অ্যানালগ প্রেমের যুগ পেরিয়ে এই ডিজিটাল যুগে কেমন চলছে জেনজিদের প্রেম-বিরহের পালা? কীভাবে তৈরি হচ্ছে সম্পর্কের সেতু? কেনই-বা ভেঙে পড়ছে? সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে জানা যাক।
হুমায়ূন শফিক
১৯৭৭ সালে ‘অমর প্রেম’ সিনেমার ‘আমি কার জন্য পথ চেয়ে রবো’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়। রাজ্জাক ও শাবানা অভিনীত সিনেমার এই গানটি দেখলে সেকালের প্রেমের একটি চিত্র পাওয়া যায়। দেখা যায়, শাবানা একটি পার্কে বসে রাজ্জাকের জন্য অপেক্ষা করছেন। আর গানের মাধ্যমে রাজ্জাকের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তবে রাজ্জাক আসার পরে দুজনকে বেশ রোমান্টিক মুডেই দেখা যায়। চলচ্চিত্রেই যে শুধু এমন চিত্র দেখা গেছে তখন, তা নয়। বাস্তবিক এমনই ছিল তখনকার প্রেম।
এরপর কেটে গেছে বহুবছর। এর মধ্যে কয়েকটি প্রজন্মের মধ্যে নানারকম প্রেমের ধরন দেখা গেছে। কিন্তু বর্তমানে যাদের জেনজি বলা হয়, তাদের প্রেম-বিরহ নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বিচিত্র সব গবেষণা। শাবানা ও রাজ্জাকের প্রেমকাহিনি যেন এখন ফ্যান্টাসি।
সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর থেকেই বলা হচ্ছে, এই প্রজন্মের ধৈর্য কমে গেছে। কোনো ছেলে-মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর আশা করে। যদি উত্তর না পায়, তাহলে তার ভেতরে নানা চিন্তার উদ্রেক হয়। সে অনেক সময় ভাবে, হয়তো তার গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছে বা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।
কিন্তু এমন একটা সময় ছিল যখন বছরের পর বছর শুধু চিঠির আদান-প্রদান হতো—কেউ কাউকে সন্দেহ করত না। তাহলে এতটা পরিবর্তনের কারণ কী? কেবলই কি সোশ্যাল-মিডিয়া দায়ী? আপনি যদি মিলেনিয়াল বা জেনজি হন, তাহলে নিজেদের দাদা-দাদি বা বাবা-মাকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন। আসলে ভালোবাসা কী? এই প্রশ্নের উত্তর কি জেনজিরা জানে?
প্রি-ডিজিটাল যুগের প্রেমকে ‘অপ্রত্যাশিত আনন্দ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। আগে দেখা যেত, আপনি কারো ফোনকলের অপেক্ষায় ফোনের পাশে বসে আছেন অথবা ক্লাসের ফাঁকে তাঁকে করিডোরে দেখার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু দেখতে পেতেন অল্প সময়ের জন্য। অনেক সময় বেশদিন অপেক্ষা করতে হতো তাঁকে দেখার জন্য কিংবা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। এই অপেক্ষার সময়টাতে আপনার মস্তিস্ক ডোপামিনে ভরে যেত। এই অনিশ্চিত ভালোবাসার অনুভূতি হতো আরও গভীর।
ড. হেলেন ফিশারের ব্রেইন ইমেজিং গবেষণায় দেখা গেছে, এই অপেক্ষার সময় মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম বা পুরস্কার ব্যবস্থাকে তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টির চেয়েও বেশি সক্রিয় করে তোলে।
এই অনিশ্চয়তা—‘সে আমাকে পছন্দ করে কি না?’, ‘সে ফোন দেবে কি না?’, ‘ওরও একই অনুভূতি আছে কি না?’—এই ভাবনা থেকেই মস্তিষ্কে তৈরি হয় সেই নিউরোকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়া।
বাস্তবিক অর্থেই, সেই প্রতীক্ষা আর তৃষ্ণার মধ্য দিয়েই আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি।
হাতে লেখা চিঠি, এমএসএন মেসেঞ্জারে (স্মার্টফোন আসার আগে মাইক্রোসফটের তৈরি জনপ্রিয় অনলাইন চ্যাটিং অ্যাপ) সেই একটিমাত্র নোটিফিকেশন কিংবা ভিড়ের ভেতর তার চোখের দিকে একঝলক তাকানো—গবেষকদের ভাষায় প্রতিটি মুহূর্ত তৈরি করত ‘ইতিবাচক মানসিক চাপ’। আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেত, হাত ঘামত, মস্তিষ্ক নিঃসরণ করত নরেপেনেফ্রিন, ডোপামিন এবং ফেনাইলেইথাইলামিন (প্রেমের সঙ্গে জড়িত এক ধরনের রাসায়নিক)।
এই বায়োকেমিক্যাল ককটেল শুধু আনন্দই দিত না, বরং সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কোষের স্তর পর্যন্ত গভীর আর জৈবিক বন্ধন গড়ে তুলত।
মিলেনিয়ালস ও জেনজিরা প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। তাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি। তারা মনে করে যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলো সহজলভ্য। কমন সেন্স মিডিয়া সার্ভের তথ্যমতে, ৩৫% শিক্ষার্থী মনে করে টেক্সটিং হচ্ছে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। আর ৩২% শিক্ষার্থী মনে করে বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলাই ভালো।
করোনা মহামারির সময় থেকে মূলত এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়াতে আকৃষ্ট হয়ে যায়। কারণ, তখন সবাই বাধ্য হয়েই ঘরে থাকত। ঘরে বসেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ব্যবহার করত। কেউ কেউ নেটফ্লিক্সে সিরিজ দেখায় ব্যস্ত থাকত। এমন সময়ে অনেকে নতুন প্রেমে জড়িয়েছেন। আবার কারও জীবনে প্রেমে ‘ছ্যাকা’ খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কেউ কেউ হতাশ হলেও হাতে থাকা ডিভাইসের কারণে সেই বিরহ স্থায়ী হয়নি।
ডিজিটাল যুগে এসে বিনোদন মাধ্যমেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। ধীরে ধীরে সবাই ফেসবুক ও ইউটিউবের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর এখন তো স্যোশাল মিডিয়ায় ‘শর্টস ভিডিও’র ওপর বেশি ঝুঁকে গেছে এই সমাজের তরুণ-তরুণীরা। প্রেমের ক্ষেত্রে অবস্থা একই। অনেকে যেমন ঘনঘন প্রেমে পড়ছে, তেমনি ঘনঘন তাদের প্রেমের ইতিও ঘটছে। ডিজিটাল যুগটাই বোধহয় এমন। তবে এতে মানসিক ক্ষতিও ঘটছে নানাভাবে।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের হার বেড়েছে। ২০১০ সালে কলাবোরেটিভ রিভিউয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, জেনজিদের মানসিক স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর জন্য দায়ী করা হয় সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ডিভাইসগুলোকে।
বিষয়টি এমন নয় যে, কেউ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা শুরু করল আর এক সপ্তাহের মধ্যেই তাতে আসক্ত হয়ে গেল। এ বিষয়ে আরও উচ্চমানের গবেষণা ও জরিপ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞবৃন্দ মনে করেন।
মেটা (ফেসবুক) নিজেই কিশোর ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করছে। ফেসবুকের একজন সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সিস হাউগেন কোম্পানির অভ্যন্তরীণ গবেষণায় কী উঠে এসেছে তা ফাঁস করে দেন। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ১৭% বলেছেন ইনস্টাগ্রাম তাদের খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কিত সমস্যা আরও খারাপ করেছে। একইভাবে আত্মহত্যার চিন্তা বা মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির কিছু মাপকাঠিতে এই হার প্রায় ১৩.৫%।
ইউসিএলএ’স লোনলিনেস স্কেলের এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০১০ সালের পর নিঃসঙ্গতার হার ৪৩% বেড়েছে। আর যে তরুণ-তরুণীরা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের মধ্যে করটিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং অক্সিটসিনের ধীরে ধীরে কমে যায়।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ভিভেক মূর্তি বলেন, নিঃসঙ্গতা বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। যা প্রায় ১৫ শলাকা সিগারেটের ক্ষতির সমান। এমনকি এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।
ডিজিটাল ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ ড. ল্যারি রোসেনের গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব যুগল ডিভাইস ছাড়া বেশি সময় পার করে তাদের সম্পর্ক হয় দীর্ঘ ও গভীর। আর ডিভাইস কম ব্যবহার করার এই সুবিধা পাওয়া যাবে মাত্র এক মাসের মধ্যেই।
২০১২ সালে প্রকাশ হয় আমির লেভিন ও র্যাচেল হেলারের বই—‘অ্যাটাচড: দ্য নিউ সায়েন্স অব অ্যাডাল্ট অ্যাটাচমেন্ট অ্যান্ড হাউ ইট ক্যান হেল্প ইউ ফাইন্ড অ্যান্ড কিপ লাভ’। বইটি পড়ার পর এক পাঠকের প্রতিক্রিয়া হলো—‘দেখুন, আমি সততার সঙ্গেই বলব। আমার নিজের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখতাম, নানা সমস্যা। সোশ্যাল-মিডিয়া আমাদের চাহিদা বৃদ্ধি করে দেয়। ডেটিং অ্যাপ আমাদের মাঝে ফ্যান্টাসি গড়ে তোলে। আমি কিছুটা গবেষণা করতে চাইলাম। আসলে আমার সঙ্গে হচ্ছেটা কী? তখন এই বইটি আমি পড়ি। আর বুঝতে পারি, আচ্ছা তাহলে এসব কারণে আমার সঙ্গে এমনটা ঘটছে। এজন্য আমি এতসব ভুলভাল কাজ করেছি।’
তথ্যসূত্র: মিডিয়াম ডট কম, গ্রিকরিপোর্টার ডট কম, সিএনএন
১৯৭৭ সালে ‘অমর প্রেম’ সিনেমার ‘আমি কার জন্য পথ চেয়ে রবো’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়। রাজ্জাক ও শাবানা অভিনীত সিনেমার এই গানটি দেখলে সেকালের প্রেমের একটি চিত্র পাওয়া যায়। দেখা যায়, শাবানা একটি পার্কে বসে রাজ্জাকের জন্য অপেক্ষা করছেন। আর গানের মাধ্যমে রাজ্জাকের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তবে রাজ্জাক আসার পরে দুজনকে বেশ রোমান্টিক মুডেই দেখা যায়। চলচ্চিত্রেই যে শুধু এমন চিত্র দেখা গেছে তখন, তা নয়। বাস্তবিক এমনই ছিল তখনকার প্রেম।
এরপর কেটে গেছে বহুবছর। এর মধ্যে কয়েকটি প্রজন্মের মধ্যে নানারকম প্রেমের ধরন দেখা গেছে। কিন্তু বর্তমানে যাদের জেনজি বলা হয়, তাদের প্রেম-বিরহ নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বিচিত্র সব গবেষণা। শাবানা ও রাজ্জাকের প্রেমকাহিনি যেন এখন ফ্যান্টাসি।
সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর থেকেই বলা হচ্ছে, এই প্রজন্মের ধৈর্য কমে গেছে। কোনো ছেলে-মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর আশা করে। যদি উত্তর না পায়, তাহলে তার ভেতরে নানা চিন্তার উদ্রেক হয়। সে অনেক সময় ভাবে, হয়তো তার গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছে বা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।
কিন্তু এমন একটা সময় ছিল যখন বছরের পর বছর শুধু চিঠির আদান-প্রদান হতো—কেউ কাউকে সন্দেহ করত না। তাহলে এতটা পরিবর্তনের কারণ কী? কেবলই কি সোশ্যাল-মিডিয়া দায়ী? আপনি যদি মিলেনিয়াল বা জেনজি হন, তাহলে নিজেদের দাদা-দাদি বা বাবা-মাকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন। আসলে ভালোবাসা কী? এই প্রশ্নের উত্তর কি জেনজিরা জানে?
প্রি-ডিজিটাল যুগের প্রেমকে ‘অপ্রত্যাশিত আনন্দ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। আগে দেখা যেত, আপনি কারো ফোনকলের অপেক্ষায় ফোনের পাশে বসে আছেন অথবা ক্লাসের ফাঁকে তাঁকে করিডোরে দেখার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু দেখতে পেতেন অল্প সময়ের জন্য। অনেক সময় বেশদিন অপেক্ষা করতে হতো তাঁকে দেখার জন্য কিংবা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। এই অপেক্ষার সময়টাতে আপনার মস্তিস্ক ডোপামিনে ভরে যেত। এই অনিশ্চিত ভালোবাসার অনুভূতি হতো আরও গভীর।
ড. হেলেন ফিশারের ব্রেইন ইমেজিং গবেষণায় দেখা গেছে, এই অপেক্ষার সময় মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম বা পুরস্কার ব্যবস্থাকে তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টির চেয়েও বেশি সক্রিয় করে তোলে।
এই অনিশ্চয়তা—‘সে আমাকে পছন্দ করে কি না?’, ‘সে ফোন দেবে কি না?’, ‘ওরও একই অনুভূতি আছে কি না?’—এই ভাবনা থেকেই মস্তিষ্কে তৈরি হয় সেই নিউরোকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়া।
বাস্তবিক অর্থেই, সেই প্রতীক্ষা আর তৃষ্ণার মধ্য দিয়েই আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি।
হাতে লেখা চিঠি, এমএসএন মেসেঞ্জারে (স্মার্টফোন আসার আগে মাইক্রোসফটের তৈরি জনপ্রিয় অনলাইন চ্যাটিং অ্যাপ) সেই একটিমাত্র নোটিফিকেশন কিংবা ভিড়ের ভেতর তার চোখের দিকে একঝলক তাকানো—গবেষকদের ভাষায় প্রতিটি মুহূর্ত তৈরি করত ‘ইতিবাচক মানসিক চাপ’। আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেত, হাত ঘামত, মস্তিষ্ক নিঃসরণ করত নরেপেনেফ্রিন, ডোপামিন এবং ফেনাইলেইথাইলামিন (প্রেমের সঙ্গে জড়িত এক ধরনের রাসায়নিক)।
এই বায়োকেমিক্যাল ককটেল শুধু আনন্দই দিত না, বরং সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কোষের স্তর পর্যন্ত গভীর আর জৈবিক বন্ধন গড়ে তুলত।
মিলেনিয়ালস ও জেনজিরা প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। তাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি। তারা মনে করে যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলো সহজলভ্য। কমন সেন্স মিডিয়া সার্ভের তথ্যমতে, ৩৫% শিক্ষার্থী মনে করে টেক্সটিং হচ্ছে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। আর ৩২% শিক্ষার্থী মনে করে বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলাই ভালো।
করোনা মহামারির সময় থেকে মূলত এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়াতে আকৃষ্ট হয়ে যায়। কারণ, তখন সবাই বাধ্য হয়েই ঘরে থাকত। ঘরে বসেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ব্যবহার করত। কেউ কেউ নেটফ্লিক্সে সিরিজ দেখায় ব্যস্ত থাকত। এমন সময়ে অনেকে নতুন প্রেমে জড়িয়েছেন। আবার কারও জীবনে প্রেমে ‘ছ্যাকা’ খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কেউ কেউ হতাশ হলেও হাতে থাকা ডিভাইসের কারণে সেই বিরহ স্থায়ী হয়নি।
ডিজিটাল যুগে এসে বিনোদন মাধ্যমেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। ধীরে ধীরে সবাই ফেসবুক ও ইউটিউবের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর এখন তো স্যোশাল মিডিয়ায় ‘শর্টস ভিডিও’র ওপর বেশি ঝুঁকে গেছে এই সমাজের তরুণ-তরুণীরা। প্রেমের ক্ষেত্রে অবস্থা একই। অনেকে যেমন ঘনঘন প্রেমে পড়ছে, তেমনি ঘনঘন তাদের প্রেমের ইতিও ঘটছে। ডিজিটাল যুগটাই বোধহয় এমন। তবে এতে মানসিক ক্ষতিও ঘটছে নানাভাবে।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের হার বেড়েছে। ২০১০ সালে কলাবোরেটিভ রিভিউয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, জেনজিদের মানসিক স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর জন্য দায়ী করা হয় সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ডিভাইসগুলোকে।
বিষয়টি এমন নয় যে, কেউ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা শুরু করল আর এক সপ্তাহের মধ্যেই তাতে আসক্ত হয়ে গেল। এ বিষয়ে আরও উচ্চমানের গবেষণা ও জরিপ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞবৃন্দ মনে করেন।
মেটা (ফেসবুক) নিজেই কিশোর ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করছে। ফেসবুকের একজন সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সিস হাউগেন কোম্পানির অভ্যন্তরীণ গবেষণায় কী উঠে এসেছে তা ফাঁস করে দেন। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ১৭% বলেছেন ইনস্টাগ্রাম তাদের খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কিত সমস্যা আরও খারাপ করেছে। একইভাবে আত্মহত্যার চিন্তা বা মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির কিছু মাপকাঠিতে এই হার প্রায় ১৩.৫%।
ইউসিএলএ’স লোনলিনেস স্কেলের এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০১০ সালের পর নিঃসঙ্গতার হার ৪৩% বেড়েছে। আর যে তরুণ-তরুণীরা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের মধ্যে করটিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং অক্সিটসিনের ধীরে ধীরে কমে যায়।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ভিভেক মূর্তি বলেন, নিঃসঙ্গতা বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। যা প্রায় ১৫ শলাকা সিগারেটের ক্ষতির সমান। এমনকি এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।
ডিজিটাল ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ ড. ল্যারি রোসেনের গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব যুগল ডিভাইস ছাড়া বেশি সময় পার করে তাদের সম্পর্ক হয় দীর্ঘ ও গভীর। আর ডিভাইস কম ব্যবহার করার এই সুবিধা পাওয়া যাবে মাত্র এক মাসের মধ্যেই।
২০১২ সালে প্রকাশ হয় আমির লেভিন ও র্যাচেল হেলারের বই—‘অ্যাটাচড: দ্য নিউ সায়েন্স অব অ্যাডাল্ট অ্যাটাচমেন্ট অ্যান্ড হাউ ইট ক্যান হেল্প ইউ ফাইন্ড অ্যান্ড কিপ লাভ’। বইটি পড়ার পর এক পাঠকের প্রতিক্রিয়া হলো—‘দেখুন, আমি সততার সঙ্গেই বলব। আমার নিজের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখতাম, নানা সমস্যা। সোশ্যাল-মিডিয়া আমাদের চাহিদা বৃদ্ধি করে দেয়। ডেটিং অ্যাপ আমাদের মাঝে ফ্যান্টাসি গড়ে তোলে। আমি কিছুটা গবেষণা করতে চাইলাম। আসলে আমার সঙ্গে হচ্ছেটা কী? তখন এই বইটি আমি পড়ি। আর বুঝতে পারি, আচ্ছা তাহলে এসব কারণে আমার সঙ্গে এমনটা ঘটছে। এজন্য আমি এতসব ভুলভাল কাজ করেছি।’
তথ্যসূত্র: মিডিয়াম ডট কম, গ্রিকরিপোর্টার ডট কম, সিএনএন
মায়া সভ্যতার অন্যতম প্রধান নগরীর নাম চিচেন ইৎজা। পৃথিবীর নতুন সাত আশ্চর্যের একটি হিসেবে খ্যাত এই স্থানে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করেন। চিচেন ইৎজা ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত এবং ২০০৭ সালে এটি বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের মধ্যে স্থান পায়।
১ দিন আগেসমাজের প্রচলিত ধারণা এমন, মেয়েরা প্রচুর গসিপ করে আর ‘ব্যাটামানুষ’-রা গসিপের নাম শুনলেই ভ্রু কুঁচকায়। সেলিব্রেটি বা তারকাদের নিয়ে আমাদের সমাজের গসিপ এবং তার মেজাজটি কেমন? শাকিব-বুবলী-অপু গসিপের টর্নেডোর বাতাস কতটা আপনার গায়ে লেগেছে?
৩ দিন আগেসম্প্রতি মাহফুজ আলম থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের সংবাদমাধ্যম ‘কনটেক্সট নিউজ’-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। মো. তাহমিদ জামি’র নেওয়া সাক্ষাৎকারটি স্ট্রিম পাঠকদের জন্য অনূদিত হল।
৪ দিন আগেবিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন রিডার’স ডাইজেস্ট এমনই ১০টি বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই তালিকায় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইটির নামও আছে।
৪ দিন আগে