leadT1ad

ভারতের উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩৬
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মন্থা মঙ্গলবার রাতে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকুল অতিক্রম করেছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে অন্ধ্র প্রদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো বাতাস এবং বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থলভাগে উঠার পর ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়েছে তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি তৈরি করছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করে। দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশের মাছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মাঝামাঝি কাকিনাড়া এলাকা দিয়ে ঝড়টি উপকূলে উঠে আসে। তীব্র ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজ্যজুড়ে তীব্র বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশের ওড়িশা রাজ্যের অন্তত ১৫টি জেলাতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে পুলিশ জানায়, কোনাসীমা জেলার মাকানাগুদেম গ্রামে এক নারী নিহত হয়েছেন। প্রবল বাতাসে একটি তালগাছ ভেঙে পড়ে তার ওপর। বন্যা এবং অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সমুদ্র উপকূলীয় জেলাগুলোর বহু স্থানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। গাছ উপড়ে গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব এখনো মধ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে, যেখানে ২৬টির মধ্যে ২৩টি জেলা লাল ও কমলা সতর্কবার্তার আওতায় রয়েছে। ওড়িশার গঞ্জাম, গজপতি, রায়গাড়া, কোরাপুট ও মালকানগিরি জেলাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

রাজ্য সরকারের প্রাথমিক হিসাবে, ঝড়ে ৩৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমির ফসল এবং এক লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর উদ্যান ফসল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া প্রভাবিত এলাকা থেকে ৭৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ২১৯টি মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে এবং গবাদিপশুর জন্য ৮৬৫ টন খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণে রাখা হয়েছে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ ঝড়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এই ঝড়গুলোকে আরও তীব্র ও অনিশ্চিত করে তুলছে।

ভারতের পূর্ব উপকূল দীর্ঘদিন ধরেই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সাল ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় মৌসুম, যখন ৫২৩ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, যা অন্যান্য অঞ্চলে হারিকেন বা টাইফুন নামে পরিচিত, জনবহুল উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে ভয়াবহ ক্ষতি করে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ এই ঝড়গুলোর শক্তি বাড়াচ্ছে। উষ্ণ জল থেকে ঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ হয়, ফলে এগুলো আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে।

ইংল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ অক্ষয় দিওরাস বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাতাসের তাপমাত্রা যেমন বাড়াচ্ছে, তেমনি সমুদ্রের তাপমাত্রাও বাড়াচ্ছে। সমুদ্র যত উষ্ণ হবে, ততই তা ঘূর্ণিঝড়কে অধিক শক্তি দেবে।’

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত একইসঙ্গে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম শীর্ষ দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি।

বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লুভ্যাঁ-র জরুরি ঘটনাবলির ডাটাবেস অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এশিয়ায় ১৬৭টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, যা বিশ্বে সর্বাধিক। ঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ভূমিকম্পে এশিয়া জুড়ে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত