি জটিল করে তুলবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি টমাহক সরবরাহে দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ এতে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত শান্তি আলোচনায় চাপ সৃষ্টির কৌশল। রাশিয়ার জন্য টমাহক শুধু একটি অস্ত্র নয়—এটি যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের প্রভাব হারানোর প্রতীক। তাই মস্কো কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিচ্ছে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সবাই এখন নজর রাখছে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো ইঙ্গিত দেখা দেয় কি না।
প্রচ্ছদে দেওয়া ট্রাম্পের ছবিটি নিচের দিক থেকে তোলা হয়েছে। ছবির পেছনে ছিল উজ্জ্বল সূর্যের আলো, যা তাঁর মুখ ও মাথার অংশ ছায়ার আড়ালে ফেলে দেয়। এতে তাঁর পরিচিত চুলের ছাঁট অদৃশ্য হয়ে যায়। মাথার ওপরে একটি ঝাপসা আলো যেন একটি ছোট মুকুটের মতো দেখা যায়।
২ ঘণ্টা আগেগাজার স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোগত ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে গাজার হাসপাতালগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইতালির ফুটবল ম্যাচের আগে পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। উত্তর ইতালির উদিনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনপন্থির শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে এই সহিংসতা ঘটনা ঘটে।
১২ ঘণ্টা আগেভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আর এর প্রতিক্রিয়ায় নরওয়েতে থাকা নিজেদের দূতাবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভেনেজুয়েলা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াস্থ দূতাবাসও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
১ দিন আগে