.png)

স্ট্রিম প্রতিবেদক

শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে আসছে শুষ্ক ও শীতল হাওয়া। তবে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এই বার্তা আনন্দের চেয়ে বেশি উদ্বেগ নিয়েই হাজির হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসার আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই ঢাকার বায়ুর মানের ক্রমাবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা অক্টোবর মাসে আরও মারাত্মক রূপ নিয়ে এখন ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে নগরবাসীর দিন কাটাতে হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এক মাসের ব্যবধানে ক্রমবর্ধমান দূষণের চিত্র
বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের বেশ কিছুদিন ঢাকার বায়ুমান সূচক (AQI) ‘মাঝারি’ (Moderate) পর্যায়ে ছিল। অক্টোবরের শুরুর দিকেও পরিস্থিতি ছিল একই রকম।
সেপ্টেম্বরের ২৫ থেকে অক্টোবরের ৬ তারিখ পর্যন্ত ১২ দিনের মধ্যে মাত্র তিন দিন ঢাকার বাতাসের মান একিউআই সূচকে ১০০-এর ওপরে ছিল। অর্থাৎ, এই সময়ের বেশির ভাগ দিন রাজধানীর বাতাস ছিল ‘মাঝারি’ মানের। ব্যতিক্রম তিন দিনের মধ্যে দুই দিন বাতাসের মান ছিল ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, যখন একিউআই স্কোর ছিল ১০০ থেকে ১৫০-এর মধ্যে। আর একদিন, সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে, ঢাকার বাতাসের মান ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’—সেদিন একিউআই স্কোর দাঁড়ায় ১৫৫।
তবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ছয় দিন বাদে এখন পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের পরিস্থিতি বেশ নাজুক। এই সময় রাজধানীর বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ের মধ্যে ওঠানামা করেছে। ১৮ দিনের মধ্যে একদিনও ঢাকার বায়ুমান ‘মাঝারি’ অবস্থায় নামেনি। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এই ১৮ দিনের মধ্যে ১০ দিন ঢাকার বাতাস ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং বাকি ৮ দিন ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে ছিল।
বায়ু দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। বর্ষা মৌসুমের শেষে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকায় দূষণ বাড়ছে বলে স্ট্রিমকে জানান তিনি।
বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান
বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা নিয়মিতভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। অক্টোবরের বিভিন্ন দিনে আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকার অবস্থান প্রথম দশের মধ্যেই ছিল। কোনো কোনো দিন ঢাকা শীর্ষ তিন বা চারের মধ্যেও চলে এসেছে। আজ সন্ধ্যা ৭টায়ও ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল। আইকিউএয়ার-এর বায়ুদূষণ র্যাংকিংয়ে গত বছর দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ছিল বাংলাদেশ। গড় একিউআই স্কোর ছিল ১৬৭।
তালিকায় ঢাকার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রধান শহর—ভারতের দিল্লি ও কলকাতা এবং পাকিস্তানের লাহোর ও করাচিও নিয়মিত এই র্যাংকিংয়ে স্থান পায়। এ থেকে বোঝা যায় যে গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলই মারাত্মক বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে।
শীতকালে কেন বাড়ে বায়ুদূষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ রয়েছে।
ডিউক গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ জিম ঝ্যাং মনে করেন, শীতকালে বায়ুদূষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ‘টেম্পারেচার ইনভার্শন’।
শীতকালে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাস ঠান্ডা থাকে, কিন্তু উপরের স্তরের বাতাস তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায়, ভূপৃষ্ঠের গরম বাতাস হালকা হওয়ায় উপরের দিকে উঠে যায় এবং দূষিত কণাগুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। কিন্তু শীতকালে উল্টো চিত্র দেখা যায়। নিচের ঠান্ডা ও ভারী বাতাসের স্তরটি উপরে থাকা গরম ও হালকা বাতাসের স্তরের নিচে আটকা পড়ে।
এর ফলে ধুলো, ধোঁয়া, গ্যাস, বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে না এবং বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জমাট বেঁধে থাকে।
ঝ্যাং আরও জানান, শীতের মাসগুলোতে মানুষ সাধারণত বেশি জ্বালানি ব্যবহার করে। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর পরিমাণ বাড়ে, ফলে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পায়।
বৃষ্টির অভাবকে শীতকালে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অধ্যাপক সালাম। তবে সেইসঙ্গে বেশ কিছু মনুষ্যসৃষ্টও কারণও এর পেছনে দায়ী বলে জানান তিনি। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না, বাতাসের দূষণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে শীতকালে অনেকগুলা ইন্ডাস্ট্রি চালু হয়। রাইস পারবোয়েল ইন্ডাস্ট্রি, ইটের ভাটা, তারপরে রাস্তায় ধুলাবালি বাড়তে থাকে। তা ছাড়া আমাদের বাতাস উত্তর দিক থেকে আসে, ওইখান থেকে প্রচুর পরিমাণে দূষণ নিয়ে আসে। এই সবগুলো মিলিয়েই শীতকাল এলেই বাতাস দূষিত হতে থাকে।’
রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ মানবদেহে নানান ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আইকিউএয়ার বলছে, স্বল্পমেয়াদে এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, চোখ-নাক-গলায় জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে— ফুসফুসের টিস্যু নষ্ট হওয়া, ক্যানসার, অকাল মৃত্যু ইত্যাদি। এর পাশাপাশি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
শিশু, বয়স্ক এবং আগে থেকে হৃদরোগ বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) জানায়, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ।
করণীয় কী
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার ওপরও জোর দেন তাঁরা।
আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তাহলে মানুষ রক্ষা পাবে। আর দূষণের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করবে, বাইরে ঘোরাঘুরি কমাতে হবে। ওই সময় শারীরিক ব্যায়াম একটু কম করতে হবে। তাহলে সে নিজে রক্ষা পাবে। আর সার্বিকভাবে দূষণ কমানোর জন্য সরকারকে এবং মানুষ নিজেও যে কাজগুলো করলে দূষণ হয়, এগুলা কমাতে হবে, বন্ধ করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে উল্লেখ করে আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরেই আমরা এরকম বারবার বলছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতিহারে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।’
বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসন কেন সফল হতে পারছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুস সালাম বলেন, ‘কারণটা হলো, ওনারা কোনো কাজ করে না। হয়তো তাঁরা এই সমস্যাটা অনুধাবন করতে পারে না, অথবা ওনাদের ইচ্ছা নাই।’

শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে আসছে শুষ্ক ও শীতল হাওয়া। তবে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এই বার্তা আনন্দের চেয়ে বেশি উদ্বেগ নিয়েই হাজির হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসার আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই ঢাকার বায়ুর মানের ক্রমাবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা অক্টোবর মাসে আরও মারাত্মক রূপ নিয়ে এখন ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে নগরবাসীর দিন কাটাতে হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এক মাসের ব্যবধানে ক্রমবর্ধমান দূষণের চিত্র
বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের বেশ কিছুদিন ঢাকার বায়ুমান সূচক (AQI) ‘মাঝারি’ (Moderate) পর্যায়ে ছিল। অক্টোবরের শুরুর দিকেও পরিস্থিতি ছিল একই রকম।
সেপ্টেম্বরের ২৫ থেকে অক্টোবরের ৬ তারিখ পর্যন্ত ১২ দিনের মধ্যে মাত্র তিন দিন ঢাকার বাতাসের মান একিউআই সূচকে ১০০-এর ওপরে ছিল। অর্থাৎ, এই সময়ের বেশির ভাগ দিন রাজধানীর বাতাস ছিল ‘মাঝারি’ মানের। ব্যতিক্রম তিন দিনের মধ্যে দুই দিন বাতাসের মান ছিল ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, যখন একিউআই স্কোর ছিল ১০০ থেকে ১৫০-এর মধ্যে। আর একদিন, সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে, ঢাকার বাতাসের মান ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’—সেদিন একিউআই স্কোর দাঁড়ায় ১৫৫।
তবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ছয় দিন বাদে এখন পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের পরিস্থিতি বেশ নাজুক। এই সময় রাজধানীর বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ের মধ্যে ওঠানামা করেছে। ১৮ দিনের মধ্যে একদিনও ঢাকার বায়ুমান ‘মাঝারি’ অবস্থায় নামেনি। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এই ১৮ দিনের মধ্যে ১০ দিন ঢাকার বাতাস ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং বাকি ৮ দিন ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে ছিল।
বায়ু দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। বর্ষা মৌসুমের শেষে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকায় দূষণ বাড়ছে বলে স্ট্রিমকে জানান তিনি।
বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান
বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা নিয়মিতভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। অক্টোবরের বিভিন্ন দিনে আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকার অবস্থান প্রথম দশের মধ্যেই ছিল। কোনো কোনো দিন ঢাকা শীর্ষ তিন বা চারের মধ্যেও চলে এসেছে। আজ সন্ধ্যা ৭টায়ও ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল। আইকিউএয়ার-এর বায়ুদূষণ র্যাংকিংয়ে গত বছর দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ছিল বাংলাদেশ। গড় একিউআই স্কোর ছিল ১৬৭।
তালিকায় ঢাকার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রধান শহর—ভারতের দিল্লি ও কলকাতা এবং পাকিস্তানের লাহোর ও করাচিও নিয়মিত এই র্যাংকিংয়ে স্থান পায়। এ থেকে বোঝা যায় যে গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলই মারাত্মক বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে।
শীতকালে কেন বাড়ে বায়ুদূষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ রয়েছে।
ডিউক গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ জিম ঝ্যাং মনে করেন, শীতকালে বায়ুদূষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ‘টেম্পারেচার ইনভার্শন’।
শীতকালে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাস ঠান্ডা থাকে, কিন্তু উপরের স্তরের বাতাস তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায়, ভূপৃষ্ঠের গরম বাতাস হালকা হওয়ায় উপরের দিকে উঠে যায় এবং দূষিত কণাগুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। কিন্তু শীতকালে উল্টো চিত্র দেখা যায়। নিচের ঠান্ডা ও ভারী বাতাসের স্তরটি উপরে থাকা গরম ও হালকা বাতাসের স্তরের নিচে আটকা পড়ে।
এর ফলে ধুলো, ধোঁয়া, গ্যাস, বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে না এবং বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জমাট বেঁধে থাকে।
ঝ্যাং আরও জানান, শীতের মাসগুলোতে মানুষ সাধারণত বেশি জ্বালানি ব্যবহার করে। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর পরিমাণ বাড়ে, ফলে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পায়।
বৃষ্টির অভাবকে শীতকালে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অধ্যাপক সালাম। তবে সেইসঙ্গে বেশ কিছু মনুষ্যসৃষ্টও কারণও এর পেছনে দায়ী বলে জানান তিনি। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না, বাতাসের দূষণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে শীতকালে অনেকগুলা ইন্ডাস্ট্রি চালু হয়। রাইস পারবোয়েল ইন্ডাস্ট্রি, ইটের ভাটা, তারপরে রাস্তায় ধুলাবালি বাড়তে থাকে। তা ছাড়া আমাদের বাতাস উত্তর দিক থেকে আসে, ওইখান থেকে প্রচুর পরিমাণে দূষণ নিয়ে আসে। এই সবগুলো মিলিয়েই শীতকাল এলেই বাতাস দূষিত হতে থাকে।’
রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ মানবদেহে নানান ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আইকিউএয়ার বলছে, স্বল্পমেয়াদে এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, চোখ-নাক-গলায় জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে— ফুসফুসের টিস্যু নষ্ট হওয়া, ক্যানসার, অকাল মৃত্যু ইত্যাদি। এর পাশাপাশি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
শিশু, বয়স্ক এবং আগে থেকে হৃদরোগ বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) জানায়, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ।
করণীয় কী
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার ওপরও জোর দেন তাঁরা।
আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তাহলে মানুষ রক্ষা পাবে। আর দূষণের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করবে, বাইরে ঘোরাঘুরি কমাতে হবে। ওই সময় শারীরিক ব্যায়াম একটু কম করতে হবে। তাহলে সে নিজে রক্ষা পাবে। আর সার্বিকভাবে দূষণ কমানোর জন্য সরকারকে এবং মানুষ নিজেও যে কাজগুলো করলে দূষণ হয়, এগুলা কমাতে হবে, বন্ধ করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে উল্লেখ করে আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরেই আমরা এরকম বারবার বলছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতিহারে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।’
বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসন কেন সফল হতে পারছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুস সালাম বলেন, ‘কারণটা হলো, ওনারা কোনো কাজ করে না। হয়তো তাঁরা এই সমস্যাটা অনুধাবন করতে পারে না, অথবা ওনাদের ইচ্ছা নাই।’
.png)

দেশজুড়ে বিদায় নিচ্ছে বৃষ্টি বয়ে আনা মৌসুমি বায়ু। বর্ষা বিদায়ের এই সময়টায় আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তন আসছে। আর্দ্রতা কমছে, বাড়ছে দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য।
১১ দিন আগে
আগামীকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বিদায় নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
১৫ দিন আগে
চলতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর প্রভাব এখনই দেখা দেবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
২০ দিন আগে
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে জানানো হয়েছে ।
২২ দিন আগে