leadT1ad

মুসা নবীর তুর পাহাড়ে কী করতে যাচ্ছে মিসর, এ নিয়ে বিতর্ক কেন

জাবালে মুসা বা মুসার পাহাড়। ছবি: উইকিপিডিয়া

আফ্রিকা ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। এখানে রয়েছে উঁচু পাহাড়, বিস্তীর্ণ মরুভূমি, ফাতেমি আমলের মসজিদ, বাইজান্টাইন যুগের মঠসহ আরও অনেক কিছু। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিসরের সিনাই পর্বত নিয়ে। এরপর থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসে জায়গাটি।

সিনাইয়ের আকাশছোঁয়া খাড়া পাথুরে পাহাড়ে বিলাসবহুল হোটেল, ভিলা ও শপিং সেন্টার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে মিসর। তৈরি করা হচ্ছে বিমানবন্দর। তবে মুসা নবীর স্মৃতিবিজড়িত এই পবিত্র অঞ্চলকে ঘিরে মিসরের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে গ্রিস সরকার। একই সঙ্গে সতর্ক করেছে ইউনেসকো। মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান ঘিরে নানা মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর ঐতিহ্য সংরক্ষণের টানাপোড়েনেই এখন আটকে আছে সিনাইয়ের ভবিষ্যৎ।

সিনাই পর্বত ও মুসার পাহাড়

ত্রিভুজ আকৃতির সিনাই উপদ্বীপের আয়তন প্রায় ২৩ হাজার বর্গমাইল। উত্তরে ভূমধ্যসাগর আর দক্ষিণে লোহিত সাগর নিয়ে গঠিত উপদ্বীপটি আফ্রিকা ও এশিয়ার মিলনস্থল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছিল। ১৯৭৯ সালে দুই দেশের মধ্যে এক শান্তিচুক্তির পর তা আবার মিসরের কাছে ফেরত আসে।

এই উপদ্বীপেরই একটি পর্বতের নাম ‘সিনাই পর্বত’, যার আরেক নাম ‘তুর পাহাড়’ (কুহে তুর)। স্থানীয়ভাবে এটি ‘জাবালু মুসা’ বা মুসার পাহাড় নামে বেশি প্রসিদ্ধ। এই নামের পেছনে রয়েছে পাহাড়টির সঙ্গে হজরত মুসা আ.-এর জীবনের স্মৃতি। এখানেই নবুয়ত লাভ করেছিলেন তিনি। তুর পাহাড়ে চল্লিশ দিন অবস্থানের পর এখানেই তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয় ঐশীগ্রন্থ ‘তাওরাত’।

হিব্রু ভাষায় লিখিত তাওরাত বা তোরাহ ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ। মুসা আ. (ইহুদিরা যাকে মোশি বলে)-এর ইন্তেকালের প্রায় দেড় হাজার বছর পরে ঈসা আ. (খ্রিস্টানদের যীশু)-এর আগমন। তিনিও এসে তাওরাতের সত্যায়ন করেন। একারণে পর্বতটি আজও মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।

তুর পাহাড়ে মুসা নবীর স্মৃতি

তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে মুসা আ.-এর কথা হয়েছিল। এ কারণে তাঁকে বলা হয় ‘মুসা কালিমুল্লাহ’ বা আল্লাহর সঙ্গে কথাবলা মুসা। কথোপকথনের ঘটনাটি পবিত্র কুরআনে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি সুরায় তুর পাহাড়ের কথা এসেছে।

মানচিত্রে সিনাই উপদ্বীপ। ছবি: উইকিপিডিয়া
মানচিত্রে সিনাই উপদ্বীপ। ছবি: উইকিপিডিয়া

নবী মুসা (আ.) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিসরের দিকে ফিরছিলেন। পথে তুর পাহাড়ের কাছে তাঁর স্ত্রীর হঠাৎ প্রসববেদনা শুরু হয়। আগুনের প্রয়োজন পড়ে। দূরে অগ্নিশিখা দেখে পরিবারকে বললেন, ‘তোমরা এখানে অবস্থান করো। আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু আগুন জ্বালিয়ে আনতে পারব অথবা সেখানে পৌঁছে পথের সন্ধান পাবো।’ (সুরা তোয়াহা ১০)

কিন্তু নবী মুসা আ. যতই আগুনের কাছে যেতে থাকেন আগুন ততই দূরে চলে যেতে থাকে। এরপরের ঘটনা পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে এভাবে, ‘তারপর যখন সে আগুনের কাছে এল, তাকে ডাক দেওয়া হল, হে মুসা! আমিই তোমার পালনকর্তা। অতএব তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। তুমি এখন পবিত্র তুবা উপত্যকায় রয়েছ। আর আমি তোমাকে (নবী) মনোনীত করেছি। অতএব তোমাকে যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা মনোযোগ দিয়ে শোনো।’ (সুরা তোয়াহা ১১-১২)

এই তুবা উপত্যকার অবস্থান তুর পাহাড়ের ডানদিকে। প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মুসার ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করা হয়। হিব্রু ভাষায় নাজিল করা তাওরাতকে ইহুদিরা ঐশীগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে।

সিনাইয়ে ভ্রমণ

প্রতি বছর লাখো মানুষ সিনাই ভ্রমণ করে মূলত এর সমুদ্রতট ও প্রবালপ্রাচীরের জন্য। আসল রোমাঞ্চ পেতে বেদুইনদের পায়ে পা মিলিয়ে জায়গাটা ভ্রমণ করেন অনেকে। উট নিয়ে তাদের সঙ্গে হাঁটলে সিনাইয়ের সবচেয়ে দুর্গম ও জলহীন অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানো যায়। এই পদ্ধতিতে ভ্রমণ করলে মরু প্রকৃতিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।

পশ্চিমা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিনাইয়ে ট্র্যাকিং বেশ জনপ্রিয়। সারা বছরই সিনাইয়ে ট্র্যাকিং করা যায়। তাছাড়া জায়গাটা ইউরোপের কাছেই অবস্থিত। ট্র্যাকিং শেষে সময় কাটানোর জন্যও ভালো সুযোগ রয়েছে। সিনাই থেকে সমুদ্রতটে প্রবালপ্রাচীর ও ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে চলে যান অনেকে। আর সাগর পেরোলেই রয়েছে মিশরের নীল উপত্যকার সমাধি ও মন্দিরগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ।

জাবালে মুসায় ফাতেমি আমলে নির্মিত মসজিদ। ছবি: উইকিপিডিয়া
জাবালে মুসায় ফাতেমি আমলে নির্মিত মসজিদ। ছবি: উইকিপিডিয়া

ষষ্ঠ শতাব্দীর খ্রিষ্টান মঠ

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন খ্রিষ্টান মঠগুলোর একটি ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত সেন্ট ক্যাথরিন মঠ। গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের অধীন পরিচালিত এই মঠও সিনাই পর্বতে অবস্থিত। শুরুতে মঠটি ছিল একটি নির্জন আশ্রয়স্থল। পরে লোহিত সাগরের পর্যটনস্থল সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে দর্শকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে।

ফাতেমি আমলের একটি ছোট মসজিদও রয়েছে সেখানে। মঠ, মসজিদ, শহর ও পর্বত নিয়ে গঠিত এই মরুভূমি অঞ্চল ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

শুরু থেকেই সেন্ট ক্যাথরিনের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেদুইন পাহাড়িরা। উন্নয়নের নামে তাদের অনেক বাড়িঘর ও ইকো-ক্যাম্প ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা তৈরি করতে স্থানীয় কবরস্থান থেকে মরদেহ পর্যন্ত তাদেরকে সরাতে বাধ্য করা হয়েছে। এর জন্য নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কাউকে, কাউকে কোনও ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়নি।

বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় ইউনেসকোর উদ্বেগ

প্রকল্পটি নিয়ে ইউনেসকো উদ্বেগ জানিয়েছে। ইউনেসকো বলছে, চারপাশের দুর্গম পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই মঠের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর মধ্য দিয়ে যে নির্জন পরিবেশ বিরাজ করে মঠের চারপাশে তা আধ্যাত্মিক ধ্যানের জন্য জরুরি। মঠের এই বিশেষত্ব নষ্ট হতে পারে জানিয়ে ২০২৩ সালে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনেসকো।

তারা মিসরকে এই উন্নয়ন বন্ধ করতে বলে। এই প্রকল্পের কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তা নিরপেক্ষভাবে সরকারকে যাচাই করতে আহ্বান জানায়। প্রকল্পের কাজ পুরো দমে শুরু হওয়ার আগেই সেন্ট ক্যাথরিন মঠের সামনের এল-রাহা সমভূমি ইতিমধ্যেই বদলে গেছে। সেখানে নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পাহাড়ের ভেতর ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত সেন্ট ক্যাথরিন মঠ। ছবি: উইকিপিডিয়া
পাহাড়ের ভেতর ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত সেন্ট ক্যাথরিন মঠ। ছবি: উইকিপিডিয়া

এরপর গত জুলাইয়ে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সেন্ট ক্যাথরিনকে বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি দেয়।

সেন্ট ক্যাথেরিন ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। রাজা চার্লস স্থানটিকে ‘একটি মহান আধ্যাত্মিক সম্পদ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা উচিত’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

মিসরের বিলাসবহুল ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প

বিবিসি জানিয়েছে, ২০২১ সালে মিসর সরকার সিনাই পর্বতে গ্রেট ট্রান্সফিগারেশন নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পটিকে সরকার ‘পুরো বিশ্বের ও সব ধর্মের জন্য মিসরের উপহার’ হিসেবে প্রচার করে আসছে।
এই প্রকল্পের মধ্যে আছে হোটেল, ইকো লজ ও একটি বৃহৎ দর্শনার্থীকেন্দ্র নির্মাণ। এর জন্য ওই এলাকার কাছে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও মুসার পাহাড় বা জাবালু মুসা পর্যন্ত একটি কেব্‌ল কার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

গত বছর মিসরের গৃহায়ণমন্ত্রী শেরিফ এল-শেরবিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি দর্শনার্থীদের সব পর্যটন ও বিনোদনমূলক সেবা দেবে; সেন্ট ক্যাথরিন শহর ও আশপাশের এলাকার উন্নয়ন করবে, পরিবেশগত, নান্দনিক ও ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করবে এবং প্রকল্পে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে।’

এল-রাহার সমভূমিতে নির্মাণাধীন একটি হোটেল, ২০২৪ সালে তোলা। ছবি: ভ্রমণ লেখক বেন হফলারের এক্স থেকে নেওয়া
এল-রাহার সমভূমিতে নির্মাণাধীন একটি হোটেল, ২০২৪ সালে তোলা। ছবি: ভ্রমণ লেখক বেন হফলারের এক্স থেকে নেওয়া

বিপাকে বেদুইন পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অলৌকিক ঘটনা ও ঐতিহাসিক পটভূমির কারণে সিনাই পর্বত সব সময়ই দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে সেখানে বসবাস করে আসা বেদুইন জনগোষ্ঠী আধুনিককালে এসে ট্যুর গাইডের ভূমিকা রাখছেন। স্থানীয় এই জনগোষ্ঠী সবার কাছে ‘জাবালিয়া’ নামে পরিচিত। আরবি ‘জাবালিয়া’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ি’। দর্শনার্থীদের তাঁরা সাবধানে পাহাড়ে নিয়ে যেতেন। ভোরে সূর্যোদয় দেখাতেন, সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত। খাড়া পাহাড় আর বিস্তৃত মরুভূমির ওপর তাঁদের রয়েছে সীমাহীন দখল।

সিনাই পর্বতে বিলাসবহুল মেগা রিসোর্ট বানানোর সরকারি উদ্যোগের প্রথম বলি হচ্ছেন পাহাড়ের এই মানুষেরা। বিবিসি বলছে, ওই অঞ্চলে প্রায় চার হাজার বেদুইন বাস করে।

গ্রিস ও মিসরে মধ্যে উত্তেজনা, আইনি লড়াই

মঠের পরিচালক গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ হওয়ায় তারা শুরু থেকেই মিসরীয় এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা রাখছে। গত মে মাসে মিসরের আদালত মঠটিকে রাষ্ট্রীয় জমিতে অবস্থিত বলে রায় দেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেশ বেড়ে যায়। মঠ নিয়ে দুই দেশের এই বিরোধ কয়েক দশক ধরে চলে আসছে।

সম্প্রতি মিসরীয় আদালত বলে, মঠটি শুধু এর জমি ও আশপাশের প্রত্নতাত্ত্বিক ধর্মীয় স্থানগুলো ব্যবহারের অধিকার রাখে।

এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গ্রিসের চার্চপ্রধান আর্চবিশপ দ্বিতীয় ইয়েরোনিমোস দ্বিতীয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মঠের সম্পত্তি দখল ও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। অর্থোডক্স ও হেলেনিজমের এই আধ্যাত্মিক বাতিঘর এখন অস্তিত্ব-সংকটের মুখে। এক সাক্ষাৎকারে দীর্ঘদিন আর্চবিশপের দায়িত্ব পালন করা দামিয়ানোস বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত ‘আমাদের জন্য মারাত্মক আঘাত...এবং এক লজ্জাজনক ঘটনা।’

এই অবস্থায় মঠটিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে গত ১ সেপ্টেম্বর সেখানে ছুটে যান গ্রিসের ধর্ম বিষয়ক মহাসচিব জিওর্গোস কালান্তজিস। গ্রিসের চাপের কারণে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ এই মঠটি বন্ধ করার কথা অস্বীকার করেছে। মঠের সন্ন্যাসীরা এখনো সেখানে অবস্থান করছেন।

যদিও আদালতের রায় এখনও বহাল রয়েছে। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর গ্রিস ও মিসর একটি যৌথ ঘোষণায় সেন্ট ক্যাথরিনের গ্রিক অর্থোডক্স পরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, আল-আহরাম, সিনাই: দ্য ট্রেকিং গাইড (বেন হফলার)

Ad 300x250

সম্পর্কিত