leadT1ad

হাইটেক সিটি-২

সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি সাড়ে ৬ বছরেও, ব্যয় বাড়ছে ১১০ কোটি

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৯
স্ট্রিম গ্রাফিক

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। সাড়ে তিন বছরের প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ব্যয় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও দেড় বছর বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও ২৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্পটি তৃতীয়বারের মতো সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া এ প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কিছু প্রকল্প স্থগিত করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। হাইটেক সিটি প্রকল্পে কয়েক দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া, বারবার মেয়াদ বাড়ানোর ও ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্পের আবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, অতীতে সহজেই বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে, নিয়ম রক্ষার খাতিরে। নানা অনিয়মও হয়েছে। তবে এখন এমনটি হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের আওতায় কালিয়াকৈর উপজেলার হাইটেক সিটি ২-এর অভ্যন্তরীণ সড়ক, ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এ সদস্য বলেন, হাইটেক সিটি প্রজেক্ট নিয়ে প্রশ্ন ছিল সবসময়। এখন এটি আসলেই কাজে লাগবে কি না সেটি যাচাই করে দেখার প্রয়োজন আছে। বর্তমান সরকার সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে। যে কোনো প্রকল্পের ব্যয় বা মেয়াদ বাড়ানোর আগে কিংবা যে কোনো পরিবর্তনের আগে সেই প্রকল্পের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করার কথা। এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করার কথা। এই প্রকল্পে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা সংযোজনের ক্ষেত্রে রিভিউ করা হয়েছে কিনা সেটি দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের আওতায় কালিয়াকৈর উপজেলার হাইটেক সিটি ২-এর অভ্যন্তরীণ সড়ক, ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম লক্ষ্য বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যপত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল ব্যয় ছিল ৩৪৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৮৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা করা হয়। প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছর।

দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৪৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা করা করা হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে বর্ধিত সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।

এখন প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় আরও ২৩ কোটি টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আরও দেড় বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে সাড়ে তিন বছরের প্রকল্পটি সাড়ে সাত বছর মেয়াদী হবে। পাশাপাশি সব মিলিয়ে ব্যয় বাড়বে ১১০ কোটি টাকার।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব ঘেঁটে দেখা যায়, ১৮টি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বৈদ্যুতিক স্থাপনা নির্মাণে। আর গ্যাস সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ কোটি টাকার। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ওয়াকওয়ে ও ইউটিলিটি ডাক্ট স্থাপনে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং নতুন করে মসজিদ নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

এর বাইরে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে সম্মানী ভাতা, আপ্যায়ন, হায়ারিং চার্জ আউটসোর্সিং (মাইক্রোবাস), শ্রমিক মজুরি (পরিচ্ছন্নতা), টেলিফোন বিল, অফিস ভাড়া, আউটসোর্সিং জনবল, ভ্রমণ ভাতা, গাড়ির জ্বালানি, স্টেশনারি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (ড্রয়িং, ডিজাইন ও মনিটরিং), মোটরযান (মেরামত), দশ তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি ভবন দুইটি, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনসহ ফার্নিচার, সিকিউরি পোস্ট ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ খাতে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সভায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা নিয়েও আলোচনা হবে।

নাম সংশোধনের উদ্যোগ

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের নতুন নাম ‘হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’। প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যানে (ডিপিপি) নতুন নামটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনাও রাখা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, প্রকল্পের ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে, সেটি পরিকল্পনা বিভাগে গেছে।

প্রকল্পে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন ল্যান্ড ডেভেলপ ও চুক্তিগুলো টাইমলি করতে পারিনি। জাতীয় পরিস্থিতিও পরিবর্তিত হয়েছে, সেজন্যও সময়ক্ষেপণ হয়েছে; ভেন্ডররা কাজ বিরত রেখেছিল। এছাড়াও এখানে মসজিদের প্রয়োজন আছে, যেটা আগে ধরা ছিল না, রাস্তা এক্সটেনশন হয়েছে। কাজের মধ্যেও নানান জায়গায় ভেরিয়েশন আছে, সেজন্য ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত