মাহবুবুল আলম তারেক
আজ ৯/১১-র সন্ত্রাসী হামলার দিন। ২০০১ সালের এইদিনে নিউইয়র্কে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এতে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। আল-কায়েদা পরিচালিত এ হামলা বিশ্বরাজনীতির গতিপথ পাল্টে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এরপর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ শুরু করে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান ও ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ করা হয়। সাধারণ মানুষদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। বিশ্বজুড়ে কড়া সন্ত্রাসবিরোধী নীতি চালু হয়।
অনেক গবেষক ও সমালোচক দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা বলেন, এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন স্বার্থ এগিয়ে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ বাড়তে থাকে। ফলে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া তথা ইসলামভীতি প্রবল হয়ে ওঠে।
এই হামলায় ১৯ জন বিমান হাইজ্যাকার অংশ নেয়। তাদের বেশিরভাগই সৌদি নাগরিক। এই পরিকল্পনার নেতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। হামলার লক্ষ্য ছিল মার্কিন ক্ষমতার কয়েকটি প্রতীক। অর্থনৈতিক দিক থেকে টুইন টাওয়ার, সামরিকভাবে পেন্টাগন এবং রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস বা হোয়াইট হাউসকে টার্গেট করা হয়। তবে টুইন টাওয়ার ছাড়া বাকি হামলাগুলো সফল হয়নি।
ওসামা বিন লাদেন এই হামলাকে মুসলিমদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতিশোধ হিসেবে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, সৌদি আরবে মার্কিন সেনা উপস্থিতি, ইসরায়েলকে সমর্থন এবং ইরাকের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়। একে তিনি ‘ইসলামি জিহাদ’ বলে দাবি করেন।
এই বিষয়ে ভিন্ন মতও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন এল. এসপোসিটো বলেন, আল-কায়েদার মতবাদ ইসলামি জিহাদের বিকৃত রূপ যা মূলধারার ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। এসপোসিটো বলেন, জিহাদ নিয়ে বিন লাদেন ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে যে দুটি ফতোয়া দেন তা কোরআনের আয়াত নিয়ে তার নিজস্ব ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গঠিত ছিল। অধিকাংশ মুসলিম আলেম তাঁর ফতোয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
খ্যাতনামা গণবুদ্ধিজীবী কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাঈদও ২০০১ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক লেখায় লিখেছিলেন, ‘আমেরিকার যেমন নানা রূপ আছে, তেমনি ইসলামেরও ভিন্ন ভিন্ন ধারা রয়েছে। এ বৈচিত্র্য সব ঐতিহ্য, ধর্ম ও জাতির মধ্যেই সত্য।’ তাঁর বিশ্লেষণ ছিল, ৯/১১-র পর এই প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। ইসলামকে একটি একাট্টা হুমকি হিসেবে দেখানো শুরু হয়।
অথচ পাকিস্তান, কাতার ও সৌদি আরবসহ বহু মুসলিম দেশের নেতারা ও সরকার ৯/১১ হামলার নিন্দা জানায়। ২০১১ সালে গেলাপ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে মাত্র ৭% সন্ত্রাসী হামলাকে ‘সম্পূর্ণভাবে’ যুক্তিসঙ্গত মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ
২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন। লক্ষ্য ছিল আল-কায়েদা, আফগানিস্তানে তাদের আশ্রয়দাতা তালেবান ও অন্যান্য তথাকথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। মূল পদক্ষেপগুলো ছিল:
আফগানিস্তান অভিযান (২০০১–২০২১): ‘অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম’-এর মাধ্যমে তালেবান সরকার উৎখাত ও আল-কায়েদা ধ্বংসের লক্ষ্যে অভিযান চালানো হয়। ২০১১ সালে এক গোপন মার্কিন সেনা অভিযানে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।
ইরাক আগ্রাসন (২০০৩–২০১১): ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ রাখার অভিযোগে ইরাকে হামলা চালানো হয়, যদিও ৯/১১-র সঙ্গে এর সরাসরি যোগসূত্র মেলেনি।
নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি: ‘ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট’ পাসের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ে। পশ্চিমা মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। ইসলামি প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপরও চাপ পড়ে।
বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: ড্রোন হামলা, গুয়ানতানামো বে কারাগার, আল-কায়েদার সহযোগীদের নিশানা—সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি বদলে যায়। ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
যদিও বুশ প্রশাসন দাবি করে যুদ্ধ ইসলামবিরোধী নয়, তবু কার্যত এর পরিণতিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, সন্দেহ ও সহিংসতা বাড়ে—যা আজও বিতর্কের বিষয়।
৯/১১ হামলা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে। কিছু মহল দাবি করে, এটি ছিল একটি সাজানো ঘটনা। তারা বলেন, এই হামলার ঘটনাকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র তার আগে থেকে তৈরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ছিল ইরাকের তেলসম্পদ দখল, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো এবং মুসলিমদের রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করা।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় জড়িত ছিল—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। ৯/১১ কমিশন রিপোর্টও এ দাবিকে সমর্থন করেনি। রিপোর্টে আল-কায়েদার দায় নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে ইরাক যুদ্ধ, ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কারণ এর সঙ্গে ৯/১১-র সরাসরি কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
ভাষাতত্ত্ববিদ ও গণবুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন যে ৯/১১-কে যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্যবাদ এগিয়ে নিতে কাজে লাগিয়েছে। ২০২১ সালে ট্রুথআউট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এবারের ৯/১১-র বর্ষপূর্তি মানে হলো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সারা বিশ্বে ২০ বছরের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ উদযাপন।’ তাঁর মতে, আল-কায়েদা দায়ী হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল অতি মাত্রায় বেশি। বিশেষ করে ইরাক আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে পরিচালিত হয়। একে ‘ওয়ার অন টেরর’ বলা হলেও বাস্তবে এটি মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছিল। চমস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত যুদ্ধংদেহী প্রতিক্রিয়া আল-কায়েদার কৌশলকেই এগিয়ে দিয়েছে। এতে মুসলিমদের সঙ্গে দূরত্ব ও ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
‘ইসলামোফোবিয়া অ্যান্ড দ্য পলিটিকস অব এম্পায়ার’ বইয়ের লেখক দীপা কুমারও একই মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ৯/১১-পরবর্তী নীতিগুলো এক ধরনের কল্পিত ‘মুসলিম হুমকি’ তৈরি করে সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালী করেছে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন পরিচালিত ‘আমেরিকা, ইসলাম অ্যান্ড দ্য ৯/১১ ওয়ার’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই যুদ্ধের প্রতি বৈশ্বিক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘মুসলিম দেশগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আমেরিকাকে নিজেদের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি মনে করে। প্রায় ৬০ শতাংশ মনে করে, মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইরাকে হামলার কারণে মুসলিমদের কাছে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান পশ্চিমের ক্রুসেড মনে হয়।
অনেক বিশেষজ্ঞ ‘ইসলামের বিরুদ্ধে অজুহাত’ তত্ত্বটি গ্রহণ করেন না। তাদের মতে, ওয়ার অন টেরর মূলত উগ্রবাদীদের টার্গেট করেছে, ধর্মকে নয়।
মিশরীয় তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ ইউসুফ আল-কারজাভির মতে, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অনেক মুসলিমের কাছে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে মনে হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিক ও গণমাধ্যম ভুলভাবে সন্ত্রাসবাদ আর ইসলামকে এক করে দেখায়।
এডওয়ার্ড সাঈদ পশ্চিমাদের ইসলামভীতির সমালোচনা করলেও ৯/১১-কে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত হিসেবে দেখেননি। ২০০১ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেক ভাষ্যকারই এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। প্রেসিডেন্ট বুশও বলেছেন যে “আমরা” ইসলাম বা মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না।’
প্রভাবশালী মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস উল্লেখ করে, ‘একের পর এক মার্কিন সরকার “যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে” আল কায়েদার এই বক্তব্য যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে নাকচ করেছে।’ তবে দীপা কুমারের মতো সমালোচকেরা মনে করেন, তা ছিল অধিকাংশ সময়ই লোকদেখানো।
গবেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়েছে। এতে ইসলামবিরোধী যুদ্ধের ধারণা আরও জোরদার হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে ইসলামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কোটি কোটি মুসলিমকে ক্ষুব্ধ করেছে। এতে উগ্রপন্থীরা সুযোগ পেয়েছে।
৯/১১ হামলার পর পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিমরা তীব্র বৈষম্যের মুখে পড়ে। ২০২১ সালে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান মুসলিমরা তাদের অভিজ্ঞতা জানান। নোহা তালিব নামে একজন আমেরিকান মুসলিম জানান, ‘এক ইন্টারভিউতে প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— “তুমি কি সন্ত্রাসী?” এসাদা কুসেভিচ নামে একজন জানান, ‘পশ্চিমা শিশুরাও প্রায়ই বলত, “ওহ! তোমার পরিবারই তো টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেছে…।”’
এফবিআই-র তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণাজনিত অপরাধ ১ হাজার ৬০০ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে ৯ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম বেসামরিক নাগরিক। অথচ এসপোসিটোর গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ৯৩ শতাংশ মুসলিম এই হামলাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হয়, অঞ্চলগুলো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়।
সামরিক সমাধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত জোর দেয়। যা মূলত আল-কায়েদার কৌশলকেই কার্যকর করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বক্তব্যে বারবার বলা হয়েছে, তাদের লড়াই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া বিশ্বরাজনীতি ও মুসলিম সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূল্য দিয়েছে সাধারণ মুসলিম জনগণ। প্রাণহানি, বৈষম্য, অস্থিতিশীলতা এবং ইসলামভীতির বিস্তার মুসলিম সমাজকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
৯/১১ শুধু একটি সন্ত্রাসী হামলা নয়, এটি ছিল এক বৈশ্বিক মোড় ঘোরানো ঘটনা। এর পর বিশ্ব রাজনীতির ধারা চিরতরে পাল্টে যায়। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র যে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করে, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে এক নতুন পর্বের শুরু করে। আফগানিস্তান ও ইরাক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়ে দেয়, একতরফা সামরিক পদক্ষেপও বৈধতা পেতে পারে ‘সন্ত্রাস দমনের’ নামে। রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ধারণা দুর্বল হতে থাকে, একইসঙ্গে জোরদার হয় নজরদারি রাষ্ট্রের প্রবণতা। জাতিসংঘের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক আইন হয়ে পড়ে পক্ষপাতদুষ্ট। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বয়ান পরিণত হয় কৌশলগত হাতিয়ারে। চীনের উত্থান, রাশিয়ার আগ্রাসী কূটনীতি এবং পশ্চিমা বিশ্বে উগ্র জাতীয়তাবাদের জাগরণ—এসব কিছুই ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের নামে গড়ে ওঠা এক নয়া রাজনীতির প্রতিফলন।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, গ্লোবাল পলিসি জার্নাল, ডেমোক্রেসি নাউ ডট ওআরজি, ফরেন পলিসি ডটকম, ট্রুথআউট
আজ ৯/১১-র সন্ত্রাসী হামলার দিন। ২০০১ সালের এইদিনে নিউইয়র্কে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এতে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। আল-কায়েদা পরিচালিত এ হামলা বিশ্বরাজনীতির গতিপথ পাল্টে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এরপর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ শুরু করে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান ও ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ করা হয়। সাধারণ মানুষদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। বিশ্বজুড়ে কড়া সন্ত্রাসবিরোধী নীতি চালু হয়।
অনেক গবেষক ও সমালোচক দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা বলেন, এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন স্বার্থ এগিয়ে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ বাড়তে থাকে। ফলে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া তথা ইসলামভীতি প্রবল হয়ে ওঠে।
এই হামলায় ১৯ জন বিমান হাইজ্যাকার অংশ নেয়। তাদের বেশিরভাগই সৌদি নাগরিক। এই পরিকল্পনার নেতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। হামলার লক্ষ্য ছিল মার্কিন ক্ষমতার কয়েকটি প্রতীক। অর্থনৈতিক দিক থেকে টুইন টাওয়ার, সামরিকভাবে পেন্টাগন এবং রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস বা হোয়াইট হাউসকে টার্গেট করা হয়। তবে টুইন টাওয়ার ছাড়া বাকি হামলাগুলো সফল হয়নি।
ওসামা বিন লাদেন এই হামলাকে মুসলিমদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতিশোধ হিসেবে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, সৌদি আরবে মার্কিন সেনা উপস্থিতি, ইসরায়েলকে সমর্থন এবং ইরাকের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়। একে তিনি ‘ইসলামি জিহাদ’ বলে দাবি করেন।
এই বিষয়ে ভিন্ন মতও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন এল. এসপোসিটো বলেন, আল-কায়েদার মতবাদ ইসলামি জিহাদের বিকৃত রূপ যা মূলধারার ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। এসপোসিটো বলেন, জিহাদ নিয়ে বিন লাদেন ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে যে দুটি ফতোয়া দেন তা কোরআনের আয়াত নিয়ে তার নিজস্ব ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গঠিত ছিল। অধিকাংশ মুসলিম আলেম তাঁর ফতোয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
খ্যাতনামা গণবুদ্ধিজীবী কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাঈদও ২০০১ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক লেখায় লিখেছিলেন, ‘আমেরিকার যেমন নানা রূপ আছে, তেমনি ইসলামেরও ভিন্ন ভিন্ন ধারা রয়েছে। এ বৈচিত্র্য সব ঐতিহ্য, ধর্ম ও জাতির মধ্যেই সত্য।’ তাঁর বিশ্লেষণ ছিল, ৯/১১-র পর এই প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। ইসলামকে একটি একাট্টা হুমকি হিসেবে দেখানো শুরু হয়।
অথচ পাকিস্তান, কাতার ও সৌদি আরবসহ বহু মুসলিম দেশের নেতারা ও সরকার ৯/১১ হামলার নিন্দা জানায়। ২০১১ সালে গেলাপ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে মাত্র ৭% সন্ত্রাসী হামলাকে ‘সম্পূর্ণভাবে’ যুক্তিসঙ্গত মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ
২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন। লক্ষ্য ছিল আল-কায়েদা, আফগানিস্তানে তাদের আশ্রয়দাতা তালেবান ও অন্যান্য তথাকথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। মূল পদক্ষেপগুলো ছিল:
আফগানিস্তান অভিযান (২০০১–২০২১): ‘অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম’-এর মাধ্যমে তালেবান সরকার উৎখাত ও আল-কায়েদা ধ্বংসের লক্ষ্যে অভিযান চালানো হয়। ২০১১ সালে এক গোপন মার্কিন সেনা অভিযানে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।
ইরাক আগ্রাসন (২০০৩–২০১১): ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ রাখার অভিযোগে ইরাকে হামলা চালানো হয়, যদিও ৯/১১-র সঙ্গে এর সরাসরি যোগসূত্র মেলেনি।
নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি: ‘ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট’ পাসের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ে। পশ্চিমা মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। ইসলামি প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপরও চাপ পড়ে।
বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: ড্রোন হামলা, গুয়ানতানামো বে কারাগার, আল-কায়েদার সহযোগীদের নিশানা—সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি বদলে যায়। ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
যদিও বুশ প্রশাসন দাবি করে যুদ্ধ ইসলামবিরোধী নয়, তবু কার্যত এর পরিণতিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, সন্দেহ ও সহিংসতা বাড়ে—যা আজও বিতর্কের বিষয়।
৯/১১ হামলা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে। কিছু মহল দাবি করে, এটি ছিল একটি সাজানো ঘটনা। তারা বলেন, এই হামলার ঘটনাকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র তার আগে থেকে তৈরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ছিল ইরাকের তেলসম্পদ দখল, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো এবং মুসলিমদের রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করা।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় জড়িত ছিল—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। ৯/১১ কমিশন রিপোর্টও এ দাবিকে সমর্থন করেনি। রিপোর্টে আল-কায়েদার দায় নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে ইরাক যুদ্ধ, ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কারণ এর সঙ্গে ৯/১১-র সরাসরি কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
ভাষাতত্ত্ববিদ ও গণবুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন যে ৯/১১-কে যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্যবাদ এগিয়ে নিতে কাজে লাগিয়েছে। ২০২১ সালে ট্রুথআউট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এবারের ৯/১১-র বর্ষপূর্তি মানে হলো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সারা বিশ্বে ২০ বছরের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ উদযাপন।’ তাঁর মতে, আল-কায়েদা দায়ী হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল অতি মাত্রায় বেশি। বিশেষ করে ইরাক আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে পরিচালিত হয়। একে ‘ওয়ার অন টেরর’ বলা হলেও বাস্তবে এটি মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছিল। চমস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত যুদ্ধংদেহী প্রতিক্রিয়া আল-কায়েদার কৌশলকেই এগিয়ে দিয়েছে। এতে মুসলিমদের সঙ্গে দূরত্ব ও ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
‘ইসলামোফোবিয়া অ্যান্ড দ্য পলিটিকস অব এম্পায়ার’ বইয়ের লেখক দীপা কুমারও একই মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ৯/১১-পরবর্তী নীতিগুলো এক ধরনের কল্পিত ‘মুসলিম হুমকি’ তৈরি করে সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালী করেছে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন পরিচালিত ‘আমেরিকা, ইসলাম অ্যান্ড দ্য ৯/১১ ওয়ার’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই যুদ্ধের প্রতি বৈশ্বিক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘মুসলিম দেশগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আমেরিকাকে নিজেদের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি মনে করে। প্রায় ৬০ শতাংশ মনে করে, মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইরাকে হামলার কারণে মুসলিমদের কাছে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান পশ্চিমের ক্রুসেড মনে হয়।
অনেক বিশেষজ্ঞ ‘ইসলামের বিরুদ্ধে অজুহাত’ তত্ত্বটি গ্রহণ করেন না। তাদের মতে, ওয়ার অন টেরর মূলত উগ্রবাদীদের টার্গেট করেছে, ধর্মকে নয়।
মিশরীয় তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ ইউসুফ আল-কারজাভির মতে, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অনেক মুসলিমের কাছে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে মনে হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিক ও গণমাধ্যম ভুলভাবে সন্ত্রাসবাদ আর ইসলামকে এক করে দেখায়।
এডওয়ার্ড সাঈদ পশ্চিমাদের ইসলামভীতির সমালোচনা করলেও ৯/১১-কে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত হিসেবে দেখেননি। ২০০১ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেক ভাষ্যকারই এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। প্রেসিডেন্ট বুশও বলেছেন যে “আমরা” ইসলাম বা মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না।’
প্রভাবশালী মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস উল্লেখ করে, ‘একের পর এক মার্কিন সরকার “যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে” আল কায়েদার এই বক্তব্য যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে নাকচ করেছে।’ তবে দীপা কুমারের মতো সমালোচকেরা মনে করেন, তা ছিল অধিকাংশ সময়ই লোকদেখানো।
গবেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়েছে। এতে ইসলামবিরোধী যুদ্ধের ধারণা আরও জোরদার হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে ইসলামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কোটি কোটি মুসলিমকে ক্ষুব্ধ করেছে। এতে উগ্রপন্থীরা সুযোগ পেয়েছে।
৯/১১ হামলার পর পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিমরা তীব্র বৈষম্যের মুখে পড়ে। ২০২১ সালে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান মুসলিমরা তাদের অভিজ্ঞতা জানান। নোহা তালিব নামে একজন আমেরিকান মুসলিম জানান, ‘এক ইন্টারভিউতে প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— “তুমি কি সন্ত্রাসী?” এসাদা কুসেভিচ নামে একজন জানান, ‘পশ্চিমা শিশুরাও প্রায়ই বলত, “ওহ! তোমার পরিবারই তো টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেছে…।”’
এফবিআই-র তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণাজনিত অপরাধ ১ হাজার ৬০০ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে ৯ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম বেসামরিক নাগরিক। অথচ এসপোসিটোর গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ৯৩ শতাংশ মুসলিম এই হামলাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হয়, অঞ্চলগুলো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়।
সামরিক সমাধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত জোর দেয়। যা মূলত আল-কায়েদার কৌশলকেই কার্যকর করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বক্তব্যে বারবার বলা হয়েছে, তাদের লড়াই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া বিশ্বরাজনীতি ও মুসলিম সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূল্য দিয়েছে সাধারণ মুসলিম জনগণ। প্রাণহানি, বৈষম্য, অস্থিতিশীলতা এবং ইসলামভীতির বিস্তার মুসলিম সমাজকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
৯/১১ শুধু একটি সন্ত্রাসী হামলা নয়, এটি ছিল এক বৈশ্বিক মোড় ঘোরানো ঘটনা। এর পর বিশ্ব রাজনীতির ধারা চিরতরে পাল্টে যায়। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র যে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করে, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে এক নতুন পর্বের শুরু করে। আফগানিস্তান ও ইরাক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়ে দেয়, একতরফা সামরিক পদক্ষেপও বৈধতা পেতে পারে ‘সন্ত্রাস দমনের’ নামে। রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ধারণা দুর্বল হতে থাকে, একইসঙ্গে জোরদার হয় নজরদারি রাষ্ট্রের প্রবণতা। জাতিসংঘের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক আইন হয়ে পড়ে পক্ষপাতদুষ্ট। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বয়ান পরিণত হয় কৌশলগত হাতিয়ারে। চীনের উত্থান, রাশিয়ার আগ্রাসী কূটনীতি এবং পশ্চিমা বিশ্বে উগ্র জাতীয়তাবাদের জাগরণ—এসব কিছুই ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের নামে গড়ে ওঠা এক নয়া রাজনীতির প্রতিফলন।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, গ্লোবাল পলিসি জার্নাল, ডেমোক্রেসি নাউ ডট ওআরজি, ফরেন পলিসি ডটকম, ট্রুথআউট
প্রার্থীরা বলছেন, ডাকসুর যে সব প্যানেলের প্রার্থীদের অর্থের যোগান ভালো তাঁরা ভোটের বিনিময়ে এই খাবার খাওয়াচ্ছে। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
৩ দিন আগেগোয়ালন্দের নুরাল পাগলাই কি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিচিত্রার প্রচ্ছদের সেই নূরা পাগলা? কেমন ছিলেন হাইকোর্টের মাজারের সেই নূরা পাগলা? আজম খান কেন ১৯৭৩ সালে তাঁকে নিয়ে গান বানিয়েছিলেন? নূরা পাগলা কেন বলেছিলেন, ‘আমি জেহাদ করব তখন, যখন ইন্ডিয়া এদেশে আসবে, যখন পাকিস্তান এদেশে আসবে।’
৪ দিন আগেআজ ১২ রবিউল আউয়াল। হিজরি সনের এ মাসেই নবীজির জন্ম। এ মাসেই তাঁর ওফাত। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আজকের দিনটি তাই বড় পবিত্র। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। কীভাবে দুনিয়া পাল্টে দিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)? বিশ্বসেরা কবি-লেখক ও দার্শনিকেরা কীভবে দেখেছেন তাঁকে—এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে সেই বিত্তান্ত।
৫ দিন আগেসম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন আল-জাজিরার মিডিয়া ইনিশিয়েটিভস-এর ব্যবস্থাপক মুনতাসির মারাই। জর্ডানের বাসিন্দা ফিলিস্তিন বংশদ্ভূত এই সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা ২০০২ সালে আল-জাজিরায় যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি মিশরের তাহরির স্কয়ার থেকে যে ‘আরব বসন্ত’ হয়েছিল, সেখানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সাংবাদিক হিসেবে কাজ...
৯ দিন আগে