leadT1ad

নেতাজি বলেছিলেন, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে বাঙালির জাতীয় কবি হবেন কাজী নজরুল

আজ ১৫ ডিসেম্বর। ১৯২৯ সালের এই দিনে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউস) কলকাতায় বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
স্ট্রিম গ্রাফিক

১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর। কাজী নজরুল ইসলামের বয়স তখন ৩০। তখন ‘নিখিল ভারত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি’র উদ্যোগে কলকাতায় কবি নজরুলকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তিদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সেদিনের হলরুম।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ‘কল্লোল’ পত্রিকার সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ ও ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এই সংবর্ধনা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ ও হবীবুল্লাহ বাহার প্রমুখ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এস. ওয়াজেদ আলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। দুপুর ২টায় ফুল দিয়ে সুসজ্জিত মোটরগাড়িতে করে আসেন সেদিনের মূল আকর্ষণ কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি সভাকক্ষে প্রবেশ করলে সবাই উল্লাসধ্বনি দিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। শিল্পী উমাপদ ভট্টাচার্য উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেন নজরুলের রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি।

মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধান অতিথি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আগে থেকেই নজরুল ইসলামের লেখনী ও তাঁর গানের প্রশংসা করে আসছেন। তাছাড়া কাজী নজরুল ইসলামও সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনীতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ সরকার যখন সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়, তখন নজরুল তাঁর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

তাই তো নেতাজি সুভাষও নজরুলের প্রশংসা করে বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা নজরুলের গান গেয়ে এগিয়ে যাব, কারাগারেও তাঁর গান আমাদের সঙ্গী হবে।’

সংবর্ধনার একপর্যায়ে নজরুল তাঁর জনপ্রিয় গান ‘টলমল টলমল পদভরে বীরদল চলে সমরে’ পরিবেশন করেন। নেতাজির অনুরোধে তিনি আরও একটি বিখ্যাত গান ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গেয়ে শোনান। নেতাজি সেদিন আরও বলেন, ‘ভারতবর্ষ যেদিন স্বাধীন হবে, বাঙালির জাতীয় কবি হবেন কাজী নজরুল ইসলাম।’

১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর মৌখিকভাবে বাঙালির জাতীয় কবি হওয়ার যে আশ্বাস নেতাজি দিয়েছিলেন, তার সবটা পূরণ না হলেও ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি’ হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম পরম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। যদিও সুভাষের এই বক্তব্য বিচক্ষণ কবির মনে অস্বস্তি তৈরি করে। তাই তো দ্বিধাহীনভাবে তিনি বলেন, ‘এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলে, আমি শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের। যে কুলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই আমি জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই আমি কবি।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত