মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি আশাবাদ ও সংশয়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যার ফলে শান্তির পথ খুলবে? নাকি পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলোর মতোই ব্যর্থ হবে?
স্ট্রিম ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় ইসরায়েলের দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করতে ২০ দফার একটি প্রস্তাব ঘোষণা করেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো— হামাসের হাতে আটক সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা, যুদ্ধবিরতি এবং গাজার পুনর্গঠন ও প্রশাসনের ভিত্তি তৈরি করা। হামাস গত শুক্রবার প্রস্তাবটি মেনে নেয় তবে কিছু ধারা নিয়ে আলোচনার কথা বলে। এতে ট্রাম্প শনিবার সকালে ইসরায়েলকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে বলেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল প্রস্তাবটি মেনে নেওয়ার কথা বললেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি। শনিবারও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এই প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনাটি আশাবাদ ও সংশয়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ফলে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি সত্যিই ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যার ফলে শান্তির পথ খুলবে? নাকি পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলোর মতোই ব্যর্থ হবে?
এমন এক সময়ে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এসেছে যখন গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে তাদের অবস্থান সমালোচনার মুখে। জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় অনেক দেশের প্রতিনিধিরাই হল ত্যাগ করেন। এতে ওয়াশিংটনের একক সমর্থনের কারণে বিশ্বমঞ্চে বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট হয়েছে। তাই এবার তিনি বড় ধরনের রূপান্তরের বদলে যুদ্ধ থামানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের আরব-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে নতুন উদ্দেশ্য ও আন্তরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেখা গেছে। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন পক্ষপাতের চিহ্ন রয়ে গেছে, তবুও আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো প্রাথমিকভাবে এটি গ্রহণ করেছে। অবশ্য তাদের মধ্যে শর্ত, প্রশ্ন ও সংশয়ও আছে। তবুও এ প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রকৃত আগ্রহ প্রকাশ করে।’
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাও গাজার চলমান যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে— ট্রাম্পের পশ্চিম তীর দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান, যা সরাসরি নেতানিয়াহু ও তার সরকারের দীর্ঘদিনের এজেন্ডার মুখে চপেটাঘাত। এছাড়া কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া, যা শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। আর গাজা নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই পরিকল্পনাটিও আগের মার্কিন প্রস্তাবগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সব মিলিয়ে এগুলো ওয়াশিংটনের নীতিতে নতুন পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
আগের মার্কিন উদ্যোগগুলো নানা কারণে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। এ বছরের শুরুর এক পরিকল্পনায় দেখা যায় গাজা দখল করে সরাসরি মার্কিন শাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা। এতে গাজার জনগণকে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনাও ছিল। লক্ষ্য ছিল গাজাকে কথিত ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’তে রূপান্তর করা।
হোয়াইট হাউসের আরেক প্রস্তাবে গাজাকে ‘স্মার্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বানানোর কথা বলা হয়। সেখানে পুনর্গঠনের সময় আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে মানুষকে ‘স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনে’ উৎসাহিত করার পরিকল্পনা ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য মার্কিন উদ্যোগ কেবল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, স্বল্পমেয়াদি বিরতি ও বন্দি বিনিময়ে সীমিত ছিল। যুদ্ধ বন্ধের মূল প্রক্রিয়া নিয়ে সেসব প্রস্তাবে কোনো গুরুত্ব দেখা যায়নি।
মার্কিন অবস্থান বারবার ‘অস্থায়ী প্রস্তাব’ ও ‘স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন’-এর মধ্যে দোদুল্যমান থেকেছে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এর কারণ ছিল গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই যুদ্ধের তীব্র প্রত্যাখ্যান।
বিষয়ের অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘এর বিপরীতে, ট্রাম্পের এবারের পরিকল্পনা আরও সমন্বিত রূপে হাজির হয়েছে। এটি শুধু যুদ্ধ শেষ করার শর্ত নয়, বরং পরবর্তী ব্যবস্থাপনাও অন্তর্ভুক্ত করেছে। নতুন প্রস্তাবে গাজার জনগণকে স্থানচ্যুত করা বা গাজায় সরাসরি মার্কিন প্রশাসন বসানোর কোনো উল্লেখ নেই। এতে তুলনামূলকভাবে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।’
এছাড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সংস্কারের পর গাজার প্রশাসন শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এটি সরাসরি নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। কারণ তার অবস্থান হলো—গাজায় না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, না হামাস—কারোরই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয় এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো সম্ভাবনাকে রোধ করা।
তবে সময়সূচির অনুপস্থিতি, ‘পিস কাউন্সিল’-এর অস্পষ্টতা এবং শর্তযুক্ত ভাষা ইসরায়েলের জন্য সুযোগ রেখে দিয়েছে। তাই এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোপুরি নীতি পরিবর্তন বলা কঠিন।
কিন্তু প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর এবারই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই সীমিত বিকল্পের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলে দুই পক্ষেরই ক্ষতি বাড়বে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে। এতে অনেক অস্পষ্টতা আছে। ‘পিস কাউন্সিল’ সম্পর্কে কোনো বিবরণ নেই—এর কাঠামো বা ক্ষমতা কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। পরিকল্পনায় কোনো মানচিত্র নেই, নেই ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি। গাজার শাসনব্যবস্থা কেমন হবে সে দিকেও অস্পষ্টতা আছে। এ কারণেই পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছেও এটি অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। ফলে পরিকল্পনাটি সতর্ক সমর্থন পেয়েছে। কেউ কেউ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করেছে এবং গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তথাপি এটি শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার নতুন ভিত্তি হতে পারে।
অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘যদিও ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি স্বপ্ন বা বৃহত্তর আরব-পশ্চিমা প্রত্যাশা পূরণ করে না, তবুও এটিকে শান্তির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ায় এর দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে, তবে উন্নতির পথও ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন জরুরি মানবিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই এই কাঠামোয় দৃঢ়ভাবে যুক্ত হতে হবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনাটিকে আঞ্চলিক কূটনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে, যা নিউইয়র্ক সম্মেলনে প্রতিফলিত হয়েছে। জার্মানি স্পষ্ট পদক্ষেপ ও কার্যকর ব্যবস্থা চেয়েছে। বিশেষ করে ‘পিস কাউন্সিল’ বিষয়ে তাদের অস্বস্তি প্রকাশ পেয়েছে। স্পেন পরিকল্পনাটিকে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এতে ট্রাম্প যে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বশাসনের কথা বলেছেন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য ভূমিকা রেখেছেন, সেটিকে আরও শক্তিশালী কাঠামোয় রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। সব প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিকল্পনাটিকে উন্নত করার কিছু দিক স্পষ্ট হয়েছে— স্বচ্ছতা, কার্যকর সময়সীমা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনভিত্তিক ফিলিস্তিনি আত্মনিয়ন্ত্রণের দৃষ্টি।’
এ ছাড়া ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও নিউইয়র্ক ঘোষণার মধ্যে মিলও রয়েছে। ঘোষণাটি সৌদি আরব, ফ্রান্স ও জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য সমর্থন করেছে। দুটি দলিলই যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। তবে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিকে আলোচনার ওপর নির্ভরশীল করেছেন। অন্যদিকে নিউইয়র্ক ঘোষণা যুদ্ধের তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী অবসান দাবি করেছে। ট্রাম্প ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। নিউইয়র্ক ঘোষণায় পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের দাবি আছে। ট্রাম্প কোনো স্পষ্ট সময়সূচি দেননি, অথচ ঘোষণায় বাধ্যতামূলক সময়সীমা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। উভয় প্রস্তাবেই বন্দি বিনিময় ও হামাসের ভবিষ্যত প্রসঙ্গ আছে, তবে ট্রাম্পের অবস্থান অস্পষ্ট, ঘোষণায় শর্তগুলো স্পষ্ট।
ট্রাম্প তার প্রস্তাবে মধ্যবর্তী সময়ে নিজের তত্ত্বাবধানে শাসনের কথা বলেছেন। ঘোষণায় জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রস্তাব আছে। পশ্চিম তীর দখল না করার ট্রাম্পের অবস্থানও নিউইয়র্ক ঘোষণার দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে আংশিক মিল রেখেছে। আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি এসব বিষয়ে তুলনামূলক বাস্তবধর্মী। তবে ব্যবধান অতিক্রম করা অসম্ভব নয়, আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা যেতে পারে।
ড. সানিয়া ফয়সাল বলেন, ‘তবে কেউ যেন ট্রাম্পের প্রস্তাবকে বড় সাফল্য মনে না করেন। এটি ফিলিস্তিনিদের আশা পূরণ করে না। যুদ্ধ চক্র শেষ হওয়ার নিশ্চয়তাও দেয় না। অবশ্য এতে কিছু ইতিবাচক দিক আছে, যেগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। একই সঙ্গে এখন এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে যে, ওয়াশিংটনও মনে করছে যুদ্ধ শেষ হওয়া দরকার। এখন দেখা যাবে, সব পক্ষ প্রস্তাব মেনে নিলে এটি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হয়। ট্রাম্পের মত পরিবর্তনের প্রবণতা, নেতানিয়াহুর গোপন উদ্দেশ্য এবং বাস্তব জটিলতা—সব মিলিয়ে বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা সময়ই বলে দেবে।’
সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা ছাড়া এ পরিকল্পনা ‘ফাঁকা কথা’ হয়ে যেতে পারে। বড় বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে—কোন ক্রমে কী হবে (যেমন নিরস্ত্রীকরণ আগে, নাকি সেনা প্রত্যাহার আগে), অব্যাহত হামলা থেকে তৈরি অবিশ্বাস, এবং গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের দায়বদ্ধতা নিয়ে নীরবতা, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলো গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। হামাস বাইরের তত্ত্বাবধান মেনে নিতে রাজি নয়। নেতানিয়াহুর আপত্তিও অগ্রগতিকে আটকে দিতে পারে।
আগের অনেক উদ্যোগও অবিশ্বাস ও চরমপন্থার কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তা ব্যর্থ হতে পারে যদি না কাতার ও মিশরের মতো মধ্যস্থতাকারীরা ফাঁকগুলো পূরণে ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্ক ঘোষণার কঠোর শর্তাবলীর সঙ্গে মিলিয়ে নিলে পরিকল্পনাটি আরও কার্যকর হতে পারে। এতে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা ও বাধ্যতামূলক সময়সীমা যুক্ত করা সম্ভব হবে।
যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে এ পরিকল্পনায় জিম্মিদের ফেরত পাওয়া, বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়া ও পুনর্গঠনের পথ তৈরি হতে পারে। এতে ট্রাম্পের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ ধারণা সফল প্রমাণিত হতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। কিন্তু ব্যর্থ হলে সহিংসতা আরও বাড়বে। ট্রাম্প যেমন হুমকি দিয়েছেন, তাতে দোষারোপ বাড়বে এবং ন্যায়বিচার ছাড়াই দখলদারিত্ব চলবে।
তবে এখন ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের জন্যই বিকল্প সীমিত। আর যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের ওপর প্রভাব অতুলনীয়। তাই এই ‘ভঙ্গুর সুযোগ’ পুরোপুরি নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। ফিলিস্তিনিদের জন্য এতে কিছুটা স্বস্তি আছে, তবে সার্বভৌমত্ব নেই। বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক পরীক্ষা— কূটনীতি কি ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে? কঠিন কাজ এখনো বাকি— যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা গড়ে তোলা। সেটি সম্ভব হতে পারে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, নিউইয়র্ক ঘোষণা, বা উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে। বিশ্ব এখন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সূত্র: আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর, মিডল ইস্ট আই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় ইসরায়েলের দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করতে ২০ দফার একটি প্রস্তাব ঘোষণা করেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো— হামাসের হাতে আটক সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা, যুদ্ধবিরতি এবং গাজার পুনর্গঠন ও প্রশাসনের ভিত্তি তৈরি করা। হামাস গত শুক্রবার প্রস্তাবটি মেনে নেয় তবে কিছু ধারা নিয়ে আলোচনার কথা বলে। এতে ট্রাম্প শনিবার সকালে ইসরায়েলকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে বলেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল প্রস্তাবটি মেনে নেওয়ার কথা বললেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি। শনিবারও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এই প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনাটি আশাবাদ ও সংশয়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ফলে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি সত্যিই ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যার ফলে শান্তির পথ খুলবে? নাকি পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলোর মতোই ব্যর্থ হবে?
এমন এক সময়ে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এসেছে যখন গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে তাদের অবস্থান সমালোচনার মুখে। জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় অনেক দেশের প্রতিনিধিরাই হল ত্যাগ করেন। এতে ওয়াশিংটনের একক সমর্থনের কারণে বিশ্বমঞ্চে বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট হয়েছে। তাই এবার তিনি বড় ধরনের রূপান্তরের বদলে যুদ্ধ থামানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের আরব-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে নতুন উদ্দেশ্য ও আন্তরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেখা গেছে। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন পক্ষপাতের চিহ্ন রয়ে গেছে, তবুও আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো প্রাথমিকভাবে এটি গ্রহণ করেছে। অবশ্য তাদের মধ্যে শর্ত, প্রশ্ন ও সংশয়ও আছে। তবুও এ প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রকৃত আগ্রহ প্রকাশ করে।’
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাও গাজার চলমান যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে— ট্রাম্পের পশ্চিম তীর দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান, যা সরাসরি নেতানিয়াহু ও তার সরকারের দীর্ঘদিনের এজেন্ডার মুখে চপেটাঘাত। এছাড়া কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া, যা শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। আর গাজা নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই পরিকল্পনাটিও আগের মার্কিন প্রস্তাবগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সব মিলিয়ে এগুলো ওয়াশিংটনের নীতিতে নতুন পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
আগের মার্কিন উদ্যোগগুলো নানা কারণে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। এ বছরের শুরুর এক পরিকল্পনায় দেখা যায় গাজা দখল করে সরাসরি মার্কিন শাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা। এতে গাজার জনগণকে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনাও ছিল। লক্ষ্য ছিল গাজাকে কথিত ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’তে রূপান্তর করা।
হোয়াইট হাউসের আরেক প্রস্তাবে গাজাকে ‘স্মার্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বানানোর কথা বলা হয়। সেখানে পুনর্গঠনের সময় আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে মানুষকে ‘স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনে’ উৎসাহিত করার পরিকল্পনা ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য মার্কিন উদ্যোগ কেবল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, স্বল্পমেয়াদি বিরতি ও বন্দি বিনিময়ে সীমিত ছিল। যুদ্ধ বন্ধের মূল প্রক্রিয়া নিয়ে সেসব প্রস্তাবে কোনো গুরুত্ব দেখা যায়নি।
মার্কিন অবস্থান বারবার ‘অস্থায়ী প্রস্তাব’ ও ‘স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন’-এর মধ্যে দোদুল্যমান থেকেছে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এর কারণ ছিল গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই যুদ্ধের তীব্র প্রত্যাখ্যান।
বিষয়ের অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘এর বিপরীতে, ট্রাম্পের এবারের পরিকল্পনা আরও সমন্বিত রূপে হাজির হয়েছে। এটি শুধু যুদ্ধ শেষ করার শর্ত নয়, বরং পরবর্তী ব্যবস্থাপনাও অন্তর্ভুক্ত করেছে। নতুন প্রস্তাবে গাজার জনগণকে স্থানচ্যুত করা বা গাজায় সরাসরি মার্কিন প্রশাসন বসানোর কোনো উল্লেখ নেই। এতে তুলনামূলকভাবে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।’
এছাড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সংস্কারের পর গাজার প্রশাসন শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এটি সরাসরি নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। কারণ তার অবস্থান হলো—গাজায় না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, না হামাস—কারোরই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয় এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো সম্ভাবনাকে রোধ করা।
তবে সময়সূচির অনুপস্থিতি, ‘পিস কাউন্সিল’-এর অস্পষ্টতা এবং শর্তযুক্ত ভাষা ইসরায়েলের জন্য সুযোগ রেখে দিয়েছে। তাই এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোপুরি নীতি পরিবর্তন বলা কঠিন।
কিন্তু প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর এবারই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই সীমিত বিকল্পের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলে দুই পক্ষেরই ক্ষতি বাড়বে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে। এতে অনেক অস্পষ্টতা আছে। ‘পিস কাউন্সিল’ সম্পর্কে কোনো বিবরণ নেই—এর কাঠামো বা ক্ষমতা কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। পরিকল্পনায় কোনো মানচিত্র নেই, নেই ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি। গাজার শাসনব্যবস্থা কেমন হবে সে দিকেও অস্পষ্টতা আছে। এ কারণেই পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছেও এটি অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। ফলে পরিকল্পনাটি সতর্ক সমর্থন পেয়েছে। কেউ কেউ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করেছে এবং গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তথাপি এটি শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার নতুন ভিত্তি হতে পারে।
অধ্যাপক ড. সানিয়া ফয়সাল এল-হুসেইনি বলেন, ‘যদিও ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি স্বপ্ন বা বৃহত্তর আরব-পশ্চিমা প্রত্যাশা পূরণ করে না, তবুও এটিকে শান্তির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ায় এর দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে, তবে উন্নতির পথও ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন জরুরি মানবিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই এই কাঠামোয় দৃঢ়ভাবে যুক্ত হতে হবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনাটিকে আঞ্চলিক কূটনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে, যা নিউইয়র্ক সম্মেলনে প্রতিফলিত হয়েছে। জার্মানি স্পষ্ট পদক্ষেপ ও কার্যকর ব্যবস্থা চেয়েছে। বিশেষ করে ‘পিস কাউন্সিল’ বিষয়ে তাদের অস্বস্তি প্রকাশ পেয়েছে। স্পেন পরিকল্পনাটিকে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এতে ট্রাম্প যে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বশাসনের কথা বলেছেন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য ভূমিকা রেখেছেন, সেটিকে আরও শক্তিশালী কাঠামোয় রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। সব প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিকল্পনাটিকে উন্নত করার কিছু দিক স্পষ্ট হয়েছে— স্বচ্ছতা, কার্যকর সময়সীমা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনভিত্তিক ফিলিস্তিনি আত্মনিয়ন্ত্রণের দৃষ্টি।’
এ ছাড়া ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও নিউইয়র্ক ঘোষণার মধ্যে মিলও রয়েছে। ঘোষণাটি সৌদি আরব, ফ্রান্স ও জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য সমর্থন করেছে। দুটি দলিলই যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। তবে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিকে আলোচনার ওপর নির্ভরশীল করেছেন। অন্যদিকে নিউইয়র্ক ঘোষণা যুদ্ধের তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী অবসান দাবি করেছে। ট্রাম্প ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। নিউইয়র্ক ঘোষণায় পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের দাবি আছে। ট্রাম্প কোনো স্পষ্ট সময়সূচি দেননি, অথচ ঘোষণায় বাধ্যতামূলক সময়সীমা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। উভয় প্রস্তাবেই বন্দি বিনিময় ও হামাসের ভবিষ্যত প্রসঙ্গ আছে, তবে ট্রাম্পের অবস্থান অস্পষ্ট, ঘোষণায় শর্তগুলো স্পষ্ট।
ট্রাম্প তার প্রস্তাবে মধ্যবর্তী সময়ে নিজের তত্ত্বাবধানে শাসনের কথা বলেছেন। ঘোষণায় জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রস্তাব আছে। পশ্চিম তীর দখল না করার ট্রাম্পের অবস্থানও নিউইয়র্ক ঘোষণার দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে আংশিক মিল রেখেছে। আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি এসব বিষয়ে তুলনামূলক বাস্তবধর্মী। তবে ব্যবধান অতিক্রম করা অসম্ভব নয়, আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা যেতে পারে।
