স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে (উপাসনালয়) ইয়োম কিপ্পুর প্রার্থনার সময় হামলায় দুজন ইহুদি নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। এটিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে ঘোষণা করেছে দেশটির পুলিশ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন। এই ঘটনা ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ঘৃণা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে এখনো কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়নি। দুই সম্প্রদায়ের নেতারা একসঙ্গে বিভাজন ও উত্তেজনা এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
কী ঘটেছে
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে, ৩৫ বছর বয়সী জিহাদ আল-শামি নামের এক ব্যক্তি ক্রাম্পসালে হিটন পার্ক হিব্রু কংগ্রিগেশনের বাইরে প্রার্থনার জন্য জড়ো হওয়া ইহুদিদের ওপর একটি গাড়ি উঠিয়ে দেন। এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতও করেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সশস্ত্র পুলিশ সাত মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ প্রথমে হামলাকারীকে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয়। কিন্তু না মানায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলকারী একটি নকল বিস্ফোরক জ্যাকেট পরেছিলেন, যা পরে বোমা বিশেষজ্ঞরা নিরাপদ বলে নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলকে বিশৃঙ্খলা ও সাহসিকতার মিশ্র দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ৪২ বছর বয়সী ডেলিভারি ড্রাইভার টম হ্যারিসন জানান, তিনি চিৎকার শুনে দেখেন একটি গাড়ি সিনাগগের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি ছুরি হাতে গাড়ি থেকে বের হন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি ছিল এক দুঃস্বপ্নের মতো।’ হ্যারিসন সিনাগগের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, তারা হামলাকারীকে আটকানোর কারণেই সিনাগগের ভেতরে গণহারে হত্যার মতো ভয়াবহ কোনও ঘটনা ঘটেনি।
নিহতরা হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এড্রিয়ান ডলবি (৫৩) এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সিনাগগের সক্রিয় সদস্য মেলভিন ক্রাভিটজ (৬৬)। আহত তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ পেটে ছুরির আঘাতে, একজন নারী গাড়ি ধাক্কায় এবং আরেকজন সম্ভবত বিশৃঙ্খলার মধ্যে আহত হন। তারা সবাই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ হামলাকারীর তিনজন সহযোগীকেও (একজন ৬০ বছরের নারী ও দুজনের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি পুরুষ) সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতির সন্দেহে গ্রেফতার করেছে। এটিকে বড় কোনো হামলার ‘সম্ভাব্য পরিকল্পনা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কেন এই হামলা: ইহুদিবিদ্বেষ কি বাড়ছে
পুলিশ ঘটনাটিকে ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকরাও বলেন, হামলাটি হয়েছে ইয়ম কিপ্পুরে, যা ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনার দিন। এতে প্রচুর মানুষ অংশ নেয়। এটিকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে যে ইহুদিদের মধ্যে ভয় ছড়াতেই হামলাটি চালানো হয়।

নিহত হামলাকারী সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আল-শামি ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি শিশু বয়সে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং ২০০৬ সালে নাগরিকত্ব পান। তার বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো সন্ত্রাসবিরোধী মামলা ছিল না। তবে পুলিশ তার অনলাইন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য চরমপন্থী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া তদন্ত করছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এ ধরনের ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫০০-র বেশি ঘটনা ঘটেছে, যা অতীতের রেকর্ডের চেয়ে ৮৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রভাব পড়েছে এতে।
কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরুতে এমন ১ হাজার ৫২১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে হামলা এবং ভাঙচুরও ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত ঘৃণামূলক উত্তেজক বক্তব্য এ ধরনের সহিংসতাকে বাড়িয়ে তুলছে। তবে ইসলামিক স্টেট বা অনুরূপ কোনও সংগঠনের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেন, ‘ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পবিত্র দিনে এই হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা বেড়ে চলা ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা করব।’ হামলার সময় তিনি ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ডেনমার্কের কোপেনগেনে ছিলেন। তবে সম্মেলনে না গিয়ে তিনি কোব্রা নিরাপত্তা সভা আহ্বান করেন। ইহুদি স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের আদেশ দেন।

রাজা তৃতীয় চার্লস এক বিরল ব্যক্তিগত বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় ‘গভীরভাবে বিস্মিত ও মর্মাহত।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে হামলার সময়টির কারণে এটি আরও দুঃখজনক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কুপার একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন। বিরোধী দলীয় (কনজারভেটিভ) নেতা কেমি বাডেনক একে ‘জঘন্য ও ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে ঘৃণাজনিত অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে বলেছেন, দেশটিতে ‘ব্যাপক ইহুদিবিদ্বেষ’ চলতে দেওয়া হয়েছে। তিনি কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও করেছেন।
নতুন সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি হচ্ছে কি
হামলার ফলে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। রাবি জনাথন রোমেইন একে ‘ইহুদিদের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এখনো ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে নতুন কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের লক্ষণ দেখা যায়নি।
ব্রিটেন মুসলিম কাউন্সিলের নেতারা এই হামলার বিরুদ্ধে দ্রুত নিন্দা জানিয়েছেন। তারা এটিকে ইয়ম কিপ্পুরে ‘দুঃখজনক’ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং যৌথ মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেন। স্থানীয় ইমাম ক্বারি আসিম আসিম বলেন, ‘এই ঘৃণার কোনো স্থান নেই— আমরা আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীদের পাশে আছি।’

ক্রাম্পসালের স্থানীয় বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জাকি বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখি। গাজা সম্পর্কিত উত্তেজনা থাকলেও আমরা একত্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি।’ তার মতে, প্রতিবেশীমূলক সম্পর্ক এখনও ভালো, যদিও গাজা সংক্রান্ত উত্তেজনা চরমপন্থীদের উস্কে দিতে পারে।
ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শহরের বহুসংস্কৃতির মধ্যে সম্প্রীতিমূলক পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু কিছু অনলাইন প্রতিক্রিয়া ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছে। চরমপন্থী কিছু কণ্ঠ সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলার দোষ চাপাচ্ছে, যা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চরমপন্থীরা অনলাইন পোস্টে মুসলিমদের সমালোচনা করছে, যা ২০২৪ সালের ইসলামবিদ্বেষে বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

ব্রিটেনের রাব্বিনিক কোর্টের প্রধান রাব্বি জনাথন রোমেইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘৃণা বাড়ছে, কিন্তু আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার সংকল্পও ততটাই বাড়ছে।’ তিনি ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় ঘৃণার ক্রমবর্ধমান স্রোতের’ সঙ্গে যুক্ত করেন, তবে একইসঙ্গে সংহতির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো এ পরিস্থিতি ব্যবহার করে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা উসকে দিতে পারে। ২০২৪ সালে গ্রীষ্মে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি রয়েছে।
ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শিক্ষা সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসের চেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক ঘটনা ঘটেছে।
তবুও ম্যানচেস্টারের ইতিহাস আশা জাগায়। এরিনা হামলার পর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘৃণা-বিরোধী প্রচারণায় শহরটি ঐক্যের নজির স্থাপন করেছে। এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এক ধর্মের ওপর আক্রমণ মানে সব ধর্মের ওপর আক্রমণ— এখন সেতু গড়ার সময়, দেয়াল তোলার নয়।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে (উপাসনালয়) ইয়োম কিপ্পুর প্রার্থনার সময় হামলায় দুজন ইহুদি নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। এটিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে ঘোষণা করেছে দেশটির পুলিশ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন। এই ঘটনা ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ঘৃণা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে এখনো কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়নি। দুই সম্প্রদায়ের নেতারা একসঙ্গে বিভাজন ও উত্তেজনা এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
কী ঘটেছে
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে, ৩৫ বছর বয়সী জিহাদ আল-শামি নামের এক ব্যক্তি ক্রাম্পসালে হিটন পার্ক হিব্রু কংগ্রিগেশনের বাইরে প্রার্থনার জন্য জড়ো হওয়া ইহুদিদের ওপর একটি গাড়ি উঠিয়ে দেন। এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতও করেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সশস্ত্র পুলিশ সাত মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ প্রথমে হামলাকারীকে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয়। কিন্তু না মানায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলকারী একটি নকল বিস্ফোরক জ্যাকেট পরেছিলেন, যা পরে বোমা বিশেষজ্ঞরা নিরাপদ বলে নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলকে বিশৃঙ্খলা ও সাহসিকতার মিশ্র দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ৪২ বছর বয়সী ডেলিভারি ড্রাইভার টম হ্যারিসন জানান, তিনি চিৎকার শুনে দেখেন একটি গাড়ি সিনাগগের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি ছুরি হাতে গাড়ি থেকে বের হন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি ছিল এক দুঃস্বপ্নের মতো।’ হ্যারিসন সিনাগগের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, তারা হামলাকারীকে আটকানোর কারণেই সিনাগগের ভেতরে গণহারে হত্যার মতো ভয়াবহ কোনও ঘটনা ঘটেনি।
নিহতরা হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এড্রিয়ান ডলবি (৫৩) এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সিনাগগের সক্রিয় সদস্য মেলভিন ক্রাভিটজ (৬৬)। আহত তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ পেটে ছুরির আঘাতে, একজন নারী গাড়ি ধাক্কায় এবং আরেকজন সম্ভবত বিশৃঙ্খলার মধ্যে আহত হন। তারা সবাই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ হামলাকারীর তিনজন সহযোগীকেও (একজন ৬০ বছরের নারী ও দুজনের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি পুরুষ) সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতির সন্দেহে গ্রেফতার করেছে। এটিকে বড় কোনো হামলার ‘সম্ভাব্য পরিকল্পনা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কেন এই হামলা: ইহুদিবিদ্বেষ কি বাড়ছে
পুলিশ ঘটনাটিকে ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকরাও বলেন, হামলাটি হয়েছে ইয়ম কিপ্পুরে, যা ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনার দিন। এতে প্রচুর মানুষ অংশ নেয়। এটিকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে যে ইহুদিদের মধ্যে ভয় ছড়াতেই হামলাটি চালানো হয়।

নিহত হামলাকারী সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আল-শামি ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি শিশু বয়সে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং ২০০৬ সালে নাগরিকত্ব পান। তার বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো সন্ত্রাসবিরোধী মামলা ছিল না। তবে পুলিশ তার অনলাইন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য চরমপন্থী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া তদন্ত করছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এ ধরনের ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫০০-র বেশি ঘটনা ঘটেছে, যা অতীতের রেকর্ডের চেয়ে ৮৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রভাব পড়েছে এতে।
কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরুতে এমন ১ হাজার ৫২১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে হামলা এবং ভাঙচুরও ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত ঘৃণামূলক উত্তেজক বক্তব্য এ ধরনের সহিংসতাকে বাড়িয়ে তুলছে। তবে ইসলামিক স্টেট বা অনুরূপ কোনও সংগঠনের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেন, ‘ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পবিত্র দিনে এই হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা বেড়ে চলা ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা করব।’ হামলার সময় তিনি ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ডেনমার্কের কোপেনগেনে ছিলেন। তবে সম্মেলনে না গিয়ে তিনি কোব্রা নিরাপত্তা সভা আহ্বান করেন। ইহুদি স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের আদেশ দেন।

রাজা তৃতীয় চার্লস এক বিরল ব্যক্তিগত বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় ‘গভীরভাবে বিস্মিত ও মর্মাহত।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে হামলার সময়টির কারণে এটি আরও দুঃখজনক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কুপার একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন। বিরোধী দলীয় (কনজারভেটিভ) নেতা কেমি বাডেনক একে ‘জঘন্য ও ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে ঘৃণাজনিত অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে বলেছেন, দেশটিতে ‘ব্যাপক ইহুদিবিদ্বেষ’ চলতে দেওয়া হয়েছে। তিনি কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও করেছেন।
নতুন সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি হচ্ছে কি
হামলার ফলে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। রাবি জনাথন রোমেইন একে ‘ইহুদিদের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এখনো ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে নতুন কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের লক্ষণ দেখা যায়নি।
ব্রিটেন মুসলিম কাউন্সিলের নেতারা এই হামলার বিরুদ্ধে দ্রুত নিন্দা জানিয়েছেন। তারা এটিকে ইয়ম কিপ্পুরে ‘দুঃখজনক’ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং যৌথ মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেন। স্থানীয় ইমাম ক্বারি আসিম আসিম বলেন, ‘এই ঘৃণার কোনো স্থান নেই— আমরা আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীদের পাশে আছি।’

ক্রাম্পসালের স্থানীয় বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জাকি বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখি। গাজা সম্পর্কিত উত্তেজনা থাকলেও আমরা একত্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি।’ তার মতে, প্রতিবেশীমূলক সম্পর্ক এখনও ভালো, যদিও গাজা সংক্রান্ত উত্তেজনা চরমপন্থীদের উস্কে দিতে পারে।
ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শহরের বহুসংস্কৃতির মধ্যে সম্প্রীতিমূলক পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু কিছু অনলাইন প্রতিক্রিয়া ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছে। চরমপন্থী কিছু কণ্ঠ সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলার দোষ চাপাচ্ছে, যা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চরমপন্থীরা অনলাইন পোস্টে মুসলিমদের সমালোচনা করছে, যা ২০২৪ সালের ইসলামবিদ্বেষে বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

ব্রিটেনের রাব্বিনিক কোর্টের প্রধান রাব্বি জনাথন রোমেইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘৃণা বাড়ছে, কিন্তু আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার সংকল্পও ততটাই বাড়ছে।’ তিনি ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় ঘৃণার ক্রমবর্ধমান স্রোতের’ সঙ্গে যুক্ত করেন, তবে একইসঙ্গে সংহতির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো এ পরিস্থিতি ব্যবহার করে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা উসকে দিতে পারে। ২০২৪ সালে গ্রীষ্মে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি রয়েছে।
ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শিক্ষা সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসের চেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক ঘটনা ঘটেছে।
তবুও ম্যানচেস্টারের ইতিহাস আশা জাগায়। এরিনা হামলার পর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘৃণা-বিরোধী প্রচারণায় শহরটি ঐক্যের নজির স্থাপন করেছে। এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এক ধর্মের ওপর আক্রমণ মানে সব ধর্মের ওপর আক্রমণ— এখন সেতু গড়ার সময়, দেয়াল তোলার নয়।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান

ইসরায়েল গাজাকে নিরাপত্তা সমস্যা হিসেবে দেখছে, আর ফিলিস্তিনিরা একে দেখছে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মেরুকরণ যতদিন না কমবে, ততদিন যেকোনো যুদ্ধবিরতিই হবে ক্ষণস্থায়ী।
৪ ঘণ্টা আগে
ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধু বিনোদন নয়—মত প্রকাশ, পরিচয় নির্মাণ ও বিশ্বসংযোগেরও প্রধান মাধ্যম। এমন এক সময়ে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক আইন পাস করেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে। এটি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সরাসরি প্রধান বিচারপতির অধীনে আসে।
১ দিন আগে
ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন কিনা, কোনো কারচুপি হচ্ছে কিনা কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা—এসব বিষয় তদারকি করে প্রতিবেদন দেওয়াই তাদের কাজ।
২ দিন আগে