leadT1ad

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা কি কমেছে

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখনো একই নিরাপত্তা সংস্থা—পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও গোয়েন্দা ইউনিটগুলো—কোনো কাঠামোগত সংস্কার বা বাহ্যিক তদারকি ছাড়াই আগের মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

আল-জাজিরা এক্সপ্লেইনার
আল-জাজিরা এক্সপ্লেইনার

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। স্ট্রিম গ্রাফিক

২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অন্ধকার অধ্যায়ও শেষ হলো। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পরও সেই আশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচার, সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, হত্যার সংখ্যা কমলেও দায়মুক্তির সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের সময় ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ২ হাজার ৫৯৭ জন নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু ও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাগুলোই পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের বড় কারণ হয়ে ওঠে।

হত্যাকাণ্ড থামেনি

অধিকার-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের সময়েও অন্তত ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মী, ওয়ারেন্টবিহীন আটক ব্যক্তি, সন্দেহভাজন অপরাধী এবং সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। অনেককে গ্রেপ্তারের পর গুলিতে, হেফাজতে নির্যাতনে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না।’ তিনি ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট ইউনূস প্রশাসনের গঠিত গুম তদন্ত কমিশনেরও সদস্য। এই কমিশনের কাজ হলো আগের সরকারের গুমের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করা ও ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

অধ্যাপক ও সাবেক আমলাদের নিয়ে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার সবচেয়ে তীব্র সমালোচক। ইউনূস নিজেও ‘ভয়মুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখনো একই নিরাপত্তা সংস্থা—পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও গোয়েন্দা ইউনিটগুলো—কোনো কাঠামোগত সংস্কার বা বাহ্যিক তদারকি ছাড়াই আগের মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাউকে তুলে নিয়ে সেনা ক্যাম্প, র‍্যাব ক্যাম্প বা থানায় নিয়ে যায় এবং কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১৪ মাসের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে তিনজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—শুধু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যা বিচারবহির্ভূত হত্যার একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখায়।

ঢাকার মিরপুরে বিএনপির যুব সংগঠনের নেতা আসিফ শিকদারকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়, যা পরিবার ও দল উভয়েই অস্বীকার করে। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুসনদে লেখা হয়—‘অচেতন অবস্থায় আনা হয়েছে।’

একইভাবে কুমিল্লার ইটল্লা গ্রামে ৪০ বছর বয়সী বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলামকে গত ৩১ জানুয়ারি ভোরে সাদা পোশাকের সদস্যরা আটক করে। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকেও স্থানীয় হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং কোম্পানিতে কাজ করতেন। তিনি বাবার জানাজায় অংশ নিতে গ্রামে গিয়েছিলেন। রেখে গেছেন স্ত্রী ও চার কন্যা।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয় এবং সেনাবাহিনী বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়। ইউনূস প্রশাসনও একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়।

তৌহিদুলের মৃত্যুর বিষয়ে আল জাজিরার প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী জানান, ‘ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করে। তদন্ত শেষে সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপারিশ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

অধিকারের প্রতিবেদন কী দেখাচ্ছে

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১৪ মাসের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে তিনজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—শুধু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যা বিচারবহির্ভূত হত্যার একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৯ জনকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’, ১৪ জনকে নির্যাতনে এবং ৭ জনকে হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সাধারণত একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়—ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার, আইনি প্রক্রিয়া অমান্য করা এবং স্বাধীন তদন্তের অনুপস্থিতি।

ভোলায় চুরির অভিযোগে আটক নাজরুল ইসলাম ২০২৪ সালের আগস্টে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত হননি।

ঢাকার উপকণ্ঠ গাজীপুরে এ বছর শ্রমিক বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গার্মেন্টস শ্রমিক হাবিবুর রহমান নিহত হন বলে জানা যায়। এই মৃত্যুরও কোনো বিচারিক তদন্ত হয়নি।

অধিকারের অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন পরিচালক তাসকিন ফাহমিনা আল জাজিরাকে বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার ধারা অব্যাহত থাকাটা উদ্বেগজনক, তবে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত নয়। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরাধিকারের ফল।’

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল অনুমোদন করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।

অধিকারের অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন পরিচালক তাসকিন ফাহমিনা আল জাজিরাকে বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার ধারা অব্যাহত থাকাটা উদ্বেগজনক, তবে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত নয়। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরাধিকারের ফল।’

তিনি বলেন, ‘সংখ্যা আগের সরকারের তুলনায় কমেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এখনো একই বাহিনীর সদস্যরাই দায়িত্বে রয়েছেন, যারা পুরোনো ব্যবস্থার অংশ ছিলেন।’

তাঁর মতে, শেখ হাসিনার সময়ের মতো এখন হত্যাকাণ্ডগুলো আর কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আগে এসব ঘটনা ছিল পরিকল্পিত ও উচ্চ পর্যায় থেকে পরিচালিত। এখন গুমের মতো ঘটনার প্রমাণ আমরা পাইনি—এটি ইতিবাচক পরিবর্তন।’

তবে ফাহমিনা আরও উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিতে নিহত হন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এটি দেখায় যে, প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের সংস্কৃতি এখনো শেষ হয়নি’।

তাঁর মতে, সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভূমিকায় থাকায় তাদের পেশাদারিত্ব নষ্ট হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী এখনো রাস্তায় মোতায়েন রয়েছে।

ফাহমিনা বলেন, ‘সেনাবাহিনী নাগরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত নয়। দীর্ঘদিন মাঠে দায়িত্ব পালন তাদের শৃঙ্খলায় প্রভাব ফেলেছে।’

গত ৫ নভেম্বর সামরিক কার্যক্রম অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, সরকার সেনাবাহিনীকে ৫০ শতাংশ সদস্য মাঠ থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে।

আশা থেকে দ্বিধা ও ভয়ের পথে বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তির সংস্কৃতি গভীরভাবে শেকড় গেড়ে বসে। সমালোচকদের মতে, এই সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তোলে। ওই সময়ে হাজারো মানুষকে নিরাপত্তা বাহিনী গুম বা হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসিনার পতনকে অনেকে সেই যুগের ‘প্রতীকী অবসান’ হিসেবে দেখেছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহল তাঁর নেতৃত্বকে নৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখেছিলো। তাঁর উপদেষ্টারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—নিরাপত্তা খাতে সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং অতীত অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের নৈতিক প্রভাব এখনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে বাস্তবায়ন হয়নি।

গুম তদন্ত কমিশনের তথ্যমতে, শেখ হাসিনার সময়ে মোট ১ হাজার ৭৫২টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীকে গোপন আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন এবং এখনো ৩৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এসব ঘটনার জন্য র‍্যাব, পুলিশ ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। ডিজিএফআই ঐতিহ্যগতভাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে কাজ করত।

যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু সংস্থাটি এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তাসকিন ফাহমিনা বলেন যে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথ কেবল তখনই স্পষ্ট হবে, যখন আগামী বছরে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। তাঁর মতে, ‘আসল পরীক্ষা তখনই হবে—রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারগুলো অব্যাহত রাখবে, নাকি আগের ভুলগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে।’

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ইউনূস সরকারকে র‍্যাব ও জাতীয় টেলিযোগাযোগ নজরদারি কেন্দ্র (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এনটিএমসি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বেআইনি নজরদারির জন্য কুখ্যাত ছিল। একইসঙ্গে, ডিজিএফআইসহ অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কেবল সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে এসব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আগের সরকারের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

অক্টোবরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এদের মধ্যে ২৫ জন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তবে ডিজিএফআই-র শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ বাকি অভিযুক্তদের অবস্থান এখনো অজানা। মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।

ভুক্তভোগীদের পরিবার এই পদক্ষেপকে ন্যায়বিচারের দিকে বিলম্বিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে বর্ণনা করেছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিচার প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

নূর খান লিটন আল জাজিরাকে বলেন, ‘২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ কেউই একে অপরের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতার কারণে কেউই নিশ্চিত নয়, দেশ কোন পথে এগোচ্ছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর এক বিবৃতিতে পদ্ধতিগত নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, হেফাজতে বা অভিযানে মৃত্যু হলে তা ‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও প্রয়োজন হলে আইনি পদক্ষেপের আওতায় আসে।’

আল জাজিরা অন্তর্বর্তী সরকারের মিডিয়া দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পায়নি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কেবল আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে গঠিত নির্বাচিত সরকারই নিরাপত্তা বাহিনীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারে। তাঁর মতে, ‘নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ না থাকায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জবাবদিহির বাইরে চলছে।’

তাঁর মতে, ‘জনপ্রতিনিধি বা নির্বাচিত তদারকি ব্যবস্থা না থাকলে প্রশাসন, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক নির্দেশনাকে গুরুত্ব দেয় না। তারা নিজেদের মতো কাজ করে। নির্বাচিত সরকার, সংসদ ও প্রতিনিধি ফিরে এলে জবাবদিহিতা ফিরবে। নির্বাচিত ব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।’

তবে ইতিহাস বলছে, বাস্তবতা এত সহজ নয়। নূর খান লিটন বলেন, ‘২০০৪ সালেও আমরা র‍্যাবের হাতে একই ধরনের “ক্রসফায়ার”-এর ঘটনা দেখেছি।’ ওই সময় র‍্যাব গঠন করেছিলো তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।

তাসকিন ফাহমিনা বলেন যে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথ কেবল তখনই স্পষ্ট হবে, যখন আগামী বছরে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। তাঁর মতে, ‘আসল পরীক্ষা তখনই হবে—রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারগুলো অব্যাহত রাখবে, নাকি আগের ভুলগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত