leadT1ad

বিসিবি নির্বাচন ঘিরে নাটকীয়তা, আলোচনায় তারকাদের নাম

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে কয়েকদিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা, নাটকীয়তা। নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকাদের নামও উঠে এসেছে।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ০০
বিসিবি নির্বাচন ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে কয়েকদিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা, নাটকীয়তা। স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে কয়েকদিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা, নাটকীয়তা। নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকাদের নামও উঠে এসেছে। নানা অভিযোগ, গুঞ্জনের কথাও শোনা গেছে। অবশেষে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য এ ভোটের আগেই ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন তামিম ইকবালসহ ১৬ জন।

বিসিবিতে মোট পরিচালকের পদ ২৫টি। তাদের মধ্যে ২৩ জন নির্বাচিত হন তিনটি ক্যাটাগরি থেকে। এ ছাড়াও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে সরাসরি পরিচালক হন দুইজন। ২৫ পরিচালক নির্বাচিত হয়ে গেলে বিসিবি সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে পরিচালক নির্বাচনের পর সন্ধ্যায় সভাপতি নির্বাচন করা হবে।

বিসিবি নির্বাচনে এখন প্রার্থী ৩৪ জন। তাদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন ক্যাটাগরি-১ বা বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ১০ পরিচালকের ছয়জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা আছে রাজ্জাকের। নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত যাঁরা

আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও পরিচালক হয়েছেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার জুলফিকার আলী খান। খুলনায় এই দুজন ছাড়া আর কোনো প্রার্থী ছিল না।

চট্টগ্রাম থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির পরিচালক হয়েছেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার আহসান ইকবাল চৌধুরী ও কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী গায়ক আসিফ আকবর।

এছাড়া সিলেট বিভাগে রাহাত শামস ও বরিশাল বিভাগে শাখাওয়াত হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন।

এখন ক্যাটাগরি-১ বা বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ১০ পরিচালকের চারটি পদের জন্য ভোটের লড়াই হবে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুরে।

আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত
আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার লড়াই নিয়ে আলোচনা

বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটাগরি-১ পরিচালক পদের নির্বাচনের আলোচনায় উঠে আসছে ঢাকার নাম। কারণ এখান থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে লড়ছেন তিনি। পাশাপাশি ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে লড়ছেন বিসিবির বর্তমান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন ফাহিম। এই দুজনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর ও সাবেক পরিচালক এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান। এই তিনজনের মধ্য থেকে দুইজন হবেন বিসিবি পরিচালক।

এছাড়া রাজশাহী থেকে লড়ছেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার হাসিবুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার মুখলেসুর রহমান ও জয়পুরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার এসএম শামস মতিন। রংপরে লড়ছেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মো. হাসানুজ্জামান, দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার রেহাতুল ইসলাম খোকা ও ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নুর-এ-শাহাদৎ স্বজন। রাজশাহী ও রংপুর থেকে পরিচালক হবেন একজন করে।

ক্যাটাগরি-২ বা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট থেকে পরিচালক হবেন ১২ জন। এই ১২ পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ৩০ জন। বুধবার তাদের মধ্যে ১৩ জন নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে একজন আপাতত নির্বাচনের বাইরে আছেন। কারণ যে ১৫ ক্লাবের বিরুদ্ধে আদালতে রিট হয়েছে সেগুলোর একটির কাউন্সিলর তিনি। অর্থাৎ, বাকি ১৬ জনের মধ্যে নির্বাচিত হবেন ১২ জন। এই ১৬ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে আলোচিত নাম সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।

ক্যাটেগরি-৩ বা সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার কোটায় পরিচালক হবেন একজন। সেখানে লড়াইয়ে আছেন দুজন। তাঁরা হলেন সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর, সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির সাবেক ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল।

তামিম ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত
তামিম ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

তামিমের মনোনয়ন প্রত্যাহার

বিসিবি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় ছিল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তামিম ইকবাল। তিনি ছাড়াও মনোনয়নপত্র উত্তোলন করা ৫০ জনের মধ্যে আরও ১৫ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ তুলে তামিম বলেন, ‘আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করুন, পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তাটা করবেন। এই নির্বাচন বিসিবির জন্য একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে।’

এক্সিউম ক্রিকেটার্সের কাউন্সিলর ইসরাফিল খসরুও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তিনি সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ‘বিসিবি নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ চলছে। নির্বাচনী পরিবেশ নেই। স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো নির্বাচন আমরা চাই না।’

বিসিবি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর তামিমের বিরুদ্ধে একটি আপত্তিপত্র জমা পড়ে। কানাডাপ্রবাসী সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর স্বাক্ষরিত অভিযোগে দাবি করা হয়, আইসিসি স্বীকৃত ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়ায় বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তামিম কাউন্সিলর হতে পারেন না। তিনি ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন এবং তাকে ক্লাবের কাউন্সিলর করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়। যদিও হালিম শাহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি দেননি।

পরদিন বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানির পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তামিম। তিনি তখন বলেন, ‘বিসিবি নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ঠেকাতে নানামুখী চেষ্টার অংশ হিসেবেই এই অভিযোগ করা হয়েছে।’

তামিম আরও বলেন, ‘সরকারের একটি অংশই যদি এভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তাহলে এটা কি একটা দারুণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? আমার বয়স হয়তো কম, কিন্তু আমি সিনিয়রদের থেকে শুনেছি, ক্রিকেট বোর্ডের ইতিহাসে কোনদিন এত নোংরামি তারা দেখেননি।’

ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ইশরাকের হুমকি, অভিযোগ উপদেষ্টার দিকে

গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিসিবির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ওই দিন বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে ‘আসন্ন ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রেরণে সরকারি হস্তক্ষেপ ও সভাপতির নির্বাহী ক্ষমতার অপপ্রয়োগ’-এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দ’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিসিবি নির্বাচনে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও সরকারের একটি অংশ সরাসরি প্রভাব খাটাচ্ছে। এছাড়া সরকার বাড়াবাড়ি করলে বিসিবি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন ইশরাক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক বলেন, ‘বিসিবি নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ স্পষ্ট। সরকার নিরপেক্ষ নয়, বরং নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে। এভাবে কোনো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। গঠনতন্ত্রে কোথাও নেই যে অ্যাডহক কমিটি থেকে মনোনয়ন দিতে হবে। যদি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়, প্রয়োজনে বিসিবি ঘেরাও করা হবে।’

এদিকে নির্বাচনের তফসিল বরখেলাপের অভিযোগও আছে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল কাউন্সিলর চূড়ান্ত করতে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েছেন।

অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে বিসিবির নির্বাচন কমিশন। মোট ১৯১ জন কাউন্সিলর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন ভার্চুয়াল বৈঠকের পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে।

কাউন্সিলর পদ ফিরে পাওয়া ক্লাবগুলো হলো— এক্সাম ক্রিকেটার্স, ঢাকা ক্রিকেট একাডেমি, মোহাম্মদ ক্রিকেট ক্লাব, নবাবগঞ্জ ক্রিকেট কোচিং একাডেমি, পূর্বাচল স্পোর্টিং ক্লাব, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব, পুরান ঢাকা ক্রিকেটার্স, ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি, বনানী ক্রিকেট ক্লাব, নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স, মহাখালী ক্রিকেট একাডেমি, ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাব, প্যাসিফিক ক্রিকেট ক্লাব, স্যাফায়ার স্পোর্টিং ক্লাব এবং আলফা স্পোর্টিং ক্লাব।

এছাড়া সিলেট, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁ— এই পাঁচ জেলার কাউন্সিলর পদেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নওগাঁ থেকে কাউন্সিলর হিসেবে মোহাম্মদ রুবায়েদ হক এবং বগুড়া থেকে মো. রকিবুল ইসলামের নাম নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ থেকে যথাক্রমে মো. তাওহিদ তারিক খান ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সিলেটের কাউন্সিলর হিসেবে সৈয়দ ফজলে এলাহীকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে নরসিংদী জেলা থেকে কোনো কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকায়ও নরসিংদীর নাম বাদ পড়েছিল।

Ad 300x250

সম্পর্কিত