ড. সানিয়া ফয়সাল বলেন, ‘তবে কেউ যেন ট্রাম্পের প্রস্তাবকে বড় সাফল্য মনে না করেন। এটি ফিলিস্তিনিদের আশা পূরণ করে না। যুদ্ধ চক্র শেষ হওয়ার নিশ্চয়তাও দেয় না। অবশ্য এতে কিছু ইতিবাচক দিক আছে, যেগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। একই সঙ্গে এখন এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে যে, ওয়াশিংটনও মনে করছে যুদ্ধ শেষ হওয়া দরকার। এখন দেখা যাবে, সব পক্ষ প্রস্তাব মেনে নিলে এটি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হয়। ট্রাম্পের মত পরিবর্তনের প্রবণতা, নেতানিয়াহুর গোপন উদ্দেশ্য এবং বাস্তব জটিলতা—সব মিলিয়ে বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা সময়ই বলে দেবে।’
সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা ছাড়া এ পরিকল্পনা ‘ফাঁকা কথা’ হয়ে যেতে পারে। বড় বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে—কোন ক্রমে কী হবে (যেমন নিরস্ত্রীকরণ আগে, নাকি সেনা প্রত্যাহার আগে), অব্যাহত হামলা থেকে তৈরি অবিশ্বাস, এবং গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের দায়বদ্ধতা নিয়ে নীরবতা, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলো গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। হামাস বাইরের তত্ত্বাবধান মেনে নিতে রাজি নয়। নেতানিয়াহুর আপত্তিও অগ্রগতিকে আটকে দিতে পারে।
আগের অনেক উদ্যোগও অবিশ্বাস ও চরমপন্থার কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তা ব্যর্থ হতে পারে যদি না কাতার ও মিশরের মতো মধ্যস্থতাকারীরা ফাঁকগুলো পূরণে ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্ক ঘোষণার কঠোর শর্তাবলীর সঙ্গে মিলিয়ে নিলে পরিকল্পনাটি আরও কার্যকর হতে পারে। এতে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা ও বাধ্যতামূলক সময়সীমা যুক্ত করা সম্ভব হবে।
যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে এ পরিকল্পনায় জিম্মিদের ফেরত পাওয়া, বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়া ও পুনর্গঠনের পথ তৈরি হতে পারে। এতে ট্রাম্পের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ ধারণা সফল প্রমাণিত হতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। কিন্তু ব্যর্থ হলে সহিংসতা আরও বাড়বে। ট্রাম্প যেমন হুমকি দিয়েছেন, তাতে দোষারোপ বাড়বে এবং ন্যায়বিচার ছাড়াই দখলদারিত্ব চলবে।
তবে এখন ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের জন্যই বিকল্প সীমিত। আর যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের ওপর প্রভাব অতুলনীয়। তাই এই ‘ভঙ্গুর সুযোগ’ পুরোপুরি নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। ফিলিস্তিনিদের জন্য এতে কিছুটা স্বস্তি আছে, তবে সার্বভৌমত্ব নেই। বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক পরীক্ষা— কূটনীতি কি ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে? কঠিন কাজ এখনো বাকি— যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা গড়ে তোলা। সেটি সম্ভব হতে পারে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, নিউইয়র্ক ঘোষণা, বা উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে। বিশ্ব এখন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সূত্র: আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর, মিডল ইস্ট আই
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নিতে হামাসকে রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সময়ের মধ্যে হামাস একটি চুক্তি মেনে নিলে গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে।
১ দিন আগেযুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে ইয়োম কিপ্পুর প্রার্থনার সময় হামলায় দুজন ইহুদি নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। পুলিশ এটিকে ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছে। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা দ্রুত নিন্দা জানিয়েছেন।
১ দিন আগেপাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তবে অ্যাকটিভিস্টদের দাবি ৩ পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা ১৫ জন। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এই অস্থিরতা চলছে।
২ দিন আগেপবিত্র ঈদে-মিলাদুন্নবী (সা.)-এর আগের দিন রাস্তার প্রবেশমুখে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা একটি লাইটবোর্ড বসানো হয়। এই বোর্ড ঘিরেই শুরু হয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন আপত্তি জানান। তাঁরা এটাকে নতুন চল বলে দাবি করেন। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন হয়।
২ দিন আগে