মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত ব্যাপক শুল্ক থেকে কফি, কলা, গরুর মাংসসহ বহু পণ্যকে অব্যাহতি দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চাপের মুখে থাকা প্রশাসন জানিয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় এসব পণ্যে শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতা নেই। খবর বিবিসি
গত সপ্তাহের নিউইয়র্ক সিটিসহ কয়েকটি নির্বাচনে রিপাবলিকানদের হতাশাজনক ফলাফলের পর জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে ট্রাম্প নতুন করে সুর বদলেছেন। আগের মতো তিনি আর ‘মূল্যস্ফীতি’ শব্দটিকে ‘ডেমোক্র্যাটদের কন জব’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
হোয়াইট হাউসের তালিকায় থাকা ছাড়প্রাপ্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে অ্যাভোকাডো, টমেটো, নারিকেল, আমসহ নানা ফলমূল। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, দেশীয় উৎপাদন কম হওয়ায় এগুলোতে শুল্ক রক্ষা নয়, বরং ভোক্তার বোঝা বাড়াচ্ছিল।
ট্রাম্পের দাবি ছিল, আমদানির ওপর দেশগুলোর জন্য সমানভাবে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক এবং বিভিন্ন বাণিজ্য-সঙ্গীর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলেও ভোক্তার ওপর এর বোঝা পড়বে না। তিনি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির কথা তুলে ধরে বিদেশিদের ‘চিটিং’ ও ‘লুণ্ঠন’-এর অভিযোগ করেছেন। তাঁর যুক্তি ছিল, শুল্ক বাড়ালে মানুষ দেশীয় পণ্য কিনতেই উৎসাহিত হবে।
কিন্তু গরুর মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বিষয়টি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। গত সপ্তাহে তিনি মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্পে ‘অবৈধ যোগসাজশ, দাম কারসাজি’ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
শুল্ক সমর্থনে তিনি নাগরিকদের জন্য ২ হাজার ডলারের ‘ট্যারিফ রিবেট’ চেকের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প এসব শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এখনো রায় দেয়নি।
নতুন ছাড় ঘোষণাকে প্রশাসনের নীতিগত ‘পিছিয়ে আসা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে—যেখানে মূল্য কমানোর লক্ষ্যে কয়েকটি খাদ্যপণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য দেশে উৎপাদনই হয় না, সেখানে আমাদের কোনো শিল্পরক্ষা হচ্ছে না।’ আরও বলেন, ভবিষ্যতে আর বড় ধরনের নীতিপরিবর্তনের প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করেন না।
ট্রাম্প বলেন, ‘কফির দাম কিছুটা বেশি ছিল। সামান্য রোলব্যাক করায় এখন দ্রুতই দাম কমে আসবে।’
অর্থনীতিবিদেরা বরাবরই সতর্ক করে আসছেন, শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপরই পড়ে। শ্রম দপ্তরের সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে; গত বছরের তুলনায় মুড়িমানের পণ্য ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন শুল্ক ছাড় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে—এবং তা প্রযোজ্য হবে আগের তারিখ থেকে। পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার চারটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির অংশ হিসেবে কফি ও কলার ওপর আমদানি শুল্কও কমানো হচ্ছে।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প এবং অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে কফির দাম ২০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যেসব পণ্যে আর শুল্ক নেই
হোয়াইট হাউসের তালিকায় ১০০টির বেশি পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— কফি; কোকো; ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টি; ভ্যানিলা বিন; গরুর মাংসের বিভিন্ন কাট, হাড়সহ বা হাড়বিহীন, কর্নড বিফ, হিমায়িত, লবণাক্ত, শুকনো বা ধূমায়িত মাংস; আকাই, অ্যাভোকাডো, কলা, নারিকেল, পেয়ারাসহ নানা ফল; লেবু, কমলা, আম, পেয়ারা, প্লানটেইন, আনারস, বিভিন্ন মরিচ ও টমেটো।
এছাড়াও এই তালিকায় আছে বিভিন্ন প্রকার মসলা জাতীয় পণ্য—অলস্পাইস, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনিয়াবীজ, জিরা, কারি, সোয়া, মৌরিবীজ, আদা, মেস, জয়ফল, ওরেগানো, জাফরান ও হলুদ। আছে বাদাম, শস্য, মূলজাতীয় ও বীজ—যেমন বার্লি, ব্রাজিল নাট, ক্যাপার, কাজু, চেস্টনাট, ম্যাকাডেমিয়া, মিসো, পাম হার্ট, পাইন নাট, খেসারি বা পোস্তদানা, ট্যাপিওকা, তারো ও ওয়াটার চেস্টনাট।