leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া কি বিশ্ব ইসরায়েলকে থামাতে পারবে

ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কয়েকটি অংশ মেনে নিয়েছে হামাস। তবে তারা বলেছে কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে শনিবার সকালে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের ৪৪টি জাহাজ এবং বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের ৫০০ অ্যাকটিভিস্টকে আটক করেছে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দেশের গুরুত্বপুর্ণ শহরগুলোতে মানুষ রাস্তায় নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিক্ষোভ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াজুড়েও। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে— যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া বিশ্বের বাকী দেশগুলো কি একযোগে ইসরায়েলকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারবে?

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
শনিবার সকালে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানান। স্ট্রিম গ্রাফিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নিতে হামাসকে রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সময়ের মধ্যে হামাস একটি চুক্তি মেনে নিলে গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে।

এর জবাবে শুক্রবার হামাস জানায় তারা ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কয়েকটি অংশ মেনে নিয়েছে। তবে তারা বলেছে কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে শনিবার সকালে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হামাস ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’

ইসরায়েলও জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের নির্দেশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় সামরিক কার্যক্রম কমাতে শুরু করেছে।

কিন্তু সমালোচকরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, এই চুক্তি ইসরায়েলকে সত্যিই থামাতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। উদারহণ হিসেবে কারা বলেন, লেবাননে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত ছিল। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও তারা অভিযান চালাচ্ছে।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন জানিয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যার শামিল। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বাণিজ্য সুবিধা স্থগিতের প্রস্তাব দেয়। আগস্টে জাতিসংঘের সমর্থিত একটি সংস্থা বলেছিল, ইসরায়েল গাজায় মানুষ তৈরি দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিয়েছে।

ইসরায়েলের কয়েকটি ঐতিহ্যগত মিত্র দেশও অবস্থান বদলায়। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। গত বছর নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড একই পদক্ষেপ নিয়েছিল।

বিভিন্ন দেশের নেতারাও প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে নিন্দা করেছেন। গত মাসে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, বর্বরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে বৈশ্বিক ক্রীড়া সংস্থা থেকে বহিষ্কার করা উচিত। মে মাসে স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নাটাসা পির্ক মুসার গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলেছেন।

এরপর এলো গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ বহর। ইসরায়েলে সেই বহরের ৪৪টি জাহাজ এবং বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের ৫০০ অ্যাকটিভিস্টকেও আটক করেছে। কোনো কিছুতেই থামছে না ইসরায়েল।

এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালিসহ ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দেশের গুরুত্বপুর্ণ শহরগুলোতে মানুষ রাস্তায় নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিক্ষোভ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াজুড়েও।

এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে— বিশ্বের এই দেশগুলো যদি আরও এগিয়ে আসে, তারা কি একযোগে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে, যাতে গাজায় হামলা বন্ধ হয় এবং সেনা প্রত্যাহার করা হয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়াও?

এই প্রশ্নে মত দিয়েছেন চার বিশেষজ্ঞ— কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন অধ্যাপক মাইকেল লিঙ্ক, আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের মানবাধিকার আইনের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল বেকার, যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ও সাংস্কৃতিক বয়কট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নিক কাল এবং লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ দানিয়েলে বিয়ানচি।

জাতিসংঘ কী করতে পারে?

অধ্যাপক মাইকেল লিঙ্ক বলেন, জাতিসংঘ এখনো গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থামানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে। এর জন্য অতীতেও দৃষ্টান্ত আছে। ইসরায়েল জাতিসংঘ সনদ— ১৯৪৮ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ কনভেনশন এবং ১৯৯৮ সালের রোম সংবিধি ভঙ্গ করেছে। এসব চুক্তি অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্রে গণহত্যা ঘটলে অন্য সদস্য দেশগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে হস্তক্ষেপ করার। এখন পর্যন্ত কেবল ইয়েমেনের হুথিরা ড্রোন ব্যবহার, কেবল কেটে দেওয়া এবং জাহাজ চলাচল বন্ধ করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ ইয়েমেন বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি।

১৯৫০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘শান্তির জন্য জোটবদ্ধতা’ প্রস্তাব পাস করেছিল কোরিয়া যুদ্ধ থামানোর জন্য। এর আগে কোরিয়া যুদ্ধ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সব উদ্যোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দিয়েছিল। তবে এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কোরিয়ায় হস্তক্ষেপের বৈধ পথ তৈরি করে। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হয় এবং অন্তত যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হয়।

আজ পঁচাত্তর বছর পরও সেই দৃষ্টান্ত কাজে লাগানো যেতে পারে। জাতিসংঘ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে পারে। কারণ জাতিসংঘ আগেই বলেছে, গাজাসহ দখলকৃত অন্য ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বৈধতা নেই। জাতিসংঘ বাহিনী সেখানে পৌঁছে মানবিক সহায়তা দিতে পারে, পুনর্গঠন শুরু করতে পারে, পানি-বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় সেবা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং অন্তর্বর্তী প্রশাসনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে।

জাতিসংঘ সনদের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সদস্য দেশকে বহিষ্কার করা যায়। তবে এর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন লাগে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন অপরিহার্য। ১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বহিষ্কারের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ভেটো দিয়েছিল।

তবুও সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে বলেছিল, তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। এতে কার্যত দেশটি ২০ বছরের জন্য জাতিসংঘ থেকে নিষিদ্ধ হয়। এখন সময় এসেছে একই পদক্ষেপ ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও বিবেচনা করার।

জাতিসংঘ ছাড়া রাষ্ট্রগুলো কী করতে পারে?

মাইকেল বেকার বলেন, এখানে সহজ কোনো সমাধান নেই। ১৯৯০-র দশক থেকে ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’ ও ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রোটেক্ট’ ধারণা আলোচনায় এসেছে। তবে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি হলো— বৈধ সামরিক শক্তি প্রয়োগ কেবল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন অথবা আত্মরক্ষার বৈধ দাবির মাধ্যমেই সম্ভব।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ কনভেনশন সব পক্ষকে গণহত্যা ঠেকানোর বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। কিন্তু এটি এককভাবে সামরিক হস্তক্ষেপের আইনি ভিত্তি তৈরি করে না।

আরেকটি বিষয় হলো ‘সমষ্টিগত আত্মরক্ষা’ বা ‘আমন্ত্রণের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ’। এর ভিত্তি হতে পারে যদি ফিলিস্তিনকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যে তার সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্য রাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে— ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অভিযানে যোগ দেওয়ার জন্য।

তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ দৃষ্টান্ত রাষ্ট্র-রাষ্ট্র সংঘাতের নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সংঘাতের। যেমন—একটি রাষ্ট্র (ক) আরেকটি রাষ্ট্রকে (খ) আমন্ত্রণ জানায় তার ভূখণ্ডে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে। ১৯৯০-র দশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআরসি) উগান্ডাকে পূর্ব কঙ্গোতে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করলে উভয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, কারণ উগান্ডার সেনারা তখনও সরে যায়নি।

আরও সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ইরাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট। এটি ইরাক সরকারের সম্মতিতেই হয়েছিল। তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে একই আইনি ভিত্তি পাওয়া যায়নি, ফলে বিষয়টি আরও জটিল ছিল।

তাহলে ফিলিস্তিন কি আগামীকালই কোনো রাষ্ট্রকে সাহায্যের জন্য ডাকতে পারবে? তাত্ত্বিকভাবে পারত, যদি ফিলিস্তিন জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার দাবি করত।

কিন্তু এখানে জটিলতা আছে। প্রশ্ন হলো— ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে কে কথা বলবে? যদি এটি রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হয়, তবে গাজায় শাসনরত হামাসের আত্মরক্ষার ঘোষণা আইনি স্বীকৃতি নাও পেতে পারে। এছাড়া দখলদারিত্বের আইন কীভাবে প্রযোজ্য হবে, সেটিও অস্পষ্ট।

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলের কতটুকু কী করতে পারে?

দানিয়েলে বিয়ানচি বলেন, এক্ষেত্রে রাশিয়ার উদাহরণ দেখা যেতে পারে। বিশ্বের নানা দেশ তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু চীনের সমর্থনে রাশিয়া এখনো টিকে আছে। ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে যেকোনো নিষেধাজ্ঞা ভেস্তে যেতে পারে।

বাস্তবতা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্য অবরোধ ইসরায়েলকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করলেও থামাতে পারবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানি অংশীদার।

চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সম্ভব হলে ভারত—এরা একসাথে হলে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে কিছুটা আঘাত হানতে পারে। তবে তাতেও দেশটিকে থামানো কঠিন।

আরেকটি দিক হলো ইসরায়েলের রপ্তানির ধরণ। তারা মূলত পণ্যদ্রব্য নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর সামগ্রী রপ্তানি করে। এগুলো সহজে বর্জন বা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।

যুদ্ধের ২২ মাস পরও ইসরায়েলের অর্থনীতি মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে। ঋণ সমস্যা রয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির হার আগের মতো নয়। তবে যারা দেশটির অর্থনীতির পতন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।

জনসাধারণ কী করতে পারে?

নিক কাল বলেন, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বর্জন একটি দেশকে চাপ দেওয়ার কার্যকর উপায়। এতে ওই দেশের অভ্যন্তরে জনমত পরিবর্তিত হয় এবং বাইরের বিশ্বও তাদের বিরুদ্ধে একমত হয়।

সংস্কৃতি বর্জন একটি বার্তা দেয়— তাদের আচরণ এতটাই অগ্রহণযোগ্য যে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখাও সম্ভব নয়। এতে তাদের সেই ভ্রম ভেঙে যায় যে তারা ‘শুধু আরেকটি দেশ’ বা সব দেশেরই মানবাধিকার সমস্যা আছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে প্রথমে ১৯৫৪ সালে ট্রেভর হাডলেস্টন সাংস্কৃতিক বর্জনের প্রস্তাব দেন। পরে ১৯৬৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে। নেলসন ম্যান্ডেলা নিজেই বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘বিশ্বের দুর্গন্ধ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধীরগতির একটি উপাদান। একটি দেশের সুনাম গড়ে ওঠা বা ধ্বংস হতে অনেক বছর কিংবা দশক লাগে। সাংস্কৃতিক বর্জনও সেই নিয়মে কাজ করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে চাপ তৈরি করে, স্বাভাবিকতার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে এবং একটি দেশকে বিশ্বদরবারে একঘরে করে দেয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর সাংস্কৃতিক বর্জন চার দশক ধরে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু শেষ ধাক্কা আসে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। তখন প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী মহল, পরে রাজনৈতিক নেতারা আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত