leadT1ad

এবার মেক্সিকোতে ‘জেন-জি’ বিক্ষোভ, রাজধানীতে সংঘর্ষ-সহিংসতা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ মেক্সিকো সিটির জোকালো স্কোয়ারে বিক্ষোভ চলাকালীন জাতীয় প্রাসাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স।

মেক্সিকোতে অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। এসব বিক্ষোভ আয়োজন করেছে তরুণ প্রজন্ম তথা জেনারেশন জেড-এর সদস্যরা। শনিবারের মিছিলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেয়। বিরোধী দলের প্রবীণ কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। নিহত মিচোয়াকান মেয়র কার্লোস মানজোর সমর্থকেরাও মিছিলে যোগ দেন। তিনি এ মাসের শুরুতে ‘ডে অব দ্য ডেড’ অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

দেশটির গণমাধ্যম এ তথ্য জানায়, মেক্সিকো সিটিতে মুখোশধারী একদল বিক্ষোভকারী জাতীয় প্রাসাদের চারপাশের বেড়া ভেঙে ফেলে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম সেখানে বাস করেন। এতে দাঙ্গা-পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিক্ষাভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।

নগর পুলিশের নিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাসকেজ জানান, সংঘর্ষে ১০০ পুলিশ আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আরও ২০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছে। ভাসকেজ বলেন, ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও ২০ জনকে প্রশাসনিক অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মেক্সিকোর সংবাদমাধ্যম এল ইউনিভার্সাল জানায়, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রাসাদের কাছে পৌঁছালে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং পাথর ছোড়ে। তারা বিক্ষোভকারীদের নিজেদের ঢাল ও পাথর দিয়ে আঘাত করেছে। অনেকে আহত হন এবং চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মীরা তাদের সেবা দেন। পুলিশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। পরে সবাইকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

বিক্ষোভের আয়োজকরা নিজেদের ‘জেনারেশন জেড মেক্সিকো’ বলে পরিচয় দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ঘোষণায় জানায়, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা সহিংসতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে বিরক্ত তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করে।

তবে কিছু জেন জেড প্রভাবশালী ব্যক্তি বিক্ষোভ সমর্থন না করার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স ও ধনকুবের রিকার্দো সালিনাস প্লিয়েগো প্রকাশ্যে বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন দেন।

প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম অভিযোগ করেন, ডানপন্থী দলগুলো এ আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বট ব্যবহার করে উপস্থিতি বাড়ানোরও চেষ্টা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এ বছর জেন জেড বিক্ষোভ হয়েছে। প্রতিবাদের বিষয়গুলো ছিল বৈষম্য, গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ও দুর্নীতি। সেপ্টেম্বরে নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। একই মাসে মাদাগাস্কারেও পানি-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বিরাট বিক্ষোভ হয়। এতে সরকারের পতন ঘটে এবং প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোইলিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

মেক্সিকো সিটিতে আল জাজিরার সাংবাদিক মনিকা ক্রুজ বলেন, স্থানীয় বিক্ষোভে বিরোধী পক্ষের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা বেশি। তিনি মনে করেন, এটি স্বতঃস্ফূর্ত তরুণদের বিক্ষোভ নয়। কারণ মেক্সিকো সিটিতে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে যে তরুণদের বিশাল বিক্ষোভ হয়েছিল, তার তুলনায় এবার তরুণদের উপস্থিতি খুব কম।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, দুর্নীতি ও অপরাধের দায়মুক্তির মতো দীর্ঘদিনের সমস্যায় তারা হতাশ। ব্যবসায়-পরামর্শক আন্দ্রেস মাসা বলেন, দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। তিনি জেন জেড বিক্ষোভের প্রতীক পাইরেট স্কাল পতাকা বহন করছিলেন। চিকিৎসক ক্লাউদিয়া ক্রুজ বলেন, তিনি স্বাস্থ্য খাতের জন্য বেশি বরাদ্দ ও নিরাপত্তা চান। তার মতে, ডাক্তাররাও দেশের অনিরাপত্তার শিকার।

২০২৪ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসার পরেও প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম উচ্চ সমর্থন বজায় রেখেছেন। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যা মামলার কারণে তার নিরাপত্তা নীতির সমালোচনা হয়েছে। এর মধ্যে মেয়র কার্লোস মানজোর হত্যাকাণ্ডও রয়েছে। মানজো মিচোয়াকানের উরুয়াপান শহরের মেয়র ছিলেন। মাদক চোরাচালানকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর পর ১ নভেম্বর তাকে হত্যা করা হয়।

শনিবার মিচোয়াকানের বিভিন্ন শহরেও মানজোর সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। অনেকে মেক্সিকো সিটিতেও এসে মিছিলে যোগ দেন। পাতস্কুয়ারো শহর থেকে আসা ৬৫ বছর বয়সী রিয়েল–এস্টেট ব্যবসায়ী রোসা মারিয়া অ্যাভিলা বলেন, ‘রাষ্ট্র ভেঙে পড়ছে।’ তার মতে, মানজোকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি পাহাড়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সাহস দেখিয়েছিলেন।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত