leadT1ad

চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে, আগামী বছর বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংক

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ২৯

চলতি বছর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় সামান্য কমে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছর এ হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ— বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের প্রভাব, বিনিয়োগে স্থবিরতা, উচ্চ সুদের হার ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে।

এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, কমেছে মূলধনী পণ্যের আমদানি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতিতে কিছুটা উন্নতির আভাস মিলছে, সার্বিক পরিস্থিতি এখনো চ্যালেঞ্জের। তবে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তবে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট: অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিয়েও দেশটি আবারও প্রবৃদ্ধির পথে ফিরছে। তবে এই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও ভিত্তি দুর্বল

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে নানা ধাক্কা কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতি কিছুটা গতি পেয়েছে। শক্তিশালী রপ্তানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে।

তবে, বিনিয়োগে স্থবিরতা ও ব্যাংক খাতে দুর্বলতা এখনো বড় বাধা। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসার উচ্চ খরচের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি ধীর হয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে আশা

চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে, এটি বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রপ্তানিতেও ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের মতে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ইতিবাচক প্রবণতা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। তবে শিল্পখাতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য না থাকায় ভবিষ্যতে ঝুঁকির আশঙ্কাও থাকছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই দশকে দেশের শিল্পখাতের চাকরি দেশের বড় দুই শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যা আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে।

নড়বড়ে ব্যাংকিং খাত

বিশ্বব্যাংক বলছে, কঠোর মুদ্রানীতি, ভালো ফসল ও খাদ্যপণ্যে কম আমদানি করের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। আগস্টে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এটি এখনও লক্ষ্যামাত্রার চেয়ে অন্তত ২ শতাংশ বেশি।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং দরিদ্রতা বাড়াচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় খেলাপী ঋণের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বলা হয়েছে, মূলধনের ঘাটতি, তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক প্রভাবিত ঋণ অনুমোদন ব্যাংক খাতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজুলেশন আইন’ জারির প্রশংসা করেছে সংস্থাটি। তবে এ আইন বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না বলেও হুশিয়ারি করা হয়েছে।

সংস্কারের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২০২৬–২৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর হয়। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সংস্কার বিলম্বিত হলে বিনিয়োগে ঘাটতি ও কর্মসংস্থানের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেছেন, ‘অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং আরও ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোতে হবে।’

জ্যঁ পেম আরও বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণ পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।’

একই দিনে প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়ান ডেভেলফমেন্ট আপডেটে’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এ বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে—আঞ্চলিক বাণিজ্য বাধা, উচ্চ শুল্ক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই প্রবৃদ্ধির পথে বড় চ্যালেঞ্জ।

দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশগুলোকে প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

জোহানেস জুট যোগ করেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং বাণিজ্য উদারীকরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে নতুন চাকরি সৃষ্টি সম্ভব হবে এবং প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত