গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ৫২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে মারা গেছেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ। তাঁর মৃত্যুতে ভারতের আসাম শোকে ভেঙে পড়েছে। আসাম সরকার জানিয়েছে, জুবিন গার্গের শেষকৃত্য না হওয়া পর্যন্ত সব স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। হিন্দি, বাংলা, অহমিয়াসহ বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন এই শিল্পী। বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার ইয়া আলী গান তাঁকে এনে দেয় ভারতজুড়ে পরিচিতি।
প্রবুদ্ধ ঘোষ
আসামে চলছে শোকের দিন। মর্মান্তিক শোক। জুবিন গার্গ নেই। আমি আসামের নই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বাঙালি। এক বছরের বেশি সময় ধরে আসামের গুয়াহাটিতে থাকছি। এখানে রয়্যাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াই। কিন্তু এই শোক আমি টের পাচ্ছি। এই শোক সামান্য না। একে শুধু একজন গায়কের মৃত্যুজনিত শোক বলে দাগানো যাবে না। এ এক অদ্ভুত শূন্যতা। আমার চেনাজানা বহু মানুষ আজ প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর।
জুবিন গার্গ আসামের জাতীয় নায়ক। ভূপেন হাজারিকার অমন পর্বততুল্য অস্তিত্বের পরে একমাত্র জুবিন গার্গ নিজেকে ওই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। গতকাল জুবিনের মৃত্যুসংবাদ এল ভারতীয় সময় সোয়া তিনটে নাগাদ। আমাদের বিভাগে জরুরি একটা মিটিং চলছিল। হঠাৎই একজন সত্তরোর্ধ্ব অধ্যাপক গায়ক জুবিনের মৃত্যুসংবাদ দিলেন। সহকর্মীরা, বিশেষত যারা আমার বয়সী বা ত্রিশোর্ধ্ব, কেউই বিশ্বাস করেননি। আধঘণ্টা পর যখন নিশ্চিত হলাম, তাঁদের সবার শোকার্দ্র অভিব্যক্তি আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না।
খুব প্রিয়জন মারা গেলে যে শোক আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামায়, তেমনই শোক ছেয়ে গেল মুহূর্তে। গোটা ইউনিভার্সিটি জুড়ে শোক। দলে দলে অধ্যাপক, সহযোগী-সহকারী অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, কর্মী সবাই জড়ো হলো শোকজ্ঞাপন করতে। কী রকম শোকজ্ঞাপন? তাঁরা জুবিনের গান গাইতে লাগল। তাঁরা কাঁদল। জুবিনের মৃত্যুসংবাদ অস্বীকার করতে চাইল। তাঁরা জুবিনের গাওয়া গান নিজেরা গাইতে গাইতে হাউহাউ করে কাঁদল।
আমি টের পেলাম প্রকৃত অর্থে শোক কেমন সংক্রামক। বিভাগে ফিরে জুবিনের গান চলতে লাগল, সহকর্মীদের চোখে বাঁধভাঙা জল। বেশ কিছু অহমিয়া গানের মাঝে জুবিনের গাওয়া বাংলা গান ‘চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম’, ‘মন মানে না’ ইত্যাদি চালাতে বললাম। শেষে শুনলাম ‘ইয়া আলি’, বহু বহুবছর বাদে। উচ্চারণ আর কথাগুলো আবারও ধাক্কা দিল আগের মতোই!
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নিরাপত্তারক্ষীর মুখ ভার, মেঘের পরত। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে সহকর্মী অধ্যাপকসহ ছাত্রছাত্রীদের তো বটেই, পাড়ার মুদি এবং সবজিবিক্রেতার শোকাহত স্ট্যাটাস দেখলাম। একের পর এক ভিডিও এল—আসামের হাতিগাঁও, বেলতলা, চাঁদমারি, আদাবাড়িতে রাস্তার মোড়ে লোক নেমে এসেছে জুবিনের গান গাইতে গাইতে।
জুবিন গার্গ বলে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুতে ‘মায়াবিনী’ গানটি গাইতে, মনে রাখতে। এই গান অহমিয়া ও বাংলা, দুই ভাষাতেই গেয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় জড়ো হয়ে আলো জ্বেলে সবাই এই গান গাইছেন। অটোচালক, দোকানদার থেকে অফিসফেরত—সবাই সেই শোকমিছিলে শামিল। এই দৃশ্য অবর্ণনীয়। শুধু একজন গায়কের বিদায়জনিত শোক এ নয়, জুবিন তাঁদের হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আইকন হয়ে ওঠা মুখের কথা না। কিংবদন্তি হয়ে ওঠা সামান্য ব্যাপার না। অনেক মিথ, অনেক বিশ্বাস, অনেক আকাঙ্খা, অনেক ভরসা আর অনেকটা এলোমেলো উদ্যাপন, ‘জিন্দ্গি লম্বি ন্যহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে’ ওতঃপ্রোত জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। জুবিন গার্গের পরে আসামে এমন কেউ নেই। আর, পশ্চিম বাংলাতে? আমার বাংলায়? কে আছেন এমন? কে? কেন নেই? নাকি আমাদের সবারই
‘ইয়ে দিল ব্যন যায়ে পাত্থর কা
না ইসমে কোঈ হালচাল হো’।
লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক
আসামে চলছে শোকের দিন। মর্মান্তিক শোক। জুবিন গার্গ নেই। আমি আসামের নই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বাঙালি। এক বছরের বেশি সময় ধরে আসামের গুয়াহাটিতে থাকছি। এখানে রয়্যাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াই। কিন্তু এই শোক আমি টের পাচ্ছি। এই শোক সামান্য না। একে শুধু একজন গায়কের মৃত্যুজনিত শোক বলে দাগানো যাবে না। এ এক অদ্ভুত শূন্যতা। আমার চেনাজানা বহু মানুষ আজ প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর।
জুবিন গার্গ আসামের জাতীয় নায়ক। ভূপেন হাজারিকার অমন পর্বততুল্য অস্তিত্বের পরে একমাত্র জুবিন গার্গ নিজেকে ওই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। গতকাল জুবিনের মৃত্যুসংবাদ এল ভারতীয় সময় সোয়া তিনটে নাগাদ। আমাদের বিভাগে জরুরি একটা মিটিং চলছিল। হঠাৎই একজন সত্তরোর্ধ্ব অধ্যাপক গায়ক জুবিনের মৃত্যুসংবাদ দিলেন। সহকর্মীরা, বিশেষত যারা আমার বয়সী বা ত্রিশোর্ধ্ব, কেউই বিশ্বাস করেননি। আধঘণ্টা পর যখন নিশ্চিত হলাম, তাঁদের সবার শোকার্দ্র অভিব্যক্তি আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না।
খুব প্রিয়জন মারা গেলে যে শোক আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামায়, তেমনই শোক ছেয়ে গেল মুহূর্তে। গোটা ইউনিভার্সিটি জুড়ে শোক। দলে দলে অধ্যাপক, সহযোগী-সহকারী অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, কর্মী সবাই জড়ো হলো শোকজ্ঞাপন করতে। কী রকম শোকজ্ঞাপন? তাঁরা জুবিনের গান গাইতে লাগল। তাঁরা কাঁদল। জুবিনের মৃত্যুসংবাদ অস্বীকার করতে চাইল। তাঁরা জুবিনের গাওয়া গান নিজেরা গাইতে গাইতে হাউহাউ করে কাঁদল।
আমি টের পেলাম প্রকৃত অর্থে শোক কেমন সংক্রামক। বিভাগে ফিরে জুবিনের গান চলতে লাগল, সহকর্মীদের চোখে বাঁধভাঙা জল। বেশ কিছু অহমিয়া গানের মাঝে জুবিনের গাওয়া বাংলা গান ‘চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম’, ‘মন মানে না’ ইত্যাদি চালাতে বললাম। শেষে শুনলাম ‘ইয়া আলি’, বহু বহুবছর বাদে। উচ্চারণ আর কথাগুলো আবারও ধাক্কা দিল আগের মতোই!
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নিরাপত্তারক্ষীর মুখ ভার, মেঘের পরত। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে সহকর্মী অধ্যাপকসহ ছাত্রছাত্রীদের তো বটেই, পাড়ার মুদি এবং সবজিবিক্রেতার শোকাহত স্ট্যাটাস দেখলাম। একের পর এক ভিডিও এল—আসামের হাতিগাঁও, বেলতলা, চাঁদমারি, আদাবাড়িতে রাস্তার মোড়ে লোক নেমে এসেছে জুবিনের গান গাইতে গাইতে।
জুবিন গার্গ বলে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুতে ‘মায়াবিনী’ গানটি গাইতে, মনে রাখতে। এই গান অহমিয়া ও বাংলা, দুই ভাষাতেই গেয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় জড়ো হয়ে আলো জ্বেলে সবাই এই গান গাইছেন। অটোচালক, দোকানদার থেকে অফিসফেরত—সবাই সেই শোকমিছিলে শামিল। এই দৃশ্য অবর্ণনীয়। শুধু একজন গায়কের বিদায়জনিত শোক এ নয়, জুবিন তাঁদের হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আইকন হয়ে ওঠা মুখের কথা না। কিংবদন্তি হয়ে ওঠা সামান্য ব্যাপার না। অনেক মিথ, অনেক বিশ্বাস, অনেক আকাঙ্খা, অনেক ভরসা আর অনেকটা এলোমেলো উদ্যাপন, ‘জিন্দ্গি লম্বি ন্যহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে’ ওতঃপ্রোত জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। জুবিন গার্গের পরে আসামে এমন কেউ নেই। আর, পশ্চিম বাংলাতে? আমার বাংলায়? কে আছেন এমন? কে? কেন নেই? নাকি আমাদের সবারই
‘ইয়ে দিল ব্যন যায়ে পাত্থর কা
না ইসমে কোঈ হালচাল হো’।
লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক
সাত বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচ মানেই যেন বাড়তি রোমাঞ্চ, বাড়তি উত্তাপ। কোনো কোনো সময়ে সেই লড়াই হয়ে ওঠে বিব্রতকর, কখনো-বা তিক্ততায় ভরা। ২২ গজে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বৈরথ এখন আর স্রেফ মাঠের খেলা নয়, বরং একধরনের আবেগ আর ক্রিকেট নাটকীয়তার নতুন অধ্যায়।
২ ঘণ্টা আগেমানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অদ্ভূত বৈপরীত্য দেখা যায়—একটা সময় ছিল যখন পড়ার অভ্যাস চালু হওয়াটাকেই দেখা হতো সংকট হিসেবে। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস যেমন বই পড়ার অভ্যাসের কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা করতেন।
১১ ঘণ্টা আগেসালমান শাহ ছিলেন নব্বই দশকের তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণার নাম। স্মার্টনেস, আধুনিক মনন আর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তাঁকে তরুণদের আইকনে পরিণত করেছিল।
১ দিন আগেআজ গিটার-জাদুকর জিমি হেনড্রিক্সের মৃত্যুদিন। রক আইকন জিমির মৃত্যুদিনে আমরা ফিরে দেখব ১৯৬৭ সালের মন্টেরি পপ ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে তাঁর পারফরম্যান্সের দিকে। সেদিন কেন তিনি নিজের গিটারে আগুন ধরিয়েছিলেন? সেই মুহূর্তের ছবিকে আজও রক ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে মনে করা হয়।
২ দিন আগে