ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাকে আকার ও ব্যাপ্তির দিক থেকে ‘ব্যাপক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে—অনেকে মনে করেন, এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে তার ওপর।
স্ট্রিম ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েল-এর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন সূচিত করেছে। এবছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধে অস্বীকৃতি এবং এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ক্রেমলিনের ‘যুদ্ধযন্ত্র’-তে অর্থায়নের কারণে পদক্ষেপটি জরুরি হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাকে আকার ও ব্যাপ্তির দিক থেকে ‘ব্যাপক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে—অনেকে মনে করেন, এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে তার ওপর।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় কী আছে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে রোসনেফট ও লুকঅয়েলের সব সম্পদ জব্দ করা হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে মার্কিন কোম্পানি ও নাগরিকদের ব্যবসায়িক লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও দুই কোম্পানির অসংখ্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এই দুই রুশ কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ‘দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হবে। এতে চীন, ভারত ও তুরস্কের ব্যাংকগুলোও প্রভাবিত হতে পারে, যারা রাশিয়ার তেল বিক্রিতে সহায়তা করে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, রোসনেফট ও লুকঅয়েল মিলে রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই এই দুই কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও শিগগিরই নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এখনই কেন এই সিদ্ধান্ত
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন।’ কিন্তু ক্ষমতায় ফেরার পর তিনি বুঝেছেন বিষয়টি তাঁর ধারণার চেয়ে অনেক জটিল।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাঁর অবস্থান বারবার বদলেছে। একদিকে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর দখল হওয়া সব এলাকা পুনরুদ্ধার করতে পারে। এরপর আবার অল্পদিনের মধ্যে মত পরিবর্তন করে বলেন, দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প হঠাৎ করেই পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক বাতিল করেন, কারণ রাশিয়া কিছু শর্ত আরোপ করেছিল যা যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেয়নি। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যখনই পুতিনের সঙ্গে কথা বলি, আলোচনা ভালো হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ফল হয় না।’
দীর্ঘদিন ধরে পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) মিত্ররা তাঁকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়ে আসছিল। রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকা এবং ইউরোপীয় মিত্রদের ধারাবাহিক তদবির শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণায় রাজি করিয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের গতি মন্থর করা এবং পুতিনকে আলোচনায় ফিরতে চাপ দেওয়া। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কতটা কঠোরভাবে প্রয়োগ ও সমন্বয় করতে পারে তার ওপর।
নিষেধাজ্ঞা কি কার্যকর হবে
রাশিয়ার বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব আসে জ্বালানি খাত থেকে। ফলে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করবে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মার্শাল বিলিংসলি বলেন, রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করা ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করার হুমকি সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপগুলোর একটি। এতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি করা আরও কঠিন হবে।
তিনি বলেন, ‘যদিও ভারত, চীন বা তুরস্কের শোধনাগারগুলো তেল কিনতে চায়, তাদের ব্যাংক হয়তো বলবে— না, এটা ঝুঁকিপূর্ণ।’
তবে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক থমাস গ্রাহাম আরও সতর্ক অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘যদি হোয়াইট হাউস মনে করে এই নিষেধাজ্ঞায় ক্রেমলিনের নীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে, তারা ভুল করছে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলার কৌশল ভালোভাবেই শিখে নিয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। গত তিন বছরে ভারত রাশিয়ার বড় ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে। ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ দিচ্ছেন তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য।
জ্বালানি বিশ্লেষক থমাস ও’ডনেল বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় শোধনাগারগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আইনি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে একটি তেলনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে দুর্বল করে দিতে পারে।’
সবশেষে, এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র কতটা সক্রিয়ভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তার ওপর। বাইডেন প্রশাসন আগে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, কারণ তখন জ্বালানির দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি আবার বেড়ে যেতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে জ্বালানির দাম ও জীবন যাত্রার ব্যয় কম রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। যদি নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র আরও কী করতে পারে
ইউক্রেনের মিত্ররা ট্রাম্প প্রশাসনকে আরও বিকল্প সহায়তার পথ অনুসন্ধানের আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো—রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ব্যয় করা।
এই সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ১৪০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ডলার) সুদবিহীন ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে একমত হতে পারেন। ইউরোপে থাকা রুশ সম্পদ থেকে এই ঋণ দেওয়া হতে পারে। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র নিজে এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র সরবরাহের দাবি অব্যাহত রেখেছেন, যা রাশিয়ার আরও ভেতরে আঘাত হানতে পারে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব ছিল, কিন্তু ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর তা বাতিল করেন।
তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ব্রিটেনের সরবরাহকৃত স্টর্ম শ্যাডো মিসাইলের মতো দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে দিচ্ছে। যেমন সাম্প্রতিক ব্রিয়ানস্কে রাসায়নিক কারখানায় হামলায় স্টর্ম শ্যাডো ব্যবহার করা হয়।
তবে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে তা অস্বীকার করে বলেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেখানে থেকেই আসুক না কেন, বা ইউক্রেন এগুলো দিয়ে যা-ই করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
সার্বিকভাবে, নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে। কিন্তু এর সাফল্য নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবায়নের দৃঢ়তা, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিক্রিয়া এবং জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতার ওপর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েল-এর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন সূচিত করেছে। এবছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধে অস্বীকৃতি এবং এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ক্রেমলিনের ‘যুদ্ধযন্ত্র’-তে অর্থায়নের কারণে পদক্ষেপটি জরুরি হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাকে আকার ও ব্যাপ্তির দিক থেকে ‘ব্যাপক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে—অনেকে মনে করেন, এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে তার ওপর।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় কী আছে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে রোসনেফট ও লুকঅয়েলের সব সম্পদ জব্দ করা হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে মার্কিন কোম্পানি ও নাগরিকদের ব্যবসায়িক লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও দুই কোম্পানির অসংখ্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এই দুই রুশ কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ‘দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হবে। এতে চীন, ভারত ও তুরস্কের ব্যাংকগুলোও প্রভাবিত হতে পারে, যারা রাশিয়ার তেল বিক্রিতে সহায়তা করে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, রোসনেফট ও লুকঅয়েল মিলে রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই এই দুই কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও শিগগিরই নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এখনই কেন এই সিদ্ধান্ত
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন।’ কিন্তু ক্ষমতায় ফেরার পর তিনি বুঝেছেন বিষয়টি তাঁর ধারণার চেয়ে অনেক জটিল।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাঁর অবস্থান বারবার বদলেছে। একদিকে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর দখল হওয়া সব এলাকা পুনরুদ্ধার করতে পারে। এরপর আবার অল্পদিনের মধ্যে মত পরিবর্তন করে বলেন, দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প হঠাৎ করেই পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক বাতিল করেন, কারণ রাশিয়া কিছু শর্ত আরোপ করেছিল যা যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেয়নি। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যখনই পুতিনের সঙ্গে কথা বলি, আলোচনা ভালো হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ফল হয় না।’
দীর্ঘদিন ধরে পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) মিত্ররা তাঁকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়ে আসছিল। রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকা এবং ইউরোপীয় মিত্রদের ধারাবাহিক তদবির শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণায় রাজি করিয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের গতি মন্থর করা এবং পুতিনকে আলোচনায় ফিরতে চাপ দেওয়া। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কতটা কঠোরভাবে প্রয়োগ ও সমন্বয় করতে পারে তার ওপর।
নিষেধাজ্ঞা কি কার্যকর হবে
রাশিয়ার বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব আসে জ্বালানি খাত থেকে। ফলে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করবে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মার্শাল বিলিংসলি বলেন, রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করা ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করার হুমকি সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপগুলোর একটি। এতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি করা আরও কঠিন হবে।
তিনি বলেন, ‘যদিও ভারত, চীন বা তুরস্কের শোধনাগারগুলো তেল কিনতে চায়, তাদের ব্যাংক হয়তো বলবে— না, এটা ঝুঁকিপূর্ণ।’
তবে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক থমাস গ্রাহাম আরও সতর্ক অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘যদি হোয়াইট হাউস মনে করে এই নিষেধাজ্ঞায় ক্রেমলিনের নীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে, তারা ভুল করছে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলার কৌশল ভালোভাবেই শিখে নিয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। গত তিন বছরে ভারত রাশিয়ার বড় ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে। ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ দিচ্ছেন তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য।
জ্বালানি বিশ্লেষক থমাস ও’ডনেল বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় শোধনাগারগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আইনি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে একটি তেলনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে দুর্বল করে দিতে পারে।’
সবশেষে, এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র কতটা সক্রিয়ভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তার ওপর। বাইডেন প্রশাসন আগে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, কারণ তখন জ্বালানির দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি আবার বেড়ে যেতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে জ্বালানির দাম ও জীবন যাত্রার ব্যয় কম রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। যদি নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র আরও কী করতে পারে
ইউক্রেনের মিত্ররা ট্রাম্প প্রশাসনকে আরও বিকল্প সহায়তার পথ অনুসন্ধানের আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো—রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ব্যয় করা।
এই সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ১৪০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ডলার) সুদবিহীন ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে একমত হতে পারেন। ইউরোপে থাকা রুশ সম্পদ থেকে এই ঋণ দেওয়া হতে পারে। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র নিজে এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র সরবরাহের দাবি অব্যাহত রেখেছেন, যা রাশিয়ার আরও ভেতরে আঘাত হানতে পারে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব ছিল, কিন্তু ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর তা বাতিল করেন।
তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ব্রিটেনের সরবরাহকৃত স্টর্ম শ্যাডো মিসাইলের মতো দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে দিচ্ছে। যেমন সাম্প্রতিক ব্রিয়ানস্কে রাসায়নিক কারখানায় হামলায় স্টর্ম শ্যাডো ব্যবহার করা হয়।
তবে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে তা অস্বীকার করে বলেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেখানে থেকেই আসুক না কেন, বা ইউক্রেন এগুলো দিয়ে যা-ই করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
সার্বিকভাবে, নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে। কিন্তু এর সাফল্য নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবায়নের দৃঢ়তা, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিক্রিয়া এবং জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতার ওপর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
বাংলাদেশে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দ্রুত বিকাশ যোগাযোগ, প্রশাসন ও দৈনন্দিন জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে। তবে এর সঙ্গে এসেছে কিছু ঝুঁকিও—যেমন ভুয়া তথ্য, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন ও সাইবার হামলার আশঙ্কা।
১১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর মূল অর্থনৈতিক নীতি আবারও চীনের সঙ্গে পূর্ণ মাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এই নীতিতে রয়েছে উচ্চ শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-ভিত্তিক অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার হুমকি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক ধরনের ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’।
২০ ঘণ্টা আগেবিশ্বে বিরল খনিজ সম্পদের প্রতিযোগিতায় চীন অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এই খনিজ সম্পদ আধুনিক প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে।
১ দিন আগেপ্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত এক দুঃসাহসিক চুরি আবারও ইতিহাসের আলোচনায়। নেপোলিয়নের আমলের অমূল্য আটটি অলংকার চুরি করে নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র চোর।
২ দিন আগে