leadT1ad

৩৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা: নতুন স্নায়ুযুদ্ধ কী আসন্ন

আল-জাজিরা এক্সপ্লেইনার
আল-জাজিরা এক্সপ্লেইনার

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৩
২০২২ সালে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ৩৫০। স্ট্রিম গ্রাফিক

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তরকে ‘অবিলম্বে’ মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৩ বছর পর আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাবে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীন দ্রুত নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলছে। এই কারণ দেখিয়েই তিনি তার সিদ্ধান্তকে ন্যায্য বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শুল্ক ও বিরল খনিজ নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রতীক্ষিত শীর্ষ বৈঠকের ঠিক আগে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত জানান।

এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো যখন সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’ পরীক্ষা করার জন্য সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প কী বলেছেন?

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অন্য দেশগুলোর পরীক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে আমি যুদ্ধ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তারা আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষাও সমানভাবে শুরু করে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিরক্ষা দপ্তরের (ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) নাম পরিবর্তন করে যুদ্ধ দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার) রাখে।

পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে’, কিন্তু চীন আগামী ৫ বছরের মধ্যে সমকক্ষ হয়ে যাবে।

এর কয়েক মিনিট পরেই এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প।

চীন ও রাশিয়া কি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পারমাণবিক হুমকি?

চীন পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ভান্ডারের সমকক্ষ হতে পারে—এমন দাবি ট্রাম্প কেন করছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ধীরে ধীরে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ কমাচ্ছে, অন্যদিকে চীন তার ভান্ডার বাড়িয়ে চলেছে।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস-এর মতে, ২০২২ সালে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ৩৫০। অন্যদিকে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) মতে, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ৪১০-এ পৌঁছে। কিন্তু এর বিপরীতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭০৮টি (চীনের থেকে প্রায় ৯ গুণ বেশি)।

রাশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। গত ২৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, রাশিয়া সফলভাবে পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এর একদিন পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, পুতিনের উচিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিবর্তে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার দিকে মনোযোগ দেওয়া।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ছবি: সংগৃহীত

২৯ অক্টোবর পুতিন বলেন, মস্কো ২৮ অক্টোবর সফলভাবে একটি নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত ও পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ডুবোড্রোন, ‘পোসাইডন’-এর পরীক্ষা চালিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পোসাইডন সম্পর্কে বলেন, ‘গতি ও গভীরতার দিক থেকে এই মানবহীন যানের মতো বিশ্বে আর কিছুই নেই এবং সম্ভবত কখনও হবেও না।’

পারমাণবিক শক্তিচালিত যেকোনো ধরনের অস্ত্র—বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন যাই হোক না কেন, তা পারমাণবিক ফিশন থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। কিন্তু পারমাণবিক শক্তিচালিত অস্ত্র মানেই পারমাণবিক অস্ত্র নয়। তবে, পোসাইডন পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম হওয়ায় তা যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। কিন্তু আপাতত, রাশিয়া কোনো পারমাণবিক ওয়ারহেড ছাড়াই এই অস্ত্রগুলোর পরীক্ষা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা

১৯৯৬ সালে সার্বিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে (সিটিবিটি) স্বাক্ষরের পর বেশিরভাগ দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। পারমাণবিক দূষণের কারণে ভূপৃষ্ঠ, ভূগর্ভ এবং পানির নিচে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে চুক্তিটি সামনে আসে।

১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম তার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। জাতিসংঘের মতে, দেশটি এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩২টি পরীক্ষা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করে। ১৯৯৬ সালে সিটিবিটিতে স্বাক্ষর করলেও যুক্তরাষ্ট্র কখনও এটি অনুমোদন করেনি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন মোট ৭১৫টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল। সর্বশেষ চালিয়েছে ১৯৯০ সালে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়া কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। ১৯৯৬ সালে রাশিয়া সিটিবিটিতে স্বাক্ষর করে এবং ২০০০ সালে তা অনুমোদন করে। কিন্তু ২০২৩ সালে পুতিন এই চুক্তি থেকে রাশিয়ার অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেন।

অন্যদিকে, চীন সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল।

অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। দেশটি ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ২১০টি পরীক্ষা চালিয়েছিল।

যুক্তরাজ্য ১৯৫২ থেকে ১৯৯১-র মধ্যে ৪৫টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

সিটিবিটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০টি পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে, ভারত ও পাকিস্তান প্রত্যেকে দুটি করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। তবে এই দুটি দেশ কখনও সিটিবিটিতে স্বাক্ষর করেনি। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০০৬, ২০০৯, ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়া। দেশটিও সিটিবিটিতে স্বাক্ষর করেনি।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল—এই ৯টি রাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। কয়েক দশক ধরে, ইসরায়েল পারমাণবিক অস্পষ্টতা নীতি বজায় রেখেছে এবং প্রকাশ্যে কখনও তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির উপস্থিতি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষা কি সিটিবিটির লঙ্ঘন?

সিটিবিটি চুক্তি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে যেকোনো ধরনের পারমাণবিক বিস্ফোরণ (সামরিক কিংবা বেসামরিক) নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্র সিটিবিটিতে স্বাক্ষর করলেও, তা অনুমোদন করে না। ফলে আইনগতভাবে এটি অনুসরণ করতে তারা বাধ্য নয়। যখন একটি দেশ কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, তখন চুক্তির বিষয়বস্তুর সঙ্গে সাধারণ একমত এবং ভবিষ্যতে চুক্তির শর্ত মেনে চলার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু যখন একটি দেশ কোনো চুক্তি অনুমোদন করে, তখন চুক্তিটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ আইনি পদক্ষেপ সম্পন্ন করে। ফলে চুক্তিটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ওই দেশের জন্য আইনত বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে।

ট্রাম্পের নতুন পরীক্ষা কি পারমাণবিক প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে?

ইতিহাস বলছে এর উত্তর—হ্যাঁ। পারমাণবিক যুগের শুরুতে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। জবাবে ১৯৪৯ সালে সফল পরীক্ষার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের দ্বিতীয় পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়। এরপর ১৯৫২ সালে ব্রিটেন এবং ১৯৬০ সালে ফ্রান্স পারমাণবিক শক্তিধর হয়। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে যখন চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়, তখন চীন ১৯৬৪ সালে তার প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়।

পারমাণবিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এই প্রতিযোগিতা ১৯৯৮ সালেও দেখা গিয়েছিল, যখন ভারত ও পাকিস্তান কয়েকদিনের ব্যবধানে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।

এই বছরের জুন মাসে, এসআইপিআরআই-এর এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, বিশ্ব এক নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক ওয়ারহেডের সামগ্রিক সংখ্যা কমছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পুরোনো ওয়ারহেডগুলো ভেঙে ফেলছে—তবুও নতুন ওয়ারহেড তৈরি হচ্ছে এবং পারমাণবিক ভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে।

এসআইপিআরআইর প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, মজুত সীমিত বা কমানোর চুক্তি না থাকলে, এই নতুন সংযোজনগুলো ভেঙে ফেলা ওয়ারহেডের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পারমাণবিক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোর কী হবে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করার রক্ষাকবচগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এনপিটি চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো অন্য দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র হস্তান্তর বা তৈরিতে সহায়তা করবে না। একইসঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রহীন রাষ্ট্রগুলো তা অর্জনের চেষ্টা করবে না। ভারত, পাকিস্তান এবং ইসরায়েল কখনও এনপিটিতে স্বাক্ষর করেনি, আর উত্তর কোরিয়া স্বাক্ষর করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালে রাশিয়ার সিটিবিটি অনুমোদন প্রত্যাহার করার অর্থ হলো মস্কো আর কোনো নীতি মেনে চলতে বাধ্য নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তবে এর বেশিরভাগই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেঙে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭২ সালের অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল (এবিএম) চুক্তি থেকে ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে আসে। ১৯৭৯ সালের স্ট্র্যাটেজিক আর্মস লিমিটেশন টকস টু (এসএএলটি টু) চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করলেও অনুমোদন করেনি। ১৯৮৭ সালের ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে আসে। তাদের অভিযোগ, রাশিয়া এর শর্ত লঙ্ঘন করছে।

বিশ্বজুড়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ কী আসন্ন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ বিশ্বকে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাদের মতে, এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কয়েক দশকের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের (এফএএস) নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন প্রজেক্টের ডিরেক্টর হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ রাশিয়া, চীন, ভারত ও পাকিস্তানকেও পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে উৎসাহিত করবে।

কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র ফেলো অঙ্কিত পান্ডা মনে করেন, পুনরায় পরীক্ষা শুরুর যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত চীন ও রাশিয়াকে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত উসকানিমূলক’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কূটনীতির কয়েক দশকের অর্জনকে দুর্বল করে দেবে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বৈশ্বিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।

পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ডেভিড হফম্যান বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র মূলত হুমকি ও জবরদস্তির জন্য ব্যবহৃত হওয়া একধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র। এর নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। বর্তমানে সেই সদিচ্ছার অভাবই তাঁকে আতঙ্কিত করছে।

বিভিন্ন স্বাধীন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ দাবি করছে, এই পদক্ষেপগুলো শুধুমাত্র প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোকেও নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে উৎসাহিত করতে পারে। ফলে বিশ্বজুড়ে স্থিতিশীলতা আরও বিপন্ন হবে। এতে দেশগুলোর মধ্যে সৃষ্ট অবিশ্বাস ও উত্তেজনা বিশ্বকে একটি নতুন ও অনিশ্চিত স্নায়ুযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

(ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)

Ad 300x250

সম্পর্কিত